প্রধানমন্ত্রী কি আমারে দেহেন না, আমি কি হালতে চলতাছি

‘আমি যতটুকু পারছি দেশের জন্য করেছি। এখন প্রধানমন্ত্রী যদি মাইন্না নেন নিলেন, না নিলে আরতো কিছু করার নাই। সরকার কিছু না দিলেও আপত্তি নাই। প্রধানমন্ত্রী কি আমারে দেহেননা আমি কি হালতে চলতাছি। মা-বোনদের জীবন বাচাইতে পারছি, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কাজ করতে পারছি।

দেশের জন্য কাজ করতে পারছি এটাই আমার ভাগ্য’। মোছাম্মৎ সায়েরা বেগম। স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন দেশের জন্য। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি মিলছে না তার। সেই হতাশা থেকে বললেন এভাবেই। পিতা আবদুল আজিজ কাজ করতেন পাকবাহিনীর ক্যাম্পে। তার কাছ থেকে পাকবাহিনী ও ক্যাম্পের ভেতরকার খবরাখবর যা পেতেন সেগুলো জানিয়ে দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের।

একপর্যায়ে পাকবাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নিয়মিত খবর প্রদান করতে শুরু করেন। তার খবরাখবরের ভিত্তিতে একাধিক অপারেশনে সফল হয় মুক্তিবাহিনী। এক সময় জীবন নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়লে এলাকা ছেড়ে চলে যান।

নিজের জীবন বাজি রেখে দেশমাতৃকার জন্য কাজ করে যাওয়া সায়েরা বেগম গত ৭/৮ বছর ধরে এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আবেদন-নিবেদন করছেন। অনেক চেষ্টার পর ভাতা পাওয়ার তালিকায় নাম উঠলেও সেটিও বন্ধ হয়ে যায় বছর তিনেক পর।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী সেজামুড়া গ্রাম। পাহাড়-টিলার ঢালুতে বসবাস সায়েরা বেগমের। মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ছিল পনের কি ষোল। যুদ্ধ দিনের স্মৃতি এখনও জ্বলজ্বলে তার চোখে। সায়েরা বলেন,‘ ভাটি এলাকা পেটুয়াজুড়িতে ছিলাম তখন। সেখানে ভাতপানি না খেতে পেরে চলে আসি গোয়ালনগর গ্রামে। এখানে আসার পর আমার বাপ, ভাই ও আত্মীয়-স্বজনকে পাঞ্জাবিরা ধরে নিয়ে যায়।

তাদের দিয়া বাঙ্কার-টাঙ্কার কুড়াইতো। দীর্ঘদিন যাবৎ তারা এভাবে আইতাছে, যাইতাছে। আমি আমার বাপের কাছ থেকে ক্যাম্পের তথ্য বিধি জেনে মুক্তিবাহিনীর লোকদের বলতাম। এরপর একদিন মুক্তিবাহিনীর লোকজন আমার মা, ভাই ও আমারে ইন্ডিয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সায়ীদ স্যারের কাছে নিয়া যায়।

সেখানে স্যার জানতে চাইলে বলি মানুষ ৬০/৭০ জন হবে। কিভাবে কাজটা করতে হবে জিজ্ঞাসা করলে জানায়, পূব থেকে, দক্ষিণ দিক থেকে পশ্চিম দিকে ঘুরাইয়া কাজটা করলে ভালো হবে। অস্ত্র কি আছে জানতে চাইলে বলি তিন ঠ্যাঙ্গ ওয়ালা আর চোঙ্গামতো। এরপর তিনি আইডিয়া করে নেন। তখন অস্ত্রের নাম জানতাম না। এরপর উনারা যুদ্ধ জয় করেন।’

মুক্তিযুদ্ধে সায়েরার অবদান নিয়ে যুদ্ধকালীন ৩নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল সায়ীদ আহমেদ বীর প্রতীক তার দেয়া প্রত্যয়নে বলেন, নিজের জীবন বাজি রেখে সায়েরা স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অবদান রেখেছেন। মুকন্দপুর শত্রু বাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তিনি আমার অধীনস্থ মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের সহায়তা করেন। ক্যাম্পে অবস্থানরত শত্রুর সংখ্যা, প্রতিরক্ষা অবস্থান, অস্ত্রসস্ত্র, ক্যাম্প অধিনায়কসহ সৈনিকের মনোবল সম্পর্কে তার প্রদত্ত সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭১ সালের ১৮ ও ১৯ নভেম্বর মুকুন্দপুরে শত্রুদের ওপর আক্রমণ করা হয়। এতে বহু পাকসেনা আহত হয় এবং ২৯ জনকে বন্দী করা হয়। মুকন্দপুর শত্রুমুক্ত হয়।

যুদ্ধের ইতিহাসে সায়েরার অবদান এভাবে চিত্রিত হলেও মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে লড়াই করতে হচ্ছে তাকে। মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে নাম তালিকা ও গেজেটভুক্ত করার জন্য ২০১৮ সালে সায়েরার আবেদন নিয়ে নিজের সুপারিশ ও প্রত্যয়নসহ সরাসরি মন্ত্রণালয়ে যান ওই সময়ে মুজিব বাহিনীর কমান্ডার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী।

এরপর এ বছরের ১ জানুয়ারিতেও একটি আধা সরকারি পত্র দেন তিনি। কিন্তু বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে না তাদের কাছে। মন্ত্রণালয়ের এমন ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মোকতাদির চৌধুরী। বলেন, কতবার যে সায়েরার জন্যে লিখেছি এর হিসাব নেই। গত সপ্তাহেও মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু আমার মনে হয় সবই বৃথা হতে চলেছে।

জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে যে কমিটি আছে ২০১৫ সালে সেই কমিটি তাকে ভাতা প্রদানের অনুমোদন দেয়। কিন্তু ২০১৮ সালে বর্তমান মন্ত্রী মোজাম্মেল হক ব্যক্তিভাবে উদ্যোগ নিয়ে তার ভাতা বন্ধ করে দেন। জেলা প্রশাসনের সুপারিশ আছে, আমাদের কমিটির সুপারিশ আছে, তাহলে তারা কি হাওয়া থেকে এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করেন। আমি একজন সংসদ সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধা। ২০১৩ সাল থেকে এ নিয়ে বারবার তাদের কাছে গিয়েছি।

তখন একজন মন্ত্রী ছিলেন, এখনও একজন মন্ত্রী আছেন। কিন্তু আমাদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। যতবারই বলি বলেন আমি ফাইলটা দেখে নেই। সচিবকে বললে এটা আমার কাজ না জামুকার কাজ। সায়েরা বেগম যে কোন সময় মারা যেতে পারেন, তার বয়স হয়েছে। তাহলে এটা আমাদের জন্য হবে লজ্জাজনক ও দুঃখজনক। আমি মনে করি পরিপূর্ণভাবে এর তদন্ত হওয়া উচিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি এই আবেদন করছি।

জানা যায়, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০১৬ সাল থেকে ভাতা সুবিধাভোগীর তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয় সায়েরার। কিন্তু ২০১৯ সালে তার ভাতা প্রদান বন্ধ করে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম ইয়াসির আরাফাত বলেন, মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার বলেই ভাতা বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে তারা আপিল করেছেন।

বছর দুয়েক আগে স্বামীকে হারিয়েছেন সায়েরা। এক কন্যা আর ২ নাতনিকে নিয়ে এখন তার সংসার। অভাব-অনটনে কাটছে দিন। সায়েরা বলেন, ‘স্বামী ও ছেলে সন্তান না থাকায় চলাফেরায় অনেক কষ্ট। কেন ভাতা বন্ধ হইছে জানি না। ভাতা বন্ধ হওয়ার পর কি করে চলুম, তাদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করি। এরপর থেকে এমপি মোকতাদির চৌধুরী আমাকে সহায়তা করছেন। ইউএনও, চেয়ারম্যান ও মেম্বার সবাই আমার প্রতি নজর রাখেন। আমি যতটুকু পারছি দেশের জন্য করেছি।

এখন প্রধানমন্ত্রী যদি মাইন্না নেন নিলেন, না নিলে আর তো কিছু করার নাই। সরকার কিছু না দিলেও আপত্তি নাই। প্রধানমন্ত্রী কি আমারে দেহেন না আমি কি হালতে চলতাছি। মা-বোনদের জীবন বাচাইতে পারছি, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কাজ করতে পারছি। দেশের জন্য কাজ করতে পারছি এটাই আমার ভাগ্য ’।

যুদ্ধে সায়েরার অসামান্য অবদান সম্পর্কে জানেন এলাকার মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে সবাই। পাহাড়পুর ইউনিয়নের ডেপুটি কমান্ডার মো. ফুল মিয়া বলেন, সায়েরার খবরাখবরের ভিত্তিতেই আমাদের অপারেশন সফল হয়।

৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফয়সাল আহমেদ বাছির এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান রাসেল খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সায়েরা বেগমের সাহসিকতার গল্প আমরা বাপ-দাদাদের মুখে শুনেছি। ভাতা বন্ধ করে দেয়ায় অনেক কষ্টে রয়েছেন তিনি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার ভাতা চালু করার দাবি জানাই।

বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১ , ১৭ আষাঢ় ১৪২৮ ১৯ জিলক্বদ ১৪৪২

প্রধানমন্ত্রী কি আমারে দেহেন না, আমি কি হালতে চলতাছি

মো. সাদেকুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

image

‘আমি যতটুকু পারছি দেশের জন্য করেছি। এখন প্রধানমন্ত্রী যদি মাইন্না নেন নিলেন, না নিলে আরতো কিছু করার নাই। সরকার কিছু না দিলেও আপত্তি নাই। প্রধানমন্ত্রী কি আমারে দেহেননা আমি কি হালতে চলতাছি। মা-বোনদের জীবন বাচাইতে পারছি, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কাজ করতে পারছি।

দেশের জন্য কাজ করতে পারছি এটাই আমার ভাগ্য’। মোছাম্মৎ সায়েরা বেগম। স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন দেশের জন্য। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি মিলছে না তার। সেই হতাশা থেকে বললেন এভাবেই। পিতা আবদুল আজিজ কাজ করতেন পাকবাহিনীর ক্যাম্পে। তার কাছ থেকে পাকবাহিনী ও ক্যাম্পের ভেতরকার খবরাখবর যা পেতেন সেগুলো জানিয়ে দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের।

একপর্যায়ে পাকবাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নিয়মিত খবর প্রদান করতে শুরু করেন। তার খবরাখবরের ভিত্তিতে একাধিক অপারেশনে সফল হয় মুক্তিবাহিনী। এক সময় জীবন নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়লে এলাকা ছেড়ে চলে যান।

নিজের জীবন বাজি রেখে দেশমাতৃকার জন্য কাজ করে যাওয়া সায়েরা বেগম গত ৭/৮ বছর ধরে এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আবেদন-নিবেদন করছেন। অনেক চেষ্টার পর ভাতা পাওয়ার তালিকায় নাম উঠলেও সেটিও বন্ধ হয়ে যায় বছর তিনেক পর।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী সেজামুড়া গ্রাম। পাহাড়-টিলার ঢালুতে বসবাস সায়েরা বেগমের। মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ছিল পনের কি ষোল। যুদ্ধ দিনের স্মৃতি এখনও জ্বলজ্বলে তার চোখে। সায়েরা বলেন,‘ ভাটি এলাকা পেটুয়াজুড়িতে ছিলাম তখন। সেখানে ভাতপানি না খেতে পেরে চলে আসি গোয়ালনগর গ্রামে। এখানে আসার পর আমার বাপ, ভাই ও আত্মীয়-স্বজনকে পাঞ্জাবিরা ধরে নিয়ে যায়।

তাদের দিয়া বাঙ্কার-টাঙ্কার কুড়াইতো। দীর্ঘদিন যাবৎ তারা এভাবে আইতাছে, যাইতাছে। আমি আমার বাপের কাছ থেকে ক্যাম্পের তথ্য বিধি জেনে মুক্তিবাহিনীর লোকদের বলতাম। এরপর একদিন মুক্তিবাহিনীর লোকজন আমার মা, ভাই ও আমারে ইন্ডিয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সায়ীদ স্যারের কাছে নিয়া যায়।

সেখানে স্যার জানতে চাইলে বলি মানুষ ৬০/৭০ জন হবে। কিভাবে কাজটা করতে হবে জিজ্ঞাসা করলে জানায়, পূব থেকে, দক্ষিণ দিক থেকে পশ্চিম দিকে ঘুরাইয়া কাজটা করলে ভালো হবে। অস্ত্র কি আছে জানতে চাইলে বলি তিন ঠ্যাঙ্গ ওয়ালা আর চোঙ্গামতো। এরপর তিনি আইডিয়া করে নেন। তখন অস্ত্রের নাম জানতাম না। এরপর উনারা যুদ্ধ জয় করেন।’

মুক্তিযুদ্ধে সায়েরার অবদান নিয়ে যুদ্ধকালীন ৩নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল সায়ীদ আহমেদ বীর প্রতীক তার দেয়া প্রত্যয়নে বলেন, নিজের জীবন বাজি রেখে সায়েরা স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অবদান রেখেছেন। মুকন্দপুর শত্রু বাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তিনি আমার অধীনস্থ মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের সহায়তা করেন। ক্যাম্পে অবস্থানরত শত্রুর সংখ্যা, প্রতিরক্ষা অবস্থান, অস্ত্রসস্ত্র, ক্যাম্প অধিনায়কসহ সৈনিকের মনোবল সম্পর্কে তার প্রদত্ত সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭১ সালের ১৮ ও ১৯ নভেম্বর মুকুন্দপুরে শত্রুদের ওপর আক্রমণ করা হয়। এতে বহু পাকসেনা আহত হয় এবং ২৯ জনকে বন্দী করা হয়। মুকন্দপুর শত্রুমুক্ত হয়।

যুদ্ধের ইতিহাসে সায়েরার অবদান এভাবে চিত্রিত হলেও মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে লড়াই করতে হচ্ছে তাকে। মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে নাম তালিকা ও গেজেটভুক্ত করার জন্য ২০১৮ সালে সায়েরার আবেদন নিয়ে নিজের সুপারিশ ও প্রত্যয়নসহ সরাসরি মন্ত্রণালয়ে যান ওই সময়ে মুজিব বাহিনীর কমান্ডার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী।

এরপর এ বছরের ১ জানুয়ারিতেও একটি আধা সরকারি পত্র দেন তিনি। কিন্তু বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে না তাদের কাছে। মন্ত্রণালয়ের এমন ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মোকতাদির চৌধুরী। বলেন, কতবার যে সায়েরার জন্যে লিখেছি এর হিসাব নেই। গত সপ্তাহেও মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু আমার মনে হয় সবই বৃথা হতে চলেছে।

জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে যে কমিটি আছে ২০১৫ সালে সেই কমিটি তাকে ভাতা প্রদানের অনুমোদন দেয়। কিন্তু ২০১৮ সালে বর্তমান মন্ত্রী মোজাম্মেল হক ব্যক্তিভাবে উদ্যোগ নিয়ে তার ভাতা বন্ধ করে দেন। জেলা প্রশাসনের সুপারিশ আছে, আমাদের কমিটির সুপারিশ আছে, তাহলে তারা কি হাওয়া থেকে এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করেন। আমি একজন সংসদ সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধা। ২০১৩ সাল থেকে এ নিয়ে বারবার তাদের কাছে গিয়েছি।

তখন একজন মন্ত্রী ছিলেন, এখনও একজন মন্ত্রী আছেন। কিন্তু আমাদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। যতবারই বলি বলেন আমি ফাইলটা দেখে নেই। সচিবকে বললে এটা আমার কাজ না জামুকার কাজ। সায়েরা বেগম যে কোন সময় মারা যেতে পারেন, তার বয়স হয়েছে। তাহলে এটা আমাদের জন্য হবে লজ্জাজনক ও দুঃখজনক। আমি মনে করি পরিপূর্ণভাবে এর তদন্ত হওয়া উচিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি এই আবেদন করছি।

জানা যায়, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০১৬ সাল থেকে ভাতা সুবিধাভোগীর তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয় সায়েরার। কিন্তু ২০১৯ সালে তার ভাতা প্রদান বন্ধ করে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম ইয়াসির আরাফাত বলেন, মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার বলেই ভাতা বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে তারা আপিল করেছেন।

বছর দুয়েক আগে স্বামীকে হারিয়েছেন সায়েরা। এক কন্যা আর ২ নাতনিকে নিয়ে এখন তার সংসার। অভাব-অনটনে কাটছে দিন। সায়েরা বলেন, ‘স্বামী ও ছেলে সন্তান না থাকায় চলাফেরায় অনেক কষ্ট। কেন ভাতা বন্ধ হইছে জানি না। ভাতা বন্ধ হওয়ার পর কি করে চলুম, তাদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করি। এরপর থেকে এমপি মোকতাদির চৌধুরী আমাকে সহায়তা করছেন। ইউএনও, চেয়ারম্যান ও মেম্বার সবাই আমার প্রতি নজর রাখেন। আমি যতটুকু পারছি দেশের জন্য করেছি।

এখন প্রধানমন্ত্রী যদি মাইন্না নেন নিলেন, না নিলে আর তো কিছু করার নাই। সরকার কিছু না দিলেও আপত্তি নাই। প্রধানমন্ত্রী কি আমারে দেহেন না আমি কি হালতে চলতাছি। মা-বোনদের জীবন বাচাইতে পারছি, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কাজ করতে পারছি। দেশের জন্য কাজ করতে পারছি এটাই আমার ভাগ্য ’।

যুদ্ধে সায়েরার অসামান্য অবদান সম্পর্কে জানেন এলাকার মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে সবাই। পাহাড়পুর ইউনিয়নের ডেপুটি কমান্ডার মো. ফুল মিয়া বলেন, সায়েরার খবরাখবরের ভিত্তিতেই আমাদের অপারেশন সফল হয়।

৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফয়সাল আহমেদ বাছির এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান রাসেল খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সায়েরা বেগমের সাহসিকতার গল্প আমরা বাপ-দাদাদের মুখে শুনেছি। ভাতা বন্ধ করে দেয়ায় অনেক কষ্টে রয়েছেন তিনি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার ভাতা চালু করার দাবি জানাই।