মগবাজার বিস্ফোরণে মারা গেলেন দগ্ধ ইমরান

রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৯০ শতাংশ দগ্ধ হওয়ায় নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছিল ইমরান হোসেনকে (২৫)। বাঁচার আকুতি জানিয়ে একদিকে কাতরাচ্ছিলেন ইমরান, অন্যদিকে আইসিইউ বেডের বাইরে মোনাজাত ধরে বুক ভাসিয়ে যাচ্ছিলেন তার মা, খালা, বোন, শাশুড়িসহ অন্য স্বজনরা। স্ত্রী তামান্না বার বার অচেতন হয়ে পড়ছিলেন। সবার একটিই চাওয়া ছিল অন্তত প্রাণে বেঁচে থাকুক ইমরান। গতকাল সকাল পৌনে ৭টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল নয়জনে। ইমরান হোসেন ও গত মঙ্গলবার বিস্ফোরণ স্থল থেকে উদ্ধার হওয়া কেয়ারটেকার হারুনুর রশিদের (৭০) লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, ইমরানের শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ ছাড়াও শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এজন্য প্রথম থেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনায় আরও ৪ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর মধ্যে নুরুন্নবী ও রাসেল নামের দুইজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। এছাড়া ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজন শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

আহত ইমরানের ছোটবোন আইরিন জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর থানার লাউহাটি গ্রামে। ইমরান স্ত্রী নিয়ে মগবাজারে থাকতেন। তিন বছর আগে বিয়ে করেন তামান্নাকে। তাদের কোনো সন্তান নেই। দুই বছর ধরে ইমরান বিস্ফোরণ ঘটা ভবনে মগবাজার প্লাজায় ‘ব্যাঙ্গল মিট’ নামে মাংসের দোকানে সেলসম্যানের চাকরি করতেন।

প্রসঙ্গত, গত রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর ওয়ারল্যাসে তিনতলা একটি ভবনের নিচতলায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

ছেলের লাশ নেয়ার সময় বাবার আকুতি

কী নিয়ে বাঁচব?

রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত দুইজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা হলেন হারুনুর রশিদ (৭০) ও ইমরান (২৫)। গতকাল বিকেল ৩টায় তাদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। ছেলে ইমরানের লাশ বুঝে নেয়ার সময় বাবা আবদুল মজিদ চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেলে না ফেরার দেশে চলে গেছে। আমার তো আর কিছু রইল না, কী নিয়ে বাঁচব?

নিহত হারুন অর রশিদের শ্যালক মনির শিকদার বলেন, বিস্ফোরণের দিন থেকে আমরা দুলাভাইয়ের সন্ধানে বিভিন্ন হাসপাতালে ও মর্গে তার ছবি নিয়ে ঘুরেছি। গত মঙ্গলবার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ৫ বছর ধরে ওই ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

মগবাজার বিস্ফোরণে আহত ইমরান গত মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৭টায় মারা যান। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আইসিইউর ১৭ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ তার মরদেহ হস্তান্তর করেছে বলে জানান ইমরানের বাবা আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, আমার ছেলে ৩ বছর হলো বিয়ে করেছে। ২ বছর ধরে ‘বেঙ্গল মিট’ দোকানে চাকরি করত। ছেলেটা আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আমার তো আর কিছু রইল না। কী নিয়ে বাঁচব?

গত ২৭ জুন সন্ধ্যায় মগবাজারের রেখা নীড় ভবনে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে ভবনের সামনের ও পেছনের অংশ ধসে পড়ে এবং মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভয়াবহ সেই বিস্ফোরণের ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১ , ১৭ আষাঢ় ১৪২৮ ১৯ জিলক্বদ ১৪৪২

মগবাজার বিস্ফোরণে মারা গেলেন দগ্ধ ইমরান

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৯০ শতাংশ দগ্ধ হওয়ায় নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছিল ইমরান হোসেনকে (২৫)। বাঁচার আকুতি জানিয়ে একদিকে কাতরাচ্ছিলেন ইমরান, অন্যদিকে আইসিইউ বেডের বাইরে মোনাজাত ধরে বুক ভাসিয়ে যাচ্ছিলেন তার মা, খালা, বোন, শাশুড়িসহ অন্য স্বজনরা। স্ত্রী তামান্না বার বার অচেতন হয়ে পড়ছিলেন। সবার একটিই চাওয়া ছিল অন্তত প্রাণে বেঁচে থাকুক ইমরান। গতকাল সকাল পৌনে ৭টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল নয়জনে। ইমরান হোসেন ও গত মঙ্গলবার বিস্ফোরণ স্থল থেকে উদ্ধার হওয়া কেয়ারটেকার হারুনুর রশিদের (৭০) লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, ইমরানের শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ ছাড়াও শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এজন্য প্রথম থেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনায় আরও ৪ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর মধ্যে নুরুন্নবী ও রাসেল নামের দুইজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। এছাড়া ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজন শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

আহত ইমরানের ছোটবোন আইরিন জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর থানার লাউহাটি গ্রামে। ইমরান স্ত্রী নিয়ে মগবাজারে থাকতেন। তিন বছর আগে বিয়ে করেন তামান্নাকে। তাদের কোনো সন্তান নেই। দুই বছর ধরে ইমরান বিস্ফোরণ ঘটা ভবনে মগবাজার প্লাজায় ‘ব্যাঙ্গল মিট’ নামে মাংসের দোকানে সেলসম্যানের চাকরি করতেন।

প্রসঙ্গত, গত রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর ওয়ারল্যাসে তিনতলা একটি ভবনের নিচতলায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

ছেলের লাশ নেয়ার সময় বাবার আকুতি

কী নিয়ে বাঁচব?

রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত দুইজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা হলেন হারুনুর রশিদ (৭০) ও ইমরান (২৫)। গতকাল বিকেল ৩টায় তাদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। ছেলে ইমরানের লাশ বুঝে নেয়ার সময় বাবা আবদুল মজিদ চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেলে না ফেরার দেশে চলে গেছে। আমার তো আর কিছু রইল না, কী নিয়ে বাঁচব?

নিহত হারুন অর রশিদের শ্যালক মনির শিকদার বলেন, বিস্ফোরণের দিন থেকে আমরা দুলাভাইয়ের সন্ধানে বিভিন্ন হাসপাতালে ও মর্গে তার ছবি নিয়ে ঘুরেছি। গত মঙ্গলবার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ৫ বছর ধরে ওই ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

মগবাজার বিস্ফোরণে আহত ইমরান গত মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৭টায় মারা যান। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আইসিইউর ১৭ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ তার মরদেহ হস্তান্তর করেছে বলে জানান ইমরানের বাবা আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, আমার ছেলে ৩ বছর হলো বিয়ে করেছে। ২ বছর ধরে ‘বেঙ্গল মিট’ দোকানে চাকরি করত। ছেলেটা আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আমার তো আর কিছু রইল না। কী নিয়ে বাঁচব?

গত ২৭ জুন সন্ধ্যায় মগবাজারের রেখা নীড় ভবনে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে ভবনের সামনের ও পেছনের অংশ ধসে পড়ে এবং মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভয়াবহ সেই বিস্ফোরণের ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।