শেয়ারবাজার স্থিতিশীল রাখতে গঠন হচ্ছে ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ বা ‘পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল’। এই লক্ষ্যে সম্প্রতি গেজেট প্রকাশ হয়েছে। চলতি বছরের ৩ মে কমিশন সভা করে এই তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের বিতরণ না হওয়া প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ নিয়ে এই তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ তহবিলটি পরিচালনার জন্য ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড রুলস, ২০২১’ প্রণয়ন করা হয়েছে। বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নামে গত রোববার এই গেজেট প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন কোম্পানির অবিতরণ করা লভ্যাংশ এবং ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে তিন বছরের অধিক সময় পড়ে থাকা অর্থ-শেয়ার এই তহবিলে স্থানান্তর করা হবে। তিন বছরের হিসাব হবে লভ্যাংশ ঘোষণা বা অনুমোদনের দিন বা রেকর্ড ডেট থেকে। এক্ষেত্রে নগদ লভ্যাংশ বা অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা থাকায় কোন সুদ অর্জিত হলে, তাও এ তহবিলে দিতে হবে। তহবিলে শেয়ার বা টাকা হস্তান্তরের পরও তা দাবি করতে পারবেন সংশ্নিষ্ট বিনিয়োগকারী। নিজের দাবির প্রমাণসহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বা সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি বা ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনের এক মাসের মধ্যে ওই বিনিয়োগকারীর শেয়ার বা টাকা ফেরত দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, তহবিল থেকে বাজারের তারল্যপ্রবাহ এবং গভীরতা বাড়াতে শেয়ার কেনাবেচা বা ধার দেয়া বা ধার নেয়া হবে। শেয়ার কেনাবেচা করতে গিয়ে যাতে তহবিলের কোন লোকসান না হয়, তার জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন করা হবে, থাকবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও অডিট কমিটি। শেয়ারবাজারকে সাপোর্ট দিতে গঠন করা তহবিলটি ব্যবস্থাপনায় ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নস থাকবে। যার মধ্যে একজন চেয়ারম্যান ও তিন জন সদস্য থাকবেন, যাদের মনোনীত করবে বিএসইসি। বোর্ড অব গভর্নসে বিএসইসি থেকে ৪ জন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি) থেকে একজন করে মনোনীত সদস্য থাকবেন। এছাড়াও একজন প্রফেশনাল চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্টস বা কস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনটেন্টস বা চার্টার্ড সেক্রেটারি বা চার্টার্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট এবং একজন চিফ অব অপারেশন (সিওও) থাকবেন।
জানা গেছে, প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার এ তহবিলের মধ্যে নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। আর বোনাস শেয়ার লভ্যাংশের বাজার মূল্য প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। এ তহবিলটি পরিচালনা করবে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান। গত ৩ মে এই তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিএসইসির পক্ষ থেকে শেয়ারহোল্ডারদের অদাবি করা লভ্যাংশের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) দায়িত্ব দেয়া হয়। ডিএসই ২১৮টি কোম্পানির কাছে অপরিশোধিত লভ্যাংশের তথ্য চেয়েছিল যার মধ্যে ২০৮টি কোম্পানি তথ্য দেয়। আর সিএসইর পক্ষ থেকে ১৫৩টি কোম্পানির কাছে তথ্য চাওয়া হলে ১২৭টি তথ্য দেয়।
তার আগে অদাবি করা লভ্যাংশের বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশ চূড়ান্ত অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের বুঝিয়ে দিতে হবে। আর মিউচুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ ট্রাস্টির অনুমোদনের ৪৫ দিনের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের বুঝিয়ে দিতে হবে। তবে কেউ লভ্যাংশ দাবি না করলে বা অপরিশোধিত থাকলে তা তিন বছর পরে কমিশনের নির্দেশিত ফান্ডে হস্তান্তর করতে হবে। এতে বলা হয়, ইস্যুয়ার কোম্পানি লভ্যাংশ বিতরণের জন্য পলিসি গঠন করবে যা বার্ষিক প্রতিবেদন ও কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে। কোম্পানিগুলোকে বার্ষিক বা চূড়ান্ত লভ্যাংশ অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে এবং অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ রেকর্ড ডেটের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের প্রদান করতে হবে। আর মিউচুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ ট্রাস্টির অনুমোদনের ৪৫ দিনের মধ্যে প্রদান করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, পরিচালনা পর্ষদ বা ট্রাস্টির ঘোষণার ১০ দিনের মধ্যে নগদ লভ্যাংশ পৃথক ব্যাংক হিসাবে রাখতে হবে। এই নগদ লভ্যাংশ বিইএফটিএন’র মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডার বা ইউনিটহোল্ডারের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি প্রদান করবে। ‘তবে স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংকার বা পোর্টফলিও ম্যানেজার মার্জিন ঋণগ্রহীতা গ্রাহক বা ডেবিট ব্যালেন্সের জন্য নগদ লভ্যাংশ চাইলে, কোম্পানি সমন্বিত কাস্টমারস ব্যাংক হিসাবে বা মার্চেন্ট ব্যাংক বা পোর্টফলিও ম্যানেজারের পৃথক ব্যাংক হিসাবে বিইএফটিএনের মাধ্যমে পাঠাবে’ বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
শুক্রবার, ০২ জুলাই ২০২১ , ১৮ আষাঢ় ১৪২৮ ২০ জিলক্বদ ১৪৪২
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক
শেয়ারবাজার স্থিতিশীল রাখতে গঠন হচ্ছে ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ বা ‘পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল’। এই লক্ষ্যে সম্প্রতি গেজেট প্রকাশ হয়েছে। চলতি বছরের ৩ মে কমিশন সভা করে এই তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের বিতরণ না হওয়া প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ নিয়ে এই তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ তহবিলটি পরিচালনার জন্য ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড রুলস, ২০২১’ প্রণয়ন করা হয়েছে। বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নামে গত রোববার এই গেজেট প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন কোম্পানির অবিতরণ করা লভ্যাংশ এবং ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে তিন বছরের অধিক সময় পড়ে থাকা অর্থ-শেয়ার এই তহবিলে স্থানান্তর করা হবে। তিন বছরের হিসাব হবে লভ্যাংশ ঘোষণা বা অনুমোদনের দিন বা রেকর্ড ডেট থেকে। এক্ষেত্রে নগদ লভ্যাংশ বা অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা থাকায় কোন সুদ অর্জিত হলে, তাও এ তহবিলে দিতে হবে। তহবিলে শেয়ার বা টাকা হস্তান্তরের পরও তা দাবি করতে পারবেন সংশ্নিষ্ট বিনিয়োগকারী। নিজের দাবির প্রমাণসহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বা সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি বা ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনের এক মাসের মধ্যে ওই বিনিয়োগকারীর শেয়ার বা টাকা ফেরত দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, তহবিল থেকে বাজারের তারল্যপ্রবাহ এবং গভীরতা বাড়াতে শেয়ার কেনাবেচা বা ধার দেয়া বা ধার নেয়া হবে। শেয়ার কেনাবেচা করতে গিয়ে যাতে তহবিলের কোন লোকসান না হয়, তার জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন করা হবে, থাকবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও অডিট কমিটি। শেয়ারবাজারকে সাপোর্ট দিতে গঠন করা তহবিলটি ব্যবস্থাপনায় ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নস থাকবে। যার মধ্যে একজন চেয়ারম্যান ও তিন জন সদস্য থাকবেন, যাদের মনোনীত করবে বিএসইসি। বোর্ড অব গভর্নসে বিএসইসি থেকে ৪ জন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি) থেকে একজন করে মনোনীত সদস্য থাকবেন। এছাড়াও একজন প্রফেশনাল চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্টস বা কস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনটেন্টস বা চার্টার্ড সেক্রেটারি বা চার্টার্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট এবং একজন চিফ অব অপারেশন (সিওও) থাকবেন।
জানা গেছে, প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার এ তহবিলের মধ্যে নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। আর বোনাস শেয়ার লভ্যাংশের বাজার মূল্য প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। এ তহবিলটি পরিচালনা করবে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান। গত ৩ মে এই তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিএসইসির পক্ষ থেকে শেয়ারহোল্ডারদের অদাবি করা লভ্যাংশের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) দায়িত্ব দেয়া হয়। ডিএসই ২১৮টি কোম্পানির কাছে অপরিশোধিত লভ্যাংশের তথ্য চেয়েছিল যার মধ্যে ২০৮টি কোম্পানি তথ্য দেয়। আর সিএসইর পক্ষ থেকে ১৫৩টি কোম্পানির কাছে তথ্য চাওয়া হলে ১২৭টি তথ্য দেয়।
তার আগে অদাবি করা লভ্যাংশের বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশ চূড়ান্ত অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের বুঝিয়ে দিতে হবে। আর মিউচুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ ট্রাস্টির অনুমোদনের ৪৫ দিনের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের বুঝিয়ে দিতে হবে। তবে কেউ লভ্যাংশ দাবি না করলে বা অপরিশোধিত থাকলে তা তিন বছর পরে কমিশনের নির্দেশিত ফান্ডে হস্তান্তর করতে হবে। এতে বলা হয়, ইস্যুয়ার কোম্পানি লভ্যাংশ বিতরণের জন্য পলিসি গঠন করবে যা বার্ষিক প্রতিবেদন ও কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে। কোম্পানিগুলোকে বার্ষিক বা চূড়ান্ত লভ্যাংশ অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে এবং অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ রেকর্ড ডেটের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের প্রদান করতে হবে। আর মিউচুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ ট্রাস্টির অনুমোদনের ৪৫ দিনের মধ্যে প্রদান করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, পরিচালনা পর্ষদ বা ট্রাস্টির ঘোষণার ১০ দিনের মধ্যে নগদ লভ্যাংশ পৃথক ব্যাংক হিসাবে রাখতে হবে। এই নগদ লভ্যাংশ বিইএফটিএন’র মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডার বা ইউনিটহোল্ডারের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি প্রদান করবে। ‘তবে স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংকার বা পোর্টফলিও ম্যানেজার মার্জিন ঋণগ্রহীতা গ্রাহক বা ডেবিট ব্যালেন্সের জন্য নগদ লভ্যাংশ চাইলে, কোম্পানি সমন্বিত কাস্টমারস ব্যাংক হিসাবে বা মার্চেন্ট ব্যাংক বা পোর্টফলিও ম্যানেজারের পৃথক ব্যাংক হিসাবে বিইএফটিএনের মাধ্যমে পাঠাবে’ বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।