জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে পুলিশ। পুলিশের এসব পদক্ষেপের কারণে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ভেঙে দেয়া সম্ভব হয়েছে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
হলি আর্টিজানে হামলার পর জঙ্গিবাদ নির্মূলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গঠন করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট নামে এ বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট। এরপর থেকে শুধু ঢাকাই নয় ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলায় জঙ্গি আস্তনাসহ বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে আসছে সিটিটিসি। পাশাপাশি দেশব্যাপী সেমিনারসহ নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জঙ্গিবাদবিরোধী সামাজিক কার্যক্রমও চালাচ্ছে এ ইউনিট।
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা এবং পরবর্তী সময়ে দেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযান এবং বর্তমানে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক পরিস্থিতি তুলে ধরতে আয়োজিত ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। জঙ্গিদের বর্তমান কর্মকা- নিয়ে কথা বলেন অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, হলি আর্টিজানের পর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ২৩টি হাইরিস্ক অভিযান চালিয়েছে এবং এসব অভিযানে ৬৩ জন জঙ্গি মারা গেছে। বর্তমানে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রেখেছে পুলিশ। যার কারণে দেশে নতুন কোন কোন হামলা করার সক্ষমতা নেই জঙ্গিদের। কাউন্টার টেরোরিজমের বিভিন্ন অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে ৫৩৫ শতাধিক জঙ্গি। সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে স্মার্ট অ্যাপ্রোচ পদক্ষেপ গ্রহণ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসির তৎপরতায় ভেঙে দেয়া হয়েছে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) কর্তৃক পরিচালনা করা হয়েছে ২৩টি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান। যাতে নিহত হয়েছে ৬৩ জন সন্ত্রাসী।
ব্রিফিংয়ের শুরুতে হলি আর্টিজান হামলায় নিহতদের স্মরণ করে তিনি বলেন, ভয়াবহ হামলার তদন্তভার সিটিটিসিকে দেয়া হলে সিটিটিসি স্বল্পতম সময়ে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত সব সন্ত্রাসী, পরিকল্পনাকারী, অর্থ যোগানদাতাসহ অভিযুক্ত সবাইকে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করে। হামলার এক বছরের মধ্যে চার্জশিট দেয়া হয়। চার্জশিট আমলে নিয়ে আদালত ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর আলোচিত এ মামলা রায় প্রদাণ করে যেখানে ৭ জনের মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান হিসেবে সিটিটিসি গ্রহণ করেছে কঠোর এবং কোমলের সমন্বিত পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সিটিটিসি আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন করেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়, পুলিশ সদস্য, কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষী, জনপ্রতিনিধি, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, এনজিও, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, ধর্মীয় পা-িত্যসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ উগ্রবাদী/সন্ত্রাসী (জামিনপ্রাপ্ত), তাদের বাবা-মা ও পরিবারের সদস্য, সন্ত্রাসী ঘটনার ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্য এবং বিভিন্ন অংশীজনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত কর্মশালা।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের অংশগ্রহণে এ পর্যন্ত এ ধরনের ১৭৪টি আলোচনা কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে ৩৯ হাজার ৪০০ জনকে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে একটি সমন্বিত কর্মকৌশল গ্রহণের গুরুত্ব উপলব্ধি করে সিটিটিসি ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভাগ, নাগরিক সমাজ, শিক্ষা-গবেষণা ক্ষেত্রে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, আন্তর্জাতিক এনজিওসমূহের প্রতিনিধিগণের অংশগ্রহণে দেশে প্রথমবারের মতো উগ্রবাদ বিরোধী জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
সাইবার স্পেসকে নিরাপদ রাখতে সিটিটিসি কর্তৃক সাইবার মনিটরিংসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। প্রধানমন্ত্রীর জঙ্গিবিরোধী জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে সিটিটিসি নিরলসভাবে কাজ করছে। জঙ্গি সংগঠনগুলোর বড় ধরনের নাশকতা করার সক্ষমতা এখন একেবারেই নেই। সিটিটিসি তাদের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে রাজধানীর গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় পাঁচজনের একটি সন্ত্রাসী দল উপস্থিত সাধারণ মানুষের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীদের নৃশংসতার বলি হয় দেশি-বিদেশি মোট ২০ জন নাগরিক। এদের প্রত্যেককেই নির্মমভাবে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে মারা যান ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, ১ জন ভারতীয়, ১ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভ’ত আমেরিকান এবং ২ জন বাংলাদেশি নাগরিক। সেদিনের সম্মিলিত প্রতিরোধ অভিযানে মোট ৩২ জনকে জীবিত উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় ৪ জুলাই, ২০১৬ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় মামলা রুজু হয়। তদন্তে ২১ জন আসামির সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। যাদের মধ্যে পাঁচজন অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত হন এবং পরবর্তী সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে আরও আটজন নিহত হন। বিজ্ঞ আদালত যুক্তিতর্ক শেষে সাতজনকে মৃত্যুদ- ও একজনকে খালাস প্রদান করেন।
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা
এদিকে গুলশানের হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় নিহতদের পাশাপাশি ওই হামলায় নিহত দুই পুলিশ সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন র্যাব এবং পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএসএ)। গতকাল বেলা ১০টায় গুলশান থানার সামনে (এসি রবিউল ও ওসি সালাউদ্দিনের) সম্মানে স্থাপিত ভাস্কর্য ‘দীপ্ত শপথ’ এ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা।
র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে র্যাবের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মনিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান ফুলেল শ্রদ্ধা জানান অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে।
অতিরিক্ত আইজিপি বলেন. র্যাব শুরু থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলে কাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটের পাশাপাশি র্যাব জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করেছে। হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় জড়িত জঙ্গিসহ জঙ্গিদের অর্থদাতা, প্রশিক্ষণদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এর ফলে জঙ্গিবাদ নির্মূলে সক্ষম হয়েছি আমরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জঙ্গিবাদ নির্মূল করে নিয়ন্ত্রণে রাখার সুফল পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
শুক্রবার, ০২ জুলাই ২০২১ , ১৮ আষাঢ় ১৪২৮ ২০ জিলক্বদ ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে পুলিশ। পুলিশের এসব পদক্ষেপের কারণে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ভেঙে দেয়া সম্ভব হয়েছে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
হলি আর্টিজানে হামলার পর জঙ্গিবাদ নির্মূলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গঠন করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট নামে এ বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট। এরপর থেকে শুধু ঢাকাই নয় ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলায় জঙ্গি আস্তনাসহ বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে আসছে সিটিটিসি। পাশাপাশি দেশব্যাপী সেমিনারসহ নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জঙ্গিবাদবিরোধী সামাজিক কার্যক্রমও চালাচ্ছে এ ইউনিট।
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা এবং পরবর্তী সময়ে দেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযান এবং বর্তমানে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক পরিস্থিতি তুলে ধরতে আয়োজিত ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। জঙ্গিদের বর্তমান কর্মকা- নিয়ে কথা বলেন অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, হলি আর্টিজানের পর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ২৩টি হাইরিস্ক অভিযান চালিয়েছে এবং এসব অভিযানে ৬৩ জন জঙ্গি মারা গেছে। বর্তমানে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রেখেছে পুলিশ। যার কারণে দেশে নতুন কোন কোন হামলা করার সক্ষমতা নেই জঙ্গিদের। কাউন্টার টেরোরিজমের বিভিন্ন অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে ৫৩৫ শতাধিক জঙ্গি। সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে স্মার্ট অ্যাপ্রোচ পদক্ষেপ গ্রহণ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসির তৎপরতায় ভেঙে দেয়া হয়েছে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) কর্তৃক পরিচালনা করা হয়েছে ২৩টি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান। যাতে নিহত হয়েছে ৬৩ জন সন্ত্রাসী।
ব্রিফিংয়ের শুরুতে হলি আর্টিজান হামলায় নিহতদের স্মরণ করে তিনি বলেন, ভয়াবহ হামলার তদন্তভার সিটিটিসিকে দেয়া হলে সিটিটিসি স্বল্পতম সময়ে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত সব সন্ত্রাসী, পরিকল্পনাকারী, অর্থ যোগানদাতাসহ অভিযুক্ত সবাইকে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করে। হামলার এক বছরের মধ্যে চার্জশিট দেয়া হয়। চার্জশিট আমলে নিয়ে আদালত ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর আলোচিত এ মামলা রায় প্রদাণ করে যেখানে ৭ জনের মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান হিসেবে সিটিটিসি গ্রহণ করেছে কঠোর এবং কোমলের সমন্বিত পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সিটিটিসি আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন করেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়, পুলিশ সদস্য, কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষী, জনপ্রতিনিধি, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, এনজিও, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, ধর্মীয় পা-িত্যসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ উগ্রবাদী/সন্ত্রাসী (জামিনপ্রাপ্ত), তাদের বাবা-মা ও পরিবারের সদস্য, সন্ত্রাসী ঘটনার ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্য এবং বিভিন্ন অংশীজনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত কর্মশালা।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের অংশগ্রহণে এ পর্যন্ত এ ধরনের ১৭৪টি আলোচনা কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে ৩৯ হাজার ৪০০ জনকে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে একটি সমন্বিত কর্মকৌশল গ্রহণের গুরুত্ব উপলব্ধি করে সিটিটিসি ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভাগ, নাগরিক সমাজ, শিক্ষা-গবেষণা ক্ষেত্রে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, আন্তর্জাতিক এনজিওসমূহের প্রতিনিধিগণের অংশগ্রহণে দেশে প্রথমবারের মতো উগ্রবাদ বিরোধী জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
সাইবার স্পেসকে নিরাপদ রাখতে সিটিটিসি কর্তৃক সাইবার মনিটরিংসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। প্রধানমন্ত্রীর জঙ্গিবিরোধী জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে সিটিটিসি নিরলসভাবে কাজ করছে। জঙ্গি সংগঠনগুলোর বড় ধরনের নাশকতা করার সক্ষমতা এখন একেবারেই নেই। সিটিটিসি তাদের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে রাজধানীর গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় পাঁচজনের একটি সন্ত্রাসী দল উপস্থিত সাধারণ মানুষের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীদের নৃশংসতার বলি হয় দেশি-বিদেশি মোট ২০ জন নাগরিক। এদের প্রত্যেককেই নির্মমভাবে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে মারা যান ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, ১ জন ভারতীয়, ১ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভ’ত আমেরিকান এবং ২ জন বাংলাদেশি নাগরিক। সেদিনের সম্মিলিত প্রতিরোধ অভিযানে মোট ৩২ জনকে জীবিত উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় ৪ জুলাই, ২০১৬ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় মামলা রুজু হয়। তদন্তে ২১ জন আসামির সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। যাদের মধ্যে পাঁচজন অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত হন এবং পরবর্তী সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে আরও আটজন নিহত হন। বিজ্ঞ আদালত যুক্তিতর্ক শেষে সাতজনকে মৃত্যুদ- ও একজনকে খালাস প্রদান করেন।
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা
এদিকে গুলশানের হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় নিহতদের পাশাপাশি ওই হামলায় নিহত দুই পুলিশ সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন র্যাব এবং পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএসএ)। গতকাল বেলা ১০টায় গুলশান থানার সামনে (এসি রবিউল ও ওসি সালাউদ্দিনের) সম্মানে স্থাপিত ভাস্কর্য ‘দীপ্ত শপথ’ এ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা।
র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে র্যাবের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মনিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান ফুলেল শ্রদ্ধা জানান অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে।
অতিরিক্ত আইজিপি বলেন. র্যাব শুরু থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলে কাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটের পাশাপাশি র্যাব জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করেছে। হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় জড়িত জঙ্গিসহ জঙ্গিদের অর্থদাতা, প্রশিক্ষণদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এর ফলে জঙ্গিবাদ নির্মূলে সক্ষম হয়েছি আমরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জঙ্গিবাদ নির্মূল করে নিয়ন্ত্রণে রাখার সুফল পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।