নতুন জনসংখ্যা নীতির বাস্তবায়ন করবে আসাম সরকার

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য মুসলিম ভূমিপুত্র নয় প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা অভিবাসী মুসলিম সম্প্রদায়কে নিশানা করে বলেছেন। তাদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণের কোন রকম পরিকল্পনা না থাকার কারণেই আসামে জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এখন থেকে আসাম সরকারের নতুন ‘দুই সন্তান’ জনসংখ্যা নীতি মেনে চলতে হবে।

যদি এই নীতি মান্য করা না হয় তাহলে তাদের কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। এই জনসংখ্যা নীতি নিয়ে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন, কংগ্রেস নেতৃত্বধীন ইউপিএসহ বিভিন্ন বিরোধী শিবিরের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

তবে যতই বিতর্ক হোক, রাজ্যে জনসংখ্যা নীতি কায়েম করতে সরকার যে বদ্ধপরিকর, এ কথা আজ বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব। এ কারণেই বিষয়টি নিয়ে যাতে অযথা সাম্প্রদায়িকতার মতো কিছু উপলব্ধি বোধ না হয় এবং আগামীতে বিরোধীরা সমালোচনা না করতে পারে, এজন্য নতুন জনসংখ্যা নীতি কার্য়কর করার আগে মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্মতি আদায়ে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এজন্য ৪ জুলাই রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের দেড়শ’ মুসলিম বিশিষ্টজনের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। আজ অটল বিহারী বাজপেয়ী ভবনে বিজেপির রাজ্য কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এই কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সরকারের প্রস্তাবিত জনসংখ্যা নীতি নিয়ে অযথাই বিরোধীরা সরকারকে আক্রমণ করছে। এটাকে ধর্মীয় সাম্প্রদায়কতার রূপ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এটাও তো বাস্তব, গত দুটি জনগণনায়নে হিন্দু সংখ্যা যেখানে ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে মুসলিম জনসংখ্যা ২৯ শতাংশ হারে বেড়েছে। অথচ এক সময় হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২২ শতাংশ। সেখান থেকে এখন কমতে কমতে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু এই যে মুসলিম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে তো কারও লাভ হচ্ছে না। বরং দিন দিন সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। দারিদ্র্যতা ও অশিক্ষার অবসান ঘটাতে হলে বাস্তবিকভাবেই জনসংখ্যা নীতি প্রণয়নের প্রয়োজন আছে। এটাকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টভঙ্গি থেকে দেখা উচিত নয়। বরং এটাকে আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা উচিত বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত।

সরকার নতুন জনসংখ্যা নীতি কার্যকর করার আগে মুসলিম সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন, এ কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত। তিনি বলেন, এখন মুসলিমদের মধ্যেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে সচেতনতা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ‘আমসু’-সহ দুটি মুসলিম সংগঠন আমার সঙ্গে কথা বলেছে। তারা সরকারের নতুন জনসংখ্যা নীতিকে সমর্থন জানিয়েছে। তবুও আমরা এ ব্যাপারে আরও ব্যাপকভাবে আলোচনা করতে চাই। তাই ৪ জুলাইয়ে ডাকা মুসলিম সম্প্রদায়ের দেড়শ’ বিশিষ্ট নাগরিককে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সরকার তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করবে। এরপরও কয়েকজনকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। প্রস্তাবিত জনসংখ্যা নীতি নিয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি যে একেবারেই পরিষ্কার, এ কথাই বোঝানোর চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

অন্যদিকে হিমন্তবিশ্ব শর্মারা পাঁচ ভাই, এ নিয়ে ইউডিএফ নেতারা কটাক্ষ করায়, এর পাল্টা জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি বলেন, কিছু ইউডিএফ নেতা আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা নিয়ে বঙ্গ-বিদ্রুপ করছেন, কিন্তু তাদের এ কথা বোঝা উচিত। সত্তর বছর আগের পরিস্থিতির সঙ্গে আজকের পরিস্থিতির তুলনা করে লাভ নেই। সত্তর বছর আগে জনসংখ্যার এত বিস্ফোরক রূপ ধারণ করেনি, তখন বেশি সন্তান জন্ম হলেও সমস্যা ছিল না। এখন দিন পাল্টেছে। তখনের সঙ্গে তুলনা করে বর্তমানের সমস্যাকে আড়াল করা উচিত নয়। আমারতো মাত্র দুটো সন্তান। তারপরও ইউডিএফ নেতারা আমাকে আক্রমণ করেছেন। আমার বাবা কেন পাঁচ সন্তানের জন্ম দিলেন, আমি কি করে এই প্রশ্নের জবাব দেব, শ্মশানে গিয়ে ইউডিএফ নেতারা আমার বাবাকে প্রশ্ন করতে পারেন। আসলে এসব প্রশ্ন তারাই করছে যারা নিজেরাই মাত্রাতিরিক্ত সন্তানের জন্ম দিয়েছন। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই জনসংখ্যার হার এভাবে বৃদ্ধি পেলে দেশ কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে এর উপলব্ধি করার প্রয়োজন। সরকার এই কারণেই জনসংখ্যা নীতি কার্যকর করতে বদ্ধপরকর।

ইউডিএফ নেতারা বলছেন, জনসংখ্যা নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিম অভিবাসিদের দায়ী করেছেন, কিন্তু এখানকার হিন্দু ও সমস্ত মুসলিম সম্প্রদায় একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলয়ে উঠা-বসা করে। এক সঙ্গে চলে। কিন্তু বিজেপির এই রাজ্য সরকার বাঙালি, অসমিয়া, হিন্দু, মুসলিম ভূমিপুত্র ও বাংলাদেশের মুসলিম অভিবাসীর কথা বলে বলে জনগণের মধ্যে বিভাজনের সৃষ্টি করছে।

শুক্রবার, ০২ জুলাই ২০২১ , ১৮ আষাঢ় ১৪২৮ ২০ জিলক্বদ ১৪৪২

নতুন জনসংখ্যা নীতির বাস্তবায়ন করবে আসাম সরকার

দীপক মুখার্জী, কলকাতা

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য মুসলিম ভূমিপুত্র নয় প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা অভিবাসী মুসলিম সম্প্রদায়কে নিশানা করে বলেছেন। তাদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণের কোন রকম পরিকল্পনা না থাকার কারণেই আসামে জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এখন থেকে আসাম সরকারের নতুন ‘দুই সন্তান’ জনসংখ্যা নীতি মেনে চলতে হবে।

যদি এই নীতি মান্য করা না হয় তাহলে তাদের কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। এই জনসংখ্যা নীতি নিয়ে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন, কংগ্রেস নেতৃত্বধীন ইউপিএসহ বিভিন্ন বিরোধী শিবিরের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

তবে যতই বিতর্ক হোক, রাজ্যে জনসংখ্যা নীতি কায়েম করতে সরকার যে বদ্ধপরিকর, এ কথা আজ বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব। এ কারণেই বিষয়টি নিয়ে যাতে অযথা সাম্প্রদায়িকতার মতো কিছু উপলব্ধি বোধ না হয় এবং আগামীতে বিরোধীরা সমালোচনা না করতে পারে, এজন্য নতুন জনসংখ্যা নীতি কার্য়কর করার আগে মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্মতি আদায়ে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এজন্য ৪ জুলাই রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের দেড়শ’ মুসলিম বিশিষ্টজনের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। আজ অটল বিহারী বাজপেয়ী ভবনে বিজেপির রাজ্য কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এই কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সরকারের প্রস্তাবিত জনসংখ্যা নীতি নিয়ে অযথাই বিরোধীরা সরকারকে আক্রমণ করছে। এটাকে ধর্মীয় সাম্প্রদায়কতার রূপ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এটাও তো বাস্তব, গত দুটি জনগণনায়নে হিন্দু সংখ্যা যেখানে ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে মুসলিম জনসংখ্যা ২৯ শতাংশ হারে বেড়েছে। অথচ এক সময় হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২২ শতাংশ। সেখান থেকে এখন কমতে কমতে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু এই যে মুসলিম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে তো কারও লাভ হচ্ছে না। বরং দিন দিন সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। দারিদ্র্যতা ও অশিক্ষার অবসান ঘটাতে হলে বাস্তবিকভাবেই জনসংখ্যা নীতি প্রণয়নের প্রয়োজন আছে। এটাকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টভঙ্গি থেকে দেখা উচিত নয়। বরং এটাকে আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা উচিত বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত।

সরকার নতুন জনসংখ্যা নীতি কার্যকর করার আগে মুসলিম সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন, এ কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত। তিনি বলেন, এখন মুসলিমদের মধ্যেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে সচেতনতা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ‘আমসু’-সহ দুটি মুসলিম সংগঠন আমার সঙ্গে কথা বলেছে। তারা সরকারের নতুন জনসংখ্যা নীতিকে সমর্থন জানিয়েছে। তবুও আমরা এ ব্যাপারে আরও ব্যাপকভাবে আলোচনা করতে চাই। তাই ৪ জুলাইয়ে ডাকা মুসলিম সম্প্রদায়ের দেড়শ’ বিশিষ্ট নাগরিককে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সরকার তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করবে। এরপরও কয়েকজনকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। প্রস্তাবিত জনসংখ্যা নীতি নিয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি যে একেবারেই পরিষ্কার, এ কথাই বোঝানোর চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

অন্যদিকে হিমন্তবিশ্ব শর্মারা পাঁচ ভাই, এ নিয়ে ইউডিএফ নেতারা কটাক্ষ করায়, এর পাল্টা জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি বলেন, কিছু ইউডিএফ নেতা আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা নিয়ে বঙ্গ-বিদ্রুপ করছেন, কিন্তু তাদের এ কথা বোঝা উচিত। সত্তর বছর আগের পরিস্থিতির সঙ্গে আজকের পরিস্থিতির তুলনা করে লাভ নেই। সত্তর বছর আগে জনসংখ্যার এত বিস্ফোরক রূপ ধারণ করেনি, তখন বেশি সন্তান জন্ম হলেও সমস্যা ছিল না। এখন দিন পাল্টেছে। তখনের সঙ্গে তুলনা করে বর্তমানের সমস্যাকে আড়াল করা উচিত নয়। আমারতো মাত্র দুটো সন্তান। তারপরও ইউডিএফ নেতারা আমাকে আক্রমণ করেছেন। আমার বাবা কেন পাঁচ সন্তানের জন্ম দিলেন, আমি কি করে এই প্রশ্নের জবাব দেব, শ্মশানে গিয়ে ইউডিএফ নেতারা আমার বাবাকে প্রশ্ন করতে পারেন। আসলে এসব প্রশ্ন তারাই করছে যারা নিজেরাই মাত্রাতিরিক্ত সন্তানের জন্ম দিয়েছন। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই জনসংখ্যার হার এভাবে বৃদ্ধি পেলে দেশ কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে এর উপলব্ধি করার প্রয়োজন। সরকার এই কারণেই জনসংখ্যা নীতি কার্যকর করতে বদ্ধপরকর।

ইউডিএফ নেতারা বলছেন, জনসংখ্যা নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিম অভিবাসিদের দায়ী করেছেন, কিন্তু এখানকার হিন্দু ও সমস্ত মুসলিম সম্প্রদায় একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলয়ে উঠা-বসা করে। এক সঙ্গে চলে। কিন্তু বিজেপির এই রাজ্য সরকার বাঙালি, অসমিয়া, হিন্দু, মুসলিম ভূমিপুত্র ও বাংলাদেশের মুসলিম অভিবাসীর কথা বলে বলে জনগণের মধ্যে বিভাজনের সৃষ্টি করছে।