সিন্ডিকেট সভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের শাস্তি

সিন্ডিকেট সভায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই শিক্ষকের শাস্তি নিয়ে ফের আলোচনায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এদের মধ্যে মাহবুবুল হক ভূঁইয়া নামে এক শিক্ষককে গণমাধ্যমে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ এনে বিভাগীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং কাজী এম আনিছুল ইসলাম নামে অপর এক শিক্ষককে দেয়া হয়েছে পদাবনতি। এ ঘটনায় রেজিস্ট্রারের কারসাজি রয়েছে বলে জানান ওই দুই শিক্ষক।

তবে রেজিস্ট্রার বলছেন, সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, কারও সঙ্গে আমার কোন আক্রোশ নেই। এদিকে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেয়ায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানামহলে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষে বি ইউনিটের (কলা ও মানবিক অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষায় অনুপস্থিত থেকেও মেধা তালিকায় ১২তম স্থান পেয়েছে এক শিক্ষার্থী। বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন মহলে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রেস ব্রিফিং করে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন তদন্ত কমিটি। এতে উল্লেখ করা হয়, এক শিক্ষার্থী ওএমআর শিটে ভুলবশত রোল নাম্বারের শেষের অংশে ১ এর স্থলে ০ লেখায় এমন ফলাফল প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এই অসঙ্গতির বিষয়টি বি-ইউনিট কমিটিকে জানায় প্রবেশপত্র বাছাই কমিটির সদস্য সচিব মাহবুবুল হক ভূঁইয়া। পরে গণমাধ্যমে ঘটনাটি উঠে এলে দুটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কার অবহেলায় এ ঘটনা ঘটেছে এবং কিভাবে গণমাধ্যম এ তথ্য পেয়েছে তা খুঁজে বের করতে বলা হয় পৃথক তদন্ত কমিটিকে।

এদিকে এ ঘটনার দেড় বছর পর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও মেধা তালিকায় একজনের নাম আসার তথ্য গণমাধ্যমকে জানানোর অভিযোগে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে সিন্ডিকেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এদিকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৯তম সিন্ডিকেট সভায় একই বিভাগের শিক্ষক কাজী এম আনিছুল ইসলামকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হলেও ৮০তম সিন্ডিকেট সভায় অভিজ্ঞতা সনদে টু রেজিস্ট্রার না লেখার অজুহাতে ওই পদোন্নতি স্থগিত করা হয়।

সংশোধন করে পুনরায় আবেদন করার জন্যও তাকে বলা হয়। সিন্ডিকেট সভায় এমন সিদ্ধান্তে হতবাক দুই শিক্ষক। এ ঘটনার জন্য তারা রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. আবু তাহেরকে দায়ী করেছেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া জানান, ‘গণমাধ্যমে তথ্য দিয়েছি উল্লেখ করে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগটুকু আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেউ যদি গণমাধ্যমে সত্য তথ্য দেয়, সেটা আমি অপরাধ বলে মনে করি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ইউনিটে যে ঘটনা ঘটেছে, তা দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফিলতির জন্য। এর নেপথ্যে রয়েছেন ওই সময়ের ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক ড. মাসুদা কামাল এবং সদস্য সচিব ড. শামীমুল ইসলাম। তাদের গাফিলতির কারণেই অনুপস্থিত থেকেও এক শিক্ষার্থী ১২তম হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. আবু তাহের পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ে তাদের বাঁচানোর জন্য আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। যাদের কর্তব্যে অবহেলা ও গাফিলতির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে আমি তাদের বিচার চাই।’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী এম আনিছুল ইসলাম জানান, ‘গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য আবেদন করি। তা প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরে যায়। রেজিস্ট্রার দপ্তর শেষে বোর্ড ফেস করার সিন্ডিকেট সভায় আমাকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়। এরপর থেকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধা তা পেয়ে আসছি। তিনি বলেন, আমি আগে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম, সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখানে যে কাগজ দেয়া হয়েছে- এতে ‘টু হোম ইট মে কনসার্ন’ লেখা আছে। সেখানে ‘টু রেজিস্ট্রার’ লেখা নেই। যে কারণে আমার এটা নিয়ে একটা আপত্তি তৈরি হয়েছে।

বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি আমার সেই পদোন্নতি বাতিল করা হয়েছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে- রেজিস্ট্রার আমাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতেই এমন অপচেষ্টা করেছেন। এখানে যোগদানের পর থেকেই এ ধরনের বিভিন্ন আলামত পেয়েছি। পদোন্নতি বাতিলের বিষয়টি নিয়ে আমি ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত এবং খুবই বিব্রত।’ দুই শিক্ষকের অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘উনারা (শিক্ষকদ্বয়) আমাদের কলিগ (সহকর্মী)। উনারা যেভাবে আমাকে জড়িয়ে কথা বলছেন, তা সঠিক নয়। সিন্ডিকেট সভায় আমার দায়িত্ব হচ্ছে- এজেন্ডা উপস্থাপন করা। তিনি বলেন, উনাদের প্রতি আমার কোন আক্রোশ নেই। সাংবাদিকতার শিক্ষকদের আমি যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি। দুটি বিষয়ে আমার নূন্যতম কোন সম্পৃক্ততা নেই। ইনটেনশনালি আমি কোন শিক্ষকের সম্মানহানির বিষয়টি চিন্তাও করি না। আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ দুঃখজনক এবং ইনটেনশনালি (উদ্দেশ্যপ্রণোদিত) করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘সিন্ডিকেটে বলা আছে- যেহেতু আমাদের নিজস্ব কোন বিধি নেই, তাই আমরা সরকারি বিধি অনুযায়ী শাস্তি দেব অথবা ক্ষমা করব যেটাই হোক। শুধু মাহবুব নয়, আরও ৪-৫ জনের নাম এসেছে। আমি নিয়ম মাফিক কাজ করব। কারও প্রতি অন্যায় করার কোন ইচ্ছা আমার নেই, যা হয়েছে তা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত। তদন্ত কমিটি দেখেছে- কে দায়িত্বে অবহেলা করেছে, কে মিডিয়াকে বলেছে। এ বিষয়গুলো তারা খুঁজে বের করেছে। যতটুকু তথ্যপ্রমাণ প্রয়োজন, মোবাইল ফোন ডিক্টেটেড ও ম্যাসেজ এগুলো দিয়ে ওরা তথ্যগুলো আইডেন্টিফাই করেছে। এসবের ওপর ভিত্তি করে নিয়মানুযায়ী শোকজ হবে। শোকজে উত্তর সন্তোষজনক হলে দায়মুক্ত হবে, অন্যথায় বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রেজিস্ট্রারের কারসাজি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রারের কোন ক্ষমতাই নেই ক্ষুব্ধ হওয়ার।’

এদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘বিদ্বেষমূলক শাস্তি’ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। বৃহস্পতিবার দেয়া এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এ দাবি জানায়। এতে বলা হয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত এবং একই বিভাগের শিক্ষক কাজী এম আনিছুল ইসলামের পদোন্নতি বাতিলের যে বিদ্বেষমূলক সিদ্ধান্ত, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।

শুক্রবার, ০২ জুলাই ২০২১ , ১৮ আষাঢ় ১৪২৮ ২০ জিলক্বদ ১৪৪২

সিন্ডিকেট সভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের শাস্তি

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুমিল্লা

সিন্ডিকেট সভায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই শিক্ষকের শাস্তি নিয়ে ফের আলোচনায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এদের মধ্যে মাহবুবুল হক ভূঁইয়া নামে এক শিক্ষককে গণমাধ্যমে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ এনে বিভাগীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং কাজী এম আনিছুল ইসলাম নামে অপর এক শিক্ষককে দেয়া হয়েছে পদাবনতি। এ ঘটনায় রেজিস্ট্রারের কারসাজি রয়েছে বলে জানান ওই দুই শিক্ষক।

তবে রেজিস্ট্রার বলছেন, সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, কারও সঙ্গে আমার কোন আক্রোশ নেই। এদিকে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেয়ায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানামহলে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষে বি ইউনিটের (কলা ও মানবিক অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষায় অনুপস্থিত থেকেও মেধা তালিকায় ১২তম স্থান পেয়েছে এক শিক্ষার্থী। বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন মহলে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রেস ব্রিফিং করে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন তদন্ত কমিটি। এতে উল্লেখ করা হয়, এক শিক্ষার্থী ওএমআর শিটে ভুলবশত রোল নাম্বারের শেষের অংশে ১ এর স্থলে ০ লেখায় এমন ফলাফল প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এই অসঙ্গতির বিষয়টি বি-ইউনিট কমিটিকে জানায় প্রবেশপত্র বাছাই কমিটির সদস্য সচিব মাহবুবুল হক ভূঁইয়া। পরে গণমাধ্যমে ঘটনাটি উঠে এলে দুটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কার অবহেলায় এ ঘটনা ঘটেছে এবং কিভাবে গণমাধ্যম এ তথ্য পেয়েছে তা খুঁজে বের করতে বলা হয় পৃথক তদন্ত কমিটিকে।

এদিকে এ ঘটনার দেড় বছর পর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও মেধা তালিকায় একজনের নাম আসার তথ্য গণমাধ্যমকে জানানোর অভিযোগে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে সিন্ডিকেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এদিকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৯তম সিন্ডিকেট সভায় একই বিভাগের শিক্ষক কাজী এম আনিছুল ইসলামকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হলেও ৮০তম সিন্ডিকেট সভায় অভিজ্ঞতা সনদে টু রেজিস্ট্রার না লেখার অজুহাতে ওই পদোন্নতি স্থগিত করা হয়।

সংশোধন করে পুনরায় আবেদন করার জন্যও তাকে বলা হয়। সিন্ডিকেট সভায় এমন সিদ্ধান্তে হতবাক দুই শিক্ষক। এ ঘটনার জন্য তারা রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. আবু তাহেরকে দায়ী করেছেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া জানান, ‘গণমাধ্যমে তথ্য দিয়েছি উল্লেখ করে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগটুকু আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেউ যদি গণমাধ্যমে সত্য তথ্য দেয়, সেটা আমি অপরাধ বলে মনে করি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ইউনিটে যে ঘটনা ঘটেছে, তা দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফিলতির জন্য। এর নেপথ্যে রয়েছেন ওই সময়ের ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক ড. মাসুদা কামাল এবং সদস্য সচিব ড. শামীমুল ইসলাম। তাদের গাফিলতির কারণেই অনুপস্থিত থেকেও এক শিক্ষার্থী ১২তম হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. আবু তাহের পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ে তাদের বাঁচানোর জন্য আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। যাদের কর্তব্যে অবহেলা ও গাফিলতির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে আমি তাদের বিচার চাই।’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী এম আনিছুল ইসলাম জানান, ‘গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য আবেদন করি। তা প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরে যায়। রেজিস্ট্রার দপ্তর শেষে বোর্ড ফেস করার সিন্ডিকেট সভায় আমাকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়। এরপর থেকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধা তা পেয়ে আসছি। তিনি বলেন, আমি আগে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম, সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখানে যে কাগজ দেয়া হয়েছে- এতে ‘টু হোম ইট মে কনসার্ন’ লেখা আছে। সেখানে ‘টু রেজিস্ট্রার’ লেখা নেই। যে কারণে আমার এটা নিয়ে একটা আপত্তি তৈরি হয়েছে।

বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি আমার সেই পদোন্নতি বাতিল করা হয়েছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে- রেজিস্ট্রার আমাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতেই এমন অপচেষ্টা করেছেন। এখানে যোগদানের পর থেকেই এ ধরনের বিভিন্ন আলামত পেয়েছি। পদোন্নতি বাতিলের বিষয়টি নিয়ে আমি ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত এবং খুবই বিব্রত।’ দুই শিক্ষকের অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘উনারা (শিক্ষকদ্বয়) আমাদের কলিগ (সহকর্মী)। উনারা যেভাবে আমাকে জড়িয়ে কথা বলছেন, তা সঠিক নয়। সিন্ডিকেট সভায় আমার দায়িত্ব হচ্ছে- এজেন্ডা উপস্থাপন করা। তিনি বলেন, উনাদের প্রতি আমার কোন আক্রোশ নেই। সাংবাদিকতার শিক্ষকদের আমি যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি। দুটি বিষয়ে আমার নূন্যতম কোন সম্পৃক্ততা নেই। ইনটেনশনালি আমি কোন শিক্ষকের সম্মানহানির বিষয়টি চিন্তাও করি না। আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ দুঃখজনক এবং ইনটেনশনালি (উদ্দেশ্যপ্রণোদিত) করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘সিন্ডিকেটে বলা আছে- যেহেতু আমাদের নিজস্ব কোন বিধি নেই, তাই আমরা সরকারি বিধি অনুযায়ী শাস্তি দেব অথবা ক্ষমা করব যেটাই হোক। শুধু মাহবুব নয়, আরও ৪-৫ জনের নাম এসেছে। আমি নিয়ম মাফিক কাজ করব। কারও প্রতি অন্যায় করার কোন ইচ্ছা আমার নেই, যা হয়েছে তা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত। তদন্ত কমিটি দেখেছে- কে দায়িত্বে অবহেলা করেছে, কে মিডিয়াকে বলেছে। এ বিষয়গুলো তারা খুঁজে বের করেছে। যতটুকু তথ্যপ্রমাণ প্রয়োজন, মোবাইল ফোন ডিক্টেটেড ও ম্যাসেজ এগুলো দিয়ে ওরা তথ্যগুলো আইডেন্টিফাই করেছে। এসবের ওপর ভিত্তি করে নিয়মানুযায়ী শোকজ হবে। শোকজে উত্তর সন্তোষজনক হলে দায়মুক্ত হবে, অন্যথায় বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রেজিস্ট্রারের কারসাজি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রারের কোন ক্ষমতাই নেই ক্ষুব্ধ হওয়ার।’

এদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘বিদ্বেষমূলক শাস্তি’ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। বৃহস্পতিবার দেয়া এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এ দাবি জানায়। এতে বলা হয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত এবং একই বিভাগের শিক্ষক কাজী এম আনিছুল ইসলামের পদোন্নতি বাতিলের যে বিদ্বেষমূলক সিদ্ধান্ত, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।