মহামারি নিয়ন্ত্রণের কাজে জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি

মতিউর রহমান ও শিশির রেজা

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে দেশের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। করোনা প্রতিরোধে ১ জুলাই থেকে সারাদেশে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। পরবর্তীকালে সময়সীমা আরও বাড়তে পারে। তবে শুধু লকডাউন ঘোষণা করে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে না বলে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এক্ষেত্রে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষজ্ঞরা প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সহায়তা ছাড়া এই মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার এই ধরন আমাদের জন্য অতিমাত্রায় বিপদজনক। এই ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেও মানুষকে আক্রান্ত করতে সক্ষম। ভারতে এই ভাইরাসের ভয়াবহতা আমরা কিছুদিন আগে প্রত্যক্ষ করেছি। সেখানে বিভিন্ন প্রদেশের শহর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের শোচনীয় অবস্থা ও তাদের স্বজনদের আহাজারি আমরা গণমাধ্যমে প্রতিদিন দেখেছি। হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট, চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দিবারাত্র ধরে অবিরাম সেবাদান-উদ্ভূত ক্লান্তি ও অবসাদ, শ্মশানে লাশের দীর্ঘ সারি, লাশ দাহ কার্যে নিয়োজিত কর্মীদের সংকটাপন্ন অবস্থা এসব কিছুই আমরা পড়েছি সংবাদপত্রে এবং দেখেছি দেশি-বিদেশি টেলিভিশনের পর্দায়।

তবে এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবে আমাদের এগিয়ে আসা দরকার। এই ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার রোধ করতে, নিজের এবং নিজেদের নিকটতম ব্যক্তিদের রক্ষা করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সরকার ও বিশেষজ্ঞদের দ্বারা নির্দেশিত নিম্নœলিখিত বিধিনিষেধগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ এবং অনুশীলন করা অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সামাজিক দূরত্ব বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব এবং শারীরিক দূরত্ব উভয়ই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। এর অর্থ অন্য ব্যক্তিদের থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা এবং এই রোগটির অধিক ছড়িয়ে পড়া রোধ করা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুবই জরুরি, কারণ আক্রান্ত কেউ হাঁচি কাশি দিলে তার সূক্ষ্ম থুতুকতা যাকে ইংরেজিতে ‘ড্রপলেট’ বলা হয় তা বাইরে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এই ড্রপলেটের মধ্যে ঠাসা থাকে ভাইরাস। যেসব জায়গায় এই কতাগুলো পড়ে সেসব জায়গায় যদি কেউ হাত দিয়ে স্পর্শ করে এবং তারপর সে সেই অপরিষ্কার হাত মুখে দেয় অথবা খুব কাছ থেকে সেই কতাগুলো নিঃশ্বাসের মধ্যে দিয়ে কারো শরীরে ঢোকে, সে সংক্রমিত হবে। কেউ যদি অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বেশি সময় না কাটায়, অন্যদের খুব কাছে না যায়, তার সংক্রমিত হবার সম্ভাবনাও কমবে। চিকিৎসকরা এই কৌশলটিকে করোনা সংক্রমণরোধের কার্যকর উপায় হিসেবে উল্লেখ করছেন এবং বিশে^র অনেক দেশ এ কৌশল অবলম্বন করে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে। এ কারণেই এটি সর্বত্র প্রয়োগ করা হচ্ছে। সুতরাং, আমাদের অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

মাস্ক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে। মানুষের হাঁচি এবং কাশির মাধ্যমে করোনভাইরাস ফোঁটা আকারে ছড়িয়ে যায় যা অন্যদেরকেও আক্রান্ত করে। শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত হলেও আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং মাস্ক পরা অবশ্য কর্তব্য। শতভাগ মানুষের মাস্ক পরা এখন প্রধান কর্তব্য।

নিয়মিত হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করেও করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়া থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়। সুতরাং, সাবান এবং পানি দিয়ে ঘন ঘন আমাদের হাত ধোয়ার চেষ্টা করতে হবে। সাবান ও পানি পাওয়া না গেলে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহারও আমাদের সুরক্ষা দিতে পারে।

যতটা সম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা জানি না আমাদের মধ্যে কে করোনা সংক্রমিত। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে গণজমায়েত এবং ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। কোন স্থানে ভ্রমণের সময় ঘন ঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা এবং বাস, ট্রেন, লঞ্চ বা অন্যান্য যানবাহনের ভিতরে কোনোও কিছু স্পর্শ না করা। অন্যান্য যাত্রীদের থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে।

জীবিকা নির্বাহ এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকার জন্য বাসাবাড়িতে অবস্থান করে কাজ করা। যদি কারো অফিসের কাজ বাড়ি থেকে শেষ করা যায় তবে অফিসে না যাওয়ায় ভালো। কিন্তু দেশের জনসাধারণের একটি বিশাল অংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে, সুতরাং তাদের পক্ষে বাড়ি থেকে কাজ করা কঠিন। এই পরিস্থিতিতে তাদের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত।

খুব জরুরি প্রয়োজন না হলে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা না করায় ভালো। যাদের সুযোগ আছে তারা তাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ করতে পারেন। একইভাবে, আমাদেরকে হোটেল বা রেস্তোরাঁয় শারীরিকভাবে উপস্থিত না হয়ে অনলাইনে পছন্দের খাবার অর্ডার করা যেতে পারে। যাদের সে সুযোগ নেই তাদের বিকল্প চিন্তা করতে হবে। প্রয়োজনে বাড়িতে সেই খাবার তৈরি করতে পারে।

এ কথা সত্য যে আমরা সর্বদা ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে পারব না কারণ এটি মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সুতরাং, আমাদেরকে সুরক্ষিত শারীরিক এবং সামাজিক ক্রিয়াকলাপে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

যদিও দেশে করোনার টিকার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে তবে সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা বা ভ্যাকসিন পাওয়ার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে দেশে ভ্যাকসিন দেবার কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে কাজেই যতদ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন পেলে তা নিতে হবে। কারণ, ভ্যাকসিনের মাধ্যমে নিজেকে এবং অপরকেও সুরক্ষিত রাখা সম্ভব। ভ্যাকসিন এ পর্যন্ত অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ তবে টিকা নেওয়া আরো গুরুত্বপূর্ণ।

করোনার বিস্তাররোধে আরোপিত লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের নিম্ন আয়ের কর্মজীবী মানুষ। একাধিক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, করোনা শুরু থেকে এপর্যন্ত দেশে প্রায় আড়াই কোটি বা তারও বেশি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। সুতরাং এই বিপুল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ এগিয়ে এলে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব।

করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে পাড়া, মহল্লা বা গ্রামভিত্তিক কমিটি গঠন করা যেতে পারে যেখান থেকে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা, দরিদ্র মানুষদের খাদ্য সহায়তা প্রদান ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় সহযোগিতা যেমন অ্যাম্বুলেন্স ডাকা, হাসপাতালে নেওয়া, অক্সিজেনের সরবরাহ ইত্যাদি ব্যবস্থা নিতে পারে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের প্রশাসন যেমন গ্রামপর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে। এসব প্রশাসনের মাধ্যমে সরকার জনসাধারণের মধ্যে খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তা, অনুদান ও জরুরি ঔষধ সরবরাহ করতে পারে। বেসরকারি সংস্থাগুলোও এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

[লেখক : গবেষণা পরামর্শক, হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (এইচডিআরসি); শিশির রেজা, পরিবেশ বিষয়ক বিশ্লেষক ও সহযোগী সদস্য, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি]

শুক্রবার, ০২ জুলাই ২০২১ , ১৮ আষাঢ় ১৪২৮ ২০ জিলক্বদ ১৪৪২

মহামারি নিয়ন্ত্রণের কাজে জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি

মতিউর রহমান ও শিশির রেজা

image

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে দেশের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। করোনা প্রতিরোধে ১ জুলাই থেকে সারাদেশে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। পরবর্তীকালে সময়সীমা আরও বাড়তে পারে। তবে শুধু লকডাউন ঘোষণা করে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে না বলে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এক্ষেত্রে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষজ্ঞরা প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সহায়তা ছাড়া এই মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার এই ধরন আমাদের জন্য অতিমাত্রায় বিপদজনক। এই ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেও মানুষকে আক্রান্ত করতে সক্ষম। ভারতে এই ভাইরাসের ভয়াবহতা আমরা কিছুদিন আগে প্রত্যক্ষ করেছি। সেখানে বিভিন্ন প্রদেশের শহর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের শোচনীয় অবস্থা ও তাদের স্বজনদের আহাজারি আমরা গণমাধ্যমে প্রতিদিন দেখেছি। হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট, চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দিবারাত্র ধরে অবিরাম সেবাদান-উদ্ভূত ক্লান্তি ও অবসাদ, শ্মশানে লাশের দীর্ঘ সারি, লাশ দাহ কার্যে নিয়োজিত কর্মীদের সংকটাপন্ন অবস্থা এসব কিছুই আমরা পড়েছি সংবাদপত্রে এবং দেখেছি দেশি-বিদেশি টেলিভিশনের পর্দায়।

তবে এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবে আমাদের এগিয়ে আসা দরকার। এই ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার রোধ করতে, নিজের এবং নিজেদের নিকটতম ব্যক্তিদের রক্ষা করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সরকার ও বিশেষজ্ঞদের দ্বারা নির্দেশিত নিম্নœলিখিত বিধিনিষেধগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ এবং অনুশীলন করা অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সামাজিক দূরত্ব বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব এবং শারীরিক দূরত্ব উভয়ই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। এর অর্থ অন্য ব্যক্তিদের থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা এবং এই রোগটির অধিক ছড়িয়ে পড়া রোধ করা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুবই জরুরি, কারণ আক্রান্ত কেউ হাঁচি কাশি দিলে তার সূক্ষ্ম থুতুকতা যাকে ইংরেজিতে ‘ড্রপলেট’ বলা হয় তা বাইরে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এই ড্রপলেটের মধ্যে ঠাসা থাকে ভাইরাস। যেসব জায়গায় এই কতাগুলো পড়ে সেসব জায়গায় যদি কেউ হাত দিয়ে স্পর্শ করে এবং তারপর সে সেই অপরিষ্কার হাত মুখে দেয় অথবা খুব কাছ থেকে সেই কতাগুলো নিঃশ্বাসের মধ্যে দিয়ে কারো শরীরে ঢোকে, সে সংক্রমিত হবে। কেউ যদি অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বেশি সময় না কাটায়, অন্যদের খুব কাছে না যায়, তার সংক্রমিত হবার সম্ভাবনাও কমবে। চিকিৎসকরা এই কৌশলটিকে করোনা সংক্রমণরোধের কার্যকর উপায় হিসেবে উল্লেখ করছেন এবং বিশে^র অনেক দেশ এ কৌশল অবলম্বন করে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে। এ কারণেই এটি সর্বত্র প্রয়োগ করা হচ্ছে। সুতরাং, আমাদের অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

মাস্ক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে। মানুষের হাঁচি এবং কাশির মাধ্যমে করোনভাইরাস ফোঁটা আকারে ছড়িয়ে যায় যা অন্যদেরকেও আক্রান্ত করে। শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত হলেও আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং মাস্ক পরা অবশ্য কর্তব্য। শতভাগ মানুষের মাস্ক পরা এখন প্রধান কর্তব্য।

নিয়মিত হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করেও করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়া থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়। সুতরাং, সাবান এবং পানি দিয়ে ঘন ঘন আমাদের হাত ধোয়ার চেষ্টা করতে হবে। সাবান ও পানি পাওয়া না গেলে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহারও আমাদের সুরক্ষা দিতে পারে।

যতটা সম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা জানি না আমাদের মধ্যে কে করোনা সংক্রমিত। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে গণজমায়েত এবং ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। কোন স্থানে ভ্রমণের সময় ঘন ঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা এবং বাস, ট্রেন, লঞ্চ বা অন্যান্য যানবাহনের ভিতরে কোনোও কিছু স্পর্শ না করা। অন্যান্য যাত্রীদের থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে।

জীবিকা নির্বাহ এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকার জন্য বাসাবাড়িতে অবস্থান করে কাজ করা। যদি কারো অফিসের কাজ বাড়ি থেকে শেষ করা যায় তবে অফিসে না যাওয়ায় ভালো। কিন্তু দেশের জনসাধারণের একটি বিশাল অংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে, সুতরাং তাদের পক্ষে বাড়ি থেকে কাজ করা কঠিন। এই পরিস্থিতিতে তাদের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত।

খুব জরুরি প্রয়োজন না হলে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা না করায় ভালো। যাদের সুযোগ আছে তারা তাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ করতে পারেন। একইভাবে, আমাদেরকে হোটেল বা রেস্তোরাঁয় শারীরিকভাবে উপস্থিত না হয়ে অনলাইনে পছন্দের খাবার অর্ডার করা যেতে পারে। যাদের সে সুযোগ নেই তাদের বিকল্প চিন্তা করতে হবে। প্রয়োজনে বাড়িতে সেই খাবার তৈরি করতে পারে।

এ কথা সত্য যে আমরা সর্বদা ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে পারব না কারণ এটি মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সুতরাং, আমাদেরকে সুরক্ষিত শারীরিক এবং সামাজিক ক্রিয়াকলাপে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

যদিও দেশে করোনার টিকার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে তবে সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা বা ভ্যাকসিন পাওয়ার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে দেশে ভ্যাকসিন দেবার কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে কাজেই যতদ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন পেলে তা নিতে হবে। কারণ, ভ্যাকসিনের মাধ্যমে নিজেকে এবং অপরকেও সুরক্ষিত রাখা সম্ভব। ভ্যাকসিন এ পর্যন্ত অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ তবে টিকা নেওয়া আরো গুরুত্বপূর্ণ।

করোনার বিস্তাররোধে আরোপিত লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের নিম্ন আয়ের কর্মজীবী মানুষ। একাধিক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, করোনা শুরু থেকে এপর্যন্ত দেশে প্রায় আড়াই কোটি বা তারও বেশি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। সুতরাং এই বিপুল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ এগিয়ে এলে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব।

করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে পাড়া, মহল্লা বা গ্রামভিত্তিক কমিটি গঠন করা যেতে পারে যেখান থেকে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা, দরিদ্র মানুষদের খাদ্য সহায়তা প্রদান ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় সহযোগিতা যেমন অ্যাম্বুলেন্স ডাকা, হাসপাতালে নেওয়া, অক্সিজেনের সরবরাহ ইত্যাদি ব্যবস্থা নিতে পারে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের প্রশাসন যেমন গ্রামপর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে। এসব প্রশাসনের মাধ্যমে সরকার জনসাধারণের মধ্যে খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তা, অনুদান ও জরুরি ঔষধ সরবরাহ করতে পারে। বেসরকারি সংস্থাগুলোও এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

[লেখক : গবেষণা পরামর্শক, হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (এইচডিআরসি); শিশির রেজা, পরিবেশ বিষয়ক বিশ্লেষক ও সহযোগী সদস্য, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি]