কোটি টাকা নিয়ে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট উধাও

ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের কার্যালয় ঘেরাও

যশোরের বাঘারপাড়ায় গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট জাহিদ হাসান। তিনি উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের হলদা গ্রামের মৃত জিন্দার মোল্যার ছেলে ও চতুরবাড়িয়া বাজারে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যবস্থাপক হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন। গত ২৯ জুন ঘটনাটি ঘটার পর থেকে দুদিন ধরে টাকা ফেরতের দাবিতে প্রতারণার শিকার ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা এজেন্ট আউটলেট ঘেরাও করে মিছিল-সমাবেশ করেছে। এ ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাদি হয়ে তার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে।

ব্যাংক এশিয়ার যশোরের জনসংযোগ কর্মকর্তা লিকু আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পেয়েছি। ঢাকা থেকে ব্যাংকের দু’জন নিরীক্ষক এসেছেন। তাদের সঙ্গে সরেজমিনে তদন্ত করে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৪ লাখ টাকার হিসাব পেয়েছি। তবে গ্রাহকরা এজেন্ট ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার কোন রশিদ দেখাতে পারেননি। এ ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাদি হয়ে জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাঘারপাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, ২০২০ সালে বাঘারপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী চতুরবাড়িয়া বাজারে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট আউটলেটটি উদ্বোধন করা হয়। ব্যবস্থাপক হিসাবে নিয়োগ পান জাহিদ হাসান। আউটলেটটিতে সঞ্চয় স্কিম (ডিপিএস), মেয়াদি আমানত ও সঞ্চয়ী হিসাব মিলে প্রায় এক হাজার গ্রাহক লেনদেন করতেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই মেয়াদি আমানতের গ্রাহক। এছাড়া আউটলেটটি থেকে বিদেশ থেকে পাঠানো আয় (রেমিট্যান্স) বিতরণ করা হতো। আবার প্রতি মাসে দুই হাজারেরও বেশি গ্রাহক এখানে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন। এই অঞ্চলের অধিকাংশ পরিবারের কর্তা প্রবাসী হওয়ায় তাদের স্বজনদের টার্গেট করেন জাহিদ হাসান। ব্যাংকিং নীতিমালা উপক্ষো করে উচ্চ হারে লাভের প্রলোভন দেখিয়ে তার মাধ্যমে টাকা জমা রাখতে প্রলুব্ধ করেন। অতি মুনাফার আশায় অনেক মানুষ টাকা জমা রাখেন। তবে এজেন্ট জাহিদ হাসান নিজের ছাপানো ভুয়া রশিদ ব্যবহার করে গ্রাহকদের টাকা সংগ্রহ করেন। সম্প্রতি কিছু গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আসতে শুরু করলে তারা খোজ নিয়ে জানতে পারেন, বিলের টাকা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জমা হয়নি। বিদ্যুৎ বিলের ঘাপলার কারণে ধীরে ধীরে আমানতের টাকার হিসাবও বের হতে থাকে। যে কারণে আউটলেটটি বন্ধ রেখে গা-ঢাকা দিয়েছেন এজেন্ট জাহিদ হাসান।

চতুরবাড়িয়া বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) আমির হোসেন আমু বলেন, কেউ ৪ লাখ, কেউ ৭ লাখ টাকা জমা দিয়েছে। আবার কেউ বা দিয়েছে ১০ লাখ টাকা। এ রকম অনেক মানুষ উচ্চ লাভের প্রলোভনে টাকা জমা দিয়েছে। তবে জাহিদ গ্রামের এসব সহজ-সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে ভুয়া রশিদ দিয়ে টাকা সংগ্রহ করেছে। এখন সে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ উদ্দীন বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে। জাহিদ হাসানকে খুঁজে বের করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি।

শনিবার, ০৩ জুলাই ২০২১ , ১৯ আষাঢ় ১৪২৮ ২১ জিলক্বদ ১৪৪২

কোটি টাকা নিয়ে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট উধাও

ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের কার্যালয় ঘেরাও

যশোর অফিস

যশোরের বাঘারপাড়ায় গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট জাহিদ হাসান। তিনি উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের হলদা গ্রামের মৃত জিন্দার মোল্যার ছেলে ও চতুরবাড়িয়া বাজারে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যবস্থাপক হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন। গত ২৯ জুন ঘটনাটি ঘটার পর থেকে দুদিন ধরে টাকা ফেরতের দাবিতে প্রতারণার শিকার ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা এজেন্ট আউটলেট ঘেরাও করে মিছিল-সমাবেশ করেছে। এ ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাদি হয়ে তার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে।

ব্যাংক এশিয়ার যশোরের জনসংযোগ কর্মকর্তা লিকু আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পেয়েছি। ঢাকা থেকে ব্যাংকের দু’জন নিরীক্ষক এসেছেন। তাদের সঙ্গে সরেজমিনে তদন্ত করে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৪ লাখ টাকার হিসাব পেয়েছি। তবে গ্রাহকরা এজেন্ট ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার কোন রশিদ দেখাতে পারেননি। এ ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাদি হয়ে জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাঘারপাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, ২০২০ সালে বাঘারপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী চতুরবাড়িয়া বাজারে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট আউটলেটটি উদ্বোধন করা হয়। ব্যবস্থাপক হিসাবে নিয়োগ পান জাহিদ হাসান। আউটলেটটিতে সঞ্চয় স্কিম (ডিপিএস), মেয়াদি আমানত ও সঞ্চয়ী হিসাব মিলে প্রায় এক হাজার গ্রাহক লেনদেন করতেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই মেয়াদি আমানতের গ্রাহক। এছাড়া আউটলেটটি থেকে বিদেশ থেকে পাঠানো আয় (রেমিট্যান্স) বিতরণ করা হতো। আবার প্রতি মাসে দুই হাজারেরও বেশি গ্রাহক এখানে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন। এই অঞ্চলের অধিকাংশ পরিবারের কর্তা প্রবাসী হওয়ায় তাদের স্বজনদের টার্গেট করেন জাহিদ হাসান। ব্যাংকিং নীতিমালা উপক্ষো করে উচ্চ হারে লাভের প্রলোভন দেখিয়ে তার মাধ্যমে টাকা জমা রাখতে প্রলুব্ধ করেন। অতি মুনাফার আশায় অনেক মানুষ টাকা জমা রাখেন। তবে এজেন্ট জাহিদ হাসান নিজের ছাপানো ভুয়া রশিদ ব্যবহার করে গ্রাহকদের টাকা সংগ্রহ করেন। সম্প্রতি কিছু গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আসতে শুরু করলে তারা খোজ নিয়ে জানতে পারেন, বিলের টাকা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জমা হয়নি। বিদ্যুৎ বিলের ঘাপলার কারণে ধীরে ধীরে আমানতের টাকার হিসাবও বের হতে থাকে। যে কারণে আউটলেটটি বন্ধ রেখে গা-ঢাকা দিয়েছেন এজেন্ট জাহিদ হাসান।

চতুরবাড়িয়া বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) আমির হোসেন আমু বলেন, কেউ ৪ লাখ, কেউ ৭ লাখ টাকা জমা দিয়েছে। আবার কেউ বা দিয়েছে ১০ লাখ টাকা। এ রকম অনেক মানুষ উচ্চ লাভের প্রলোভনে টাকা জমা দিয়েছে। তবে জাহিদ গ্রামের এসব সহজ-সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে ভুয়া রশিদ দিয়ে টাকা সংগ্রহ করেছে। এখন সে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ উদ্দীন বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে। জাহিদ হাসানকে খুঁজে বের করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি।