দ্বিতীয় দিন ঢাকা ফাঁকা, অন্যান্য জেলায়ও কঠোর নজরদারি

বের হয়েই আটক, জেল-জরিমানার মুখোমুখি ৬ শতাধিক

‘কঠোর বিধিনিষেধ’র দ্বিতীয় দিন গতকাল ঢাকা ছিল অনেকটা ফাঁকা। সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টির কারণেও অনেকে ঘর থেকে বের হননি। তাই সড়কে যান চলাচল ছিল খুবই কম। বিভিন্ন জেলার প্রধান প্রধান সড়কে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজদারি। তবে অলি-গলিতে ছিল অনেকটা ঢিলেঢালা ভাব। এর মধ্যে কেউ কেউ বের হয়ে পুলিশের জেল ও জরিমানায় মুখে পড়েছেন। গতকাল সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৬০০ জন আটক করেছেন পুলিশ।

সরেজমিনে রাজধানী বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার প্রধান সড়কগুলো ছিল ফাঁকা। সড়কে কিছু কিছু রিকশা চলাচল করলেও যাত্রী ছিল খুবই কম। অল-গলিতে দোকানপাট খোলা থাকলেও বৃষ্টির কারণে মানুষের চলাচল ছিল কম। সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি বা মোটরসাইকেলের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় কম চলাচল করতে দেখা গেছে। বৃষ্টির মধ্যেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা রিকশাচালকরাদের। লকডাউনের কারণে যাত্রী তেমন নেই বলে জানান তারা।

গতকাল শুক্রবার থাকায় বিভিন্ন এলাকায় মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে হাজারও মুসল্লিদের। নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা থাকলেও অনেক এলাকায় তা মানতে দেখা যায়নি বলে স্থানীয়রা জানান।

ধলপুর এলাকায় আক্তার নামের এক মুসল্লি বলেন, ‘জুমার নামাজের কিছু মুসল্লিদের মুখে মাস্ক থাকলেও বেশিরভাগ ছিল মাস্ক ছাড়া। নামাজের ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা মানা হয়নি। অনেককে গাদাগাদি করে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। মসজিদের অজুখানায় হাত ধোয়ার জন্য ছিল না পর্যাপ্ত সাবান। লকডাউনে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ৯ দফা নির্দেশনা বেশিরভাগ মানা হয়নি বলে জানান তিনি।

রাজধানীর প্রধান সড়কে কাঁটাতার ও বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে বিভিন্ন চেকপোস্টে তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এক্ষেত্রে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনা সদস্যরা রিকশা ও গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে। তবে গত বৃহস্পতিবারের মত এত কড়াকড়ি ছিল না বলে স্থানীয়রা জানান।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল কোন ছাড় দেয়া হয়নি। বিনা প্রয়োজনে বের হওয়ায় অনেকেই আটক করা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সড়কে থেকে তল্লাশির কাজ কিছুটা কম হয়েছে। কিন্তু পুলিশ ছিল বলে জানান তিনি।

সড়কে রিকশা থাকলেও যাত্রী ছিল খুবই কম। তাই অনেক চালকদের হতাশা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় জব্বার মিয়া নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘অটো লকডাউন। পুলিশের কিচ্ছু করতে হবে না। বৃষ্টির কারণে এমনেই মানুষ বের হয় নি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র তিনটি ক্ষ্যাপ মারছি। ৮০ টাকা রোজগার হইছে। গতকাল ১০০০ টাকা পাইছিলাম। আজ অর্ধেক পাই কিনা সন্দেহ।’

আলী হোসেন নামের অন্য রিকশাচালক বলেন, ‘যাত্রী দুই-একজন পাওয়া গেলেও খুব বেশি ভাড়া দিচ্ছে না। ৩০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা দিতে চায়। বৃষ্টির কারণে একটু বেশি দিতে চায় না।’

সায়েদাবাদ এলাকায় স্বপন নামের এক দোকানদার বলেন, ‘দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় এলাকায় কোন মানুষ নেই। দোকার খোলা রেখে লাভ নেই। কোন বেচা বিক্রি হয় না। তবু দুই-একজন পান-সিগারেট খায় তাই খোলে রাখছি। শুক্রবার তো কাস্টমার ভালো আসে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তেমন বিক্রি নেই।’

লকডাউনের মধ্যে খাবার দোকানে বসে খাওয়া নিষেধ, কেবল বিক্রি করা বা অনলাইন ডেলিভারির অনুমতি আছে। কিন্তু তারপরও অনেক খাবার হোটেল ছিল বন্ধ। দুই-একটি খোলা থাকলেও তেমন বেচা-বিক্রি হয় না বলে খাবারের দোকানদারা জানান।

শনিবার, ০৩ জুলাই ২০২১ , ১৯ আষাঢ় ১৪২৮ ২১ জিলক্বদ ১৪৪২

দ্বিতীয় দিন ঢাকা ফাঁকা, অন্যান্য জেলায়ও কঠোর নজরদারি

বের হয়েই আটক, জেল-জরিমানার মুখোমুখি ৬ শতাধিক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর সড়ক চিত্র -সংবাদ

‘কঠোর বিধিনিষেধ’র দ্বিতীয় দিন গতকাল ঢাকা ছিল অনেকটা ফাঁকা। সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টির কারণেও অনেকে ঘর থেকে বের হননি। তাই সড়কে যান চলাচল ছিল খুবই কম। বিভিন্ন জেলার প্রধান প্রধান সড়কে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজদারি। তবে অলি-গলিতে ছিল অনেকটা ঢিলেঢালা ভাব। এর মধ্যে কেউ কেউ বের হয়ে পুলিশের জেল ও জরিমানায় মুখে পড়েছেন। গতকাল সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৬০০ জন আটক করেছেন পুলিশ।

সরেজমিনে রাজধানী বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার প্রধান সড়কগুলো ছিল ফাঁকা। সড়কে কিছু কিছু রিকশা চলাচল করলেও যাত্রী ছিল খুবই কম। অল-গলিতে দোকানপাট খোলা থাকলেও বৃষ্টির কারণে মানুষের চলাচল ছিল কম। সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি বা মোটরসাইকেলের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় কম চলাচল করতে দেখা গেছে। বৃষ্টির মধ্যেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা রিকশাচালকরাদের। লকডাউনের কারণে যাত্রী তেমন নেই বলে জানান তারা।

গতকাল শুক্রবার থাকায় বিভিন্ন এলাকায় মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে হাজারও মুসল্লিদের। নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা থাকলেও অনেক এলাকায় তা মানতে দেখা যায়নি বলে স্থানীয়রা জানান।

ধলপুর এলাকায় আক্তার নামের এক মুসল্লি বলেন, ‘জুমার নামাজের কিছু মুসল্লিদের মুখে মাস্ক থাকলেও বেশিরভাগ ছিল মাস্ক ছাড়া। নামাজের ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা মানা হয়নি। অনেককে গাদাগাদি করে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। মসজিদের অজুখানায় হাত ধোয়ার জন্য ছিল না পর্যাপ্ত সাবান। লকডাউনে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ৯ দফা নির্দেশনা বেশিরভাগ মানা হয়নি বলে জানান তিনি।

রাজধানীর প্রধান সড়কে কাঁটাতার ও বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে বিভিন্ন চেকপোস্টে তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এক্ষেত্রে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনা সদস্যরা রিকশা ও গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে। তবে গত বৃহস্পতিবারের মত এত কড়াকড়ি ছিল না বলে স্থানীয়রা জানান।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল কোন ছাড় দেয়া হয়নি। বিনা প্রয়োজনে বের হওয়ায় অনেকেই আটক করা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সড়কে থেকে তল্লাশির কাজ কিছুটা কম হয়েছে। কিন্তু পুলিশ ছিল বলে জানান তিনি।

সড়কে রিকশা থাকলেও যাত্রী ছিল খুবই কম। তাই অনেক চালকদের হতাশা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় জব্বার মিয়া নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘অটো লকডাউন। পুলিশের কিচ্ছু করতে হবে না। বৃষ্টির কারণে এমনেই মানুষ বের হয় নি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র তিনটি ক্ষ্যাপ মারছি। ৮০ টাকা রোজগার হইছে। গতকাল ১০০০ টাকা পাইছিলাম। আজ অর্ধেক পাই কিনা সন্দেহ।’

আলী হোসেন নামের অন্য রিকশাচালক বলেন, ‘যাত্রী দুই-একজন পাওয়া গেলেও খুব বেশি ভাড়া দিচ্ছে না। ৩০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা দিতে চায়। বৃষ্টির কারণে একটু বেশি দিতে চায় না।’

সায়েদাবাদ এলাকায় স্বপন নামের এক দোকানদার বলেন, ‘দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় এলাকায় কোন মানুষ নেই। দোকার খোলা রেখে লাভ নেই। কোন বেচা বিক্রি হয় না। তবু দুই-একজন পান-সিগারেট খায় তাই খোলে রাখছি। শুক্রবার তো কাস্টমার ভালো আসে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তেমন বিক্রি নেই।’

লকডাউনের মধ্যে খাবার দোকানে বসে খাওয়া নিষেধ, কেবল বিক্রি করা বা অনলাইন ডেলিভারির অনুমতি আছে। কিন্তু তারপরও অনেক খাবার হোটেল ছিল বন্ধ। দুই-একটি খোলা থাকলেও তেমন বেচা-বিক্রি হয় না বলে খাবারের দোকানদারা জানান।