ধর্মের নামে হত্যা, সন্ত্রাস ও সংঘাত মানব সভ্যতার জন্য হুমকি

হলি আর্টিজান হত্যাকা-ের পঞ্চমবার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সর্ব ইউরোপীয় শাখা আয়োজিত আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বক্তারা বলেছেন, ‘ধর্মের নামে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান হত্যা, সন্ত্রাস ও সংঘাত মানবসভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’৭১-এর গণহত্যাকারীদের বিচার হয়নি বলে পাকিস্তান আজও নিজ দেশে গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে। গণহত্যা হচ্ছে মায়ানমারে।’

গতকাল নির্মূল কমিটির সর্ব ইউরোপীয় শাখার সভাপতি তরুণ কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্রধান বক্তা ছিলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে ধর্মের নামে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই গণহত্যার প্রতিবাদ দূরে থাক, স্বীকৃতিটুকুও দেয়নি।

তিনি বলেন, গণহত্যার নিন্দা এবং গণহত্যাকারীদের বিচার না হলে ধর্মের নামে হত্যা, সন্ত্রাস ও হানাহানি থেকে বিশ্বাসী মুক্তি পাবে না, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘হলি আর্টিজান ক্যাফেতে জঙ্গি মৌলবাদীদের নৃশংস হামলার পর গত পাঁচ বছরে জঙ্গি মৌলবাদীদের মোকাবিলায় সরকার সাফল্যের পরিচয় দিলেও তাদের মৌলবাদী দর্শন ও রাজনীতির বিরুদ্ধে কোন সরকারি উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদির দর্শন ও রাজনীতি বাংলাদেশে এখনও প্রচারিত হচ্ছে। এই একই দর্শন আল কায়দা, আইএসআইএস ও বোকো হারামের মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গি মৌলবাদী সংগঠনসমূহ অনুসরণ করছে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক মানবিক রাষ্ট্র ও সমাজ ধ্বংস করে শরিয়াভিত্তিক খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। জঙ্গি মৌলবাদীদের এই দর্শন রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে, যার দিকনিদের্শনা আমাদের ’৭২-এর সংবিধানে রয়েছে।’

ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য দেন নির্মূল কমিটির সুইজারল্যা- শাখার আহ্বায়ক খলিলুর রহমান, সুইডেন শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতার এম জামান, নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি নুরউদ্দিন আহমেদ, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ কাশেম, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন কায়েস, নির্মূল কমিটির ফ্রান্স শাখার আহ্বায়ক প্রকাশ রায়, নির্মূল কমিটির ফ্রান্স শাখার সাধারণ সম্পাদক আমিন খান হাজারী, নির্মূল কমিটির নরওয়ে শাখার সভাপতি খোরশেদ আহমেদ, নির্মূল কমিটির সুইজারল্যান্ড শাখার সহ-সভাপতি অরুণ বড়ুয়া, টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিজম তুরস্ক-এর সাধারণ সম্পাদক শাকিল রেজা ইফতি, নির্মূল কমিটির বেলজিয়াম শাখার সাধারণ সম্পাদক আনার চৌধুরী, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক শহীদ সন্তান অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা ও নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।

ওয়েবিনারে ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি এবং চলমান সব গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আগামী ৭ জুলাই দুপুর ১টা থেকে জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সদর দপ্তরের সামনে ৫ ঘণ্টা সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সমাবেশে বিভিন্ন দেশের গণহত্যার ভিকটিম, মানবাধিকার সংগঠনের নেতা এবং ইউরোপের ৮টি দেশের নির্মূল কমিটির নেতা ও কর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন।

শনিবার, ০৩ জুলাই ২০২১ , ১৯ আষাঢ় ১৪২৮ ২১ জিলক্বদ ১৪৪২

ধর্মের নামে হত্যা, সন্ত্রাস ও সংঘাত মানব সভ্যতার জন্য হুমকি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

হলি আর্টিজান হত্যাকা-ের পঞ্চমবার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সর্ব ইউরোপীয় শাখা আয়োজিত আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বক্তারা বলেছেন, ‘ধর্মের নামে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান হত্যা, সন্ত্রাস ও সংঘাত মানবসভ্যতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’৭১-এর গণহত্যাকারীদের বিচার হয়নি বলে পাকিস্তান আজও নিজ দেশে গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে। গণহত্যা হচ্ছে মায়ানমারে।’

গতকাল নির্মূল কমিটির সর্ব ইউরোপীয় শাখার সভাপতি তরুণ কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্রধান বক্তা ছিলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে ধর্মের নামে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই গণহত্যার প্রতিবাদ দূরে থাক, স্বীকৃতিটুকুও দেয়নি।

তিনি বলেন, গণহত্যার নিন্দা এবং গণহত্যাকারীদের বিচার না হলে ধর্মের নামে হত্যা, সন্ত্রাস ও হানাহানি থেকে বিশ্বাসী মুক্তি পাবে না, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘হলি আর্টিজান ক্যাফেতে জঙ্গি মৌলবাদীদের নৃশংস হামলার পর গত পাঁচ বছরে জঙ্গি মৌলবাদীদের মোকাবিলায় সরকার সাফল্যের পরিচয় দিলেও তাদের মৌলবাদী দর্শন ও রাজনীতির বিরুদ্ধে কোন সরকারি উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদির দর্শন ও রাজনীতি বাংলাদেশে এখনও প্রচারিত হচ্ছে। এই একই দর্শন আল কায়দা, আইএসআইএস ও বোকো হারামের মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গি মৌলবাদী সংগঠনসমূহ অনুসরণ করছে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক মানবিক রাষ্ট্র ও সমাজ ধ্বংস করে শরিয়াভিত্তিক খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। জঙ্গি মৌলবাদীদের এই দর্শন রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে, যার দিকনিদের্শনা আমাদের ’৭২-এর সংবিধানে রয়েছে।’

ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য দেন নির্মূল কমিটির সুইজারল্যা- শাখার আহ্বায়ক খলিলুর রহমান, সুইডেন শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতার এম জামান, নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি নুরউদ্দিন আহমেদ, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ কাশেম, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন কায়েস, নির্মূল কমিটির ফ্রান্স শাখার আহ্বায়ক প্রকাশ রায়, নির্মূল কমিটির ফ্রান্স শাখার সাধারণ সম্পাদক আমিন খান হাজারী, নির্মূল কমিটির নরওয়ে শাখার সভাপতি খোরশেদ আহমেদ, নির্মূল কমিটির সুইজারল্যান্ড শাখার সহ-সভাপতি অরুণ বড়ুয়া, টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিজম তুরস্ক-এর সাধারণ সম্পাদক শাকিল রেজা ইফতি, নির্মূল কমিটির বেলজিয়াম শাখার সাধারণ সম্পাদক আনার চৌধুরী, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক শহীদ সন্তান অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা ও নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।

ওয়েবিনারে ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি এবং চলমান সব গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আগামী ৭ জুলাই দুপুর ১টা থেকে জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সদর দপ্তরের সামনে ৫ ঘণ্টা সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সমাবেশে বিভিন্ন দেশের গণহত্যার ভিকটিম, মানবাধিকার সংগঠনের নেতা এবং ইউরোপের ৮টি দেশের নির্মূল কমিটির নেতা ও কর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন।