শুক্রবার থেকে সারাদেশের মতো সিলেটেও শুরু হয়েছে প্রবাসীদের করোনা প্রতিরোধী টিকার নিবন্ধন। যেসব প্রবাসীদের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ডাটাবেজে নিবন্ধন নেই তাদের টিকার নিবন্ধনের আগে বিএমটির ডাটাবেজে নিবন্ধন করতে বলা হয়েছে।
এই নিবন্ধন করতে সকাল থেকে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ভিড় করেন প্রবাসীরা। তবে প্রথম দিনেই ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।
জানা যায়, বিএমটির ডাটাবেজে নিবন্ধনের জন্য বিকাশের মাধ্যমে দুইশ’ টাকা ফি পরিশোধ করে এই রসিদ কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে জমা দিতে হয়। এই টাকা পরিশোধ করা নিয়েই বিপত্তি দেখা দেয়।
শুক্রবার দুপুরে উপশহর এলাকার বিএমটি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, নিবন্ধন করতে আসা প্রবাসীদের ভিড়। কঠোর লকডাউন ও বৃষ্টির দুর্ভোগ পেরিয়ে দূরদূরান্ত থেকে শতাধিক প্রবাসী জড়ো হয়েছেন এখানে। তবে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন তাদের বেশিরভাগই। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তারা নিবন্ধন করতে পারেননি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রবাসীরা।
প্রবাসীদের অভিযোগ, পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে সরকারের তহবিলে ২০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু শুক্রবার কয়েক দফা চেষ্টা করেও টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। বিকাশের অ্যাপসে টাকা পরিশোধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।
এছাড়া সুরক্ষা অ্যাপসে প্রবেশে সমস্যা করছে বলেও জানান কয়েকজন। এমন সমস্যার কারণে দিনভর কর্মসংস্থান অফিসে বসে থেকেও নিবন্ধন করতে পারেননি অনেক প্রবাসী। অফিসের সামনেই অনেককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। বিকাশের বদলে ক্যাশে টাকা জমা নেয়ারও দাবি জানান তারা।
শুক্রবার সকালে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জ থেকে নগরের উপশহরের কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে আসেন মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ওসমান মিয়া। তিনি বলেন, সকাল ৯টা থেকে রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে। আমি ৭টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। লকডাউন আর বৃষ্টির মধ্যে অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছি।
ওসমান বলেন, গতরাতে আমার এক প্রতিবেশী বিকাশের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়েছে। তবে আমি কাল টাকা জমা দেইনি। ভেবেছিলাম এখানে এসে জমা দেব। কিন্তু এখানে এসে সারাদিনে অনেকবার চেষ্টা করেছি। একবারও টাকা জমা দিতে পারছি না। ফলে নিবন্ধনও হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমার ভিসার মেয়াদ আর দেড়মাস আছে। এই সময়ের মধ্যে দুটি টাকা দিয়ে ফিরতে না পারলে বিপদে পড়ে যাব। তখন ভিসার মেয়াদ বাড়াতে হলে বাড়তি অনেক টাকা খরচ করতে হবে।
বিশ্বনাথ উপজেলা থেকে আসা সৌদি আরব প্রবাসী হারুন আহমদ বলেন, আমার সঙ্গে যিনি এসেছিলেন তিনি টাকা জমা দিতে পেরেছেন। কিন্তু আমি পরিনি। যাদের ই-পাসপোর্ট আছে তাদের টাকা জমা হচ্ছে। কিন্তু যাদের ই-পাসপোর্ট নেই তাদের টাকা বিকাশে নিচ্ছে না।
কর্মসংস্থান ও জনশক্তি বিভাগের সিলেট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নাফিজুল আদিম বলেন, এরকম সমস্যা বিভিন্ন সময়েই হয়। একসঙ্গে অনেকে যখন টাকা পরিশোধ করতে চান তখন এমন সমস্যা হতে পারে। তবে কিছুক্ষণ পর তা ঠিক হয়ে যায়। কেবল সিলেট না, দেশের অনেক জায়গায়ই এমন সমস্যা হচ্ছে বলে শুনেছি। বিকাশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এটি আপনাতেই ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, তারপরও প্রবাসীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা এই সমস্যাটি দ্রুত সমাধানের জন্য ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বলছি। আশা করছি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামানের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় শুক্রবার থেকে (প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত) সিলেটসহ দেশের ৪২টি জনশক্তি অফিস, ৯টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ১টি মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে অথবা ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে বিএমইটির এই রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চলবে। প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে গমন নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে বিদেশগামী কর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকল্পে বয়স প্রমার্জন ও অগ্রাধিকার পাওয়ার লক্ষ্যে যেসব কর্মীর বিএমইটির ডাটাবেজে নিবন্ধন ও স্মার্ট কার্ড নেই অথবা চলতি বছরের গত ১ জানুয়ারির পূর্বের বিএমইটির স্মার্ট কার্ড আছে, সে সব কর্মীর টিকার জন্য সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধনের সুবিধার্থে বৈধ পাসপোর্ট দিয়ে ২ জুলাই থেকে বিএমইটির ডাটাবেজে নিবন্ধন করতে হবে। তবে জানুয়ারি থেকে নিবন্ধিত কর্মীদের নতুনভাবে নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না।
বিএমইটির ডাটাবেজে নিবন্ধিত কর্মীরা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রাপ্তির লক্ষ্যে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে জরুরিভাবে টিকা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন সফল হলে মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে টিকা সেন্টার ও টিকার তারিখ জানা যাবে।
রাজধানীর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামনে গতকাল টিকা রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া -সংবাদ
আরও খবরশনিবার, ০৩ জুলাই ২০২১ , ১৯ আষাঢ় ১৪২৮ ২১ জিলক্বদ ১৪৪২
প্রতিনিধি, সিলেট
রাজধানীর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামনে গতকাল টিকা রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া -সংবাদ
শুক্রবার থেকে সারাদেশের মতো সিলেটেও শুরু হয়েছে প্রবাসীদের করোনা প্রতিরোধী টিকার নিবন্ধন। যেসব প্রবাসীদের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ডাটাবেজে নিবন্ধন নেই তাদের টিকার নিবন্ধনের আগে বিএমটির ডাটাবেজে নিবন্ধন করতে বলা হয়েছে।
এই নিবন্ধন করতে সকাল থেকে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ভিড় করেন প্রবাসীরা। তবে প্রথম দিনেই ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।
জানা যায়, বিএমটির ডাটাবেজে নিবন্ধনের জন্য বিকাশের মাধ্যমে দুইশ’ টাকা ফি পরিশোধ করে এই রসিদ কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে জমা দিতে হয়। এই টাকা পরিশোধ করা নিয়েই বিপত্তি দেখা দেয়।
শুক্রবার দুপুরে উপশহর এলাকার বিএমটি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, নিবন্ধন করতে আসা প্রবাসীদের ভিড়। কঠোর লকডাউন ও বৃষ্টির দুর্ভোগ পেরিয়ে দূরদূরান্ত থেকে শতাধিক প্রবাসী জড়ো হয়েছেন এখানে। তবে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন তাদের বেশিরভাগই। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তারা নিবন্ধন করতে পারেননি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রবাসীরা।
প্রবাসীদের অভিযোগ, পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে সরকারের তহবিলে ২০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু শুক্রবার কয়েক দফা চেষ্টা করেও টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। বিকাশের অ্যাপসে টাকা পরিশোধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।
এছাড়া সুরক্ষা অ্যাপসে প্রবেশে সমস্যা করছে বলেও জানান কয়েকজন। এমন সমস্যার কারণে দিনভর কর্মসংস্থান অফিসে বসে থেকেও নিবন্ধন করতে পারেননি অনেক প্রবাসী। অফিসের সামনেই অনেককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। বিকাশের বদলে ক্যাশে টাকা জমা নেয়ারও দাবি জানান তারা।
শুক্রবার সকালে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জ থেকে নগরের উপশহরের কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে আসেন মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ওসমান মিয়া। তিনি বলেন, সকাল ৯টা থেকে রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে। আমি ৭টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। লকডাউন আর বৃষ্টির মধ্যে অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছি।
ওসমান বলেন, গতরাতে আমার এক প্রতিবেশী বিকাশের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়েছে। তবে আমি কাল টাকা জমা দেইনি। ভেবেছিলাম এখানে এসে জমা দেব। কিন্তু এখানে এসে সারাদিনে অনেকবার চেষ্টা করেছি। একবারও টাকা জমা দিতে পারছি না। ফলে নিবন্ধনও হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমার ভিসার মেয়াদ আর দেড়মাস আছে। এই সময়ের মধ্যে দুটি টাকা দিয়ে ফিরতে না পারলে বিপদে পড়ে যাব। তখন ভিসার মেয়াদ বাড়াতে হলে বাড়তি অনেক টাকা খরচ করতে হবে।
বিশ্বনাথ উপজেলা থেকে আসা সৌদি আরব প্রবাসী হারুন আহমদ বলেন, আমার সঙ্গে যিনি এসেছিলেন তিনি টাকা জমা দিতে পেরেছেন। কিন্তু আমি পরিনি। যাদের ই-পাসপোর্ট আছে তাদের টাকা জমা হচ্ছে। কিন্তু যাদের ই-পাসপোর্ট নেই তাদের টাকা বিকাশে নিচ্ছে না।
কর্মসংস্থান ও জনশক্তি বিভাগের সিলেট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নাফিজুল আদিম বলেন, এরকম সমস্যা বিভিন্ন সময়েই হয়। একসঙ্গে অনেকে যখন টাকা পরিশোধ করতে চান তখন এমন সমস্যা হতে পারে। তবে কিছুক্ষণ পর তা ঠিক হয়ে যায়। কেবল সিলেট না, দেশের অনেক জায়গায়ই এমন সমস্যা হচ্ছে বলে শুনেছি। বিকাশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এটি আপনাতেই ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, তারপরও প্রবাসীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা এই সমস্যাটি দ্রুত সমাধানের জন্য ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বলছি। আশা করছি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামানের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় শুক্রবার থেকে (প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত) সিলেটসহ দেশের ৪২টি জনশক্তি অফিস, ৯টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ১টি মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে অথবা ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে বিএমইটির এই রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চলবে। প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে গমন নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে বিদেশগামী কর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকল্পে বয়স প্রমার্জন ও অগ্রাধিকার পাওয়ার লক্ষ্যে যেসব কর্মীর বিএমইটির ডাটাবেজে নিবন্ধন ও স্মার্ট কার্ড নেই অথবা চলতি বছরের গত ১ জানুয়ারির পূর্বের বিএমইটির স্মার্ট কার্ড আছে, সে সব কর্মীর টিকার জন্য সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধনের সুবিধার্থে বৈধ পাসপোর্ট দিয়ে ২ জুলাই থেকে বিএমইটির ডাটাবেজে নিবন্ধন করতে হবে। তবে জানুয়ারি থেকে নিবন্ধিত কর্মীদের নতুনভাবে নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না।
বিএমইটির ডাটাবেজে নিবন্ধিত কর্মীরা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রাপ্তির লক্ষ্যে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে জরুরিভাবে টিকা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন সফল হলে মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে টিকা সেন্টার ও টিকার তারিখ জানা যাবে।