‘নতুন রুটে’ বাংলাদেশে ঢুকছে ইয়াবা

নতুন পথে ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানের মুখে পাচারকারীরা আগের রুট বদলে ভারতের মধ্য দিয়ে ইয়াবা পাচার করছে এখন। আগে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে ঢুকত ইয়াবার এসব চালান। এখন তা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা, মিজোরাম ও আসাম হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। আর এতে বাংলাদেশের কিছু ইসলামী দলের ছাত্র সংগঠন জড়িত বলে তথ্য পেয়েছে ভারতের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা।

মাদক পাচারের মাধ্যমে পাওয়া অর্থ পরবর্তীতে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ব্যবহৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

সম্প্রতি ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআইকে এসব তথ্য জানায় তারা। এ নিয়ে গতকাল প্রতিবেদন প্রকাশ করে আউটলুক ইন্ডিয়া।

তবে বাংলাদেশের কোন কোন ইসলামী দলের ছাত্র সংগঠন মায়ানমার থেকে ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মাদক পাচার করছে তার উল্লেখ নেই। উল্লেখ করা হয়নি সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নামও।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়াবা প্রথম মায়ানমার থেকে মনিপুর যায়। সেখান থেকে শিলচর। তারপর ত্রিপুরা হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। এছাড়া মায়ানমার থেকে ভারতের মিজোরাম, ধর্মনগর, সোনামুড়া রুটেও বাংলাদেশে ঢুকছে ইয়াবার চালান।

বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেই মূলত পার্টি ড্রাগ হিসেবে খুব চলে এই মাদক। ক্যাফেইন ও ক্রিস্টাল মেথের সমন্বয়ে তৈরি ইয়াবা নাজি বাহিনী ব্যবহার করত বলেও কথিত আছে। একে ম্যাডনেস ড্রাগ বা নাজি স্পিডও বলা হয়ে থাকে।

সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশহরে ইয়াবা পাচারে একটি ইসলামী দলের ছাত্র সংগঠনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানতে পারে ভারতের ওই গোয়েন্দারা। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেখানকার খুবজার মসজিদের আশপাশে এই তৎপরতা চোখে পড়েছে তাদের। এই কৈলাশহর বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের ত্রিপুরার উনাকটি জেলায়।

ভারতীয় গোয়েন্দারা আরও বলছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযোনে গত ফেব্রুয়ারিতে আসাম সীমান্তের নিকটবর্তী স্থানে নিহত মাদক কারবারি সাইফুল করিমের সহযোগীরা এই মাদক পাচারে জড়িত বলে সন্ধান পেয়েছে তারা। এখন ওই গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছে এই মাদক পাচারের অর্থ রাষ্ট্রবিরোধী কোন কাজে ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে কি না।

ভারতের গোয়েন্দারা বলছে, এই মুহূর্তে ইয়াবার বাজার বাংলাদেশে হলেও তা ভারতের বিভিন্ন জায়গাতেও যাচ্ছে। ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এসব রাজ্যের মধ্য দিয়েই ইয়াবা ছাড়াও হেরোইনের মতো মাদক দেশটির অন্যান্য অঞ্চলে যায়।

একই প্রতিবেদনে ভারতের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশে মাদক হিসেবে ব্যবহৃত কফ সিরাপ পাচারের পরিমাণ বেড়েছে। সেখানকার এক ব্যবসায়ী এর উৎপাদন ও ব্যবসায় জড়িত।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মদের বিকল্প হিসেবে এই কফ সিরাপে আসক্তি রয়েছে বাংলাদেশের প্রচুর সংখ্যক যুবকের।

ভারতে তা ডাক্তারদের পরামর্শে ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশে তা ঢোকানো হচ্ছে উত্তর ত্রিপুরা, খোয়াই, সেপাহিজালার মধ্য দিয়ে। এগুলো সাধারণত অন্যান্য বৈধ সামগ্রী পরিবহনের আড়ালে পাচার হয় বাংলাদেশে।

বাংলাদেশে ১০০ মিলির এই সিরাপের দাম এক হাজার থেকে ১১০০ টাকা।

এছাড়া আসাম ত্রিপুরা সীমান্তের চৌরাবাড়ি এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পাচার হয় শুকনো গাঁজা।

তবে রুট পরিবর্তন হলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে বিপুল পরিমাণ গাঁজা, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক আটক হওয়ার খবর দিয়েছে ভারতের ওই গোয়েন্দারা।

তাদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জুন পর্যন্ত ৫ হাজার কেজির বেশি গাঁজা, ৩৪ হাজারের ওপর ইয়াবা ট্যাবলেট, অন্তত ২৩ হাজার বোতল ফেনসিডিল, প্রায় ৩০০০ বোতল মদসহ বিভিন্ন মাদক উদ্ধার করেছে।

ত্রিপুরা পুলিশের বরাত দিয়ে আউটলুকের খবরে বলা হয়েছে, এই সময়ে ১৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে তারা।

শনিবার, ০৩ জুলাই ২০২১ , ১৯ আষাঢ় ১৪২৮ ২১ জিলক্বদ ১৪৪২

‘নতুন রুটে’ বাংলাদেশে ঢুকছে ইয়াবা

সংবাদ ডেস্ক

নতুন পথে ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানের মুখে পাচারকারীরা আগের রুট বদলে ভারতের মধ্য দিয়ে ইয়াবা পাচার করছে এখন। আগে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে ঢুকত ইয়াবার এসব চালান। এখন তা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা, মিজোরাম ও আসাম হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। আর এতে বাংলাদেশের কিছু ইসলামী দলের ছাত্র সংগঠন জড়িত বলে তথ্য পেয়েছে ভারতের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা।

মাদক পাচারের মাধ্যমে পাওয়া অর্থ পরবর্তীতে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ব্যবহৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

সম্প্রতি ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআইকে এসব তথ্য জানায় তারা। এ নিয়ে গতকাল প্রতিবেদন প্রকাশ করে আউটলুক ইন্ডিয়া।

তবে বাংলাদেশের কোন কোন ইসলামী দলের ছাত্র সংগঠন মায়ানমার থেকে ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মাদক পাচার করছে তার উল্লেখ নেই। উল্লেখ করা হয়নি সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নামও।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়াবা প্রথম মায়ানমার থেকে মনিপুর যায়। সেখান থেকে শিলচর। তারপর ত্রিপুরা হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। এছাড়া মায়ানমার থেকে ভারতের মিজোরাম, ধর্মনগর, সোনামুড়া রুটেও বাংলাদেশে ঢুকছে ইয়াবার চালান।

বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেই মূলত পার্টি ড্রাগ হিসেবে খুব চলে এই মাদক। ক্যাফেইন ও ক্রিস্টাল মেথের সমন্বয়ে তৈরি ইয়াবা নাজি বাহিনী ব্যবহার করত বলেও কথিত আছে। একে ম্যাডনেস ড্রাগ বা নাজি স্পিডও বলা হয়ে থাকে।

সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশহরে ইয়াবা পাচারে একটি ইসলামী দলের ছাত্র সংগঠনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানতে পারে ভারতের ওই গোয়েন্দারা। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেখানকার খুবজার মসজিদের আশপাশে এই তৎপরতা চোখে পড়েছে তাদের। এই কৈলাশহর বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের ত্রিপুরার উনাকটি জেলায়।

ভারতীয় গোয়েন্দারা আরও বলছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযোনে গত ফেব্রুয়ারিতে আসাম সীমান্তের নিকটবর্তী স্থানে নিহত মাদক কারবারি সাইফুল করিমের সহযোগীরা এই মাদক পাচারে জড়িত বলে সন্ধান পেয়েছে তারা। এখন ওই গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছে এই মাদক পাচারের অর্থ রাষ্ট্রবিরোধী কোন কাজে ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে কি না।

ভারতের গোয়েন্দারা বলছে, এই মুহূর্তে ইয়াবার বাজার বাংলাদেশে হলেও তা ভারতের বিভিন্ন জায়গাতেও যাচ্ছে। ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এসব রাজ্যের মধ্য দিয়েই ইয়াবা ছাড়াও হেরোইনের মতো মাদক দেশটির অন্যান্য অঞ্চলে যায়।

একই প্রতিবেদনে ভারতের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশে মাদক হিসেবে ব্যবহৃত কফ সিরাপ পাচারের পরিমাণ বেড়েছে। সেখানকার এক ব্যবসায়ী এর উৎপাদন ও ব্যবসায় জড়িত।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মদের বিকল্প হিসেবে এই কফ সিরাপে আসক্তি রয়েছে বাংলাদেশের প্রচুর সংখ্যক যুবকের।

ভারতে তা ডাক্তারদের পরামর্শে ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশে তা ঢোকানো হচ্ছে উত্তর ত্রিপুরা, খোয়াই, সেপাহিজালার মধ্য দিয়ে। এগুলো সাধারণত অন্যান্য বৈধ সামগ্রী পরিবহনের আড়ালে পাচার হয় বাংলাদেশে।

বাংলাদেশে ১০০ মিলির এই সিরাপের দাম এক হাজার থেকে ১১০০ টাকা।

এছাড়া আসাম ত্রিপুরা সীমান্তের চৌরাবাড়ি এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পাচার হয় শুকনো গাঁজা।

তবে রুট পরিবর্তন হলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে বিপুল পরিমাণ গাঁজা, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক আটক হওয়ার খবর দিয়েছে ভারতের ওই গোয়েন্দারা।

তাদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জুন পর্যন্ত ৫ হাজার কেজির বেশি গাঁজা, ৩৪ হাজারের ওপর ইয়াবা ট্যাবলেট, অন্তত ২৩ হাজার বোতল ফেনসিডিল, প্রায় ৩০০০ বোতল মদসহ বিভিন্ন মাদক উদ্ধার করেছে।

ত্রিপুরা পুলিশের বরাত দিয়ে আউটলুকের খবরে বলা হয়েছে, এই সময়ে ১৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে তারা।