যুগে যুগে মহামারী

এসএম জাহাঙ্গীর আলম

করোনা এখন বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে মহামারী আকারে ধারণ করেছে। বিভিন্ন সময়ে বিশ্বে নানা জটিল ও কঠিন রোগের আবির্ভাব ঘটে। আমাদের দেশে গত কয়েক বছর আগে হঠাৎ দেখা দিলো ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া। বর্তমানে করোনার মহামারী গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও বলতে পারছে না এর শেষ কোথায়।

নিকটকালের ইতিহাস থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে প্রথম মহামারী দেখা দেয় রোম সাম্রাজ্যে। ১৬৫ থেকে ১৮০ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যও গুটি বসন্তজনিত মহামারীর কবলে পড়ে। রোম যেন জনমানবশূন্য হয়ে ভুতের নগরীতে পরিণত হয়। প্রতাবপশালী রোমান সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াসের ভাই লুইসিয়াস তেরাসের মৃত্যু হয় এই মহামারীতে। ২৫০ খ্রিস্টাব্দে প্লেগ মহামারী রোমান সম্রাজ্যকে ধবংস করে দেয়। শতাব্দীতে রোমান সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান প্লেগ মহামারী বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে তোলে। দ্বিতীয় শতাব্দীতে বিউবোননিক প্লেগে প্রায় ৫ কোটি মানুষ মারা যায়। এই রোগে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য তথা ইরাক, ইরান ও মেসোপটেমীয় অঞ্চলে তা ছড়িয়ে পড়ে। ৬ষ্ঠ শতকে ভয়ংকর প্লেগ মহামারীতে পুরো পৃথিবীর প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়। এই রোগে ৭৩৫-৭৩৭ খ্রিস্টাব্দে জাপানের এক-তৃতীয়ংশ মানুষ মারা যায়। এই ভয়ঙ্কর প্লেগ মহামারীতে সে সময়ে সমৃদ্ধ বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।

একাদশ শতাব্দীতে ইউরোপজুড়ে মহামারী আকারে পড়ে কুষ্ঠ রোগ। এতে লাখো মানুষ মারা যায়। পরবর্তী ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দে দেখা দেয় ব্ল্যাক ডেথ বলে পরিচিত মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মহামারী যার প্রভাবে গোটা বিশ্বে এক-তৃতীয়ংশ মানুষ মারা যায়। ১৫২০ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপিয়ানদের সঙ্গে আসা একজন আফ্রিকান দাসের মাধ্যমে গোটা অ্যাজটেক সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে গুটিবসন্ত যা মহামারীতে রূপ নেয়। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপিয়ানদের বয়ে আনা জীবাণুর কারণে আমেরিকা মহাদেশে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডবাসীদের মাধ্যমে আমেরিকার ম্যাসাচুসেসে গুটিবস্ত ছড়িয়ে পড়ে। ঐতিহাসিকদের মতে এই গুটিবসন্ত মহামারীতে প্রায় ২ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়।

১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে ‘দ্য গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন’ মহামারীতে লন্ডনের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষে মৃত্যু হয়। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে আরেরিকার ফিলাডেফিয়ায় ‘ইয়োলো ফিভার’ মহামারীতে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ মারা যায়। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ উপনিবেশ বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে সৈনিক ও নাবিকদের মাধ্যমে এশিয়া ও ভারতবর্ষে কলেরা মহামারীতে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ মারা যায়। কলেরা মহামারীতে ভারতবর্ষ ছাড়াও স্পেন, আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, চীন, জাপান, ইতালি, জার্মানি ও আমেরিকায় প্রায় দেড় লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে সে সময় বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৩ লাখ, প্রায় দেড়শ’ বছরে এই কলেরা মহামারীতে বিভিন্ন দফায় গোট বিশ্বে প্রায় দেড় কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স উপনিবেশ আলজেরিয়ার ওরান শহরে প্লেগ মহামারীতে অসংখ্য মানুষে মৃত্যু হয়। যার বর্ণনা পাওয়া যায় ১৯৪৭ সালে আলবার্ট কামু রচিত মহামারী উপন্যাস‘ দ্য প্লেগ’ এ। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে চীন থেকে সূত্রপাত হওয়া এই মহামারীতে হংকং ও ভারতে ছড়িয়ে পড়া মহামারীতে ১৫০ কোটির বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

তারপর ১৮৬০ সালে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশেগুলোতে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে দেখা দেয় ‘রাশিয়ান ফ্লু’ যা ছিল ফ্লুর মাধ্যমে প্রথম মহামারী। সাইবেরিয়া ও মধ্য এশিয়ার কাজাখস্তানে এর সূচনা হয় এবং পরবর্তীতে পোল্যান্ড ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এলাকায় বিস্তার লাভ করে। ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকায় ও আফ্রিকা অঞ্চলেও। এতে মারা যায় ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে এই মহামারী প্রতিরোধে সাফল্য আসে প্লেগের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের মাধ্যমে। ১৯১০ সালে শুধু চীনের মাঞ্চুরিয়াতে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯১৮ সালে প্রাণঘাতী মহামারী ‘স্প্যানিশ ফ্লু’ মহামারীতে বিশ্বে প্রায় ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। এই রোগের বিস্তার ঘটে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যে। এতে মৃত্যু হয় ১৪ হাজার মানুষের। এই রোগের দ্বিতীয় ধাপে বিশ্বে ১১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে দেখা দেয় ইবোলার প্রাদুর্ভাব। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে এই রোগে প্রায় ১১ হাজার মারা যায়।

১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে শনাক্ত হয় এইচআভি বা এইডস ভাইরাস। বিজ্ঞানীদের মতে ১৯২০ সালের দিকে পশ্চিম আফ্রিকায় এই ভাইরাসের উদ্ভব ঘটে। ১৯৮৪ সালে এই রোগে শুধু আমেরিকাতেই ৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। বিশ্বব্যাপী এই রোগে ইতিপূর্বে প্রায় চার কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার কৃষি শহরে ‘নিপাহ’ ভাইরাস দেখা দেয়। এই রোগে মৃত্যুর হার প্রায় ৭৯ শতাংশ। সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)-এ ২০০২ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ১৭টি দেশে ৭৭৮ জন মারা যায়। এই রোগের উদ্ভব ঘটে চীন থেকে। ২০০৯ সালে দেখা দেয় ‘সোয়াইন ফ্লু’। বিশ্বব্যাপী মারা যায় প্রায় ১৮ হাজার মানুষ। ২০১২ সালে সৌদি আরবে দেখা দেয় মার্স (মিডল ইস্ট অ্যাকিউট রেসপিরেটিরি সিনড্রোম)। ছড়িয়ে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। মৃত্যু হয় প্রায় প্রায় দুই লাখ মানুষের। ২০১৯ সালে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। এতে ফিলিপাইনের মারা যায় ৯০০ মানুষ। বাংলাদেশেও অনেক লোক মারা গেছে। এখনও মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।

এখন আসা যাক ‘করোনায়’। করোনা ল্যাটিন শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে ক্রাউন বা মুকুট। জুন আলমেইদ্যা ও ডেভিড টাইরেল নামে দুজন বিশেষজ্ঞ ১৯৬০ সালে দিকে প্রথম এই হিউম্যান করোনাভাইরাস পর্যবেক্ষণ ও এ সম্পর্কিত বিস্তারিত অধ্যায়ন করেন। পরে ১৯৬৮ সালে একদল বিখ্যাত ভাইরাস বিশেষজ্ঞ এটিকে নতুন ভাইরাসের ফ্যামিলি হিসেবে চিহ্নিত করে ‘নেচার’ জার্নালে উপস্থাপন করেন। তাদের মতে করোনাভাইরাসটি মানুষের দেহকোষের মধ্যে পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিতে পারে ও সংখ্যা বৃদ্ধিতে সক্ষম। ২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে এই ভাইরাসের উদ্ভব। প্রাণঘাতী করোনা নানা জঠিল অবস্থায় দেখা দিচ্ছে। গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলছে করোনা।

[লেখক : পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট]

শনিবার, ০৩ জুলাই ২০২১ , ১৯ আষাঢ় ১৪২৮ ২১ জিলক্বদ ১৪৪২

যুগে যুগে মহামারী

এসএম জাহাঙ্গীর আলম

image

করোনা এখন বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে মহামারী আকারে ধারণ করেছে। বিভিন্ন সময়ে বিশ্বে নানা জটিল ও কঠিন রোগের আবির্ভাব ঘটে। আমাদের দেশে গত কয়েক বছর আগে হঠাৎ দেখা দিলো ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া। বর্তমানে করোনার মহামারী গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও বলতে পারছে না এর শেষ কোথায়।

নিকটকালের ইতিহাস থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে প্রথম মহামারী দেখা দেয় রোম সাম্রাজ্যে। ১৬৫ থেকে ১৮০ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যও গুটি বসন্তজনিত মহামারীর কবলে পড়ে। রোম যেন জনমানবশূন্য হয়ে ভুতের নগরীতে পরিণত হয়। প্রতাবপশালী রোমান সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াসের ভাই লুইসিয়াস তেরাসের মৃত্যু হয় এই মহামারীতে। ২৫০ খ্রিস্টাব্দে প্লেগ মহামারী রোমান সম্রাজ্যকে ধবংস করে দেয়। শতাব্দীতে রোমান সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান প্লেগ মহামারী বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে তোলে। দ্বিতীয় শতাব্দীতে বিউবোননিক প্লেগে প্রায় ৫ কোটি মানুষ মারা যায়। এই রোগে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য তথা ইরাক, ইরান ও মেসোপটেমীয় অঞ্চলে তা ছড়িয়ে পড়ে। ৬ষ্ঠ শতকে ভয়ংকর প্লেগ মহামারীতে পুরো পৃথিবীর প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়। এই রোগে ৭৩৫-৭৩৭ খ্রিস্টাব্দে জাপানের এক-তৃতীয়ংশ মানুষ মারা যায়। এই ভয়ঙ্কর প্লেগ মহামারীতে সে সময়ে সমৃদ্ধ বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।

একাদশ শতাব্দীতে ইউরোপজুড়ে মহামারী আকারে পড়ে কুষ্ঠ রোগ। এতে লাখো মানুষ মারা যায়। পরবর্তী ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দে দেখা দেয় ব্ল্যাক ডেথ বলে পরিচিত মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মহামারী যার প্রভাবে গোটা বিশ্বে এক-তৃতীয়ংশ মানুষ মারা যায়। ১৫২০ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপিয়ানদের সঙ্গে আসা একজন আফ্রিকান দাসের মাধ্যমে গোটা অ্যাজটেক সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে গুটিবসন্ত যা মহামারীতে রূপ নেয়। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপিয়ানদের বয়ে আনা জীবাণুর কারণে আমেরিকা মহাদেশে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডবাসীদের মাধ্যমে আমেরিকার ম্যাসাচুসেসে গুটিবস্ত ছড়িয়ে পড়ে। ঐতিহাসিকদের মতে এই গুটিবসন্ত মহামারীতে প্রায় ২ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়।

১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে ‘দ্য গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন’ মহামারীতে লন্ডনের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষে মৃত্যু হয়। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে আরেরিকার ফিলাডেফিয়ায় ‘ইয়োলো ফিভার’ মহামারীতে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ মারা যায়। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ উপনিবেশ বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে সৈনিক ও নাবিকদের মাধ্যমে এশিয়া ও ভারতবর্ষে কলেরা মহামারীতে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ মারা যায়। কলেরা মহামারীতে ভারতবর্ষ ছাড়াও স্পেন, আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, চীন, জাপান, ইতালি, জার্মানি ও আমেরিকায় প্রায় দেড় লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে সে সময় বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৩ লাখ, প্রায় দেড়শ’ বছরে এই কলেরা মহামারীতে বিভিন্ন দফায় গোট বিশ্বে প্রায় দেড় কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স উপনিবেশ আলজেরিয়ার ওরান শহরে প্লেগ মহামারীতে অসংখ্য মানুষে মৃত্যু হয়। যার বর্ণনা পাওয়া যায় ১৯৪৭ সালে আলবার্ট কামু রচিত মহামারী উপন্যাস‘ দ্য প্লেগ’ এ। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে চীন থেকে সূত্রপাত হওয়া এই মহামারীতে হংকং ও ভারতে ছড়িয়ে পড়া মহামারীতে ১৫০ কোটির বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

তারপর ১৮৬০ সালে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশেগুলোতে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে দেখা দেয় ‘রাশিয়ান ফ্লু’ যা ছিল ফ্লুর মাধ্যমে প্রথম মহামারী। সাইবেরিয়া ও মধ্য এশিয়ার কাজাখস্তানে এর সূচনা হয় এবং পরবর্তীতে পোল্যান্ড ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এলাকায় বিস্তার লাভ করে। ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকায় ও আফ্রিকা অঞ্চলেও। এতে মারা যায় ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে এই মহামারী প্রতিরোধে সাফল্য আসে প্লেগের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের মাধ্যমে। ১৯১০ সালে শুধু চীনের মাঞ্চুরিয়াতে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯১৮ সালে প্রাণঘাতী মহামারী ‘স্প্যানিশ ফ্লু’ মহামারীতে বিশ্বে প্রায় ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। এই রোগের বিস্তার ঘটে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যে। এতে মৃত্যু হয় ১৪ হাজার মানুষের। এই রোগের দ্বিতীয় ধাপে বিশ্বে ১১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে দেখা দেয় ইবোলার প্রাদুর্ভাব। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে এই রোগে প্রায় ১১ হাজার মারা যায়।

১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে শনাক্ত হয় এইচআভি বা এইডস ভাইরাস। বিজ্ঞানীদের মতে ১৯২০ সালের দিকে পশ্চিম আফ্রিকায় এই ভাইরাসের উদ্ভব ঘটে। ১৯৮৪ সালে এই রোগে শুধু আমেরিকাতেই ৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। বিশ্বব্যাপী এই রোগে ইতিপূর্বে প্রায় চার কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার কৃষি শহরে ‘নিপাহ’ ভাইরাস দেখা দেয়। এই রোগে মৃত্যুর হার প্রায় ৭৯ শতাংশ। সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)-এ ২০০২ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ১৭টি দেশে ৭৭৮ জন মারা যায়। এই রোগের উদ্ভব ঘটে চীন থেকে। ২০০৯ সালে দেখা দেয় ‘সোয়াইন ফ্লু’। বিশ্বব্যাপী মারা যায় প্রায় ১৮ হাজার মানুষ। ২০১২ সালে সৌদি আরবে দেখা দেয় মার্স (মিডল ইস্ট অ্যাকিউট রেসপিরেটিরি সিনড্রোম)। ছড়িয়ে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। মৃত্যু হয় প্রায় প্রায় দুই লাখ মানুষের। ২০১৯ সালে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। এতে ফিলিপাইনের মারা যায় ৯০০ মানুষ। বাংলাদেশেও অনেক লোক মারা গেছে। এখনও মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।

এখন আসা যাক ‘করোনায়’। করোনা ল্যাটিন শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে ক্রাউন বা মুকুট। জুন আলমেইদ্যা ও ডেভিড টাইরেল নামে দুজন বিশেষজ্ঞ ১৯৬০ সালে দিকে প্রথম এই হিউম্যান করোনাভাইরাস পর্যবেক্ষণ ও এ সম্পর্কিত বিস্তারিত অধ্যায়ন করেন। পরে ১৯৬৮ সালে একদল বিখ্যাত ভাইরাস বিশেষজ্ঞ এটিকে নতুন ভাইরাসের ফ্যামিলি হিসেবে চিহ্নিত করে ‘নেচার’ জার্নালে উপস্থাপন করেন। তাদের মতে করোনাভাইরাসটি মানুষের দেহকোষের মধ্যে পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিতে পারে ও সংখ্যা বৃদ্ধিতে সক্ষম। ২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে এই ভাইরাসের উদ্ভব। প্রাণঘাতী করোনা নানা জঠিল অবস্থায় দেখা দিচ্ছে। গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলছে করোনা।

[লেখক : পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট]