হাসপাতাল থেকে ফের কারাগারে ডেসটিনির রফিকুল

হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে জুম মিটিংয়ে অংশ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করা ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমিনকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষকে উচ্চ ডায়াবেটিসের কারণ দেখিয়ে ৮২ দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার দিকে তাকে কারাগারে নেয়া হয়।

এর আগে, ২০১৯ সালের ১১ মার্চ থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত ১ বছর ৪ মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। সে সময় কারা কর্তৃপক্ষ ২৭ বার চিঠি দেয়ার পরও তাকে কারাগারে ফেরত না পাঠানোয় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। তখন চরম বিতর্কের মুখে তাকে কারাগারে ফেরত পাঠাতে বাধ্য হয়েছিল বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। এবারো বাধ্য হয়েই তাকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হলো।

রফিকুল ইসলামের কারাগারে ফেরার বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, অতি মাত্রায় ডায়াবেটিস থাকায় গত ১১ এপ্রিল রফিকুল আমিনকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর তাকে ফেরত চেয়ে ৫ বার চিঠি দেয়া হলেও ফেরত দেয়া হয়নি। উল্টো তার ডায়াবেটিস সমস্যাসহ হার্ট, কিডনি ও অর্থোপেডিকস চিকিৎসা চলছে বলে জানতে পারি। এরই মধ্যে হাসপাতালের প্রিজন সেলে থেকে তার জুম মিটিংয়ে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পায়। পরে গতকাল বিকেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়পত্র দিলে কারাগারে আনা হয়।

সিনিয়র জেল সুপার আরও বলেন, করোনার কারণে ১৪ দিন কোয়ারাইন্টাইনে রাখার নিয়ম। কিন্তু রফিকুল আমিন কারাগারের যে সেলে থাকেন সেখানে আর কেউ থাকেন না। ফলে কোয়ারাইন্টাইনের জন্য আলাদা জায়গায় না রেখে তাকে সরাসরি ওই সেলেই রাখা হবে। কারাবিধি লঙ্ঘন করায় কি ধরনের শাস্তির ভোগ করতে হবে রফিকুলের এমন প্রশ্নের জবাবে সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারাবিধি লঙ্ঘন করলে অনেক ধরনের শাস্তির বিধান আছে। যা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।

জানা গেছে, কাগজে-কলমে কিংবা চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে ‘অসুস্থ’ রফিকুল আমিন হাসপাতালে থেকে দিব্যি ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছিলেন। মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহার করে জুম অ্যাপে নিয়মিত মিটিংও করেছেন। যার একাধিক ভিডিও গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। এর একটি এ বছরের মে মাসের এবং আরেকটি জুন মাসের। ভিডিওতে দেখা গেছে রফিকুল আমিন ডেসটিনির মতোই নতুন আরেকটি এমএলএম ব্যবসার বিষয়ে আলোচনা করছেন। ইতোমধ্যে সেই ব্যবসা শুরুও করেছেন তিনি। ব্যবসার জন্য শীঘ্রই ১৩০০ মার্কেটিং এজেন্ট নিয়োগের কথা বলেছেন। এ ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর ইতোমধ্যে গত বৃহস্পতিবার ৪ প্রধান কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত ও ১৩ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে দুটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই বছরের ১১ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন রফিকুল আমিন ও মোহাম্মদ হোসেন। তাদের বিরুদ্ধে চার হাজার ১১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং ৯৬ কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচারের অভিযোগ আনা হয়। কারাগার সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের পর থেকে রফিকুল আমিন একেক সময় একেক রোগের কথা বলে হাসপাতালের প্রিজন সেলে থেকেছেন। তিনি মূলত ঘুরেফিরে বিএসএমএমইউ ও বারডেম হাসপাতালে আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ সময় ছিলেন বিএসএমএমইউতে।

রবিবার, ০৪ জুলাই ২০২১ , ২০ আষাঢ় ১৪২৮ ২২ জিলক্বদ ১৪৪২

জুম মিটিংয়ে অংশগ্রহণ

হাসপাতাল থেকে ফের কারাগারে ডেসটিনির রফিকুল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে জুম মিটিংয়ে অংশ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করা ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমিনকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষকে উচ্চ ডায়াবেটিসের কারণ দেখিয়ে ৮২ দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার দিকে তাকে কারাগারে নেয়া হয়।

এর আগে, ২০১৯ সালের ১১ মার্চ থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত ১ বছর ৪ মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। সে সময় কারা কর্তৃপক্ষ ২৭ বার চিঠি দেয়ার পরও তাকে কারাগারে ফেরত না পাঠানোয় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। তখন চরম বিতর্কের মুখে তাকে কারাগারে ফেরত পাঠাতে বাধ্য হয়েছিল বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। এবারো বাধ্য হয়েই তাকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হলো।

রফিকুল ইসলামের কারাগারে ফেরার বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, অতি মাত্রায় ডায়াবেটিস থাকায় গত ১১ এপ্রিল রফিকুল আমিনকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর তাকে ফেরত চেয়ে ৫ বার চিঠি দেয়া হলেও ফেরত দেয়া হয়নি। উল্টো তার ডায়াবেটিস সমস্যাসহ হার্ট, কিডনি ও অর্থোপেডিকস চিকিৎসা চলছে বলে জানতে পারি। এরই মধ্যে হাসপাতালের প্রিজন সেলে থেকে তার জুম মিটিংয়ে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পায়। পরে গতকাল বিকেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়পত্র দিলে কারাগারে আনা হয়।

সিনিয়র জেল সুপার আরও বলেন, করোনার কারণে ১৪ দিন কোয়ারাইন্টাইনে রাখার নিয়ম। কিন্তু রফিকুল আমিন কারাগারের যে সেলে থাকেন সেখানে আর কেউ থাকেন না। ফলে কোয়ারাইন্টাইনের জন্য আলাদা জায়গায় না রেখে তাকে সরাসরি ওই সেলেই রাখা হবে। কারাবিধি লঙ্ঘন করায় কি ধরনের শাস্তির ভোগ করতে হবে রফিকুলের এমন প্রশ্নের জবাবে সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারাবিধি লঙ্ঘন করলে অনেক ধরনের শাস্তির বিধান আছে। যা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।

জানা গেছে, কাগজে-কলমে কিংবা চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে ‘অসুস্থ’ রফিকুল আমিন হাসপাতালে থেকে দিব্যি ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছিলেন। মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহার করে জুম অ্যাপে নিয়মিত মিটিংও করেছেন। যার একাধিক ভিডিও গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। এর একটি এ বছরের মে মাসের এবং আরেকটি জুন মাসের। ভিডিওতে দেখা গেছে রফিকুল আমিন ডেসটিনির মতোই নতুন আরেকটি এমএলএম ব্যবসার বিষয়ে আলোচনা করছেন। ইতোমধ্যে সেই ব্যবসা শুরুও করেছেন তিনি। ব্যবসার জন্য শীঘ্রই ১৩০০ মার্কেটিং এজেন্ট নিয়োগের কথা বলেছেন। এ ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর ইতোমধ্যে গত বৃহস্পতিবার ৪ প্রধান কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত ও ১৩ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে দুটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই বছরের ১১ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন রফিকুল আমিন ও মোহাম্মদ হোসেন। তাদের বিরুদ্ধে চার হাজার ১১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং ৯৬ কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচারের অভিযোগ আনা হয়। কারাগার সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের পর থেকে রফিকুল আমিন একেক সময় একেক রোগের কথা বলে হাসপাতালের প্রিজন সেলে থেকেছেন। তিনি মূলত ঘুরেফিরে বিএসএমএমইউ ও বারডেম হাসপাতালে আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ সময় ছিলেন বিএসএমএমইউতে।