খুন করে এসে খুন হওয়া নারীর পরিবারকে সান্ত¡না দিত খুনি

স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ১২ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর কদমতলী থানা এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতেন ৩৬ বছর বয়সী নাছরিন বেগম। মেয়ের পড়াশুনা আর নিজের সংসার খরচ চালাতেন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা টাকার লভ্যাংশ থেকে। চলতি বছরের ১৮ মে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন নাছরিন। এরপর থেকে মিলছিল না খোঁজ। থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। তখনও নাছরিনের পরিবার জানে না নিখোঁজ নাছরিনের আর কোনদিনই সন্ধান মিলবে না। কারণ নাছরিনকে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে বস্তাবন্দী করে। আর হত্যাকা-টি করেছে নাছরিনের প্রেমিক।

পুলিশের ভাষ্য, নাছরিন যখন নিখোঁজ হয় তখন পুলিশ একদিকে নাছরিনকে খুঁজছিল অন্যদিকে সন্দেহভাজন ‘খুনী’ নাছরিনের পরিবারের বাসায় গিয়ে সান্ত¡না দিচ্ছিল। পুলিশের কাছে নাছরিনের সন্ধানের বিষয়েও খোঁজ রাখতেন। আর এ খুনী অন্য কেউ নয়, নাছরিনের পরিবারের পূর্ব পরিচিত ওষুধ ব্যবসায়ী আবদুল হাই। যার সঙ্গে নাছরিনের ছিল পরকীয়া সম্পর্ক।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার ইফতেখার উজ্জামান টেলিফোনে সংবাদকে জানান, নাছরিনকে অপহরণে জড়িত সন্দেহে গত বৃহস্পতিবার কদমতলী থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন আবদুল হাই এবং তার গাড়িচালক রানা। জিজ্ঞাসাবাদে অকপটে নাছরিনকে অপহরণ করে হত্যার কথা স্বীকারও করেন। তারা জবানবন্দী দেন আদালতে। এর আগে গ্রেপ্তার আবদুল হাইয়ের দেয়া তথ্যে পুলিশ লাশ খুঁজতে চলে যান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার শীতালক্ষ্যা পাড়ে। লাশ না মিললেও তার হাতের বেসলেট এবং পোশাক পায় কতমদলী থানা পুলিশ।

তিনি বলেন, সচ্ছল ব্যবসায়ী আবদুল হাইয়ের ইসলাম ফার্মেসি নামে ওষুধের দোকান আছে। ৫২ বছর বয়সী আবদুল হাইয়ের দোকানে এক সময় নাছরিনের এক ভাই চাকরি করত। সে সুবাধে নাছরিনের পরিবারের সঙ্গে আবদুল হাইয়ের ঘনিষ্টতা। আর সেই সূত্র ধরে নাছরিনের সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যান আবদুল হাই। নাছরিন তার মেয়েকে নিয়ে যেখানে ভাড়া থাকতেন তার সব খরচ চালাতেন আবদুল হাই। তাদের মধ্যে চুক্তি ছিল নাছরিনের সব খরচ আবদুল হাই দিবে। সে আবদুল হাইয়ের কথার বাইরে চলাফেরা করবে না।

সম্প্রতি আরেকটি ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ওই ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে নাছরিন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। সেখানে মোটা অঙ্কের টাকা ছিল আবদুল হাইয়ের। এরপর থেকে নাছরিন আবদুল হাইকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারেননি আবদুল হাই। এ ক্ষোভ থেকেই সে নাছরিনকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে। আর সেই পরিকল্পনা থেকেই ঘটনার দিন নাছরিনকে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয় আবদুল হাইয়ের দোকানে। সেখান থেকে সারাদিন ঘোরাফেরা করে। ঘটনার দিন বৃষ্টিও ছিল। এরপর নাছরিনকে নিয়ে রূপগঞ্জের কাঞ্চন ব্রিজে নিয়ে যায়। গাড়ির মধ্যে টাকা-পয়সা নিয়ে নাছরিনের সঙ্গে ঝগড়া ও হাতাহাতি হয় আবদুল হাইয়ের। এক পর্যায়ে গাড়ির মধ্যেই উত্তেজিত হয়ে নাছরিনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে চলে আসে আবদুল হাই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কদমতলী থানার এসআই লালবুর রহমান টেলিফোনে সংবাদকে জানান, চলতি বছরের ১৮ মে নিখোঁজ হন নাছরিন বেগম। পুলিশ নাছরিন বেগমের সন্ধানে মাঠে নামে। প্রথমদিকে কোন ক্রু পাচ্ছিল না পুলিশ। নিখোঁজ নাছরিনের ফোনের কলরেকর্ড যাচাই-বাচাই শুরু করে পুলিশ। ফোনের সিডিআর বিশ্লেষণ করে নাছরিনের শেষ কথা মেয়ের সঙ্গে হওয়ার একটি তথ্য পায় পুলিশ। এছাড়া আবদুল হাইয়ের সঙ্গেও কথা বলার তথ্য পায়। কিন্তু আবদুল হাইকে নাছরিনের পরিবার কোনভাবেই সন্দেহ করছিল না। বিষয়টি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বললে তারা আবদুল হাইকে আটক করার বিরোধিতা করে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশও বিপাকে পড়ে।

এস আই জানান, নাছরিনের মেয়ের সঙ্গে কথা বলি আমরা। নাছরিনের মেয়ে স্থানীয় একটি স্কুলে ৯ম শ্রেণীতে পড়ে। ওই মেয়ে তখন বলে যেদিন থেকে তার মা নিখোঁজ ছিল, ওইদিন তার সঙ্গে তার মায়ের কথা হয়। তখন তা মা তাকে বলে, তোমার হাই মামা আমাকে কিজুস খাইয়েছে আমার এখন মাথা ব্যথা করছে। এরপর থেকে তার মায়ের ফোন বন্ধ ছিল। মেয়ের এ তথ্যের সূত্র ধরে পুলিশ আটঘাট করে মাঠে নামে। আবদুল হাইয়ের সঙ্গে নাছরিনের পরিবারের ঘনিষ্টতা কি সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। পুলিশ জানতে পারে, নাছরিনের এক ভাই আবদুল হাইয়ের ফার্মেসিকে কিছুদিনের জন্য কাজ করত। সেই সুবাধে নাছরিনের মায়ের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল আবদুল হাই। নাছরিন তার পরিবার থেকে আলাদা হয়ে কদমতলী গোয়ালবাড়ির মোড়ে একটি ফ্ল্যাট নেয়। ওই ফ্ল্যাটে নাছরিন তার ১২ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে থাকতো। ওই বাসায়ও আবদুল হাইয়ের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। পরিবারের পূর্ব পরিচিত হওয়ার কারণে ৫২ বছর বয়সী আবদুল হাইয়ের সঙ্গে ৩৬ বছর বয়সী নাছরিনের একরকম সখ্যতা তৈরি হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, নাছরিনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা এবং দোকানে বসতে থাকে আবদুল হাই। নাছরিনের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে পরিবারের কাছে গিয়ে তাদের সান্ত¡না দিতে থাকে। বলে নাছরিন নিখোঁজ হয়েছে পুলিশ কাজ করছে, কোন সমস্যা নেই। সন্দেহ হওয়ার মতো কোন আচরণ ছিল না আবদুল হাইয়ের প্রতি। আর ঘটনার দিন নাছরিনের ফোনও ফেলে দেয় আবদুল হাই। আবদুল হাই নিজের ফোনটিও রেখে যায়। অন্য একটি ফোন নিয়ে যায়। যাতে কোনভাবেই বিষয়টি নিয়ে পুলিশেরও সন্দেহ তৈরি না হয়। কিন্তু পুলিশ পুরো ক্রু উদঘাটন করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে রূপগঞ্জ থানা ২১ মে অজ্ঞাত হিসেবে নাছরিনের লাশ নৌ পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তারা একটি হত্যা মামলা রুজু করে। নাছরিনের ছবি প্রকাশ করে। কিন্তু তখনও নাছরিনের পরিবার জানতো না নাছরিন আর এ পৃথিবীতে নেই। ২ জুন আবদুল হাই ও তার গাড়িচালক গ্রেপ্তার হওয়ায় পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে নাছরিনকে অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে সে জানায় নাছরিনের লাশ কাঞ্চন ব্রিজের কাছে শীতালক্ষ্যা নদীতে ফেলা হয়েছে। আবদুল হাইকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তখন পুলিশ জানতে পারে রূপগঞ্জ থানা ২১ মে এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে। ওই নারীর ছবি এবং বেসলেট নাছরিনের পরিবারকে দেখালে সেগুলো নাছরিনের বলে নিশ্চিত করে পরিবার।

রবিবার, ০৪ জুলাই ২০২১ , ২০ আষাঢ় ১৪২৮ ২২ জিলক্বদ ১৪৪২

খুন করে এসে খুন হওয়া নারীর পরিবারকে সান্ত¡না দিত খুনি

সাইফ বাবলু

স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ১২ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর কদমতলী থানা এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতেন ৩৬ বছর বয়সী নাছরিন বেগম। মেয়ের পড়াশুনা আর নিজের সংসার খরচ চালাতেন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা টাকার লভ্যাংশ থেকে। চলতি বছরের ১৮ মে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন নাছরিন। এরপর থেকে মিলছিল না খোঁজ। থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। তখনও নাছরিনের পরিবার জানে না নিখোঁজ নাছরিনের আর কোনদিনই সন্ধান মিলবে না। কারণ নাছরিনকে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে বস্তাবন্দী করে। আর হত্যাকা-টি করেছে নাছরিনের প্রেমিক।

পুলিশের ভাষ্য, নাছরিন যখন নিখোঁজ হয় তখন পুলিশ একদিকে নাছরিনকে খুঁজছিল অন্যদিকে সন্দেহভাজন ‘খুনী’ নাছরিনের পরিবারের বাসায় গিয়ে সান্ত¡না দিচ্ছিল। পুলিশের কাছে নাছরিনের সন্ধানের বিষয়েও খোঁজ রাখতেন। আর এ খুনী অন্য কেউ নয়, নাছরিনের পরিবারের পূর্ব পরিচিত ওষুধ ব্যবসায়ী আবদুল হাই। যার সঙ্গে নাছরিনের ছিল পরকীয়া সম্পর্ক।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার ইফতেখার উজ্জামান টেলিফোনে সংবাদকে জানান, নাছরিনকে অপহরণে জড়িত সন্দেহে গত বৃহস্পতিবার কদমতলী থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন আবদুল হাই এবং তার গাড়িচালক রানা। জিজ্ঞাসাবাদে অকপটে নাছরিনকে অপহরণ করে হত্যার কথা স্বীকারও করেন। তারা জবানবন্দী দেন আদালতে। এর আগে গ্রেপ্তার আবদুল হাইয়ের দেয়া তথ্যে পুলিশ লাশ খুঁজতে চলে যান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার শীতালক্ষ্যা পাড়ে। লাশ না মিললেও তার হাতের বেসলেট এবং পোশাক পায় কতমদলী থানা পুলিশ।

তিনি বলেন, সচ্ছল ব্যবসায়ী আবদুল হাইয়ের ইসলাম ফার্মেসি নামে ওষুধের দোকান আছে। ৫২ বছর বয়সী আবদুল হাইয়ের দোকানে এক সময় নাছরিনের এক ভাই চাকরি করত। সে সুবাধে নাছরিনের পরিবারের সঙ্গে আবদুল হাইয়ের ঘনিষ্টতা। আর সেই সূত্র ধরে নাছরিনের সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যান আবদুল হাই। নাছরিন তার মেয়েকে নিয়ে যেখানে ভাড়া থাকতেন তার সব খরচ চালাতেন আবদুল হাই। তাদের মধ্যে চুক্তি ছিল নাছরিনের সব খরচ আবদুল হাই দিবে। সে আবদুল হাইয়ের কথার বাইরে চলাফেরা করবে না।

সম্প্রতি আরেকটি ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ওই ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে নাছরিন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। সেখানে মোটা অঙ্কের টাকা ছিল আবদুল হাইয়ের। এরপর থেকে নাছরিন আবদুল হাইকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারেননি আবদুল হাই। এ ক্ষোভ থেকেই সে নাছরিনকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে। আর সেই পরিকল্পনা থেকেই ঘটনার দিন নাছরিনকে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয় আবদুল হাইয়ের দোকানে। সেখান থেকে সারাদিন ঘোরাফেরা করে। ঘটনার দিন বৃষ্টিও ছিল। এরপর নাছরিনকে নিয়ে রূপগঞ্জের কাঞ্চন ব্রিজে নিয়ে যায়। গাড়ির মধ্যে টাকা-পয়সা নিয়ে নাছরিনের সঙ্গে ঝগড়া ও হাতাহাতি হয় আবদুল হাইয়ের। এক পর্যায়ে গাড়ির মধ্যেই উত্তেজিত হয়ে নাছরিনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে চলে আসে আবদুল হাই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কদমতলী থানার এসআই লালবুর রহমান টেলিফোনে সংবাদকে জানান, চলতি বছরের ১৮ মে নিখোঁজ হন নাছরিন বেগম। পুলিশ নাছরিন বেগমের সন্ধানে মাঠে নামে। প্রথমদিকে কোন ক্রু পাচ্ছিল না পুলিশ। নিখোঁজ নাছরিনের ফোনের কলরেকর্ড যাচাই-বাচাই শুরু করে পুলিশ। ফোনের সিডিআর বিশ্লেষণ করে নাছরিনের শেষ কথা মেয়ের সঙ্গে হওয়ার একটি তথ্য পায় পুলিশ। এছাড়া আবদুল হাইয়ের সঙ্গেও কথা বলার তথ্য পায়। কিন্তু আবদুল হাইকে নাছরিনের পরিবার কোনভাবেই সন্দেহ করছিল না। বিষয়টি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বললে তারা আবদুল হাইকে আটক করার বিরোধিতা করে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশও বিপাকে পড়ে।

এস আই জানান, নাছরিনের মেয়ের সঙ্গে কথা বলি আমরা। নাছরিনের মেয়ে স্থানীয় একটি স্কুলে ৯ম শ্রেণীতে পড়ে। ওই মেয়ে তখন বলে যেদিন থেকে তার মা নিখোঁজ ছিল, ওইদিন তার সঙ্গে তার মায়ের কথা হয়। তখন তা মা তাকে বলে, তোমার হাই মামা আমাকে কিজুস খাইয়েছে আমার এখন মাথা ব্যথা করছে। এরপর থেকে তার মায়ের ফোন বন্ধ ছিল। মেয়ের এ তথ্যের সূত্র ধরে পুলিশ আটঘাট করে মাঠে নামে। আবদুল হাইয়ের সঙ্গে নাছরিনের পরিবারের ঘনিষ্টতা কি সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। পুলিশ জানতে পারে, নাছরিনের এক ভাই আবদুল হাইয়ের ফার্মেসিকে কিছুদিনের জন্য কাজ করত। সেই সুবাধে নাছরিনের মায়ের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল আবদুল হাই। নাছরিন তার পরিবার থেকে আলাদা হয়ে কদমতলী গোয়ালবাড়ির মোড়ে একটি ফ্ল্যাট নেয়। ওই ফ্ল্যাটে নাছরিন তার ১২ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে থাকতো। ওই বাসায়ও আবদুল হাইয়ের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। পরিবারের পূর্ব পরিচিত হওয়ার কারণে ৫২ বছর বয়সী আবদুল হাইয়ের সঙ্গে ৩৬ বছর বয়সী নাছরিনের একরকম সখ্যতা তৈরি হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, নাছরিনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা এবং দোকানে বসতে থাকে আবদুল হাই। নাছরিনের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে পরিবারের কাছে গিয়ে তাদের সান্ত¡না দিতে থাকে। বলে নাছরিন নিখোঁজ হয়েছে পুলিশ কাজ করছে, কোন সমস্যা নেই। সন্দেহ হওয়ার মতো কোন আচরণ ছিল না আবদুল হাইয়ের প্রতি। আর ঘটনার দিন নাছরিনের ফোনও ফেলে দেয় আবদুল হাই। আবদুল হাই নিজের ফোনটিও রেখে যায়। অন্য একটি ফোন নিয়ে যায়। যাতে কোনভাবেই বিষয়টি নিয়ে পুলিশেরও সন্দেহ তৈরি না হয়। কিন্তু পুলিশ পুরো ক্রু উদঘাটন করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে রূপগঞ্জ থানা ২১ মে অজ্ঞাত হিসেবে নাছরিনের লাশ নৌ পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তারা একটি হত্যা মামলা রুজু করে। নাছরিনের ছবি প্রকাশ করে। কিন্তু তখনও নাছরিনের পরিবার জানতো না নাছরিন আর এ পৃথিবীতে নেই। ২ জুন আবদুল হাই ও তার গাড়িচালক গ্রেপ্তার হওয়ায় পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে নাছরিনকে অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে সে জানায় নাছরিনের লাশ কাঞ্চন ব্রিজের কাছে শীতালক্ষ্যা নদীতে ফেলা হয়েছে। আবদুল হাইকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তখন পুলিশ জানতে পারে রূপগঞ্জ থানা ২১ মে এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে। ওই নারীর ছবি এবং বেসলেট নাছরিনের পরিবারকে দেখালে সেগুলো নাছরিনের বলে নিশ্চিত করে পরিবার।