ভারি বর্ষণ ও উজান ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাটে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে ভয়াবহ ভাঙন। অন্যদিকে হবিগঞ্জ হাওরবাসীর মধ্যে উত্তাল ঢেউয়ে বসতবাড়ি হারানোর আতঙ্ক বিরাজ করছে। এছাড়া শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ৩০ টি গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ তথ্য জানা গেছে।
লালমনিরহাট : ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বিকেলে পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে চর অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার ভাঙনে ১১টি বসতবাড়ি বিলিন হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র নিশ্চিত করেছে।
শনিবার বিকেলে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ (বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ব্যারেজ রক্ষায় ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্র জানায়, গত কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে শনিবার সকাল ৬টা থেকে থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সর্বশেষ বিকেল সাড়ে ৫টায় পানি ৫২ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার স্পর্শ করে। ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে তিস্তার পানি।
জানা যায়, তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকু-া ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।
আদিতমারীর মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘তিস্তার পানি কয়েকদিন থেকেই বাড়ছে। শনিবার সকাল থেকে পানিপ্রবাহ ব্যাপক পরিমাণে বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। পানি থেকে বাঁচতে কিছু পরিবার উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।’
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের ঢল অব্যাহত রয়েছে। যে কোন সময় তিস্তায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে তিনি জানান।
সুনামগঞ্জ : বর্ষা এলেই ভাঙনের আতঙ্কে থাকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের হাওর পাড়ের মানুষ। এ উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ও শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের হাওরকেন্দ্রিক প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামকে বর্ষা আসলেই হাওরে আছড়েপড়া উত্তাল ঢেউয়ে ভাঙনের মুখে পড়তে হয়। বসতভিটা রক্ষায় প্রতি বছরই চলে নানামুখী সংগ্রাম। এতে ভিটেমাটি হারানোর ঘটনাও ঘটছে প্রতি বছর। এমনও কিছু গ্রাম রয়েছে, যে গ্রামগুলোর নাম নথিতে ঠিকই আছে, কিন্তু বাস্তবে গ্রামের অস্তিত্ব নেই। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ও শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন হচ্ছে এ উপজেলার সবচেয়ে নিম্নাঞ্চল ও হাওরকেন্দ্রিক এলাকা। বছরের মে মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সাত মাস বর্ষাকাল থাকে। তখন এখানকার গ্রামগুলো ছোট ছোট একেকটা ভাসমান দ্বীপের মতো দেখা যায়।
এ সময় হাওরে সামান্য বাতাস হলেই প্রচণ্ড ঢেউ ওঠে। তিন-চার ফুট উঁচু এক একটি বিশাল ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে হাওরের গ্রামগুলোয়। তখন চোখের সামনেই বিলীন হয়ে যায় কষ্টেগড়া বসতভিটা। হাওরবাসীর মুখে জানা যায় বর্ষায় ঝড়ো বাতাস ও বিশাল ঢেউয়ের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগের নাম তুফান। গোটা হাওরাঞ্চলেই তুফান এক আতঙ্কের নাম। তুফান ও হাওরের আফাল ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙনের ঘটনা এ অঞ্চলের নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরেই এখানকার মানুষ ভাঙনের হুমকি মোকাবেলা করে আসছে। এই ভাঙন মোকাবেলায় তাদের বড় সহায় ছিল প্রকৃতি বন ও ঘাস। কিন্তু মানুষের সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে নিজেরাই দিনদিন প্রকৃতির এই সহায়কে উজাড় করে দিয়েছে। ফলে ভরা বর্ষা এখন তাদের কাছে হাজির হয় সর্বস্ব হারানোর ভয়াল আতঙ্ক হয়ে। প্রতি বছরেই বসতবাড়ি ও বাড়িঘর ভাঙাগড়ায় সর্বহারা এ অঞ্চলের অনেকেই।
বসতঘর ভাঙনের ভুক্তভোগী উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের পার্শ¦বর্তী তরং নতুন হাটি গ্রামের ইমরান আখঞ্জী বলেন, গেল বছর বন্যায় বসতভিটা ও ঘর হারিয়ে নিরুপায় হয়ে জন্মভূমি ছেড়ে জীবিকার তাগিতে সিলেটে এসেছি, এখানে খেয়েদেয়ে কিছু আয় করে ভাঙা বসতভিটে কিছু বালু দিয়েছিলাম, কিন্তু এতেও থাকার উপযোগী হয়নি। এ বছর বর্ষার শুরুতেই আতঙ্কে আছি, কখন জানি ভাঙনের কবলে পড়ে আমার গড়া কষ্টের বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়। একই এলাকার দুলাল মিয়া বলেন, গেল বন্যায় বসতভিটা ও বসতঘর ভাঙনের পর, টাকার অভাবে বসতভিটা ও ঘর মেরামত করতে পারিনি। ভাঙাঘরটি রেখে পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে আসছি, করোনা পরিস্থিতিতে তেমন আয়রোজকার করিতে পারিনি। বাড়িঘর মেরামত করতে না পারলে বাড়িতে কিভাবে যাব এ নিয়ে চিন্তায় আছি।
ঝিনাইগাতী (শেরপুর) : শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলায় আকস্মিক বন্যায় ডুবে গেছে ৩০টি গ্রাম। মহারশি নদীতে গত ৩০ জুনে পাহাড়ি ঢলের মহাবশির নদীর পানি উপজেলা পরিষদসহ বাজারে প্রবেশ করে ভয়াবহ বন্যায় পরিণত হয়। ওই দিনই ঝিনাইগাতী সদর থেকে পানি নেমে গেলেও তিনদিনের ব্যবধানে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের নিম্ন অঞ্চলের প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। ফলে পানিতে বন্দী হয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছে হতদরিদ্র জনসাধারণ। হাতিবান্ধা, মালঝিকান্ধা, গৌরিপুর ও ঝিনাইগাতী, ধানশাইলসহ ৪টি ইউনিয়নের মাইরেপাড়া, জুলগাঁও, পাগলারমুখ, সুরিহারা, সাড়িকালিনগর, দড়িকালিনগর, মাইটেপাড়া, বনগাঁও, চতল, জিগাতলা, বাঘেরভিটা, কান্দলি, জসৎপুর, ছোট মালঝিকান্ধাসহ ৩০টি গ্রামের। চারদিকে থৈ থৈ পানি আর পানি। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। অনেকের ঘরের চুলায় আগুন জ্বলেনি। অপরদিকে সরকারের ঘোষিত করোনা প্রতিরোধে লকডাউন চলার দরুন নিম্ন আয়ের মানুষের ব্যাপক কষ্টের মধ্যে জীবিকা নির্বাহ করছে।
লালমনিরহাটে তিস্তার ভাঙনে নদীতে বিলীন বসতবাড়ি -সংবাদ
আরও খবররবিবার, ০৪ জুলাই ২০২১ , ২০ আষাঢ় ১৪২৮ ২২ জিলক্বদ ১৪৪২
সংবাদ ডেস্ক
লালমনিরহাটে তিস্তার ভাঙনে নদীতে বিলীন বসতবাড়ি -সংবাদ
ভারি বর্ষণ ও উজান ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাটে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে ভয়াবহ ভাঙন। অন্যদিকে হবিগঞ্জ হাওরবাসীর মধ্যে উত্তাল ঢেউয়ে বসতবাড়ি হারানোর আতঙ্ক বিরাজ করছে। এছাড়া শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ৩০ টি গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ তথ্য জানা গেছে।
লালমনিরহাট : ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বিকেলে পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে চর অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার ভাঙনে ১১টি বসতবাড়ি বিলিন হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র নিশ্চিত করেছে।
শনিবার বিকেলে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ (বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ব্যারেজ রক্ষায় ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্র জানায়, গত কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে শনিবার সকাল ৬টা থেকে থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সর্বশেষ বিকেল সাড়ে ৫টায় পানি ৫২ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার স্পর্শ করে। ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে তিস্তার পানি।
জানা যায়, তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকু-া ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।
আদিতমারীর মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘তিস্তার পানি কয়েকদিন থেকেই বাড়ছে। শনিবার সকাল থেকে পানিপ্রবাহ ব্যাপক পরিমাণে বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। পানি থেকে বাঁচতে কিছু পরিবার উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।’
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের ঢল অব্যাহত রয়েছে। যে কোন সময় তিস্তায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে তিনি জানান।
সুনামগঞ্জ : বর্ষা এলেই ভাঙনের আতঙ্কে থাকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের হাওর পাড়ের মানুষ। এ উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ও শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের হাওরকেন্দ্রিক প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামকে বর্ষা আসলেই হাওরে আছড়েপড়া উত্তাল ঢেউয়ে ভাঙনের মুখে পড়তে হয়। বসতভিটা রক্ষায় প্রতি বছরই চলে নানামুখী সংগ্রাম। এতে ভিটেমাটি হারানোর ঘটনাও ঘটছে প্রতি বছর। এমনও কিছু গ্রাম রয়েছে, যে গ্রামগুলোর নাম নথিতে ঠিকই আছে, কিন্তু বাস্তবে গ্রামের অস্তিত্ব নেই। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ও শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন হচ্ছে এ উপজেলার সবচেয়ে নিম্নাঞ্চল ও হাওরকেন্দ্রিক এলাকা। বছরের মে মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সাত মাস বর্ষাকাল থাকে। তখন এখানকার গ্রামগুলো ছোট ছোট একেকটা ভাসমান দ্বীপের মতো দেখা যায়।
এ সময় হাওরে সামান্য বাতাস হলেই প্রচণ্ড ঢেউ ওঠে। তিন-চার ফুট উঁচু এক একটি বিশাল ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে হাওরের গ্রামগুলোয়। তখন চোখের সামনেই বিলীন হয়ে যায় কষ্টেগড়া বসতভিটা। হাওরবাসীর মুখে জানা যায় বর্ষায় ঝড়ো বাতাস ও বিশাল ঢেউয়ের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগের নাম তুফান। গোটা হাওরাঞ্চলেই তুফান এক আতঙ্কের নাম। তুফান ও হাওরের আফাল ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙনের ঘটনা এ অঞ্চলের নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরেই এখানকার মানুষ ভাঙনের হুমকি মোকাবেলা করে আসছে। এই ভাঙন মোকাবেলায় তাদের বড় সহায় ছিল প্রকৃতি বন ও ঘাস। কিন্তু মানুষের সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে নিজেরাই দিনদিন প্রকৃতির এই সহায়কে উজাড় করে দিয়েছে। ফলে ভরা বর্ষা এখন তাদের কাছে হাজির হয় সর্বস্ব হারানোর ভয়াল আতঙ্ক হয়ে। প্রতি বছরেই বসতবাড়ি ও বাড়িঘর ভাঙাগড়ায় সর্বহারা এ অঞ্চলের অনেকেই।
বসতঘর ভাঙনের ভুক্তভোগী উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের পার্শ¦বর্তী তরং নতুন হাটি গ্রামের ইমরান আখঞ্জী বলেন, গেল বছর বন্যায় বসতভিটা ও ঘর হারিয়ে নিরুপায় হয়ে জন্মভূমি ছেড়ে জীবিকার তাগিতে সিলেটে এসেছি, এখানে খেয়েদেয়ে কিছু আয় করে ভাঙা বসতভিটে কিছু বালু দিয়েছিলাম, কিন্তু এতেও থাকার উপযোগী হয়নি। এ বছর বর্ষার শুরুতেই আতঙ্কে আছি, কখন জানি ভাঙনের কবলে পড়ে আমার গড়া কষ্টের বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়। একই এলাকার দুলাল মিয়া বলেন, গেল বন্যায় বসতভিটা ও বসতঘর ভাঙনের পর, টাকার অভাবে বসতভিটা ও ঘর মেরামত করতে পারিনি। ভাঙাঘরটি রেখে পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে আসছি, করোনা পরিস্থিতিতে তেমন আয়রোজকার করিতে পারিনি। বাড়িঘর মেরামত করতে না পারলে বাড়িতে কিভাবে যাব এ নিয়ে চিন্তায় আছি।
ঝিনাইগাতী (শেরপুর) : শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলায় আকস্মিক বন্যায় ডুবে গেছে ৩০টি গ্রাম। মহারশি নদীতে গত ৩০ জুনে পাহাড়ি ঢলের মহাবশির নদীর পানি উপজেলা পরিষদসহ বাজারে প্রবেশ করে ভয়াবহ বন্যায় পরিণত হয়। ওই দিনই ঝিনাইগাতী সদর থেকে পানি নেমে গেলেও তিনদিনের ব্যবধানে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের নিম্ন অঞ্চলের প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। ফলে পানিতে বন্দী হয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছে হতদরিদ্র জনসাধারণ। হাতিবান্ধা, মালঝিকান্ধা, গৌরিপুর ও ঝিনাইগাতী, ধানশাইলসহ ৪টি ইউনিয়নের মাইরেপাড়া, জুলগাঁও, পাগলারমুখ, সুরিহারা, সাড়িকালিনগর, দড়িকালিনগর, মাইটেপাড়া, বনগাঁও, চতল, জিগাতলা, বাঘেরভিটা, কান্দলি, জসৎপুর, ছোট মালঝিকান্ধাসহ ৩০টি গ্রামের। চারদিকে থৈ থৈ পানি আর পানি। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। অনেকের ঘরের চুলায় আগুন জ্বলেনি। অপরদিকে সরকারের ঘোষিত করোনা প্রতিরোধে লকডাউন চলার দরুন নিম্ন আয়ের মানুষের ব্যাপক কষ্টের মধ্যে জীবিকা নির্বাহ করছে।