সরকারের মতামত ছাড়াই বিইআরসির গেজেট

সরকারের মতামত এবং যথযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়াই একাধিক গেজেট প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত কয়েক বছরে এসব প্রবিধানমালা দিয়েই নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে গেছে কমিশন।

তবে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বিইআরসির এ ধরনের চারটি প্রবিধানমালা সংশোধন করতে বলার পর কমিশন সেগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের মতামত অনুযায়ি, এসআরও (স্টেচ্যুটরি রেগুলেটরি অর্ডারস) ও ভেটিং ছাড়া কোন প্রবিধানমালা আইনি দলিল হিসেবে গণ্য হবে না।

বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির যে চারটি প্রবিধানমালায় এসআরও নম্বর নেই সেগুলো হলো ২০০৪ সালে করা ‘তহবিল প্রবিধানমালা’, ‘বাজেট, হিসাব এবং প্রতিবেদন প্রবিধানমালা’, ২০১৬ সালে সংশোধিত ‘লাইসেন্স প্রবিধানমালা’ ও ‘বিরোধ নিষ্পত্তি প্রবিধানমালা’।

আইন মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিইআরসি কোন প্রবিধানমালা করতে চাইলে প্রস্তাবটি প্রথমে জ্বালানি বিভাগে পাঠাতে হবে। কমিশন স্বাধীন হলেও বিদ্যুৎ, জ্বালানি মন্ত্রণালয় তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়। এরপর বিদ্যুৎ, জ্বালানি মন্ত্রণালয় বিষয়টি আইন মšúণালয়ে পাঠাবে মতামত গ্রহণ বা ভেটিংয়ের জন্য। এর আগে প্রবিধামালাটির প্রাক প্রকাশনা করে সর্বসাধারণের মতামত নিতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ঘোষণা দিতে হবে।

উল্লিখিত চারটি প্রবিধানমালায় এসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলে সেগুলোতে এসআরও নম্বর নেই।

বিইআরসির মো. চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল এ বিষয়ে গত শুক্রবার রাতে সংবাদকে বলেন, কয়েকটি প্রবিধানমালার গেজেট এসআরও ছাড়া প্রকাশ করা হয়েছিল। আইন মন্ত্রণালয় বলেছে এগুলো আইনি দলিল হিসেবে গণ্য হবে না। তাই সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বিইআরসি লাইসেন্স প্রবিধানমালা, ২০০৬ এ এসআরও নম্বর ছিল। তবে ২০১৬ সালে সংশোধন করার সময় যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় সংশোধিত প্রবিধানমালায় এসআরও নম্বর পড়েনি। কমিশন সূত্র বলছে, ২০০৩-এর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-এর ৫৯(১) এ বলা হয়েছে ‘আইনের উদ্দেশ পূরণকল্পে সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা প্রবিধান প্রণয়ন করতে পারবে।’

এর আগের দুটি কমিশন ২০০৪ এবং ২০১৬ সালে এই অংশের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে। কমিশন প্রবিধানমালা প্রণয়ন করতে পারবে এ বিষয়ে কারও কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু সেটি হতে হবে ‘সরকারি গেজেট’ দ্বারা সংরক্ষিত। অর্থাৎ সরকার যে প্রক্রিয়ায় গেজেট প্রকাশ করে সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এসআরও ছাড়া প্রবিধানের আলোকে বিইআরসি যেসব কাজ করেছে সেগুলো বৈধ হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল সংবাদকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় বলেছে, ইতিপূর্বে সম্পাদিত কার্যাদির বিষয়ে কমিশন প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’

সম্প্রতি বিইআরসি যে তাদের ‘লাইসেন্স প্রবিধানমালা’ সংশোধন করেছে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সেটির বিষয়ে জাতীয় দৈনিকে গণবিজ্ঞপ্তি এবং সংশোধনের খসড়া তাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করেছে। কিন্তু ২০১৬ সালের লাইসেন্স প্রবিধানমালা সংশোধনের সময় এমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

রবিবার, ০৪ জুলাই ২০২১ , ২০ আষাঢ় ১৪২৮ ২২ জিলক্বদ ১৪৪২

সরকারের মতামত ছাড়াই বিইআরসির গেজেট

ফয়েজ আহমেদ তুষার

সরকারের মতামত এবং যথযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়াই একাধিক গেজেট প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত কয়েক বছরে এসব প্রবিধানমালা দিয়েই নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে গেছে কমিশন।

তবে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বিইআরসির এ ধরনের চারটি প্রবিধানমালা সংশোধন করতে বলার পর কমিশন সেগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের মতামত অনুযায়ি, এসআরও (স্টেচ্যুটরি রেগুলেটরি অর্ডারস) ও ভেটিং ছাড়া কোন প্রবিধানমালা আইনি দলিল হিসেবে গণ্য হবে না।

বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির যে চারটি প্রবিধানমালায় এসআরও নম্বর নেই সেগুলো হলো ২০০৪ সালে করা ‘তহবিল প্রবিধানমালা’, ‘বাজেট, হিসাব এবং প্রতিবেদন প্রবিধানমালা’, ২০১৬ সালে সংশোধিত ‘লাইসেন্স প্রবিধানমালা’ ও ‘বিরোধ নিষ্পত্তি প্রবিধানমালা’।

আইন মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিইআরসি কোন প্রবিধানমালা করতে চাইলে প্রস্তাবটি প্রথমে জ্বালানি বিভাগে পাঠাতে হবে। কমিশন স্বাধীন হলেও বিদ্যুৎ, জ্বালানি মন্ত্রণালয় তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়। এরপর বিদ্যুৎ, জ্বালানি মন্ত্রণালয় বিষয়টি আইন মšúণালয়ে পাঠাবে মতামত গ্রহণ বা ভেটিংয়ের জন্য। এর আগে প্রবিধামালাটির প্রাক প্রকাশনা করে সর্বসাধারণের মতামত নিতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ঘোষণা দিতে হবে।

উল্লিখিত চারটি প্রবিধানমালায় এসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলে সেগুলোতে এসআরও নম্বর নেই।

বিইআরসির মো. চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল এ বিষয়ে গত শুক্রবার রাতে সংবাদকে বলেন, কয়েকটি প্রবিধানমালার গেজেট এসআরও ছাড়া প্রকাশ করা হয়েছিল। আইন মন্ত্রণালয় বলেছে এগুলো আইনি দলিল হিসেবে গণ্য হবে না। তাই সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বিইআরসি লাইসেন্স প্রবিধানমালা, ২০০৬ এ এসআরও নম্বর ছিল। তবে ২০১৬ সালে সংশোধন করার সময় যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় সংশোধিত প্রবিধানমালায় এসআরও নম্বর পড়েনি। কমিশন সূত্র বলছে, ২০০৩-এর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-এর ৫৯(১) এ বলা হয়েছে ‘আইনের উদ্দেশ পূরণকল্পে সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা প্রবিধান প্রণয়ন করতে পারবে।’

এর আগের দুটি কমিশন ২০০৪ এবং ২০১৬ সালে এই অংশের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে। কমিশন প্রবিধানমালা প্রণয়ন করতে পারবে এ বিষয়ে কারও কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু সেটি হতে হবে ‘সরকারি গেজেট’ দ্বারা সংরক্ষিত। অর্থাৎ সরকার যে প্রক্রিয়ায় গেজেট প্রকাশ করে সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এসআরও ছাড়া প্রবিধানের আলোকে বিইআরসি যেসব কাজ করেছে সেগুলো বৈধ হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল সংবাদকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় বলেছে, ইতিপূর্বে সম্পাদিত কার্যাদির বিষয়ে কমিশন প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’

সম্প্রতি বিইআরসি যে তাদের ‘লাইসেন্স প্রবিধানমালা’ সংশোধন করেছে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সেটির বিষয়ে জাতীয় দৈনিকে গণবিজ্ঞপ্তি এবং সংশোধনের খসড়া তাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করেছে। কিন্তু ২০১৬ সালের লাইসেন্স প্রবিধানমালা সংশোধনের সময় এমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।