বিধিনিষেধে সংকট নিম্নআয়ের মানুষের

নজরুল ইসলাম একজন রিকশাচালক। গত ৭ বছর ঢাকা শহরে রিকশা চালান। গত বছরগুলোতে তিনি রিকশা চালিয়ে কোনমতে সংসার চালাতে পারতেন। কিন্তু গত বছর থেকে করোনাকালীন চলমান লকডাউনে তার আয়-রোজগার একেবারে কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে তিনি না পারছেন নিজে চলতে, না পারছেন পরিবারকে টাকা পাঠাতে। এতে চরম সংকটে দিন পার করছেন তিনি।

শুধু একজন নজরুল ইসলামই নন, এমন অনেক নজরুল ইসলাম ঢাকা শহরের ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কেউ রিকশা চালান, কেউ ফুটপাতে মালামাল বিক্রি করেন, আবার কেউ রাস্তায় চা-পান বিক্রি করেন। এই লকডাউনে সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত বন্ধ থাকায় তাদের আয়-রোজগার কমে গেছে।

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি এখানে একা থাকি, আমার পরিবার থাকে গ্রামে। লকডাউনে সারাদিনে ৫০০ টাকাও আয় হয় না। ঘণ্টায় এক থেকে দুইটা যাত্রী পাই। আজ সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ইনকাম ২৫০ টাকা। রিকশার ১০০ টাকা জমা দিতে হয়। তাহলে আর হাতে কী থাকে, আবার কয়দিন পর বাসা ভাড়া দিতে হবে। আমি কী খাব আর বাড়িতে কী দিয়ে দিয়ে পাঠাব। সরকারের এভাবে লকডাউন দেয়া টা কি ঠিক হইল? লকডাউন না দিয়ে সরকারের উচিত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। তাহলে আমাদের মত মানুষদের এত কষ্ট হয় না। যারা অফিসার তারা তো এই লকডাউনে বসে বসে টাকা পায়, তাদের তো আর এত চিন্তা নাই। তারমধ্যে জিনিস পত্রের এত দাম।

যার হায়াৎ যতদিন সে ততদিন বাঁচবে আপনি আর আমি তো কিছু করতে পারব না। সামনে তো আবারও ঈদ আসতেছে, কতদনি তো বাড়িও যাই না। আমরা যারা দিন আনি দিন খাই তারা এই লকডাউনে যে কেমন করে দিন কাটাচ্ছি শুধু আমরাই জানি। আল্লাহ অসুখ দিছে তিনি ঠিক করবেন আপনি আমি কি কিছু করতে পারব। যতদিন বাচব অসুখ-বিসুখ থাকবেই কিন্তু এইভাবে আর কত দিন।

বেশি ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ভাড়া তো বেশি চাই না, সারাদিন তো ভাড়াই পাই না, ৫-১০ টাকা বেশি না হইলে চলব কিভাবে। রাত ৮টার পর আর কেউ না থাকলে আমিও তো বাইরে থাকতে পারি না। সারাদিনে যখন বাইরে থাকি চা-পান, বিড়ি খাওয়া লাগে আবার ৩ বেলার খাবারও বাইরে খাইতে হয় এই টাকা টা তো আমাকে ইনকাম করতেই হবে। এখন তো অনেক সময় বসেই থাকতে হয়। ভাড়ায় কিছু না আসলে আমরা কোথায় পাব। ঘরে থাকলে তো অফিসারদের মত টাকা আসবে না। তিনি আরও বলেন, লকডাউনের কারণে স্কুল বন্ধ তাই তার ছেলেও কাজ করতে যায়। সেও কখন কাজ পায় আবার কখনও পায় না। তার মতো একই অবস্থা পান বিক্রেতা মকবুলের। তিনিও বলেন, সারাদিন ঘুরতেছি কিন্তু বেচা বিক্রি নেই। এই পান যদি শুখায় যায় তাহলে কাল এই পান আর কেউ খাবে না। বিক্রি করতে না পারলে আমার কত লস হবে। টাকা না থাকলে কালকে কি দিয়ে পান আনব। সরকার লকডাউন তুলে নিলে আমরা খেয়ে বাঁচতে পারব। বাড়ি ভাড়া দিব কীভাবে এ চিন্তায় রাতে তো ঘুম হয় না। আমি তো এখানে পরিবার নিয়ে থাকি আল্লায় দিন পার করাচ্ছে।

রবিবার, ০৪ জুলাই ২০২১ , ২০ আষাঢ় ১৪২৮ ২২ জিলক্বদ ১৪৪২

বিধিনিষেধে সংকট নিম্নআয়ের মানুষের

মাধবী কুজুর

নজরুল ইসলাম একজন রিকশাচালক। গত ৭ বছর ঢাকা শহরে রিকশা চালান। গত বছরগুলোতে তিনি রিকশা চালিয়ে কোনমতে সংসার চালাতে পারতেন। কিন্তু গত বছর থেকে করোনাকালীন চলমান লকডাউনে তার আয়-রোজগার একেবারে কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে তিনি না পারছেন নিজে চলতে, না পারছেন পরিবারকে টাকা পাঠাতে। এতে চরম সংকটে দিন পার করছেন তিনি।

শুধু একজন নজরুল ইসলামই নন, এমন অনেক নজরুল ইসলাম ঢাকা শহরের ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কেউ রিকশা চালান, কেউ ফুটপাতে মালামাল বিক্রি করেন, আবার কেউ রাস্তায় চা-পান বিক্রি করেন। এই লকডাউনে সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত বন্ধ থাকায় তাদের আয়-রোজগার কমে গেছে।

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি এখানে একা থাকি, আমার পরিবার থাকে গ্রামে। লকডাউনে সারাদিনে ৫০০ টাকাও আয় হয় না। ঘণ্টায় এক থেকে দুইটা যাত্রী পাই। আজ সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ইনকাম ২৫০ টাকা। রিকশার ১০০ টাকা জমা দিতে হয়। তাহলে আর হাতে কী থাকে, আবার কয়দিন পর বাসা ভাড়া দিতে হবে। আমি কী খাব আর বাড়িতে কী দিয়ে দিয়ে পাঠাব। সরকারের এভাবে লকডাউন দেয়া টা কি ঠিক হইল? লকডাউন না দিয়ে সরকারের উচিত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। তাহলে আমাদের মত মানুষদের এত কষ্ট হয় না। যারা অফিসার তারা তো এই লকডাউনে বসে বসে টাকা পায়, তাদের তো আর এত চিন্তা নাই। তারমধ্যে জিনিস পত্রের এত দাম।

যার হায়াৎ যতদিন সে ততদিন বাঁচবে আপনি আর আমি তো কিছু করতে পারব না। সামনে তো আবারও ঈদ আসতেছে, কতদনি তো বাড়িও যাই না। আমরা যারা দিন আনি দিন খাই তারা এই লকডাউনে যে কেমন করে দিন কাটাচ্ছি শুধু আমরাই জানি। আল্লাহ অসুখ দিছে তিনি ঠিক করবেন আপনি আমি কি কিছু করতে পারব। যতদিন বাচব অসুখ-বিসুখ থাকবেই কিন্তু এইভাবে আর কত দিন।

বেশি ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ভাড়া তো বেশি চাই না, সারাদিন তো ভাড়াই পাই না, ৫-১০ টাকা বেশি না হইলে চলব কিভাবে। রাত ৮টার পর আর কেউ না থাকলে আমিও তো বাইরে থাকতে পারি না। সারাদিনে যখন বাইরে থাকি চা-পান, বিড়ি খাওয়া লাগে আবার ৩ বেলার খাবারও বাইরে খাইতে হয় এই টাকা টা তো আমাকে ইনকাম করতেই হবে। এখন তো অনেক সময় বসেই থাকতে হয়। ভাড়ায় কিছু না আসলে আমরা কোথায় পাব। ঘরে থাকলে তো অফিসারদের মত টাকা আসবে না। তিনি আরও বলেন, লকডাউনের কারণে স্কুল বন্ধ তাই তার ছেলেও কাজ করতে যায়। সেও কখন কাজ পায় আবার কখনও পায় না। তার মতো একই অবস্থা পান বিক্রেতা মকবুলের। তিনিও বলেন, সারাদিন ঘুরতেছি কিন্তু বেচা বিক্রি নেই। এই পান যদি শুখায় যায় তাহলে কাল এই পান আর কেউ খাবে না। বিক্রি করতে না পারলে আমার কত লস হবে। টাকা না থাকলে কালকে কি দিয়ে পান আনব। সরকার লকডাউন তুলে নিলে আমরা খেয়ে বাঁচতে পারব। বাড়ি ভাড়া দিব কীভাবে এ চিন্তায় রাতে তো ঘুম হয় না। আমি তো এখানে পরিবার নিয়ে থাকি আল্লায় দিন পার করাচ্ছে।