গৃহকর্মীর ওপর অমানবিক নির্যাতন, গৃহকর্ত্রী গ্রেপ্তার

রাজধানীর ভাটারায় গৃহকর্মীকে খুন্তি ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে গৃহকর্ত্রী মাহফুজা রহমানকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১। গত শুক্রবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাহফুজা গৃহকর্মী কুলসুমা আক্তারকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। এর আগে এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে মাহফুজার স্বামী আসাদুর রহমানকে (৩৯) গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা পুলিশ। তিনি দ্ইু দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।

জানা গেছে, গত বছরের ১২ নভেম্বর গৃহকর্মী কুলসুমা আক্তার (১৪) মাহফুজা রহমানের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ শুরু করে। এরপর থেকেই সামান্য বিষয়ে কুলসুমাকে মারধর করতেন মাহফুজা। কাজকর্মে একটু ভুল হলেই গৃহকর্ত্রী তার কর্তৃত্ব ফলাতে মেয়েটিকে কখনও লাঠি দিয়ে মারধর, কখনওবা প্লাস দিয়ে চুল ধরে টান দেন। কখনও কখনও রান্নার কাজে ব্যবহৃত খুন্তি আগুনে পুড়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত করাসহ বিভিন্ন উপায়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল। তারপরও বিষয়গুলো মেয়েটি মুখ বুঝে সহ্য করে গেছে।

নির্যাতনের ধারবাহিকতায় গত ১৫ জুন সকালে ঘর পরিষ্কার করতে দেরি হওয়ায় গৃহকর্ত্রীর স্বামী আসাদুর রহমান লাঠি দিয়ে কুলসুমার উরুসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে জখম করে এবং গৃহকর্ত্রী মাহফুজা চুলের মুঠি ধরে মারধর করতে থাকে। এ সময় আসাদুর রহমান গ্যাসের চুলার আগুনে রড গরম করে কুলসুমার ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশে চেপে ধরে এবং গৃহকর্র্ত্রী কুলসুমার হাত গরম পানিতে চেপে ধরে। এরপর কোন প্রকার চিকিৎসা না করালে হাঁটুর নিচে আগুনে পোড়া ক্ষত ও হাতের তালুতে ফোস্কা পড়ে যায়। মেয়েটির অবস্থা গুরুতর হলে তার বোনের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারপর তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে কুলসুমার বোন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে নির্যাতিতা গৃহকর্মী কুলসুমা আক্তারের বোন ফাতেমা বেগম ভাটারা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। এরপর পুলিশ গ্রেপ্তার করে গৃহকর্তাকে। ভাটারা থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) পীযুষ কুমার সরকার বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই ওই রাতে আমরা অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করি। পরে আমরা তাকে আদালতে পাঠাই। আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তাকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

র‌্যাব জানায়, গত ৩০ জুন সন্ধ্যায় কুড়িল বিশ্বরোডে কুলসুমাকে অসুস্থ অবস্থায় বোনের কাছে রেখে যায় অভিযুক্তরা। এরপর ভুক্তভোগী বোন চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে। গৃহকর্মীকে এই নির্মম নির্যাতনের ঘটনাটি ওই এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। ফলে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। তারই ধারাবাহিকতায় ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত শুক্রবার রাতে মাহফুজাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গৃহকর্মীর বোন ফাতেমা বেগম জানান, আমার বোন আট মাস আগে তাদের বাসায় কাজে যায়। ছয় হাজার টাকা করে দেয়ার কথা থাকলেও তিন মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়েছে। এখনও অনেক টাকা পাই। তারা আমার বোনকে অমানুষিক নির্যাতন করেছে। এভাবে কোন সভ্য মানুষ নির্যাতন করে? গৃহকর্তা ও তার স্ত্রী মিলে আমার বোনকে খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছে।

আহত কুলসুমা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, আমি আট মাস ধরে তাদের বাসায় কাজ করছি। কাজ করতে একটু দেরি হলেই আমাকে মারপিট করত। বিভিন্ন সময় গরম পানির ছ্যাঁকা এবং খুন্তি গরম করে ছ্যাঁকা দেয়া হতো। তারা আমার মাথা দেয়ালের সঙ্গে আঘাত করত। তাদের বাসায় যাওয়ার পর থেকেই আমাকে নির্যাতন করত। আমি অনেকবার পালাতে চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। গত বুধবার কুড়িল বিশ্বরোডে ওভার ব্রিজের নিচে আমার বোনের কাছে দিয়ে যায় তারা। কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটি বলেন, আমি আগে পালাতে পারলে এত নির্যাতনের শিকার হতাম না।

রবিবার, ০৪ জুলাই ২০২১ , ২০ আষাঢ় ১৪২৮ ২২ জিলক্বদ ১৪৪২

গৃহকর্মীর ওপর অমানবিক নির্যাতন, গৃহকর্ত্রী গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীর ভাটারায় গৃহকর্মীকে খুন্তি ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে গৃহকর্ত্রী মাহফুজা রহমানকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১। গত শুক্রবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাহফুজা গৃহকর্মী কুলসুমা আক্তারকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। এর আগে এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে মাহফুজার স্বামী আসাদুর রহমানকে (৩৯) গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা পুলিশ। তিনি দ্ইু দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।

জানা গেছে, গত বছরের ১২ নভেম্বর গৃহকর্মী কুলসুমা আক্তার (১৪) মাহফুজা রহমানের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ শুরু করে। এরপর থেকেই সামান্য বিষয়ে কুলসুমাকে মারধর করতেন মাহফুজা। কাজকর্মে একটু ভুল হলেই গৃহকর্ত্রী তার কর্তৃত্ব ফলাতে মেয়েটিকে কখনও লাঠি দিয়ে মারধর, কখনওবা প্লাস দিয়ে চুল ধরে টান দেন। কখনও কখনও রান্নার কাজে ব্যবহৃত খুন্তি আগুনে পুড়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত করাসহ বিভিন্ন উপায়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল। তারপরও বিষয়গুলো মেয়েটি মুখ বুঝে সহ্য করে গেছে।

নির্যাতনের ধারবাহিকতায় গত ১৫ জুন সকালে ঘর পরিষ্কার করতে দেরি হওয়ায় গৃহকর্ত্রীর স্বামী আসাদুর রহমান লাঠি দিয়ে কুলসুমার উরুসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে জখম করে এবং গৃহকর্ত্রী মাহফুজা চুলের মুঠি ধরে মারধর করতে থাকে। এ সময় আসাদুর রহমান গ্যাসের চুলার আগুনে রড গরম করে কুলসুমার ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশে চেপে ধরে এবং গৃহকর্র্ত্রী কুলসুমার হাত গরম পানিতে চেপে ধরে। এরপর কোন প্রকার চিকিৎসা না করালে হাঁটুর নিচে আগুনে পোড়া ক্ষত ও হাতের তালুতে ফোস্কা পড়ে যায়। মেয়েটির অবস্থা গুরুতর হলে তার বোনের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারপর তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে কুলসুমার বোন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে নির্যাতিতা গৃহকর্মী কুলসুমা আক্তারের বোন ফাতেমা বেগম ভাটারা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। এরপর পুলিশ গ্রেপ্তার করে গৃহকর্তাকে। ভাটারা থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) পীযুষ কুমার সরকার বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই ওই রাতে আমরা অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করি। পরে আমরা তাকে আদালতে পাঠাই। আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তাকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

র‌্যাব জানায়, গত ৩০ জুন সন্ধ্যায় কুড়িল বিশ্বরোডে কুলসুমাকে অসুস্থ অবস্থায় বোনের কাছে রেখে যায় অভিযুক্তরা। এরপর ভুক্তভোগী বোন চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে। গৃহকর্মীকে এই নির্মম নির্যাতনের ঘটনাটি ওই এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। ফলে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। তারই ধারাবাহিকতায় ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত শুক্রবার রাতে মাহফুজাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গৃহকর্মীর বোন ফাতেমা বেগম জানান, আমার বোন আট মাস আগে তাদের বাসায় কাজে যায়। ছয় হাজার টাকা করে দেয়ার কথা থাকলেও তিন মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়েছে। এখনও অনেক টাকা পাই। তারা আমার বোনকে অমানুষিক নির্যাতন করেছে। এভাবে কোন সভ্য মানুষ নির্যাতন করে? গৃহকর্তা ও তার স্ত্রী মিলে আমার বোনকে খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছে।

আহত কুলসুমা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, আমি আট মাস ধরে তাদের বাসায় কাজ করছি। কাজ করতে একটু দেরি হলেই আমাকে মারপিট করত। বিভিন্ন সময় গরম পানির ছ্যাঁকা এবং খুন্তি গরম করে ছ্যাঁকা দেয়া হতো। তারা আমার মাথা দেয়ালের সঙ্গে আঘাত করত। তাদের বাসায় যাওয়ার পর থেকেই আমাকে নির্যাতন করত। আমি অনেকবার পালাতে চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। গত বুধবার কুড়িল বিশ্বরোডে ওভার ব্রিজের নিচে আমার বোনের কাছে দিয়ে যায় তারা। কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটি বলেন, আমি আগে পালাতে পারলে এত নির্যাতনের শিকার হতাম না।