এমএ আউয়াল ও মনির উদ্দিন
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের অর্থনীতি এখনও কৃষিনির্ভর। কৃষিই দেশের মূল চালিকাশক্তি। কৃষিপ্রধান দেশের ৮৭,২২৩টি গ্রামে বাস করে দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ অর্থাৎ ১১ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সরকার কৃষিকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পকিল্পনা গ্রহণ করে, যার ফলে কৃষি আজ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে। করোনাকালীন বিশ্বে যখন সব দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে, অনেক দেশে যখন চলছে খাদ্যাভাব, তখন বাংলাদেশ তার অর্থনীতিকে সচল রেখেছে কৃষিকে ঘিরেই।
১৯৭১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৫০ বছরে দেশের ধান চাষের জমি কমেছে ২০ শতাংশ, তবে উচ্চফলনশীল জাতের বদৌলতে আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত।
দীর্ঘদিন বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে ধান উৎপাদনে চতুর্থ অবস্থানে ছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে বিশ্বে ধান উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে এসেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদিত হয়েছে ৩৩২.৭৯ লাখ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৭৩.৬৪ লাখ মেট্রিক টন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৮৬.৯৫ লাখ মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ আজ বিশ্বের মধ্যে শাকসবজি উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে শাকসবজি উৎপাদিত হয়েছে ১৭২ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আজ শাকসবজি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে এবং আগামী দিনে বাংলাদেশ থেকে আরও বিপুল পরিমাণ সবজি রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
২০১৮-১৯ সালে দেশে মোট আলুর উৎপাদন হয়েছে ১০৯ লাখ মেট্রিক টন এবং ২০১৯-২০ বছরে ১১০ লাখ মেট্রিক টন। আমাদের দেশে বাৎসরিক আলুর চাহিদা প্রায় ৭০ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ৪০ লাখ মেট্রিক টন আলু বর্তমানে দেশের উদ্ধৃত্ত যা বিদেশে রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
১৯৭০ সালে এই ভুখ-ে ভুট্টার উৎপাদন ছিল মাত্র ৩০০০ টন এবং ১৯৭১ সালে এর উৎপাদন দাঁড়ায় ২০০০ টনে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ভুট্টার উৎপাদন ৫৪ লাখ মেট্রিক টন। কৃষি মন্ত্রণালয় ভুট্টার উৎপাদন ১ কোটি মেট্রিক টনে উন্নীত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
দেশের কৃষির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সাবসেক্টর হচ্ছে মৎস্য সম্পদ। দেশের জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান ৩.৬১ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির ২৫.৩০ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ৪২.৭৭ লাখ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৩.৮৪ লাখ মেট্রিক টন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদনের তথ্য না পাওয়া গেলেও এর পরিমাণ ৪৪.৫০ লাখ মেট্রিক টনের কম নয়। সে সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মতে, উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের মৎস্য উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৫.৫২ লাখ মেট্রিক টন অর্থাৎ দেশের মৎস্য উৎপাদন প্রতি বছর ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। অথচ ১৯৮৩-১৯৮৪ অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদন ছিল মাত্র ৭.৫৪ লাখ মেট্রিক টন এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে উৎপাদন ২৭.০১ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫,১৭,১৯৮ মেট্রিক টন যার উৎপাদন ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল মাত্র ২.৯৯ লাখ মেট্রিক টন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালেই সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং ঘোষণা করেন “মাছ হবে দেশের দ্ধিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ”। তার এই উদ্যোগে সহযোগিতায় এগিয়ে আসে তৎসময়ের সোভিয়েট ইউনিয়ন এবং বঙ্গবন্ধুকে উপহার দেন ১০টি মাছ ধরার সামুদ্রিক ট্রলার এবং আহরণ শুরু হয় মাছের। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে বিশাল সমুদ্র এলাকা জয় করে এবং বর্তমানে দেশের সমুদ্রসীমার আয়তন দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার যেখান থেকে মৎস্য সম্পদ আহরণ দিন দিন বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) ২৩টি বিপন্ন প্রজাতির মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করেছে। বিএফআরআই অদ্যাবধি ৬১টি মৎস্য চাষ ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক প্রযুক্তি ছাড় করেছে। দেশে কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষ এবং এর রপ্তানি দিন দিন বাড়ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৩,১৭১.৩২ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে ৪,২৫০.৩১ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এসেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশ থেকে ৭০,৯৪৫.৩৯ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যার বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে ৩,৯৮৫.১৫ কোটি টাকা। এভাবেই এগিয়ে চলছে মৎস্য খাতের অগ্রযাত্রা।
কৃষির অন্যান্য সাব সেক্টরের পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দেশের মানুষের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে দেশের গরুর জাত উন্নয়নের জন্য প্রথম কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থা করেন, যা আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও অব্যাহত আছে।
অধিদপ্তরটির তথ্য মতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে তরল দুধ উৎপাদিত হয়েছে ৯৪.০৬ লাখ মেট্রিক টন, মাংস-৭২.৬০ লাখ মেট্রিক টন, ডিম-১৫৫২ কোটি। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে উৎপাদিত হয়েছে তরল দুধ-৯৯.২৩ লাখ মেট্রিক টন, মাংস-৭৫.১৪ লাখ মেট্রিক টন এবং ডিম-১৭১১ কোটি। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দেশের তরল দুধের উৎপাদন ১০৬.৮০ লক্ষ মেট্রিক টন, মাংস উৎপাদন ৭৬.৭৪ লক্ষ মেট্রিক টন, ডিমের উৎপাদন ১৭৩৬ কোটি। ইতোমধ্যে ডিম, দুধ ও মাংস উৎপাদনে আমরা শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই হইনি বরং দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রাণিজ উৎপাদন রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে কৃষকদের উৎসাহিত করছেন দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য, যার ফলে চলতি বোরো মৌসুমে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে দেশের সর্বত্র বাম্পার ফলন হয়েছে। এবারের বোরোর ফলন সম্পর্কে কৃষকদের মুখের কথা এই রকম যে, এবার দেশে ধানের বছর। ধারণা করা যায়, এবার বোরো থেকে ২১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে।
কৃষিবান্ধব সরকারের সেøাগান “আমার গ্রাম আমার শহর” বিবেচনায় রেখে কৃষি এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষিতে ইতোমধ্যে সরকারের বিশেষ প্রণোদনায় যান্ত্রিকীকরণ শুরু হয়েছে এবং এতে কৃষি আরও বেগবান হচ্ছে। আগামী দিনে ধানের উৎপাদনের বৃদ্ধির ধারা অব্যাহতভাবে ধরে রাখার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় দেশীয় অধিক তাপমাত্রা সহনশীল ধানের জাতসহ হাওড় অঞ্চলের ধান আগাম তোলার জন্য হাইব্রিড জাতের সম্পসারণের উদ্যোগ নিয়েছে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। আজ দেশের মানুষ তিন বেলা পেট ভরে ভাত খেতে পারছে। মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য দেশ আজ শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কার্যকর পদক্ষেপের ফলে আজ কৃষির অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অনুন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে।
[লেখক : এমএ আউয়াল- সদস্য পরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল; এম মনির উদ্দিন- এগ্রোনোমিস্ট]
রবিবার, ০৪ জুলাই ২০২১ , ২০ আষাঢ় ১৪২৮ ২২ জিলক্বদ ১৪৪২
এমএ আউয়াল ও মনির উদ্দিন
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের অর্থনীতি এখনও কৃষিনির্ভর। কৃষিই দেশের মূল চালিকাশক্তি। কৃষিপ্রধান দেশের ৮৭,২২৩টি গ্রামে বাস করে দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ অর্থাৎ ১১ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সরকার কৃষিকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পকিল্পনা গ্রহণ করে, যার ফলে কৃষি আজ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে। করোনাকালীন বিশ্বে যখন সব দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে, অনেক দেশে যখন চলছে খাদ্যাভাব, তখন বাংলাদেশ তার অর্থনীতিকে সচল রেখেছে কৃষিকে ঘিরেই।
১৯৭১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৫০ বছরে দেশের ধান চাষের জমি কমেছে ২০ শতাংশ, তবে উচ্চফলনশীল জাতের বদৌলতে আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত।
দীর্ঘদিন বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে ধান উৎপাদনে চতুর্থ অবস্থানে ছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে বিশ্বে ধান উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে এসেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদিত হয়েছে ৩৩২.৭৯ লাখ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৭৩.৬৪ লাখ মেট্রিক টন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৮৬.৯৫ লাখ মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ আজ বিশ্বের মধ্যে শাকসবজি উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে শাকসবজি উৎপাদিত হয়েছে ১৭২ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আজ শাকসবজি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে এবং আগামী দিনে বাংলাদেশ থেকে আরও বিপুল পরিমাণ সবজি রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
২০১৮-১৯ সালে দেশে মোট আলুর উৎপাদন হয়েছে ১০৯ লাখ মেট্রিক টন এবং ২০১৯-২০ বছরে ১১০ লাখ মেট্রিক টন। আমাদের দেশে বাৎসরিক আলুর চাহিদা প্রায় ৭০ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ৪০ লাখ মেট্রিক টন আলু বর্তমানে দেশের উদ্ধৃত্ত যা বিদেশে রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
১৯৭০ সালে এই ভুখ-ে ভুট্টার উৎপাদন ছিল মাত্র ৩০০০ টন এবং ১৯৭১ সালে এর উৎপাদন দাঁড়ায় ২০০০ টনে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ভুট্টার উৎপাদন ৫৪ লাখ মেট্রিক টন। কৃষি মন্ত্রণালয় ভুট্টার উৎপাদন ১ কোটি মেট্রিক টনে উন্নীত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
দেশের কৃষির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সাবসেক্টর হচ্ছে মৎস্য সম্পদ। দেশের জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান ৩.৬১ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির ২৫.৩০ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ৪২.৭৭ লাখ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৩.৮৪ লাখ মেট্রিক টন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদনের তথ্য না পাওয়া গেলেও এর পরিমাণ ৪৪.৫০ লাখ মেট্রিক টনের কম নয়। সে সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মতে, উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের মৎস্য উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৫.৫২ লাখ মেট্রিক টন অর্থাৎ দেশের মৎস্য উৎপাদন প্রতি বছর ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। অথচ ১৯৮৩-১৯৮৪ অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদন ছিল মাত্র ৭.৫৪ লাখ মেট্রিক টন এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে উৎপাদন ২৭.০১ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫,১৭,১৯৮ মেট্রিক টন যার উৎপাদন ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল মাত্র ২.৯৯ লাখ মেট্রিক টন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালেই সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং ঘোষণা করেন “মাছ হবে দেশের দ্ধিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ”। তার এই উদ্যোগে সহযোগিতায় এগিয়ে আসে তৎসময়ের সোভিয়েট ইউনিয়ন এবং বঙ্গবন্ধুকে উপহার দেন ১০টি মাছ ধরার সামুদ্রিক ট্রলার এবং আহরণ শুরু হয় মাছের। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে বিশাল সমুদ্র এলাকা জয় করে এবং বর্তমানে দেশের সমুদ্রসীমার আয়তন দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার যেখান থেকে মৎস্য সম্পদ আহরণ দিন দিন বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) ২৩টি বিপন্ন প্রজাতির মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করেছে। বিএফআরআই অদ্যাবধি ৬১টি মৎস্য চাষ ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক প্রযুক্তি ছাড় করেছে। দেশে কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষ এবং এর রপ্তানি দিন দিন বাড়ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৩,১৭১.৩২ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে ৪,২৫০.৩১ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এসেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশ থেকে ৭০,৯৪৫.৩৯ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যার বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে ৩,৯৮৫.১৫ কোটি টাকা। এভাবেই এগিয়ে চলছে মৎস্য খাতের অগ্রযাত্রা।
কৃষির অন্যান্য সাব সেক্টরের পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দেশের মানুষের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে দেশের গরুর জাত উন্নয়নের জন্য প্রথম কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থা করেন, যা আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও অব্যাহত আছে।
অধিদপ্তরটির তথ্য মতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে তরল দুধ উৎপাদিত হয়েছে ৯৪.০৬ লাখ মেট্রিক টন, মাংস-৭২.৬০ লাখ মেট্রিক টন, ডিম-১৫৫২ কোটি। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে উৎপাদিত হয়েছে তরল দুধ-৯৯.২৩ লাখ মেট্রিক টন, মাংস-৭৫.১৪ লাখ মেট্রিক টন এবং ডিম-১৭১১ কোটি। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দেশের তরল দুধের উৎপাদন ১০৬.৮০ লক্ষ মেট্রিক টন, মাংস উৎপাদন ৭৬.৭৪ লক্ষ মেট্রিক টন, ডিমের উৎপাদন ১৭৩৬ কোটি। ইতোমধ্যে ডিম, দুধ ও মাংস উৎপাদনে আমরা শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই হইনি বরং দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রাণিজ উৎপাদন রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে কৃষকদের উৎসাহিত করছেন দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য, যার ফলে চলতি বোরো মৌসুমে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে দেশের সর্বত্র বাম্পার ফলন হয়েছে। এবারের বোরোর ফলন সম্পর্কে কৃষকদের মুখের কথা এই রকম যে, এবার দেশে ধানের বছর। ধারণা করা যায়, এবার বোরো থেকে ২১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে।
কৃষিবান্ধব সরকারের সেøাগান “আমার গ্রাম আমার শহর” বিবেচনায় রেখে কৃষি এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষিতে ইতোমধ্যে সরকারের বিশেষ প্রণোদনায় যান্ত্রিকীকরণ শুরু হয়েছে এবং এতে কৃষি আরও বেগবান হচ্ছে। আগামী দিনে ধানের উৎপাদনের বৃদ্ধির ধারা অব্যাহতভাবে ধরে রাখার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় দেশীয় অধিক তাপমাত্রা সহনশীল ধানের জাতসহ হাওড় অঞ্চলের ধান আগাম তোলার জন্য হাইব্রিড জাতের সম্পসারণের উদ্যোগ নিয়েছে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। আজ দেশের মানুষ তিন বেলা পেট ভরে ভাত খেতে পারছে। মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য দেশ আজ শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কার্যকর পদক্ষেপের ফলে আজ কৃষির অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অনুন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে।
[লেখক : এমএ আউয়াল- সদস্য পরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল; এম মনির উদ্দিন- এগ্রোনোমিস্ট]