চাপ সামলাতে হিমশিমে খুলনার হাসপাতালগুলো

গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা বিভাগে মৃত্যু সর্বোচ্চ ৫১ জন। ‘অতিরিক্ত’ রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে খুলনার চারটি করোনা হাসপাতাল, চিকিৎসক ও নার্সদের। ধারণক্ষমতার অনেক বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালগুলোতে। একটি বেসরকারি ও চারটি করোনা হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৫ জন। এর মধ্যে ১৪ জন করোনা রোগী ও একজনের করোনার উপসর্গ ছিল।

খুলনায় সরকারিভাবে মাত্র ১শ’ শয্যা নিয়ে করোনা চিকিৎসার যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু স্বল্প দিনের ব্যবধানে এখন শয্যা সংখ্যা ৪৩৫। একটির জায়গায় যুক্ত হয়েছে তিনটি সরকারি এবং বেসরকারি একটি হাসপাতাল। এরপরও শয্যা সংকট কাটছে না। তাই রোগীদের কাছে এখন ফ্লোরই হয়ে উঠেছে একমাত্র ভরসা।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়োজ মোহাম্মদ শয্যা সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মে-জুন মাস থেকে ক্রমেই করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। রোগীর চাপ সামলাতে প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০০ শয্যার করোনা ইউনিট ১৩০ শয্যা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। তাতেও রোগীর চাপ সামলাতে না পেরে সদর হাসপাতালে ৭০ শয্যা করোনা ইউনিট চালু করা হয়।

সিভিল সার্জন বলেন, সেখানেও এক সপ্তাহের মধ্যে সবকয়টি শয্যার পূরণ হয়ে যায়। এরপর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট আরও ৭০ শয্যা বাড়িয়ে ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে।

তাতেও রোগীর চাপ সামলাতে না পেরে সর্বশেষ শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত ৪৫ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। সেখানেও একই রকম রোগীর চাপ। এ অবস্থায় হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা হিমশিম খাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

গত শনিবার সকাল থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় অবস্থিত ১৩০ শয্যার করোনা ইউনিটে ৬ করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও একজন।

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট খুলনা সদর হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। আর বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন ৬ জন। শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে গত শনিবার থেকে রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি।

খুলনা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের মুখপাত্র চিকিৎসক সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, রোগীর চাপ সামলাতে না পেরে খুমেকে আরও ৭০ শয্যা বাড়িয়ে ২০০ শয্যা করা হয়েছে। কিন্তু চাপ বেড়ে যাওয়ায় ফ্লোরে রেখেই চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

গতকাল সকাল পর্যন্ত সেখানে রোগী ভর্তি আছেন ১৯৭ জন। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০২ এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৪১। এছাড়া ওই হাসপাতালের এইচডিইউ ইউনিটে ২০ জন ও আইসিইউতে ২০ রোগী ভর্তি আছেন। হাসপাতালটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় রেড জোনে ১৪ ও ইয়োলো জোনে ২৪ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৫ জন।

এদিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট খুলনা সদর হাসপাতালে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন ৬৫ জন। ওই হাসপাতালের মুখপাত্র চিকিৎসক কাজী আবু রাশেদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ওই হাসপাতালে ১৫ জন নতুন করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৮ জন।

খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের মুখপাত্র চিকিৎসক প্রকাশ চন্দ্র বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ২৪ জন করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন সাতজন।

বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী মিজানুর রহমান বলেন, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ১২০ শয্যার করোনা ইউনিটে বর্তমানে ১১৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে ৮ জন এবং এইচডিইউতে ১০ জন চিকিৎসাধীন। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ২৩ জন ভর্তি হয়েছেন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২২ জন।

খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় খুলনায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা জেলার রয়েছেন ১০ জন। এ সময় ৪৩৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণহার ৩৪ শতাংশ।

এ পর্যন্ত জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৩৮৭ জনের। মারা গেছেন ৩০০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ৩৫২ জন।

ডা. ঊষা আরও বলেন, গত বছরও এ সময়ে করোনা বেড়েছিল এ বছরও ঠিক সেই সময়ে বেড়েছে। এবার বেশি হওয়ার কারণ ভ্যারিয়েন্টের তীব্রতা। করোনা আক্রান্তদের যে সংখ্যাটা আসছে এর বাইরেও প্রতিটি পরিবারে কারও না কারও করোনার লক্ষণ রয়েছে। সর্দি জ্বরের সিজন হওয়ায় অনেকে এটা অবহেলা করেছেন। এর কারণে করোনা বেড়ে গেছে।

হাসপাতালে যারা করোনায় মারা যাচ্ছেন তারা অধিকাংশ ৬০-৭০ বছর বয়সের। এদের যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন আর আইসিইউতে নিয়েও কিছু করার থাকে না।

খুলনা বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত হয়ে সর্বোচ্চ ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটাই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। এ নিয়ে বিভাগে মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ২০০ ছাড়ালো।

গত ১ জুলাই মারা যান ৩৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩০৪ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছিল ৫৩৯ জনের আর মৃত্যু হয় ৩২ জনের। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় আগের দিনের তুলনায় শনাক্ত প্রায় আড়াই গুণ আর মৃত্যু প্রায় দেড় গুণ বেড়েছে। নমুনা পরীক্ষাও হয়েছে দ্বিগুণের বেশি। বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ১ হাজার ২১৪ জন। শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৬০ হাজার ৫৬৪। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৬৬ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৪০ হাজার ২১৮ জন। সুস্থতার হার ৬৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। গতকাল দুপুরে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা এ তথ্য জানান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, করোনায় মারা যাওয়া ৪৬ জনের মধ্যে খুলনা ও কুষ্টিয়া জেলায় ১৫ জন, যশোরে ৭ জন, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহে ২ জন করে, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরে ১ জন করে আছেন। খুলনায় মৃত মানুষের সংখ্যা ৩০০ ছুঁয়েছে। বিভাগে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত মেহেরপুরে, ৫০ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং সর্বনি¤œ শনাক্ত কুষ্টিয়ায় ৩১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। জেলাভিত্তিক তথ্যে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যশোরে শনাক্ত হয়েছে সর্বোচ্চ ১৯৫ জন। এছাড়া খুলনায় ১৫০ জন, বাগেরহাটে ১৫৩, সাতক্ষীরায় ১২৫, নড়াইলে ১২১, মাগুরায় ৬৬, ঝিনাইদহে ১১৩, কুষ্টিয়ায় ১৯২, চুয়াডাঙ্গায় ১৪০ ও মেহেরপুরে ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে বিভাগের ১০ জেলায় হাসপাতাল ও বাসা মিলিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৯ হাজার ১৩২ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১ হাজার ২৪ রোগী। হাসপাতালের বাইরে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৮ হাজার ১০৮ জন।

image

প্রতিদিনই হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন, সংক্রমণের শীর্ষ হার ও একদিনে এযাবতকালে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল সারাদেশে। রাজধানীর করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে মুুমূর্ষু সন্তানের পাশে মায়ের আহাজারি -সংবাদ

আরও খবর
বিপজ্জনক সংক্রমণ হার, সর্বোচ্চ মৃত্যু
নেপথ্যে তিতাসের অবৈধ সংযোগ!
বিধিনিষেধের চতুর্থ দিন চায়ের দোকান, অলিগলিতে ভিড় বাড়ছে
বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর পরামর্শ
অন্যের সাজা খেটে কারামুক্ত মিনুর মৃত্যু হলো ট্রাকচাপায়
সেমিফাইনালে ইতালি-স্পেন, ইংল্যান্ড-ডেনমার্ক
উজানে ভারি বর্ষণে উত্তরাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা

সোমবার, ০৫ জুলাই ২০২১ , ২১ আষাঢ় ১৪২৮ ২৩ জিলক্বদ ১৪৪২

চাপ সামলাতে হিমশিমে খুলনার হাসপাতালগুলো

জেলা বার্তা পরিবেশক, খুলনা

image

প্রতিদিনই হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন, সংক্রমণের শীর্ষ হার ও একদিনে এযাবতকালে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল সারাদেশে। রাজধানীর করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে মুুমূর্ষু সন্তানের পাশে মায়ের আহাজারি -সংবাদ

গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা বিভাগে মৃত্যু সর্বোচ্চ ৫১ জন। ‘অতিরিক্ত’ রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে খুলনার চারটি করোনা হাসপাতাল, চিকিৎসক ও নার্সদের। ধারণক্ষমতার অনেক বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালগুলোতে। একটি বেসরকারি ও চারটি করোনা হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৫ জন। এর মধ্যে ১৪ জন করোনা রোগী ও একজনের করোনার উপসর্গ ছিল।

খুলনায় সরকারিভাবে মাত্র ১শ’ শয্যা নিয়ে করোনা চিকিৎসার যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু স্বল্প দিনের ব্যবধানে এখন শয্যা সংখ্যা ৪৩৫। একটির জায়গায় যুক্ত হয়েছে তিনটি সরকারি এবং বেসরকারি একটি হাসপাতাল। এরপরও শয্যা সংকট কাটছে না। তাই রোগীদের কাছে এখন ফ্লোরই হয়ে উঠেছে একমাত্র ভরসা।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়োজ মোহাম্মদ শয্যা সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মে-জুন মাস থেকে ক্রমেই করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। রোগীর চাপ সামলাতে প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০০ শয্যার করোনা ইউনিট ১৩০ শয্যা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। তাতেও রোগীর চাপ সামলাতে না পেরে সদর হাসপাতালে ৭০ শয্যা করোনা ইউনিট চালু করা হয়।

সিভিল সার্জন বলেন, সেখানেও এক সপ্তাহের মধ্যে সবকয়টি শয্যার পূরণ হয়ে যায়। এরপর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট আরও ৭০ শয্যা বাড়িয়ে ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে।

তাতেও রোগীর চাপ সামলাতে না পেরে সর্বশেষ শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত ৪৫ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। সেখানেও একই রকম রোগীর চাপ। এ অবস্থায় হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা হিমশিম খাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

গত শনিবার সকাল থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় অবস্থিত ১৩০ শয্যার করোনা ইউনিটে ৬ করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও একজন।

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট খুলনা সদর হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। আর বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন ৬ জন। শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে গত শনিবার থেকে রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি।

খুলনা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের মুখপাত্র চিকিৎসক সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, রোগীর চাপ সামলাতে না পেরে খুমেকে আরও ৭০ শয্যা বাড়িয়ে ২০০ শয্যা করা হয়েছে। কিন্তু চাপ বেড়ে যাওয়ায় ফ্লোরে রেখেই চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

গতকাল সকাল পর্যন্ত সেখানে রোগী ভর্তি আছেন ১৯৭ জন। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০২ এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৪১। এছাড়া ওই হাসপাতালের এইচডিইউ ইউনিটে ২০ জন ও আইসিইউতে ২০ রোগী ভর্তি আছেন। হাসপাতালটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় রেড জোনে ১৪ ও ইয়োলো জোনে ২৪ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৫ জন।

এদিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট খুলনা সদর হাসপাতালে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন ৬৫ জন। ওই হাসপাতালের মুখপাত্র চিকিৎসক কাজী আবু রাশেদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ওই হাসপাতালে ১৫ জন নতুন করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৮ জন।

খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের মুখপাত্র চিকিৎসক প্রকাশ চন্দ্র বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ২৪ জন করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন সাতজন।

বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী মিজানুর রহমান বলেন, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ১২০ শয্যার করোনা ইউনিটে বর্তমানে ১১৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে ৮ জন এবং এইচডিইউতে ১০ জন চিকিৎসাধীন। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ২৩ জন ভর্তি হয়েছেন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২২ জন।

খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় খুলনায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা জেলার রয়েছেন ১০ জন। এ সময় ৪৩৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণহার ৩৪ শতাংশ।

এ পর্যন্ত জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৩৮৭ জনের। মারা গেছেন ৩০০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ৩৫২ জন।

ডা. ঊষা আরও বলেন, গত বছরও এ সময়ে করোনা বেড়েছিল এ বছরও ঠিক সেই সময়ে বেড়েছে। এবার বেশি হওয়ার কারণ ভ্যারিয়েন্টের তীব্রতা। করোনা আক্রান্তদের যে সংখ্যাটা আসছে এর বাইরেও প্রতিটি পরিবারে কারও না কারও করোনার লক্ষণ রয়েছে। সর্দি জ্বরের সিজন হওয়ায় অনেকে এটা অবহেলা করেছেন। এর কারণে করোনা বেড়ে গেছে।

হাসপাতালে যারা করোনায় মারা যাচ্ছেন তারা অধিকাংশ ৬০-৭০ বছর বয়সের। এদের যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন আর আইসিইউতে নিয়েও কিছু করার থাকে না।

খুলনা বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত হয়ে সর্বোচ্চ ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটাই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। এ নিয়ে বিভাগে মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ২০০ ছাড়ালো।

গত ১ জুলাই মারা যান ৩৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩০৪ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছিল ৫৩৯ জনের আর মৃত্যু হয় ৩২ জনের। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় আগের দিনের তুলনায় শনাক্ত প্রায় আড়াই গুণ আর মৃত্যু প্রায় দেড় গুণ বেড়েছে। নমুনা পরীক্ষাও হয়েছে দ্বিগুণের বেশি। বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ১ হাজার ২১৪ জন। শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৬০ হাজার ৫৬৪। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৬৬ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৪০ হাজার ২১৮ জন। সুস্থতার হার ৬৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। গতকাল দুপুরে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা এ তথ্য জানান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, করোনায় মারা যাওয়া ৪৬ জনের মধ্যে খুলনা ও কুষ্টিয়া জেলায় ১৫ জন, যশোরে ৭ জন, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহে ২ জন করে, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরে ১ জন করে আছেন। খুলনায় মৃত মানুষের সংখ্যা ৩০০ ছুঁয়েছে। বিভাগে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত মেহেরপুরে, ৫০ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং সর্বনি¤œ শনাক্ত কুষ্টিয়ায় ৩১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। জেলাভিত্তিক তথ্যে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যশোরে শনাক্ত হয়েছে সর্বোচ্চ ১৯৫ জন। এছাড়া খুলনায় ১৫০ জন, বাগেরহাটে ১৫৩, সাতক্ষীরায় ১২৫, নড়াইলে ১২১, মাগুরায় ৬৬, ঝিনাইদহে ১১৩, কুষ্টিয়ায় ১৯২, চুয়াডাঙ্গায় ১৪০ ও মেহেরপুরে ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে বিভাগের ১০ জেলায় হাসপাতাল ও বাসা মিলিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৯ হাজার ১৩২ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১ হাজার ২৪ রোগী। হাসপাতালের বাইরে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৮ হাজার ১০৮ জন।