পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দাবি ছিল, মগবাজারের ৭৯, রাখি নীড়ে গত ২৭ জুন সন্ধ্যায় বিস্ফোরণ ঘটে তিতাস গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে। ঘটনার পর ধসে পড়া ভবনের ভেতরে একটি চালু লাইনের অস্তিত্বও পেয়েছিল ফায়ার সার্ভিস।
অন্যদিকে তিতাসের দাবি ছিল, ওই ভবনে তাদের কোন বৈধ লাইনের সংযোগ নেই। লাইন লিকেজ থাকার কোন কারণও নেই। কিন্তু গতকাল পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দাবিরই সত্যতা পাওয়া গেছে। মিলেছে তিতাস গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস বের হওয়ার প্রমাণ। দেখা গেছে ভবনের ভেতরের তিতাস গ্যাসের সংযোগ, যেটি চলে গেছে উপরের দিকে। তবে এখন ওই সংযোগ বৈধ না অবৈধ এ নিয়ে কোন কথা বলছে না তিতাস।
রাখি নীড়ে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় করা মামলাটি গত শনিবার রাতে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটকে (সিটিটিসি)। ঘটনার পর থেকে তারা ছায়া তদন্ত করলেও গতকাল থেকে তারা আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে।
সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, আমরা ঘটনার পর একটি লাইন শনাক্ত করি। ওই লাইন থেকে ঘটনার পর গ্যাস বের হওয়ারও প্রমাণ পাই। গতকাল যেখান থেকে গ্যাস বের হচ্ছিল, সেই লাইনের সঙ্গেই আমাদের শনাক্ত করা লাইনের মিল পেয়েছি। আমরা এখন জানার চেষ্টা করছি এর নেপথ্যে কারও গাফলতি ছিল কিনা।
অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, গতকাল পর্যন্ত এ বিস্ফোরণে নাশকতার কোন আলামত খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিস্ফোরণের ১ সপ্তাহ পর গতকাল রাখি নীড়ের সামনে সিটি করপোরেশনের সুয়ারেজ লাইন থেকে গ্যাস বের হওয়ার বিষয়টি প্রথমে নজরে আসে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। পরে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে খবর দিলে তারাও নিশ্চিত হয়। এতদিন লাইন লিকেজের বিষয়টি অস্বীকার করে আসলেও এখন তিতাস কর্তৃপক্ষ বলছে হয়তো সিটি করপোরেশন কর্তৃক সুয়ারেজ লাইন মেরামত করার সময় তাদের গ্যাস লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই ক্ষতিগ্রস্ত গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছে, যে লাইনটি পাওয়া গেছে সেটি নিঃসন্দেহে অবৈধ। আর অবৈধ লাইন সংযোগ দেয়ার সঙ্গে তিতাস গ্যাসের কারো না কারো যোগসূত্র রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটিতে তদন্ত এবং তল্লাশির অংশ হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে যায় সকালে। তখন তারা গ্যাসের উৎকট গন্ধ পান। উৎস খুঁজতে গিয়ে তারা দেখতে পান রাখি নীড়ের নিচতলায় বেঙ্গল মিটের সামনে থেকে অনবরত গ্যাস বের হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, বিস্ফোরণের পর থেকে ভবনটি ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তল্লাশি কার্যক্রম এবং লাইন লিকেজের উৎস খুঁজতে হলে মাটি খোঁড়াখুড়ি করতে হবে। এতে ভবনটি পুরোপুরি ধসে পড়তে পারে। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশন ভবনটিকে পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যানার টানিয়ে দিয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (অপারেশন্স) দেবাশিষ বর্মন টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, গতকাল ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত টিমের প্রধান পরিচালক অপারেশন্সের নেতৃত্বে কমিটি বৈঠক করেছে। বৈঠকে অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার র্কমকর্তাও ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা গ্যাস ডিটেক্টরের মাধ্যমে রাখি নীড়ের ভেতরে একটি গ্যাস লাইনের অস্তিত্ব পাই। যে লাইনটি ৩ তলা ভবনের উপরের দিকে গেছে। লাইনটি আমরা চালু অবস্থায় পেয়েছি। বিস্ফোরণের পর ওই লাইন থেকে গ্যাস বের হওয়ার প্রমাণও পেয়েছি আমরা।
গতকাল নতুন করে আবার তিতাস গ্যাসের লাইনের একটি লিকেজ পাওয়া গেছে। সেটি রাখি নীড়ের সামনে। লাইনটি বৈধ হোক আর অবৈধ হোক ফায়ার সার্ভিস নিশ্চিত হয়েছে তিতাস গ্যাসের লাইন থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে।
সিটিটিসির এক কর্মকর্তা গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘তারা প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন তিতাস গ্যাসের লিকেজ লাইন থেকেই গ্যাস জমে স্পুলিং থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। ‘তারা জানার চেষ্টা করছেন লাইন লিকেজ হওয়ার নেপথ্যে অন্য কোন নাশকতা আছে কিনা। অথবা ওই ভবনে যে লাইনটি ছিল সেটি অবৈধভাবে নেয়া হয়েছিল কিনা’।
সিটিটিসি ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সামনে সিটি করপোরেশনের ড্রেনের কাজ করার সময় লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গ্যাস বের হচ্ছিল নাকি আগে থেকে লাইন লিকেজ ছিল সেটি জানার চেষ্টা করছে তদন্তকারীরা।
তিতাসের জরুরি বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপক দিদারুল ইসলাম জানান, মগবাজারে বিস্ফোরিত ভবনে তাদের কোন সংযোগ ছিল না। তবে কিছুদিন আগে সিটি করপোরেশন ওই ভবনের সামনে দিয়ে সুয়ারেজ লাইন বসানোর কাজ করে। তারা যখন কাজ করে তখন তাদের বিষয়টি অবগত করেনি। আমরা ধারণা করছি, সুয়ারেজ লাইন বসানোর সময় শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে তিতাসের লাইনে কোন ছিদ্র সৃষ্টি করেছে। হয়ত সেখান থেকেই পরবর্তীতে গ্যাস বের হচ্ছিল।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুন সন্ধ্যার পর মগবাজারে বিস্ফোরণে ৭৯, রাখি নীড় ধসে পড়ে। ঘটনায় এ পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন অর্ধশত ব্যক্তি।
সোমবার, ০৫ জুলাই ২০২১ , ২১ আষাঢ় ১৪২৮ ২৩ জিলক্বদ ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দাবি ছিল, মগবাজারের ৭৯, রাখি নীড়ে গত ২৭ জুন সন্ধ্যায় বিস্ফোরণ ঘটে তিতাস গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে। ঘটনার পর ধসে পড়া ভবনের ভেতরে একটি চালু লাইনের অস্তিত্বও পেয়েছিল ফায়ার সার্ভিস।
অন্যদিকে তিতাসের দাবি ছিল, ওই ভবনে তাদের কোন বৈধ লাইনের সংযোগ নেই। লাইন লিকেজ থাকার কোন কারণও নেই। কিন্তু গতকাল পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দাবিরই সত্যতা পাওয়া গেছে। মিলেছে তিতাস গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস বের হওয়ার প্রমাণ। দেখা গেছে ভবনের ভেতরের তিতাস গ্যাসের সংযোগ, যেটি চলে গেছে উপরের দিকে। তবে এখন ওই সংযোগ বৈধ না অবৈধ এ নিয়ে কোন কথা বলছে না তিতাস।
রাখি নীড়ে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় করা মামলাটি গত শনিবার রাতে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটকে (সিটিটিসি)। ঘটনার পর থেকে তারা ছায়া তদন্ত করলেও গতকাল থেকে তারা আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে।
সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, আমরা ঘটনার পর একটি লাইন শনাক্ত করি। ওই লাইন থেকে ঘটনার পর গ্যাস বের হওয়ারও প্রমাণ পাই। গতকাল যেখান থেকে গ্যাস বের হচ্ছিল, সেই লাইনের সঙ্গেই আমাদের শনাক্ত করা লাইনের মিল পেয়েছি। আমরা এখন জানার চেষ্টা করছি এর নেপথ্যে কারও গাফলতি ছিল কিনা।
অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, গতকাল পর্যন্ত এ বিস্ফোরণে নাশকতার কোন আলামত খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিস্ফোরণের ১ সপ্তাহ পর গতকাল রাখি নীড়ের সামনে সিটি করপোরেশনের সুয়ারেজ লাইন থেকে গ্যাস বের হওয়ার বিষয়টি প্রথমে নজরে আসে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। পরে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে খবর দিলে তারাও নিশ্চিত হয়। এতদিন লাইন লিকেজের বিষয়টি অস্বীকার করে আসলেও এখন তিতাস কর্তৃপক্ষ বলছে হয়তো সিটি করপোরেশন কর্তৃক সুয়ারেজ লাইন মেরামত করার সময় তাদের গ্যাস লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই ক্ষতিগ্রস্ত গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছে, যে লাইনটি পাওয়া গেছে সেটি নিঃসন্দেহে অবৈধ। আর অবৈধ লাইন সংযোগ দেয়ার সঙ্গে তিতাস গ্যাসের কারো না কারো যোগসূত্র রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটিতে তদন্ত এবং তল্লাশির অংশ হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে যায় সকালে। তখন তারা গ্যাসের উৎকট গন্ধ পান। উৎস খুঁজতে গিয়ে তারা দেখতে পান রাখি নীড়ের নিচতলায় বেঙ্গল মিটের সামনে থেকে অনবরত গ্যাস বের হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, বিস্ফোরণের পর থেকে ভবনটি ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তল্লাশি কার্যক্রম এবং লাইন লিকেজের উৎস খুঁজতে হলে মাটি খোঁড়াখুড়ি করতে হবে। এতে ভবনটি পুরোপুরি ধসে পড়তে পারে। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশন ভবনটিকে পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যানার টানিয়ে দিয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (অপারেশন্স) দেবাশিষ বর্মন টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, গতকাল ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত টিমের প্রধান পরিচালক অপারেশন্সের নেতৃত্বে কমিটি বৈঠক করেছে। বৈঠকে অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার র্কমকর্তাও ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা গ্যাস ডিটেক্টরের মাধ্যমে রাখি নীড়ের ভেতরে একটি গ্যাস লাইনের অস্তিত্ব পাই। যে লাইনটি ৩ তলা ভবনের উপরের দিকে গেছে। লাইনটি আমরা চালু অবস্থায় পেয়েছি। বিস্ফোরণের পর ওই লাইন থেকে গ্যাস বের হওয়ার প্রমাণও পেয়েছি আমরা।
গতকাল নতুন করে আবার তিতাস গ্যাসের লাইনের একটি লিকেজ পাওয়া গেছে। সেটি রাখি নীড়ের সামনে। লাইনটি বৈধ হোক আর অবৈধ হোক ফায়ার সার্ভিস নিশ্চিত হয়েছে তিতাস গ্যাসের লাইন থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে।
সিটিটিসির এক কর্মকর্তা গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘তারা প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন তিতাস গ্যাসের লিকেজ লাইন থেকেই গ্যাস জমে স্পুলিং থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। ‘তারা জানার চেষ্টা করছেন লাইন লিকেজ হওয়ার নেপথ্যে অন্য কোন নাশকতা আছে কিনা। অথবা ওই ভবনে যে লাইনটি ছিল সেটি অবৈধভাবে নেয়া হয়েছিল কিনা’।
সিটিটিসি ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সামনে সিটি করপোরেশনের ড্রেনের কাজ করার সময় লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গ্যাস বের হচ্ছিল নাকি আগে থেকে লাইন লিকেজ ছিল সেটি জানার চেষ্টা করছে তদন্তকারীরা।
তিতাসের জরুরি বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপক দিদারুল ইসলাম জানান, মগবাজারে বিস্ফোরিত ভবনে তাদের কোন সংযোগ ছিল না। তবে কিছুদিন আগে সিটি করপোরেশন ওই ভবনের সামনে দিয়ে সুয়ারেজ লাইন বসানোর কাজ করে। তারা যখন কাজ করে তখন তাদের বিষয়টি অবগত করেনি। আমরা ধারণা করছি, সুয়ারেজ লাইন বসানোর সময় শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে তিতাসের লাইনে কোন ছিদ্র সৃষ্টি করেছে। হয়ত সেখান থেকেই পরবর্তীতে গ্যাস বের হচ্ছিল।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুন সন্ধ্যার পর মগবাজারে বিস্ফোরণে ৭৯, রাখি নীড় ধসে পড়ে। ঘটনায় এ পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন অর্ধশত ব্যক্তি।