উজানে ভারি বর্ষণে উত্তরাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা

উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় আকস্মিক বন্যার সম্ভবনা রয়েছে। এর ফলে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলাসহ বিভিন্ন নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ নদীগুলো দীর্ঘদিন খনন না করার করণে ভরাট হয়ে গেছে ১৭টি নদী। তাই শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি থাকে না। নদীতে পানি ধারণক্ষমতা কম থাকায় বর্ষার সময়ও উজানের পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যা ও নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়। তাই দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো ফিজিবিলিটি স্টাডি করে খনন প্রকল্পের সুপারিশ করেছে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার সম্ভবনা রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর ফলে এ সময়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

এ বিষয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া সংবাদকে বলেন, ‘দেশে নদীগুলোর পানি স্বাভাবিকভাবে বৃষ্টি পাচ্ছে। এখনও বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। উজানের ভারি বর্ষণের ফলে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলা নদীর আশপাশের জেলা লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুরে আগামী দু’দিনের মধ্যে মাঝারি আকারের বন্যা হতে পারে। অন্যান্য জেলায়ও এর প্রভাব পড়তে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মার পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় কমতে পারে বলেও জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ছয়টি অঞ্চল ছাড়া সারাদেশেই সামান্য থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ফরিদপুরে, ৮৯ মিলিমিটার। এছাড়া উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে সন্দ্বীপে ৪৮, টেকনাফে ৪০, রাজশাহীতে ৩৯, তেঁতুলিয়ায় ৩০, ডিমলায় ৬৮, রাজারহাটে ২৮ ও মোংলায় ৩৪ মিলিমিটার।

মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।

বন্যা ও নদীভাঙন রোধে সারাদেশে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক। গতকাল পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘বন্যাসহ যে কোন দুর্যোগ মোকাবিলায় তৎপর রয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। স্কুল-কলেজ, হাঁট-বাজারসহ নদীভাঙন রোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত আছে। কোথাও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলেই ব্যবস্থা নিচ্ছে আমাদের প্রকৌশলীরা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সারাদেশে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি এবং অনলাইনে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।’

‘বাঁধ মেরামতের অনিয়ম রোধে কমিটি গঠন করা হয়েছে’ উল্লেখ জাহিদ ফারুক বলেন, ‘অনিয়ম রোধে জরুরি বাঁধ মেরামত কাজ জেলা প্রশাসককে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি গঠনের মাধ্যমে করতে হবে। করোনার মাঝেও আমাদের সব প্রকৌশলী দুর্যোগ মোকাবিলায় দিনরাত কাজ করছেন।’

দীর্ঘ খনন না হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের ১৭টি নদী মৃতপ্রায়

উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ নদীগুলো দীর্ঘদিন খনন না করার করণে ভরাট হয়ে গেছে। দীর্ঘ খনন না হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের ১৭টি নদী মৃতপ্রায়। এরমধ্যে দিনাজপুর জেলার ছোট যমুনা, খড়খড়িয়া, টেপা, পুনর্ভবা, যমুনেশ^রী, গর্ভেশ^রী, রাক্ষুসী ও হলুদিয়া। এই নদীগুলো একেবারেই মৃতপ্রায়। বর্ষ মৌসুমে উজানের পাহাড়ি ঢলে বন্যার সৃষ্টি হয়। একই অবস্থা পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার নদীগুলো।

এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলার পুনভর্বা, পাথরাজ, তীরনাই ও ভুল্লী নদী মরে গেছে। এছাড়া সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের করোতোয়া, ডাহুক, বেরং, মহানন্দা ও তিরনাই নদী দীর্ঘদিন খনন না করার কারণে পলি জমে তলদেশ এবং ভূমি প্রায় একই সমতল হয়েছে বলে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো ফিজিবিলিটি স্টাডি করে খনন প্রকল্পের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। গত মে মাসে সংস্থাটির কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ছাইদুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ নদী দীর্ঘ খনন না করার কারণে পানির লেভেল নিচে নেমে গেছে। এর ফলে গভীর নলকূলে পানি পাওয়া যায় না। নদীতে পানি ধরে রাখতে পারে না। যখন উজানের পাহাড়ি ঢল আসে তখন তা স্থলভাগে প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে নদী ভাঙন হয়।’ তাই উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে খননেন সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মনিরুজ্জামান সরকার, লালমনিরহাট থেকে জানান, ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ছুঁই ছুঁই করছে। ধীরে ধীরে তিস্তা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। ধরলার পানিও প্রতিদিনই বাড়ছে। ফলে তিস্তা-ধরলার ৬৩ চর প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এই ভাঙনে নদীপাড়ের মানুষ আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছেন।

গতকাল বিকেলে দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্যারেজ রক্ষায় ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, গতকাল সকাল ৯টা থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকাল ৯টায় ৫২ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার, দুপুর ২টায় ৫২ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার ও সন্ধ্যা ৬টায় ৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার স্পর্শ করে। ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে তিস্তার পানি।

জানা যায়, তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীরবর্তী নি¤œাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জেলার তিস্তা-ধরলাবেষ্টিত ৬৩ চর এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া ওই এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এদিকে হাতীবান্ধা উপজেলার নিজ গড্ডিমার গ্রামে একটি সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউপির তাঁতিপাড়া, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা,পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকু-া, ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী নি¤œাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার নিউ গড্ডিমারী গ্রামের বেলায়েদ হোসেন জানান, এমনিতে লকডাউন, তাতে কয়েক দিন ঘরবাড়িতে পানি উঠছে বাজারত যাইতে পাছিনা অনেক কষ্টে পরিবার নিয়া আছি। একই এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, তিস্তা ভাঙন আসতে আসতে বাড়ি পাশে আছি গেইছে এবার যে কি হয় হামার কপালে।

সদরের রাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন বলেন, তিস্তার পানি হু হু করে বাড়ছে । পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন । গত ২৪ ঘণ্টায় তার ইউনিয়নের ১৩টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে কয়েকশ’ ঘরবাড়ি ।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে ঢল অব্যাহত রয়েছে।

সোমবার, ০৫ জুলাই ২০২১ , ২১ আষাঢ় ১৪২৮ ২৩ জিলক্বদ ১৪৪২

উজানে ভারি বর্ষণে উত্তরাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

লালমনিরহাট : অতি বর্ষণে তিস্তার পানি বাড়ছে, বন্যার পদধ্বনি -সংবাদ

উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় আকস্মিক বন্যার সম্ভবনা রয়েছে। এর ফলে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলাসহ বিভিন্ন নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ নদীগুলো দীর্ঘদিন খনন না করার করণে ভরাট হয়ে গেছে ১৭টি নদী। তাই শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি থাকে না। নদীতে পানি ধারণক্ষমতা কম থাকায় বর্ষার সময়ও উজানের পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যা ও নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়। তাই দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো ফিজিবিলিটি স্টাডি করে খনন প্রকল্পের সুপারিশ করেছে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার সম্ভবনা রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর ফলে এ সময়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

এ বিষয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া সংবাদকে বলেন, ‘দেশে নদীগুলোর পানি স্বাভাবিকভাবে বৃষ্টি পাচ্ছে। এখনও বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। উজানের ভারি বর্ষণের ফলে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলা নদীর আশপাশের জেলা লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুরে আগামী দু’দিনের মধ্যে মাঝারি আকারের বন্যা হতে পারে। অন্যান্য জেলায়ও এর প্রভাব পড়তে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মার পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় কমতে পারে বলেও জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ছয়টি অঞ্চল ছাড়া সারাদেশেই সামান্য থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ফরিদপুরে, ৮৯ মিলিমিটার। এছাড়া উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে সন্দ্বীপে ৪৮, টেকনাফে ৪০, রাজশাহীতে ৩৯, তেঁতুলিয়ায় ৩০, ডিমলায় ৬৮, রাজারহাটে ২৮ ও মোংলায় ৩৪ মিলিমিটার।

মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।

বন্যা ও নদীভাঙন রোধে সারাদেশে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক। গতকাল পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘বন্যাসহ যে কোন দুর্যোগ মোকাবিলায় তৎপর রয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। স্কুল-কলেজ, হাঁট-বাজারসহ নদীভাঙন রোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত আছে। কোথাও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলেই ব্যবস্থা নিচ্ছে আমাদের প্রকৌশলীরা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সারাদেশে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি এবং অনলাইনে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।’

‘বাঁধ মেরামতের অনিয়ম রোধে কমিটি গঠন করা হয়েছে’ উল্লেখ জাহিদ ফারুক বলেন, ‘অনিয়ম রোধে জরুরি বাঁধ মেরামত কাজ জেলা প্রশাসককে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি গঠনের মাধ্যমে করতে হবে। করোনার মাঝেও আমাদের সব প্রকৌশলী দুর্যোগ মোকাবিলায় দিনরাত কাজ করছেন।’

দীর্ঘ খনন না হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের ১৭টি নদী মৃতপ্রায়

উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ নদীগুলো দীর্ঘদিন খনন না করার করণে ভরাট হয়ে গেছে। দীর্ঘ খনন না হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের ১৭টি নদী মৃতপ্রায়। এরমধ্যে দিনাজপুর জেলার ছোট যমুনা, খড়খড়িয়া, টেপা, পুনর্ভবা, যমুনেশ^রী, গর্ভেশ^রী, রাক্ষুসী ও হলুদিয়া। এই নদীগুলো একেবারেই মৃতপ্রায়। বর্ষ মৌসুমে উজানের পাহাড়ি ঢলে বন্যার সৃষ্টি হয়। একই অবস্থা পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার নদীগুলো।

এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলার পুনভর্বা, পাথরাজ, তীরনাই ও ভুল্লী নদী মরে গেছে। এছাড়া সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের করোতোয়া, ডাহুক, বেরং, মহানন্দা ও তিরনাই নদী দীর্ঘদিন খনন না করার কারণে পলি জমে তলদেশ এবং ভূমি প্রায় একই সমতল হয়েছে বলে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো ফিজিবিলিটি স্টাডি করে খনন প্রকল্পের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। গত মে মাসে সংস্থাটির কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ছাইদুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ নদী দীর্ঘ খনন না করার কারণে পানির লেভেল নিচে নেমে গেছে। এর ফলে গভীর নলকূলে পানি পাওয়া যায় না। নদীতে পানি ধরে রাখতে পারে না। যখন উজানের পাহাড়ি ঢল আসে তখন তা স্থলভাগে প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে নদী ভাঙন হয়।’ তাই উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে খননেন সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মনিরুজ্জামান সরকার, লালমনিরহাট থেকে জানান, ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ছুঁই ছুঁই করছে। ধীরে ধীরে তিস্তা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। ধরলার পানিও প্রতিদিনই বাড়ছে। ফলে তিস্তা-ধরলার ৬৩ চর প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এই ভাঙনে নদীপাড়ের মানুষ আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছেন।

গতকাল বিকেলে দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্যারেজ রক্ষায় ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, গতকাল সকাল ৯টা থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকাল ৯টায় ৫২ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার, দুপুর ২টায় ৫২ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার ও সন্ধ্যা ৬টায় ৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার স্পর্শ করে। ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে তিস্তার পানি।

জানা যায়, তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীরবর্তী নি¤œাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জেলার তিস্তা-ধরলাবেষ্টিত ৬৩ চর এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া ওই এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এদিকে হাতীবান্ধা উপজেলার নিজ গড্ডিমার গ্রামে একটি সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউপির তাঁতিপাড়া, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা,পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকু-া, ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী নি¤œাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার নিউ গড্ডিমারী গ্রামের বেলায়েদ হোসেন জানান, এমনিতে লকডাউন, তাতে কয়েক দিন ঘরবাড়িতে পানি উঠছে বাজারত যাইতে পাছিনা অনেক কষ্টে পরিবার নিয়া আছি। একই এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, তিস্তা ভাঙন আসতে আসতে বাড়ি পাশে আছি গেইছে এবার যে কি হয় হামার কপালে।

সদরের রাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন বলেন, তিস্তার পানি হু হু করে বাড়ছে । পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন । গত ২৪ ঘণ্টায় তার ইউনিয়নের ১৩টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে কয়েকশ’ ঘরবাড়ি ।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে ঢল অব্যাহত রয়েছে।