কুড়িগ্রামে বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত সবজি চাষি

কুড়িগ্রামে টানা ৪/৫ দিনের বৃষ্টিতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সবজি চাষিরা। এবার বিলম্বিত বন্যার কারণে চাষিরা প্রায় ৮০ ভাগ ফসল ঘরে তুললেও জুনের শেষে বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয় সবজির গোড়া। ফলে বাড়তি লাভ করার স্বপ্ন পানিতে ধুয়ে মুছে গেছে।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে পাটখেত নিমজ্জিত হওয়ায় নিচু এলাকার পাটচাষিরা আগাম পাটকাটা শুরু করেছেন। ফলে কাক্সিক্ষত অর্জনের চেয়ে কিছুটা কম পাট পাবেন তারা। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক জানান, বন্যায় ক্ষতির কথা ভেবে জেলায় প্রায় ৮শ’ হেক্টর পাট আগাম কাটা হয়েছে। এতে সামান্য কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হবে তারা।

সদর উপজেলার ধরলা নদী তীরবর্তী পৌরসভা, হালোখানা, ভোগডাঙ্গা ও পাঁছগাছী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, নিম্নাঞ্চলের সবজি খেতগুলো জলমগ্ন হয়েছে। গতকাল দুপুরে পাঁছগাছী ইউনিয়নের শুলকুর বাজার এলাকার সবজি চাষিরা নিমজ্জিত খেত থেকে সবজি উত্তোলন করছিলেন। এই এলাকার উত্তর নওয়াবশ, দক্ষিণ নওয়াবশ ও ছড়ার পাড়ের অধিবাসী কাশেম, খলিল ও নুরুজ্জামান জানান, গতবার জুনের প্রথম সপ্তাহে বন্যার পানি এসে সব খেতের ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। এবার বন্যা না হলেও বৃষ্টির জলাবদ্ধতায় নিচু জমির খেতগুলো তলিয়ে গেছে।

এতে শেষের দিকের ফসলগুলো প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে।

শুলকুর বাজারে ৩০ শতক জমির পটল খেত তলিয়ে গেছে জব্বার আলীর। দুজন দিনমজুর নিয়ে সেই খেতের পটোল তুলছিলেন তিনি। বললেন, গতবার খুব লস হয়ে গেছে। এবার লাভের মুখ দেখার সময় বৃষ্টির পানি সব শেষ করি দিল। আর দুবার পটোল তুলতে পারলে ভাল লাভ হতো। সেটা আর হলো না।

দক্ষিণ নওয়াবশ গ্রামের চাষি খলিল জানান, প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ করি ২৫ শতক জমিতে কদোয়া (চিচিঙ্গা) আর চাল কুমড়া লাগিয়েছি। খরচ আমার উঠি গেইছে। কিন্তু পানিটা আর কিছুদিন পরে আসলে আমাদের খুব উপকার হতো।

এই গ্রামের অন্য কৃষক নাজমুল জানান, যারা উঁচু জমিতে সবজি চাষ করেছে তারা এবার খুব লাভবান হয়েছে।

আজকে পানি কিছুটা কমেছে, এতে তারা খুব আশান্বিত।

ছড়ারপাড় গ্রামের কৃষাণি ছালেহা বেগম জানান, নিচু এলাকা হওয়ায় এখানে পাটখেতগুলো তলিয়ে যাচ্ছিল। এখনও পুরাট হয়নি। কিছুটা নমল অবস্থায় বাধ্য হয়ে পাট কাটতে হলো। এতে মণে ৫/৭ কেজি কম পাট পাব।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সদর উপজেলায় প্রায় ৭০ হেক্টর সবজি খেতের গোড়ায় পানি উঠেছে। এতে পটোল, শশা, মিষ্টি কুমড়া, মরিচের ক্ষতি হয়েছে। চাষিরা ৮০ ভাগ ফসল উত্তোলন করতে পেরেছেন। ফলে বেশ লাভবান হয়েছেন।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলার পানি ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া পানি কিছুটা হ্রাস পেয়ে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

image

কুড়িগ্রাম : অতিবৃষ্টিতে পাঁচগাছী ছড়া নদীর পানিতে পটোল খেত জলমগ্ন হয়ে গেছে। ছবিটি শুলকুর বাজার ব্রিজসংলগ্ন এলাকা থেকে তোলা - সংবাদ

আরও খবর
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে ভারতীয় ট্রাকচালকদের অবাধ চলাচল
চাঁদা না দেয়ায় হামলা, অর্থ লুট, মামলা দিয়ে গৃহবন্দী পরিবার, বিচার দাবি

সোমবার, ০৫ জুলাই ২০২১ , ২১ আষাঢ় ১৪২৮ ২৩ জিলক্বদ ১৪৪২

কুড়িগ্রামে বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত সবজি চাষি

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুড়িগ্রাম

image

কুড়িগ্রাম : অতিবৃষ্টিতে পাঁচগাছী ছড়া নদীর পানিতে পটোল খেত জলমগ্ন হয়ে গেছে। ছবিটি শুলকুর বাজার ব্রিজসংলগ্ন এলাকা থেকে তোলা - সংবাদ

কুড়িগ্রামে টানা ৪/৫ দিনের বৃষ্টিতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সবজি চাষিরা। এবার বিলম্বিত বন্যার কারণে চাষিরা প্রায় ৮০ ভাগ ফসল ঘরে তুললেও জুনের শেষে বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয় সবজির গোড়া। ফলে বাড়তি লাভ করার স্বপ্ন পানিতে ধুয়ে মুছে গেছে।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে পাটখেত নিমজ্জিত হওয়ায় নিচু এলাকার পাটচাষিরা আগাম পাটকাটা শুরু করেছেন। ফলে কাক্সিক্ষত অর্জনের চেয়ে কিছুটা কম পাট পাবেন তারা। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক জানান, বন্যায় ক্ষতির কথা ভেবে জেলায় প্রায় ৮শ’ হেক্টর পাট আগাম কাটা হয়েছে। এতে সামান্য কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হবে তারা।

সদর উপজেলার ধরলা নদী তীরবর্তী পৌরসভা, হালোখানা, ভোগডাঙ্গা ও পাঁছগাছী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, নিম্নাঞ্চলের সবজি খেতগুলো জলমগ্ন হয়েছে। গতকাল দুপুরে পাঁছগাছী ইউনিয়নের শুলকুর বাজার এলাকার সবজি চাষিরা নিমজ্জিত খেত থেকে সবজি উত্তোলন করছিলেন। এই এলাকার উত্তর নওয়াবশ, দক্ষিণ নওয়াবশ ও ছড়ার পাড়ের অধিবাসী কাশেম, খলিল ও নুরুজ্জামান জানান, গতবার জুনের প্রথম সপ্তাহে বন্যার পানি এসে সব খেতের ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। এবার বন্যা না হলেও বৃষ্টির জলাবদ্ধতায় নিচু জমির খেতগুলো তলিয়ে গেছে।

এতে শেষের দিকের ফসলগুলো প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে।

শুলকুর বাজারে ৩০ শতক জমির পটল খেত তলিয়ে গেছে জব্বার আলীর। দুজন দিনমজুর নিয়ে সেই খেতের পটোল তুলছিলেন তিনি। বললেন, গতবার খুব লস হয়ে গেছে। এবার লাভের মুখ দেখার সময় বৃষ্টির পানি সব শেষ করি দিল। আর দুবার পটোল তুলতে পারলে ভাল লাভ হতো। সেটা আর হলো না।

দক্ষিণ নওয়াবশ গ্রামের চাষি খলিল জানান, প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ করি ২৫ শতক জমিতে কদোয়া (চিচিঙ্গা) আর চাল কুমড়া লাগিয়েছি। খরচ আমার উঠি গেইছে। কিন্তু পানিটা আর কিছুদিন পরে আসলে আমাদের খুব উপকার হতো।

এই গ্রামের অন্য কৃষক নাজমুল জানান, যারা উঁচু জমিতে সবজি চাষ করেছে তারা এবার খুব লাভবান হয়েছে।

আজকে পানি কিছুটা কমেছে, এতে তারা খুব আশান্বিত।

ছড়ারপাড় গ্রামের কৃষাণি ছালেহা বেগম জানান, নিচু এলাকা হওয়ায় এখানে পাটখেতগুলো তলিয়ে যাচ্ছিল। এখনও পুরাট হয়নি। কিছুটা নমল অবস্থায় বাধ্য হয়ে পাট কাটতে হলো। এতে মণে ৫/৭ কেজি কম পাট পাব।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সদর উপজেলায় প্রায় ৭০ হেক্টর সবজি খেতের গোড়ায় পানি উঠেছে। এতে পটোল, শশা, মিষ্টি কুমড়া, মরিচের ক্ষতি হয়েছে। চাষিরা ৮০ ভাগ ফসল উত্তোলন করতে পেরেছেন। ফলে বেশ লাভবান হয়েছেন।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলার পানি ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া পানি কিছুটা হ্রাস পেয়ে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।