চ্যান্সেলর হত্যার বিচার ও ঘাতক দেশকাল

জাফর ওয়াজেদ

রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ঢাকাসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বা আচার্য। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাতে নেতাকে হত্যার তিন বছর ১০ মাসের মাথায় ঘাতকদের পৃষ্ঠপোষক ক্ষমতাধরের সামনে দাঁড়িয়ে চ্যান্সেলর হত্যার বিচার চেয়েছিলেন চার সাহসী ছাত্রনেতা। বলেছিলেন, তারা জাতির পিতা ও চ্যান্সেলর হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে আসতে পারবেন না। ছাত্রসমাজ এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তাই তারা আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য। সুতরাং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দ্রুত করতে হবে। কালো চশমা চোখের ঠা-া মাথার খুনিটির বাকি অবয়বে ক্রোধ জেগেছিল বুঝি। ১৯৭৯ সালের ৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে এই দৃশ্য রচিত হয়েছে।

বাংলাদেশ জানে বীরের মৃত্যুবরণ করেছেন বঙ্গবন্ধু। যিশুখ্রিস্টের মতো। মহাত্মা গান্ধীর মতো। ঘাতক হরণ করতে পারেনি তার আত্মমর্যাদা। হরণ করতে পারেনি তার বাঙালি সত্তার পূর্ণতা। সৈন্য বর্মে বেষ্টিত কোন দুর্গ যদি হতো তার বাসস্থান, তবে রক্ষা পেতেন হয়ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। কিন্তু জীবিত থাকতেন না বঙ্গবন্ধু। যার সারা জীবনের আপোসহীন অহংকারী কর্মে এই বাণী বারবার উচ্চারিত হয়েছে, ‘আমি তোমাদেরই লোক।’ তাই দেখি গুলিটা বঙ্গবন্ধুর পিঠে নয়, বুকে লেগেছিল। সাহসী মানব নিজেই এগিয়ে এসেছিলেন ঘাতকদের সামনে। লুকানো বা পালানোর কোন চেষ্টাই করেননি। যেমন করেননি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে। ১৫ আগস্ট রাতে অবশ্য হামলাকারীদের নিরস্ত্র করতে চেয়েছিলেন। কোন বাঙালি ঘাতক হবে, এমনকি তাকে হত্যায় সচেষ্ট হবেÑ এমনটা ঘূণাক্ষরেও ভাবতেন না। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে অনেকদূর এগিয়ে গেলেও তার দল ছিল অনেক পশ্চাতে। দলনেতারা সমানতালে বা কাছাকাছি যেতে পারেননি। পশ্চাতে পড়ে থাকা দলটি তাই প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। পঁচাত্তরের পর সামরিক জান্তার শাসনামলে দলটি থেকে আরও গোটা কয়েক দল জন্ম দেয়া হয়। এরা আওয়ামী লীগবিরোধী অবস্থান নেয়Ñ যারা জেল, জুলুম, হুলিয়া উপেক্ষা করে দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা চালান। অবশ্য এদের মধ্যে কেউ কাউকে বিশ্বাস না করার সংখ্যারও কমতি ছিল না। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজেদের আড়াল রাখতেই বেশি তৎপর ছিলেন। সারাদেশেই ছিল এমন পরিস্থিতি। শ্বাসরুদ্ধকর, স্থবির, হতাশায় নিমজ্জিত অবস্থা। তথাপি রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ হচ্ছে বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিতে নানা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একটি দল। বঙ্গবন্ধু অবশ্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে একটি কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করেছিলেন স্বাধীনতা-পূর্বকাল হতে নেয়া প্রস্তুতির পর্ব পেরিয়ে। একটি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রাম, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত টেনে নিয়েছিলেন। এমনিতে বাঙালি জাতি কোনদিন ঐক্যবদ্ধ ছিল না। সেই জাতিকে একটি দ-ে এনে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছিলেন। কতিপয় অপগ- এর বিরোধিতা করেছিল। সেই দলটি বঙ্গবন্ধুহীন অবস্থায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়া স্বাভাবিক যেন। অনেক নেতাকর্মী কারাগারে ধুঁকে ধুঁকে মরছিলেন। ছাত্রনেতাদের অনেকে ছিলেন কারাগারে, কেউ কেউ আত্মগোপনে। ছাত্রলীগ পুনর্গঠন করাও ছিল দুরূহ। তবুও বাঙালি তরুণরা সাহসে বুক বেঁধে আবারও সংগঠিত হতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগও অংশ নিয়ে নিজস্ব সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চয়ের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেয়ার কর্মসূচি ছিল। বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ফেস্টুন, ব্যানার, পোট্রেট ও বিভিন্ন সে্লাগান লিখিত পোস্টার দিয়ে সাজানো হয়েছিল। এ উপলক্ষে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছিল। ১৫ আগস্ট ভোরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খুনিরা দেশে সামরিক আইন জারি করে। তারা অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল খুলে ফেলে এবং সব সাজানো উপকরণ একত্রিত করে বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে পুড়িয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে হামলা চালিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এরপর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বোস প্রফেসর আবদুল মতিন চৌধুরীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কারাবন্দি করেছে। দীর্ঘ সময় জেল খাটার পর তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক জান্তার দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তাই সেদিন ট্যাংকবাহিনী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছিল এবং ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নিয়ে সামগ্রিক পরিবেশকে ধ্বংস করে দেয়। তদুপরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে একটি দুটি করে দেয়াল লিখনও চোখে পড়তে শুরু করে। ১৯৭৫-এর ৪ নবেম্বর বটতলায় বড় একটা জমায়েত হয়। এই জমায়েত শেষে একটি মিছিল বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িতে যায়। পথে পথে পুলিশি বাধা অতিক্রম করে।

সামরিক জান্তার ক্ষমতা প্রলম্বিত হতে থাকে। এরই মধ্যে ১৯৭৯-এর ৯ জুন ডাকসু নির্বাচন হয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর জান্তা শাসক টের পায় যে, বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা সংগঠিত হয়ে শক্তিমত্তা অর্জন করেছে। তাই একাত্তরের পরাজিত শক্তি জিয়া মন্ত্রিসভার সদস্যরা নির্বাচন বন্ধ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। ১৯৭৯ সালের ১ জুন প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী রাজাকার শিরোমণি শাহ আজিজ, অপর দুই কোলাবরেটর মন্ত্রী এসএ বারী এটি ও এমরান আলী সরকার শিক্ষাসচিব কাজী ফজলুর রহমানকে ডেকে বলে দেন যে, ডাকসু নির্বাচন বন্ধ করতেই হবে। সচিব বলেন, কথাটা আমি উপাচার্যকে জানাতে পারি। কিন্তু তিনি যদি রাজি না হন, তবে? এসএ বারী বলেন, যেমন করেই হোক বন্ধ করতে হবে। প্রেসিডেন্ট জিয়ার নির্দেশ। অবশেষে উপাচার্যকে ফোন করা হয়। ফোনে ফজলুল হালিম চৌধুরী বলেন, এখন কিছু করতে গেলে রক্তারক্তি অনিবার্য।

১৯৭৯ সালের ৯ জুন অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ১৯টি আসনের মধ্যে জাসদ সমর্থিত মান্না-আখতার পরিষদ পায় ১৫ আসন এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাদের-রবিউল পরিষদ পায় ৪টি আসন। স্বাধীনতার পর তৃতীয় নির্বাচন। আর এতে ছাত্রলীগ প্রথমবারের মতো ডাকসুতে ঠাঁই পায়। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলদার জেনারেল জিয়া চ্যান্সেলর বনে যান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। আর ক্যাম্পাসে এসে ইটাঘাত খেয়ে জিয়া ফিরে গিয়েছিলেন। নির্বাচনের পর তার সাধ জাগে ডাকসুর নির্বাচিতদের চেহারা মোবারক দেখার। সেই সঙ্গে নিজের চ্যান্সেলরশিপকে প্রাধান্য দেয়া। ১৯৭৯ সালের আগস্টের গোড়ায় বঙ্গভবন থেকে আমন্ত্রণ আসে চ্যান্সেলরের সঙ্গে ডাকসুর নবনির্বাচিতদের ইফতারে অংশগ্রহণের। উপাচার্যের সঙ্গে ডাকসুর বৈঠকে মান্না-আখতার ইফতার পার্টিতে যেতে তখন এক পায়ে খাড়া। বাদ সাধে চারজন। তারা শিক্ষামন্ত্রী রাজাকার শিরোমণি শাহ আজিজের উপস্থিত থাকার বিষয়ে আপত্তি জানায়। নতুবা তারা যোগ দেবে না বলে জানায়। পরিস্থিতির চাপে মান্না-আখতার শাহ আজিজ প্রশ্নটি মেনে নেয়। উপাচার্যের মাধ্যমে তা বঙ্গভবনকেও জানানো হলে পরদিন তা মেনে নেয় বঙ্গভবন। ছাত্রলীগ তখন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন। তাই দলের সভাপতি আবদুল মালেক উকিলের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার পর চারজন ইফতার পার্টিতে যোগ দিতে রাজি হয়। সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ঢাকার বাইরে থাকায়, তার মতামত মেলেনি। ইফতারে যোগদান শেষে আওয়ামী নেতাদের ব্রিফিং করতে গেলে তিনি ক্ষুব্ধ হন। কেন ঘাতকের দাওয়াতে ছাত্রলীগের নির্বাচিতরা যোগ দিল!

বঙ্গভবনে যাওয়ার আগে ডাকসুর বৈঠকে আলোচনায় চারজন প্রস্তাব করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্মিলিতভাবে ডাকসুর পক্ষ থেকে চাওয়া হবে। মান্নারা তাতে রাজি হয়নি। চারজন দাবিতে অনড় থেকে জানায়, এই দাবি উত্থাপনের জন্যই তারা ইফতার পার্টিতে যাচ্ছে। কিন্তু মান্না-আখতার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কহীন কর্নেল তাহের হত্যার বিচার দাবির প্রস্তাব চাপানোর চেষ্টা করে। কিন্তু চারজন রাজি হয়নি। ৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে ইফতার পার্টিতে যোগ দেয় ডাকসুর নবনির্বাচিত সদস্যরা। বঙ্গভবনে ডাকসুর সভাপতি উপাচার্য ফজলুল হালিম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, রেজিস্ট্রার সৈয়দ বদরুদ্দিন হুসাইন ছিলেন দলে। গণভবনে জেনারেল রাষ্ট্রপতি, শিক্ষা সচিব কাজী ফজলুর রহমান, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আবুল বাতেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লে. জে. মোস্তাফিজুর রহমানসহ উর্দিপরা ক’জন ছিলেন। ডাকসুর মান্না, আখতার, মনজুরুল ইসলাম, নুরুল আকতার, ওয়াহিদুজ্জামান পিন্টু, আলী রিয়াজ, গোলাম কুদ্দুসসহ জাসদের ১৫ জন এবং মুজিববাদী বলে পরিচিত দলের মনজুর কাদের কোরাইশী, কামাল শরীফ, এনায়েতউল্লাহ এবং নিবন্ধকার জাফর ওয়াজেদ। সারিবদ্ধভাবে গোল হয়ে দাঁড়ানোদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন জেনারেল জিয়া। পরপর দাঁড়ানো জাসদের ১৫ জন কর্নেল তাহের হত্যার বিচার চায়। মান্নারা তাহেরকে কেন ফাঁসি দেয়া হয়েছিল, রব-জলিল জেলে কেন প্রশ্ন তোলে, বাকশালীদের বিচার কেন হয় না। একজন বলেন হলে থাকার সিট কম, ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। জিয়া মান্নাদের বলেন, তাহের আমার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেÑসে ছিল সরল মানুষ। তাকে সামনে রেখে কিছু দুষ্কৃতকারী দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। অফিসার ও সেনাদের হত্যা করেছে। তখন পাল্টা প্রশ্ন করে জাসদের আলী রিয়াজ, তাহলে তার প্রকাশ্য বিচার হলো না কেন? জিয়া আমতা আমতা করছিলেন। জাসদ রব-জলিলসহ কারাবন্দি তাদের দলীয় নেতাদের মুক্তি দাবি করে।

শেষ প্রান্তে দাঁড়ানো ছাত্রলীগের চারজন। বুকে যাদের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির ব্যাজ। তারা পরস্পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবি করে হাত মেলানোর সময়। চারজন পৃথকভাবে আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যার বিচার আজ জাতীয় দাবি। এই হত্যার বিচার না হলে শিক্ষাঙ্গনসহ দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ আসবে না। প্রশ্ন করি, জেলহত্যা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না? বাংলাদেশ বেতার কেন রেডিও বাংলাদেশ হলো? ক্যাম্পাসে অস্ত্র নিয়ে এখনও লোকজন কী করে ঘোরাফেরা করে? জিয়া বিব্রত হচ্ছিলেন। চশমার আড়ালে চোখ ঢাকা থাকায় যেন সব হজম করছিলেন। একপর্যায়ে জিয়া একটু আসছি বলে চলে যান। কিছু সময় পর ফিরে এসে মান্নাকে ডেকে অদূরে চেয়ারে বসে একান্তে মিনিট পাঁচেক কথা বলেন। কিন্তু কী আলাপ করেছেন, তা প্রকাশ করেননি। বেরিয়ে আসার পর মান্না চারজনের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। কদিন পর ক্যাম্পাসে রটে যায়, মান্নার এক শ’টি রিকশার লাইসেন্স প্রয়োজন। তখন ওটা ছিল মহার্ঘ্য। ডাকসুর পুরো কমিটি সেদিন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাইলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো।

শিক্ষা সচিব কাজী ফজলুর রহমান, তার ‘আমলার দিনলিপি’ গ্রন্থে সেদিনের কথা উল্লেখ করেছেন যে, ‘আজকের এই দিনটি রাষ্ট্রপতি বোধহয় কিছুতেই ভুলতে পারবেন না। তিনি বোধহয় এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে কোনদিন পড়েননি। ছাত্ররা খোলাখুলিভাবে তার মুখের ওপর যেসব কথা বলল, তাতে আমার দেশের ছাত্রদের ওপর আস্থা বেড়ে গেছে। জেনারেল জিয়া অনেক বড় বড় কথা বলেছিলেন, তার নিত্যদিনের কায়দা মতো। কিন্তু ছেলেদের নানা তীক্ষè প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে থেমে গেলেন।’ সেদিন উপাচার্য সন্তুষ্ট হয়েছিলেন আমাদের দাবিতে। পরে তিনি এ কথা আমাদের বলেছিলেন।

[লেখক : মহাপরিচালক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)]

সোমবার, ০৫ জুলাই ২০২১ , ২১ আষাঢ় ১৪২৮ ২৩ জিলক্বদ ১৪৪২

চ্যান্সেলর হত্যার বিচার ও ঘাতক দেশকাল

জাফর ওয়াজেদ

রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ঢাকাসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বা আচার্য। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাতে নেতাকে হত্যার তিন বছর ১০ মাসের মাথায় ঘাতকদের পৃষ্ঠপোষক ক্ষমতাধরের সামনে দাঁড়িয়ে চ্যান্সেলর হত্যার বিচার চেয়েছিলেন চার সাহসী ছাত্রনেতা। বলেছিলেন, তারা জাতির পিতা ও চ্যান্সেলর হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে আসতে পারবেন না। ছাত্রসমাজ এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তাই তারা আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য। সুতরাং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দ্রুত করতে হবে। কালো চশমা চোখের ঠা-া মাথার খুনিটির বাকি অবয়বে ক্রোধ জেগেছিল বুঝি। ১৯৭৯ সালের ৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে এই দৃশ্য রচিত হয়েছে।

বাংলাদেশ জানে বীরের মৃত্যুবরণ করেছেন বঙ্গবন্ধু। যিশুখ্রিস্টের মতো। মহাত্মা গান্ধীর মতো। ঘাতক হরণ করতে পারেনি তার আত্মমর্যাদা। হরণ করতে পারেনি তার বাঙালি সত্তার পূর্ণতা। সৈন্য বর্মে বেষ্টিত কোন দুর্গ যদি হতো তার বাসস্থান, তবে রক্ষা পেতেন হয়ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। কিন্তু জীবিত থাকতেন না বঙ্গবন্ধু। যার সারা জীবনের আপোসহীন অহংকারী কর্মে এই বাণী বারবার উচ্চারিত হয়েছে, ‘আমি তোমাদেরই লোক।’ তাই দেখি গুলিটা বঙ্গবন্ধুর পিঠে নয়, বুকে লেগেছিল। সাহসী মানব নিজেই এগিয়ে এসেছিলেন ঘাতকদের সামনে। লুকানো বা পালানোর কোন চেষ্টাই করেননি। যেমন করেননি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে। ১৫ আগস্ট রাতে অবশ্য হামলাকারীদের নিরস্ত্র করতে চেয়েছিলেন। কোন বাঙালি ঘাতক হবে, এমনকি তাকে হত্যায় সচেষ্ট হবেÑ এমনটা ঘূণাক্ষরেও ভাবতেন না। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে অনেকদূর এগিয়ে গেলেও তার দল ছিল অনেক পশ্চাতে। দলনেতারা সমানতালে বা কাছাকাছি যেতে পারেননি। পশ্চাতে পড়ে থাকা দলটি তাই প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। পঁচাত্তরের পর সামরিক জান্তার শাসনামলে দলটি থেকে আরও গোটা কয়েক দল জন্ম দেয়া হয়। এরা আওয়ামী লীগবিরোধী অবস্থান নেয়Ñ যারা জেল, জুলুম, হুলিয়া উপেক্ষা করে দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা চালান। অবশ্য এদের মধ্যে কেউ কাউকে বিশ্বাস না করার সংখ্যারও কমতি ছিল না। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজেদের আড়াল রাখতেই বেশি তৎপর ছিলেন। সারাদেশেই ছিল এমন পরিস্থিতি। শ্বাসরুদ্ধকর, স্থবির, হতাশায় নিমজ্জিত অবস্থা। তথাপি রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ হচ্ছে বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিতে নানা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একটি দল। বঙ্গবন্ধু অবশ্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে একটি কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করেছিলেন স্বাধীনতা-পূর্বকাল হতে নেয়া প্রস্তুতির পর্ব পেরিয়ে। একটি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রাম, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত টেনে নিয়েছিলেন। এমনিতে বাঙালি জাতি কোনদিন ঐক্যবদ্ধ ছিল না। সেই জাতিকে একটি দ-ে এনে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছিলেন। কতিপয় অপগ- এর বিরোধিতা করেছিল। সেই দলটি বঙ্গবন্ধুহীন অবস্থায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়া স্বাভাবিক যেন। অনেক নেতাকর্মী কারাগারে ধুঁকে ধুঁকে মরছিলেন। ছাত্রনেতাদের অনেকে ছিলেন কারাগারে, কেউ কেউ আত্মগোপনে। ছাত্রলীগ পুনর্গঠন করাও ছিল দুরূহ। তবুও বাঙালি তরুণরা সাহসে বুক বেঁধে আবারও সংগঠিত হতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগও অংশ নিয়ে নিজস্ব সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চয়ের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেয়ার কর্মসূচি ছিল। বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ফেস্টুন, ব্যানার, পোট্রেট ও বিভিন্ন সে্লাগান লিখিত পোস্টার দিয়ে সাজানো হয়েছিল। এ উপলক্ষে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছিল। ১৫ আগস্ট ভোরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খুনিরা দেশে সামরিক আইন জারি করে। তারা অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল খুলে ফেলে এবং সব সাজানো উপকরণ একত্রিত করে বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে পুড়িয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে হামলা চালিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এরপর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বোস প্রফেসর আবদুল মতিন চৌধুরীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কারাবন্দি করেছে। দীর্ঘ সময় জেল খাটার পর তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক জান্তার দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তাই সেদিন ট্যাংকবাহিনী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছিল এবং ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নিয়ে সামগ্রিক পরিবেশকে ধ্বংস করে দেয়। তদুপরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে একটি দুটি করে দেয়াল লিখনও চোখে পড়তে শুরু করে। ১৯৭৫-এর ৪ নবেম্বর বটতলায় বড় একটা জমায়েত হয়। এই জমায়েত শেষে একটি মিছিল বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িতে যায়। পথে পথে পুলিশি বাধা অতিক্রম করে।

সামরিক জান্তার ক্ষমতা প্রলম্বিত হতে থাকে। এরই মধ্যে ১৯৭৯-এর ৯ জুন ডাকসু নির্বাচন হয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর জান্তা শাসক টের পায় যে, বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা সংগঠিত হয়ে শক্তিমত্তা অর্জন করেছে। তাই একাত্তরের পরাজিত শক্তি জিয়া মন্ত্রিসভার সদস্যরা নির্বাচন বন্ধ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। ১৯৭৯ সালের ১ জুন প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী রাজাকার শিরোমণি শাহ আজিজ, অপর দুই কোলাবরেটর মন্ত্রী এসএ বারী এটি ও এমরান আলী সরকার শিক্ষাসচিব কাজী ফজলুর রহমানকে ডেকে বলে দেন যে, ডাকসু নির্বাচন বন্ধ করতেই হবে। সচিব বলেন, কথাটা আমি উপাচার্যকে জানাতে পারি। কিন্তু তিনি যদি রাজি না হন, তবে? এসএ বারী বলেন, যেমন করেই হোক বন্ধ করতে হবে। প্রেসিডেন্ট জিয়ার নির্দেশ। অবশেষে উপাচার্যকে ফোন করা হয়। ফোনে ফজলুল হালিম চৌধুরী বলেন, এখন কিছু করতে গেলে রক্তারক্তি অনিবার্য।

১৯৭৯ সালের ৯ জুন অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ১৯টি আসনের মধ্যে জাসদ সমর্থিত মান্না-আখতার পরিষদ পায় ১৫ আসন এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাদের-রবিউল পরিষদ পায় ৪টি আসন। স্বাধীনতার পর তৃতীয় নির্বাচন। আর এতে ছাত্রলীগ প্রথমবারের মতো ডাকসুতে ঠাঁই পায়। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলদার জেনারেল জিয়া চ্যান্সেলর বনে যান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। আর ক্যাম্পাসে এসে ইটাঘাত খেয়ে জিয়া ফিরে গিয়েছিলেন। নির্বাচনের পর তার সাধ জাগে ডাকসুর নির্বাচিতদের চেহারা মোবারক দেখার। সেই সঙ্গে নিজের চ্যান্সেলরশিপকে প্রাধান্য দেয়া। ১৯৭৯ সালের আগস্টের গোড়ায় বঙ্গভবন থেকে আমন্ত্রণ আসে চ্যান্সেলরের সঙ্গে ডাকসুর নবনির্বাচিতদের ইফতারে অংশগ্রহণের। উপাচার্যের সঙ্গে ডাকসুর বৈঠকে মান্না-আখতার ইফতার পার্টিতে যেতে তখন এক পায়ে খাড়া। বাদ সাধে চারজন। তারা শিক্ষামন্ত্রী রাজাকার শিরোমণি শাহ আজিজের উপস্থিত থাকার বিষয়ে আপত্তি জানায়। নতুবা তারা যোগ দেবে না বলে জানায়। পরিস্থিতির চাপে মান্না-আখতার শাহ আজিজ প্রশ্নটি মেনে নেয়। উপাচার্যের মাধ্যমে তা বঙ্গভবনকেও জানানো হলে পরদিন তা মেনে নেয় বঙ্গভবন। ছাত্রলীগ তখন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন। তাই দলের সভাপতি আবদুল মালেক উকিলের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার পর চারজন ইফতার পার্টিতে যোগ দিতে রাজি হয়। সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ঢাকার বাইরে থাকায়, তার মতামত মেলেনি। ইফতারে যোগদান শেষে আওয়ামী নেতাদের ব্রিফিং করতে গেলে তিনি ক্ষুব্ধ হন। কেন ঘাতকের দাওয়াতে ছাত্রলীগের নির্বাচিতরা যোগ দিল!

বঙ্গভবনে যাওয়ার আগে ডাকসুর বৈঠকে আলোচনায় চারজন প্রস্তাব করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্মিলিতভাবে ডাকসুর পক্ষ থেকে চাওয়া হবে। মান্নারা তাতে রাজি হয়নি। চারজন দাবিতে অনড় থেকে জানায়, এই দাবি উত্থাপনের জন্যই তারা ইফতার পার্টিতে যাচ্ছে। কিন্তু মান্না-আখতার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কহীন কর্নেল তাহের হত্যার বিচার দাবির প্রস্তাব চাপানোর চেষ্টা করে। কিন্তু চারজন রাজি হয়নি। ৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে ইফতার পার্টিতে যোগ দেয় ডাকসুর নবনির্বাচিত সদস্যরা। বঙ্গভবনে ডাকসুর সভাপতি উপাচার্য ফজলুল হালিম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, রেজিস্ট্রার সৈয়দ বদরুদ্দিন হুসাইন ছিলেন দলে। গণভবনে জেনারেল রাষ্ট্রপতি, শিক্ষা সচিব কাজী ফজলুর রহমান, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আবুল বাতেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লে. জে. মোস্তাফিজুর রহমানসহ উর্দিপরা ক’জন ছিলেন। ডাকসুর মান্না, আখতার, মনজুরুল ইসলাম, নুরুল আকতার, ওয়াহিদুজ্জামান পিন্টু, আলী রিয়াজ, গোলাম কুদ্দুসসহ জাসদের ১৫ জন এবং মুজিববাদী বলে পরিচিত দলের মনজুর কাদের কোরাইশী, কামাল শরীফ, এনায়েতউল্লাহ এবং নিবন্ধকার জাফর ওয়াজেদ। সারিবদ্ধভাবে গোল হয়ে দাঁড়ানোদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন জেনারেল জিয়া। পরপর দাঁড়ানো জাসদের ১৫ জন কর্নেল তাহের হত্যার বিচার চায়। মান্নারা তাহেরকে কেন ফাঁসি দেয়া হয়েছিল, রব-জলিল জেলে কেন প্রশ্ন তোলে, বাকশালীদের বিচার কেন হয় না। একজন বলেন হলে থাকার সিট কম, ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। জিয়া মান্নাদের বলেন, তাহের আমার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেÑসে ছিল সরল মানুষ। তাকে সামনে রেখে কিছু দুষ্কৃতকারী দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। অফিসার ও সেনাদের হত্যা করেছে। তখন পাল্টা প্রশ্ন করে জাসদের আলী রিয়াজ, তাহলে তার প্রকাশ্য বিচার হলো না কেন? জিয়া আমতা আমতা করছিলেন। জাসদ রব-জলিলসহ কারাবন্দি তাদের দলীয় নেতাদের মুক্তি দাবি করে।

শেষ প্রান্তে দাঁড়ানো ছাত্রলীগের চারজন। বুকে যাদের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির ব্যাজ। তারা পরস্পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবি করে হাত মেলানোর সময়। চারজন পৃথকভাবে আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যার বিচার আজ জাতীয় দাবি। এই হত্যার বিচার না হলে শিক্ষাঙ্গনসহ দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ আসবে না। প্রশ্ন করি, জেলহত্যা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না? বাংলাদেশ বেতার কেন রেডিও বাংলাদেশ হলো? ক্যাম্পাসে অস্ত্র নিয়ে এখনও লোকজন কী করে ঘোরাফেরা করে? জিয়া বিব্রত হচ্ছিলেন। চশমার আড়ালে চোখ ঢাকা থাকায় যেন সব হজম করছিলেন। একপর্যায়ে জিয়া একটু আসছি বলে চলে যান। কিছু সময় পর ফিরে এসে মান্নাকে ডেকে অদূরে চেয়ারে বসে একান্তে মিনিট পাঁচেক কথা বলেন। কিন্তু কী আলাপ করেছেন, তা প্রকাশ করেননি। বেরিয়ে আসার পর মান্না চারজনের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। কদিন পর ক্যাম্পাসে রটে যায়, মান্নার এক শ’টি রিকশার লাইসেন্স প্রয়োজন। তখন ওটা ছিল মহার্ঘ্য। ডাকসুর পুরো কমিটি সেদিন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাইলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো।

শিক্ষা সচিব কাজী ফজলুর রহমান, তার ‘আমলার দিনলিপি’ গ্রন্থে সেদিনের কথা উল্লেখ করেছেন যে, ‘আজকের এই দিনটি রাষ্ট্রপতি বোধহয় কিছুতেই ভুলতে পারবেন না। তিনি বোধহয় এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে কোনদিন পড়েননি। ছাত্ররা খোলাখুলিভাবে তার মুখের ওপর যেসব কথা বলল, তাতে আমার দেশের ছাত্রদের ওপর আস্থা বেড়ে গেছে। জেনারেল জিয়া অনেক বড় বড় কথা বলেছিলেন, তার নিত্যদিনের কায়দা মতো। কিন্তু ছেলেদের নানা তীক্ষè প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে থেমে গেলেন।’ সেদিন উপাচার্য সন্তুষ্ট হয়েছিলেন আমাদের দাবিতে। পরে তিনি এ কথা আমাদের বলেছিলেন।

[লেখক : মহাপরিচালক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)]