কর্মহীন নৌ-শ্রমিকদের মজুরি ও ঈদ বোনাস নিশ্চিতের দাবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান কঠোর বিধিনিষেধে যাত্রীবাহী নৌযানের কর্মহীন শ্রমিকদের মজুরি ও ঈদ বোনাস দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। একই সঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পণ্য পরিবহন ও খালাসের কাজে নিয়োজিত নৌযান শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ঝুঁকিভাতা প্রদানের দাবি জানায় সংগঠনটি। গতকাল সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. শাহ আলম ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘লকডাউনের কারণে নৌযানসহ সব ধরনের পরিবহন শ্রমিকসহ বিভিন্ন সেক্টরের অধিকাংশ শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে অনাহার-অর্ধাহারে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে নৌযান শ্রমিকরা যে মজুরি পান, তা দিয়েই যেখানে দু-বেলা দু-মুঠো ডাল-ভাত জুটাতে পারে না; তখন খাবার ছাড়া এ মানুষরা কী করে ঘরে থাকবেন? গত এক বছরে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। ৬২ শতাংশ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। সদ্য পাসকৃত বাজেটেও এ দরিদ্র জনগণের জন্য কিছুই রাখা হয়নি। এমন কি শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণের সামাজিক নিরাপত্তায় রেশনিং চালুর প্রেক্ষিতেও কোন বরাদ্দ রাখা হয়নি।’

তারা আরও জানান, এমন অবস্থায় সরকার জনগণের কোন রকম দায়-দায়িত্ব গ্রহণ না করে কঠোর বিধিনিষেধ চাপিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশের ভয় দেখিয়ে গৃহবন্দী করে রাখতে চাইছে। নৌযান শ্রমিকরা সাধারণত মাসের ৭-৮ তারিখের দিকে বেতন পেয়ে থাকে কিন্তু এবার মাসের শুরুতেই লকডাউন দেয়ায় তাদের অনেকেই খালি হাতে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা বলেন, ঈদুল আজহার আগ মুহূর্তে লকডাউন শুরু হওয়ায় শ্রমিকরা উৎসব বোনাস পাওয়া নিয়ে অনিশ্চিয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। এর আগে গত এপ্রিল মাস থেকে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ থাকার পর নৌযান শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২৪ মে হতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলের অনুমতি প্রদান করা হয়। এক মাসের মাথায় পুনরায় যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় মালিকরা তাদের প্রতিশ্রুতি মতো বকেয়া মজুরি ও বোনাস পরিশোধ না করা সুযোগ পেয়ে যান। গত বছরের লকডাউনের সময় অধিকাংশ নৌযান শ্রমিকরা বকেয়া বেতন বা ভাত ও উৎসব বোনাস না পাওয়ায় শ্রমিকদের জীবনে কঠিন দুর্যোগ নেমে এসেছে।

তারা আরও বলেন, নৌযান শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিবেচনাপ্রসূত বিশেষ ঘোষণা এবং বকেয়াসহ সব নৌযান শ্রমিকদের মাসিক বেতন নিয়মিত পরিশোধ, ঈদুল আজহায় উৎসব বোনাস প্রদান, পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকদের জন্য বিনামূল্যে মাস্ক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী প্রদান, পণ্যবাহী নৌযানসহ জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য ঝুঁকিভাতা প্রদান, নৌযান শ্রমিকদের টিকাদান কর্মসূচিতে অগ্রাধিকারের দাবি জানাচ্ছি।

মঙ্গলবার, ০৬ জুলাই ২০২১ , ২২ আষাঢ় ১৪২৮ ২৪ জিলক্বদ ১৪৪২

কর্মহীন নৌ-শ্রমিকদের মজুরি ও ঈদ বোনাস নিশ্চিতের দাবি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান কঠোর বিধিনিষেধে যাত্রীবাহী নৌযানের কর্মহীন শ্রমিকদের মজুরি ও ঈদ বোনাস দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। একই সঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পণ্য পরিবহন ও খালাসের কাজে নিয়োজিত নৌযান শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ঝুঁকিভাতা প্রদানের দাবি জানায় সংগঠনটি। গতকাল সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. শাহ আলম ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘লকডাউনের কারণে নৌযানসহ সব ধরনের পরিবহন শ্রমিকসহ বিভিন্ন সেক্টরের অধিকাংশ শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে অনাহার-অর্ধাহারে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে নৌযান শ্রমিকরা যে মজুরি পান, তা দিয়েই যেখানে দু-বেলা দু-মুঠো ডাল-ভাত জুটাতে পারে না; তখন খাবার ছাড়া এ মানুষরা কী করে ঘরে থাকবেন? গত এক বছরে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। ৬২ শতাংশ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। সদ্য পাসকৃত বাজেটেও এ দরিদ্র জনগণের জন্য কিছুই রাখা হয়নি। এমন কি শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণের সামাজিক নিরাপত্তায় রেশনিং চালুর প্রেক্ষিতেও কোন বরাদ্দ রাখা হয়নি।’

তারা আরও জানান, এমন অবস্থায় সরকার জনগণের কোন রকম দায়-দায়িত্ব গ্রহণ না করে কঠোর বিধিনিষেধ চাপিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশের ভয় দেখিয়ে গৃহবন্দী করে রাখতে চাইছে। নৌযান শ্রমিকরা সাধারণত মাসের ৭-৮ তারিখের দিকে বেতন পেয়ে থাকে কিন্তু এবার মাসের শুরুতেই লকডাউন দেয়ায় তাদের অনেকেই খালি হাতে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা বলেন, ঈদুল আজহার আগ মুহূর্তে লকডাউন শুরু হওয়ায় শ্রমিকরা উৎসব বোনাস পাওয়া নিয়ে অনিশ্চিয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। এর আগে গত এপ্রিল মাস থেকে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ থাকার পর নৌযান শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২৪ মে হতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলের অনুমতি প্রদান করা হয়। এক মাসের মাথায় পুনরায় যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় মালিকরা তাদের প্রতিশ্রুতি মতো বকেয়া মজুরি ও বোনাস পরিশোধ না করা সুযোগ পেয়ে যান। গত বছরের লকডাউনের সময় অধিকাংশ নৌযান শ্রমিকরা বকেয়া বেতন বা ভাত ও উৎসব বোনাস না পাওয়ায় শ্রমিকদের জীবনে কঠিন দুর্যোগ নেমে এসেছে।

তারা আরও বলেন, নৌযান শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিবেচনাপ্রসূত বিশেষ ঘোষণা এবং বকেয়াসহ সব নৌযান শ্রমিকদের মাসিক বেতন নিয়মিত পরিশোধ, ঈদুল আজহায় উৎসব বোনাস প্রদান, পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকদের জন্য বিনামূল্যে মাস্ক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী প্রদান, পণ্যবাহী নৌযানসহ জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য ঝুঁকিভাতা প্রদান, নৌযান শ্রমিকদের টিকাদান কর্মসূচিতে অগ্রাধিকারের দাবি জানাচ্ছি।