তিন জেলায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি

শত শত ইঁদুরের গর্তে ঝুঁকিপূর্ণ ২০ কিমি. বাঁধ

প্রতিনিধি, গাইবান্ধা

বন্যা পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী থেকে ডাকবাংলা পর্যন্ত ২০ কিলোমটিার এলাকাজুড়ে শতশত খড়েরপালায় নিচে ইঁদুরের পাল বাসা বাঁধায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। এতে করে চরম আতঙ্কে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদীর পশ্চিম তীর রক্ষা নিয়ন্ত্র¿ণ বাঁধের আশপাশের হাজার হাজার মানুষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ এই বাঁধের দু’পাশে আশ্রিত পরিবারগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো খড়ের পালা ও বিভিন্ন ধরনের গাছের পাতা, খড়ির স্তুপ করে রেখেছে। আর এর নীচ দিয়েই গর্তখুড়ে আশ্রয় নিয়েছে ইঁদুর। বন্যার সময় ইঁদুরেরা অন্য কোথায় ঠাঁই না পেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে খড়ের পালা অথবা জঙ্গলের স্তুপ এসব বেছে নেয় বলে জানান গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, ইঁদুর স্বাভাবিক সময়ে ক্ষেতের ধান খেয়ে বর্ষা মৌসুমে আশ্রয় নেয় উচুস্থানে বা বাঁধে। এর মাটির ভেতরে বেশ বড় গর্ত করে এ কারণে ওপর থেকে বোঝার উপায় নেই ভেতরের অবস্থা। গেল বছর বন্যায় এই বাঁধটির চরগোবিন্দ, বাশহাটা, কাটাধারা ব্রিজ, চিনিরপটল এলাকায় ইঁদুরের গর্ত দিয়ে পানি পশ্চিম পাশে প্রবশে করে। আর এসব গর্ত খুঁজে বের করতে স্থানীয় জনগণ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বেশ হিমশিম খেতে হয়। হাসিলকান্দি গ্রামের জিল্লুর রহমান শাওন জানান, গতবছর কাটাধারা ব্রিজের ৪ গজ দক্ষিণে নদীর পানি গড়তে থাকে। আস্তে-আস্তে এই গর্ত বিশাল আকার ধারণ করে। কিন্তু ইঁদুরের এই গর্তটি একটি বাড়িতে রাখা খড়ির স্তপে ইঁদুরের গর্ত থেকে সূত্রপাত হয়ে বলে জানান। তিনি আরও বলেন, এই বছরের এই বাঁধে শত শত খড়ের পালা রয়েছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, খড়ের পালা ও অন্যান্য ময়লা আবর্জনা সড়নোর জন্য বলা হয়েছে। তবে জনবল কম থাকায় সবসময় বাঁধটি মনিটরিং করা সম্ভব হয় না। সাঘাটার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ম-ল জানান, এমনিতেই ১৯৬৮ সালের নির্মিত এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি সংস্কার না করায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এরমধ্যে আবার ইঁদুরের আস্তানা আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এজন্য যারা এই বাঁধে আশ্রিত রয়েছেন তাদেরকেই রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে।

বছর না ঘুরতেই পদ্মার তীর সংরক্ষণ বাঁধ হুমকির মুখে

প্রতিনিধি, ফরিদপুর

২০১৯-২০ অর্থবছরের নির্মিত ফরিদপুরে চরভদ্রাসনের পদ্মার ভাঙন কবলিত তিন কিলো মিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু বাঁধটির সম্পন্ন হওয়ার এক বছর যেতে না যেতেই হাজীগঞ্জ বাজার এলাকায় কয়েকটি অংশ হুমকির মুখে পড়েছে। তবে পাউবোর কর্তৃপক্ষ বলছেন, দ্রুতই এর সমাধান করা হবে। ফরিদপুর পাউবো সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড চরভদ্রাসনের পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙন কবলিত এমপিডাঙ্গী, চরহাজীগঞ্জ বাজার ও চরহোসেনপুরের সাড়ে তিন কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এ কাজে প্রথম পর্যায়ে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাপিং এবং পরবর্তীতে সিসি ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ১৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সাত গ্রুপের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাঁধের কাজ সম্পন্ন করেছে। চরভদ্রাসনের হাজীগঞ্জ বাজারের গিয়ে দেখা যায়, বাজার সংলগ্ন পদ্মার তীর সংরক্ষণ বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থানে বৃষ্টির পানির চাপে ডেবে গেছে, কোথাও কোথাও বাঁধে ফাটল ধরেছে। এই ডেবে যাওয়া আর ফাটল ধরায় স্থানীয় বাসিন্দা এবং বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতঙ্ক তৈরি করেছে। চরভদ্রাসন উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব হোসেন বলেন, ‘উপজেলার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বাজার এটি, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার বাজার রক্ষার্থে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে। কিন্তু বাঁধটি নির্মাণের এক বছরে যেতে না যেতেই বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই হুমকির মুখে পড়ল।’

তিনি, এই বাঁধ নির্মাণের কাজের ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। চরভদ্রাসন হাজীগঞ্জ বাজার বর্ণিক সমিতি সভাপতি কবির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মার তীর সংরক্ষণ বাঁধ দিয়েছিল, কিন্তু আজ তা বিভিন্ন অংশে ফাটল কোথাও ডেবে যাচ্ছে, তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এখই এ অবস্থা হলে ভরা বর্ষা মৌসুমে বড় বিপদ আশার আশঙ্কা রয়েছে।’ ফরিদপুর পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘ঠিকাদারদের কাজের ঝুঁকি সময় এখনও রয়েছে, বাঁধের কোথাও কিছু’ হলে তা ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই তার দায়িত্বেই ঠিক করে দেবে।’ তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ডেকে হাজিগঞ্জ বাজারের বাঁধের বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুতই সমাধান হবে।

বৃহস্পতিবার, ০৮ জুলাই ২০২১ , ২৪ আষাঢ় ১৪২৮ ২৬ জিলক্বদ ১৪৪২

তিন জেলায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি

image

ফরিদপুর : চরভদ্রাসনের হাজিগঞ্জ বাজার এলাকায় পদ্মার তীর সংরক্ষণ বাঁধে ফাটল -সংবাদ

শত শত ইঁদুরের গর্তে ঝুঁকিপূর্ণ ২০ কিমি. বাঁধ

প্রতিনিধি, গাইবান্ধা

বন্যা পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী থেকে ডাকবাংলা পর্যন্ত ২০ কিলোমটিার এলাকাজুড়ে শতশত খড়েরপালায় নিচে ইঁদুরের পাল বাসা বাঁধায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। এতে করে চরম আতঙ্কে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদীর পশ্চিম তীর রক্ষা নিয়ন্ত্র¿ণ বাঁধের আশপাশের হাজার হাজার মানুষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ এই বাঁধের দু’পাশে আশ্রিত পরিবারগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো খড়ের পালা ও বিভিন্ন ধরনের গাছের পাতা, খড়ির স্তুপ করে রেখেছে। আর এর নীচ দিয়েই গর্তখুড়ে আশ্রয় নিয়েছে ইঁদুর। বন্যার সময় ইঁদুরেরা অন্য কোথায় ঠাঁই না পেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে খড়ের পালা অথবা জঙ্গলের স্তুপ এসব বেছে নেয় বলে জানান গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, ইঁদুর স্বাভাবিক সময়ে ক্ষেতের ধান খেয়ে বর্ষা মৌসুমে আশ্রয় নেয় উচুস্থানে বা বাঁধে। এর মাটির ভেতরে বেশ বড় গর্ত করে এ কারণে ওপর থেকে বোঝার উপায় নেই ভেতরের অবস্থা। গেল বছর বন্যায় এই বাঁধটির চরগোবিন্দ, বাশহাটা, কাটাধারা ব্রিজ, চিনিরপটল এলাকায় ইঁদুরের গর্ত দিয়ে পানি পশ্চিম পাশে প্রবশে করে। আর এসব গর্ত খুঁজে বের করতে স্থানীয় জনগণ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বেশ হিমশিম খেতে হয়। হাসিলকান্দি গ্রামের জিল্লুর রহমান শাওন জানান, গতবছর কাটাধারা ব্রিজের ৪ গজ দক্ষিণে নদীর পানি গড়তে থাকে। আস্তে-আস্তে এই গর্ত বিশাল আকার ধারণ করে। কিন্তু ইঁদুরের এই গর্তটি একটি বাড়িতে রাখা খড়ির স্তপে ইঁদুরের গর্ত থেকে সূত্রপাত হয়ে বলে জানান। তিনি আরও বলেন, এই বছরের এই বাঁধে শত শত খড়ের পালা রয়েছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, খড়ের পালা ও অন্যান্য ময়লা আবর্জনা সড়নোর জন্য বলা হয়েছে। তবে জনবল কম থাকায় সবসময় বাঁধটি মনিটরিং করা সম্ভব হয় না। সাঘাটার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ম-ল জানান, এমনিতেই ১৯৬৮ সালের নির্মিত এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি সংস্কার না করায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এরমধ্যে আবার ইঁদুরের আস্তানা আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এজন্য যারা এই বাঁধে আশ্রিত রয়েছেন তাদেরকেই রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে।

বছর না ঘুরতেই পদ্মার তীর সংরক্ষণ বাঁধ হুমকির মুখে

প্রতিনিধি, ফরিদপুর

২০১৯-২০ অর্থবছরের নির্মিত ফরিদপুরে চরভদ্রাসনের পদ্মার ভাঙন কবলিত তিন কিলো মিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু বাঁধটির সম্পন্ন হওয়ার এক বছর যেতে না যেতেই হাজীগঞ্জ বাজার এলাকায় কয়েকটি অংশ হুমকির মুখে পড়েছে। তবে পাউবোর কর্তৃপক্ষ বলছেন, দ্রুতই এর সমাধান করা হবে। ফরিদপুর পাউবো সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড চরভদ্রাসনের পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙন কবলিত এমপিডাঙ্গী, চরহাজীগঞ্জ বাজার ও চরহোসেনপুরের সাড়ে তিন কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এ কাজে প্রথম পর্যায়ে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাপিং এবং পরবর্তীতে সিসি ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ১৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সাত গ্রুপের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাঁধের কাজ সম্পন্ন করেছে। চরভদ্রাসনের হাজীগঞ্জ বাজারের গিয়ে দেখা যায়, বাজার সংলগ্ন পদ্মার তীর সংরক্ষণ বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থানে বৃষ্টির পানির চাপে ডেবে গেছে, কোথাও কোথাও বাঁধে ফাটল ধরেছে। এই ডেবে যাওয়া আর ফাটল ধরায় স্থানীয় বাসিন্দা এবং বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতঙ্ক তৈরি করেছে। চরভদ্রাসন উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব হোসেন বলেন, ‘উপজেলার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বাজার এটি, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার বাজার রক্ষার্থে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে। কিন্তু বাঁধটি নির্মাণের এক বছরে যেতে না যেতেই বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই হুমকির মুখে পড়ল।’

তিনি, এই বাঁধ নির্মাণের কাজের ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। চরভদ্রাসন হাজীগঞ্জ বাজার বর্ণিক সমিতি সভাপতি কবির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মার তীর সংরক্ষণ বাঁধ দিয়েছিল, কিন্তু আজ তা বিভিন্ন অংশে ফাটল কোথাও ডেবে যাচ্ছে, তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এখই এ অবস্থা হলে ভরা বর্ষা মৌসুমে বড় বিপদ আশার আশঙ্কা রয়েছে।’ ফরিদপুর পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘ঠিকাদারদের কাজের ঝুঁকি সময় এখনও রয়েছে, বাঁধের কোথাও কিছু’ হলে তা ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই তার দায়িত্বেই ঠিক করে দেবে।’ তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ডেকে হাজিগঞ্জ বাজারের বাঁধের বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুতই সমাধান হবে।