বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক

ফের তলানীতে ঠেকেছে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, মে মাসে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসেই সর্বনি¤œ। এই ঋণ প্রবাহ বাংলাদেশ ব্যাংক যে লক্ষ্য ধরেছিল তার অর্ধেক। বাংলাদেশের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে যে বেসরকারি খাত। সেই খাতে এতো কম ঋণপ্রবৃদ্ধি আগে কখনই দেখা যায়নি।

এপ্রিল মাসে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। তার আগের মাস মার্চে ছিল ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের শেষের মাসের আগে মাস মে মাস শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৭১ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের মে শেষে এর পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৮৯ হাজার ৫৫৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, তার ওপর ভর করে জুলাই-সেপ্টেম্বরে দেশে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধিতে গতি এসেছিল। কিন্তু অক্টোবর থেকে তা আবার কমতে শুরু করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে আরও দেখা গেছে, মহামারীর ধাক্কায় গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। এরপর সরকারের প্রণোদনা ঋণে ভর করে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ হয়। আগস্টে তা আরও বেড়ে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশে এবং সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশে উঠে। কিন্তু অক্টোবরে এই প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। নভেম্বরে তা আরও কমে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ হয়। ডিসেম্বরে সামান্য বেড়ে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়। ২০২১ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৫১ ও ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

শুধু বেসরকারি ঋণ প্রবাহই নয়, সরকারি ঋণ প্রবাহও কমেছে। মে শেষে সরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৮ কোটি ৮০ টাকা, যা গত বছরের মে মাসের চেয়ে ২১ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। আগের মাস এপ্রিলে এই ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ। মার্চে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে ছিল ১৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতেও এই একই লক্ষ্য ধরা ছিল, বিপরীতে ঋণ বেড়েছিল ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।

গত বছরের ২৯ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০-২১ অর্থবছরের যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল, তাতে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ; যার মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হচ্ছে যথাক্রমে ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ ও ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, তাতে মে মাস শেষে দেশে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৬৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা ঋণ ১১ লাখ ৭১ হাজার ৮০৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সরকার নিয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গত বছরের মে শেষে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৮১ হাজার ৯২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যার মধ্যে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৮৯ হাজার ৫৫৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর সরকারের ঋণ ছিল ১ লাখ ৬২ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। এ হিসাবেই মে শেষে অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ২২ শতাংশ। সরকারি ঋণের ২১ দশমিক ৫১ শতাংশ; আর বেসরকারি খাতে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১ , ২৬ আষাঢ় ১৪২৮ ২৮ জিলক্বদ ১৪৪২

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

ফের তলানীতে ঠেকেছে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, মে মাসে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসেই সর্বনি¤œ। এই ঋণ প্রবাহ বাংলাদেশ ব্যাংক যে লক্ষ্য ধরেছিল তার অর্ধেক। বাংলাদেশের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে যে বেসরকারি খাত। সেই খাতে এতো কম ঋণপ্রবৃদ্ধি আগে কখনই দেখা যায়নি।

এপ্রিল মাসে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। তার আগের মাস মার্চে ছিল ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের শেষের মাসের আগে মাস মে মাস শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৭১ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের মে শেষে এর পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৮৯ হাজার ৫৫৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, তার ওপর ভর করে জুলাই-সেপ্টেম্বরে দেশে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধিতে গতি এসেছিল। কিন্তু অক্টোবর থেকে তা আবার কমতে শুরু করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে আরও দেখা গেছে, মহামারীর ধাক্কায় গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। এরপর সরকারের প্রণোদনা ঋণে ভর করে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ হয়। আগস্টে তা আরও বেড়ে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশে এবং সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশে উঠে। কিন্তু অক্টোবরে এই প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। নভেম্বরে তা আরও কমে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ হয়। ডিসেম্বরে সামান্য বেড়ে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়। ২০২১ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৫১ ও ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

শুধু বেসরকারি ঋণ প্রবাহই নয়, সরকারি ঋণ প্রবাহও কমেছে। মে শেষে সরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৮ কোটি ৮০ টাকা, যা গত বছরের মে মাসের চেয়ে ২১ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। আগের মাস এপ্রিলে এই ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ। মার্চে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে ছিল ১৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতেও এই একই লক্ষ্য ধরা ছিল, বিপরীতে ঋণ বেড়েছিল ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।

গত বছরের ২৯ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০-২১ অর্থবছরের যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল, তাতে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ; যার মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হচ্ছে যথাক্রমে ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ ও ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, তাতে মে মাস শেষে দেশে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৬৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা ঋণ ১১ লাখ ৭১ হাজার ৮০৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সরকার নিয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গত বছরের মে শেষে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৮১ হাজার ৯২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যার মধ্যে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৮৯ হাজার ৫৫৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর সরকারের ঋণ ছিল ১ লাখ ৬২ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। এ হিসাবেই মে শেষে অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ২২ শতাংশ। সরকারি ঋণের ২১ দশমিক ৫১ শতাংশ; আর বেসরকারি খাতে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ।