করোনায় কাগজের টাকার ব্যবহার কমছে সারা বিশ্বে

বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইনে বিল পরিশোধ

করোনা মহামারীতে সারা বিশ্ব স্থব্ধ। থমকে আছে জীবন ও জীবিকার চাকা। অর্থনীতির গতি খুবই শ্লথ। দিনের প্রায় অধিকাংশ সময়ই ঘরবন্দী হয়ে সময় কাটাচ্ছে মানুষ। এই পরিস্থিতিতে অনলাইনে লেনদেন বেড়ে গেছে। অর্থ স্থানান্তর থেকে শুরু করে মুদি পণ্য কেনা কিংবা ইউটিলিটি বিল পরিশোধসহ সব ক্ষেত্রেই কার্ড কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে কমে যাচ্ছে নগদ অর্থ লেনদেনের পরিমাণ। আর ক্যাশলেস বা নগদ অর্থবিহীন অর্থনীতির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে কানাডা। এর পরই রয়েছে হংকং, সিঙ্গাপুর ও নিউজিল্যান্ডের নাম।

ব্রিটিশ ওয়েবসাইট মানি ডটকম ডট ইউকের ‘ক্যাশলেস কান্ট্রিস’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। মানি ডটকম ডট ইউকের সিনিয়র ব্যক্তিগত অর্থ বিশেষজ্ঞ জেমস অ্যান্ড্রুস বলেন, ‘এমনকি কভিড-১৯ মহামারীর আগেও আমরা কাগজের অর্থ থেকে ইলেকট্রনিক পেমেন্টের দিকে স্থানান্তরের বৈশ্বিক পরিবর্তন দেখছিলাম। তবে মহামারী নিঃসন্দেহে এ পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছে। গত ১২ মাসে আমরা দেখেছি, ৪০টিরও বেশি দেশ স্পর্শবিহীন লেনদেনের সীমা বাড়িয়েছে।’

মানি ডটকমের প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড সরবরাহকারী এবং ই-ওয়ালেট অপারেটরদের বিভিন্ন দেশে স্পর্শবিহীন লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। নগদ অর্থবিহীন অর্থনীতির তালিকা তৈরির মানদ-ে ১৫ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার সঙ্গে ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ডের হার, প্রতি এক লাখ জনসংখ্যায় এটিএমের সংখ্যা, স্পর্শবিহীন লেনদেনের সীমা এবং একটি দেশে বড় ই-ওয়ালেট অপারেটরদের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্যাংকনোট ও প্লাস্টিকের মাধ্যমে কভিড-১৯ এর বিস্তার নিয়ে সচেতনতার কারণে মহামারীর শুরু থেকেই ডিজিটাল পেমেন্টের হার বাড়তে থাকে। সংক্রমণ এড়াতে ডেবিট, ক্রেডিট কিংবা স্মার্টকার্ডের মতো স্পর্শবিহীন লেনদেনগুলোকে দ্রুত গ্রহণে উৎসাহিত হয়েছে মানুষ।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, কানাডার জনসংখ্যার প্রায় ৮৩ শতাংশ (১৫ বছরের বেশি বয়সী) একটি ক্রেডিট কার্ডের মালিক। এ দেশেই স্পর্শবিহীন লেনদেনের সর্বোচ্চ সীমা বিদ্যমান। কানাডীয়রা একবারে ২০২ ডলার পর্যন্ত স্পর্শবিহীন লেনদেন করতে পারেন। এর পরই রয়েছে হংকং। দেশটিতে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৮৩ শতাংশের একটি ডেবিট কার্ড রয়েছে। ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের পাশাপাশি দেশটির নাগরিকরা লেনদেনের ক্ষেত্রে অ্যাপল পে, গুগল পে, স্যামসাং পে ও আলি পেও ব্যবহার করছেন। তৃতীয় স্থানে থাকা সিঙ্গাপুরের প্রায় ৯২ শতাংশ লোকের ডেবিট কার্ড রয়েছে এবং তারা চারটি বড় ই-ওয়ালেট ব্যবহার করেন। দেশটিতে স্পর্শবিহীন লেনদেনের সীমা ১৪৮ ডলার ৯০ সেন্ট।

মানি ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চতুর্থ স্থানে থাকা নিউজিল্যান্ডে স্পর্শবিহীন লেনদেনের সীমা গত বছর ১৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৪১ ডলার ৭০ সেন্ট করা হয়েছে। নগদ অর্থবিহীন অর্থনীতির তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে জাপান। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হ্রাস করতে দেশটি স্পর্শবিহীন লেনদেনের সীমা বাড়িয়ে দিয়েছিল। এটি বর্তমানে ১৮০ ডলার ৫০ সেন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড শীর্ষ ১০টি নগদ অর্থবিহীন অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে। অস্ট্রেলীয়রাও চারটি বড় ই-ওয়ালেটে অপারেটর ব্যবহার করতে পারেন এবং ৯৮ শতাংশ নরওয়েজিয়ান একটি ডেবিট কার্ডের মালিক। নর্জেস ব্যাংকের অনুমান, নরওয়েতে মোট লেনদেনের মাত্র ৩-৪ শতাংশ ব্যাংকনোট ও কয়েন ব্যবহার করে পরিচালিত হয়।

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম নগদ অর্থবিহীন দেশ হতে যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির ৮৩ শতাংশ জনগণ একটি ডেবিট কার্ডের মালিক। এছাড়া দুই-তৃতীয়াংশ সুইস জনগোষ্ঠী ক্রেডিট কার্ডের মালিক এবং ফিনল্যান্ডের ৯৮ শতাংশ লোকের ডেবিট কার্ড এবং ৬৩ শতাংশের ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। তালিকায় ১১তম স্থানে থাকা যুক্তরাজ্যের প্রতি ১০ জনের নয়জনের হাতে ডেবিট কার্ড ও দুই-তৃতীয়াংশের হাতে ক্রেডিট কার্ড রয়েছে।

শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১ , ২৬ আষাঢ় ১৪২৮ ২৮ জিলক্বদ ১৪৪২

করোনায় কাগজের টাকার ব্যবহার কমছে সারা বিশ্বে

বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইনে বিল পরিশোধ

সংবাদ ডেস্ক

image

করোনা মহামারীতে সারা বিশ্ব স্থব্ধ। থমকে আছে জীবন ও জীবিকার চাকা। অর্থনীতির গতি খুবই শ্লথ। দিনের প্রায় অধিকাংশ সময়ই ঘরবন্দী হয়ে সময় কাটাচ্ছে মানুষ। এই পরিস্থিতিতে অনলাইনে লেনদেন বেড়ে গেছে। অর্থ স্থানান্তর থেকে শুরু করে মুদি পণ্য কেনা কিংবা ইউটিলিটি বিল পরিশোধসহ সব ক্ষেত্রেই কার্ড কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে কমে যাচ্ছে নগদ অর্থ লেনদেনের পরিমাণ। আর ক্যাশলেস বা নগদ অর্থবিহীন অর্থনীতির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে কানাডা। এর পরই রয়েছে হংকং, সিঙ্গাপুর ও নিউজিল্যান্ডের নাম।

ব্রিটিশ ওয়েবসাইট মানি ডটকম ডট ইউকের ‘ক্যাশলেস কান্ট্রিস’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। মানি ডটকম ডট ইউকের সিনিয়র ব্যক্তিগত অর্থ বিশেষজ্ঞ জেমস অ্যান্ড্রুস বলেন, ‘এমনকি কভিড-১৯ মহামারীর আগেও আমরা কাগজের অর্থ থেকে ইলেকট্রনিক পেমেন্টের দিকে স্থানান্তরের বৈশ্বিক পরিবর্তন দেখছিলাম। তবে মহামারী নিঃসন্দেহে এ পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছে। গত ১২ মাসে আমরা দেখেছি, ৪০টিরও বেশি দেশ স্পর্শবিহীন লেনদেনের সীমা বাড়িয়েছে।’

মানি ডটকমের প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড সরবরাহকারী এবং ই-ওয়ালেট অপারেটরদের বিভিন্ন দেশে স্পর্শবিহীন লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। নগদ অর্থবিহীন অর্থনীতির তালিকা তৈরির মানদ-ে ১৫ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার সঙ্গে ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ডের হার, প্রতি এক লাখ জনসংখ্যায় এটিএমের সংখ্যা, স্পর্শবিহীন লেনদেনের সীমা এবং একটি দেশে বড় ই-ওয়ালেট অপারেটরদের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্যাংকনোট ও প্লাস্টিকের মাধ্যমে কভিড-১৯ এর বিস্তার নিয়ে সচেতনতার কারণে মহামারীর শুরু থেকেই ডিজিটাল পেমেন্টের হার বাড়তে থাকে। সংক্রমণ এড়াতে ডেবিট, ক্রেডিট কিংবা স্মার্টকার্ডের মতো স্পর্শবিহীন লেনদেনগুলোকে দ্রুত গ্রহণে উৎসাহিত হয়েছে মানুষ।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, কানাডার জনসংখ্যার প্রায় ৮৩ শতাংশ (১৫ বছরের বেশি বয়সী) একটি ক্রেডিট কার্ডের মালিক। এ দেশেই স্পর্শবিহীন লেনদেনের সর্বোচ্চ সীমা বিদ্যমান। কানাডীয়রা একবারে ২০২ ডলার পর্যন্ত স্পর্শবিহীন লেনদেন করতে পারেন। এর পরই রয়েছে হংকং। দেশটিতে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৮৩ শতাংশের একটি ডেবিট কার্ড রয়েছে। ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের পাশাপাশি দেশটির নাগরিকরা লেনদেনের ক্ষেত্রে অ্যাপল পে, গুগল পে, স্যামসাং পে ও আলি পেও ব্যবহার করছেন। তৃতীয় স্থানে থাকা সিঙ্গাপুরের প্রায় ৯২ শতাংশ লোকের ডেবিট কার্ড রয়েছে এবং তারা চারটি বড় ই-ওয়ালেট ব্যবহার করেন। দেশটিতে স্পর্শবিহীন লেনদেনের সীমা ১৪৮ ডলার ৯০ সেন্ট।

মানি ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চতুর্থ স্থানে থাকা নিউজিল্যান্ডে স্পর্শবিহীন লেনদেনের সীমা গত বছর ১৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৪১ ডলার ৭০ সেন্ট করা হয়েছে। নগদ অর্থবিহীন অর্থনীতির তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে জাপান। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হ্রাস করতে দেশটি স্পর্শবিহীন লেনদেনের সীমা বাড়িয়ে দিয়েছিল। এটি বর্তমানে ১৮০ ডলার ৫০ সেন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড শীর্ষ ১০টি নগদ অর্থবিহীন অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে। অস্ট্রেলীয়রাও চারটি বড় ই-ওয়ালেটে অপারেটর ব্যবহার করতে পারেন এবং ৯৮ শতাংশ নরওয়েজিয়ান একটি ডেবিট কার্ডের মালিক। নর্জেস ব্যাংকের অনুমান, নরওয়েতে মোট লেনদেনের মাত্র ৩-৪ শতাংশ ব্যাংকনোট ও কয়েন ব্যবহার করে পরিচালিত হয়।

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম নগদ অর্থবিহীন দেশ হতে যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির ৮৩ শতাংশ জনগণ একটি ডেবিট কার্ডের মালিক। এছাড়া দুই-তৃতীয়াংশ সুইস জনগোষ্ঠী ক্রেডিট কার্ডের মালিক এবং ফিনল্যান্ডের ৯৮ শতাংশ লোকের ডেবিট কার্ড এবং ৬৩ শতাংশের ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। তালিকায় ১১তম স্থানে থাকা যুক্তরাজ্যের প্রতি ১০ জনের নয়জনের হাতে ডেবিট কার্ড ও দুই-তৃতীয়াংশের হাতে ক্রেডিট কার্ড রয়েছে।