কঠোর লকডাউনে মানবেতর জীবনে নিম্ন আয়ের মানুষ

=করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধকল্পে সরকার ঘোষিত সারা দেশে লকডাউনে নিম্ন আয়ের মানুষের চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। একদিকে যেমন বর্ষাকাল- দিনভর বৃষ্টিতে কোন কাজ করা যাচ্ছে না, অন্যদিকে তেমন করোনা ভাইরাসের লকডাউনের কারণে ঘরবন্দি হয়ে আছে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। দিনে আনে দিন খায় তথা হতদরিদ্র পরিবারগুলো বের হতে পারছে না অর্থ বা খাদ্যের খোজে। যেখানে নুন আনতে পানতা ফুরায় সেখানে নেই কোনো কর্ম। লকডাউনে পাচ্ছে না কোন কাজ।

এছাড়া সেলুনের নাপিত, মুচি, কাঠ মিস্ত্রি, দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, হকার, ফেরিওয়ালা, ক্ষুদ্র যানবাহন মেকার, চায়ের দোকন, পান দোকান ইত্যাদি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পড়েছে বিপাকে। ফলে সংসারের খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

ঠিক তেমনি বিপাকে পড়েছে পশ্চিম সুবিদখালী গ্রামের রিকশাচালক মো. বেল্লাল হোসেন ও ভ্যানচালক মো. বাদল। যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করে তাদের সংসার চলে। যাদের একদিন কাজ না করলে পরিবারে সদস্যদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। তবে পেটেমানে না বারণ। তাই লকডাউনের নবম দিনেও তারা বাধ্য হয়ে গাড়ি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। লকডাউনে কেন বের হয়েছেন তা জানতে চাইলে তারা জানায়, গত লকডাউনেও তাদের খুব কষ্ট করতে হয়েছে। তাই এবার লকডাউন উপেক্ষা করেই পেটের দায়ে বের হয়েছেন। কিন্তু লকডাউনে সব কিছু বন্ধ থাকায় অর্থাৎ মানুষের চলাফেরা না থাকায় দিনের ৫ ঘণ্টা শেষে মাত্র ৫০ টাকা রােজগার করেছেন।

তারা আরো বলেন, ‘হয় সরকার আমাদের খাবার দেউক, না হয় লকডাউন তুলে নেউক। আর যে পারছিনা। চোখের সামনে স্ত্রী ও সন্তানদের না খেয়ে মরতে দেখতে পারবো না।’

আরেক নির্মাণ শ্রমিক মোঃ নজরুল জানান, তার পরিবারে ৪ জন সদস্য রয়েছে, এক সপ্তাহ ধরে কোন কাম-কাজ নাই। ঘরে যে চাউল ও বাজার সদায় ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। এখন শুনি লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বারাইছে, এতে তো আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

কাঠমিস্ত্রি করিম হাং ও নাসির হোসেন জানান, তারা হেলপারের কাজ করে সংসারের খাবার জোগাড় করত, এখন অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছে। কি খাবে? কি করবে তারা কিছু ভেবে পাচ্ছেনা।

এরকম বিভিন্ন নিম্ন আয়ের মানুষদের একই কথা বলতে দেখা গেছে। এ ছাড়া গতবছর করোনা শুরুর সময় মির্জাগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন ও শ্রেণী পেশার লোকজন নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে সহায়তার হাত বাড়ালেও এবারের চিত্র ভিন্ন। দিন এনে দিন খাওয়া এমন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তেমন কেউ নেই। সরকারিভাবে যে সব বরাদ্দ আসছে, সেগুলো যে কজন পাচ্ছেন তাদের কয়েকটা দিন কোনমতে যাচ্ছে। এরপরই আবারও দুর্দশা। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ব্যাপারে তারা বর্তমান সরকারের দলীয় নেতাকর্মীসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে তাদের ব্যাপারে সুদৃষ্টি কামনা করেন।

শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১ , ২৬ আষাঢ় ১৪২৮ ২৮ জিলক্বদ ১৪৪২

কঠোর লকডাউনে মানবেতর জীবনে নিম্ন আয়ের মানুষ

প্রতিনিধি, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী)

=করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধকল্পে সরকার ঘোষিত সারা দেশে লকডাউনে নিম্ন আয়ের মানুষের চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। একদিকে যেমন বর্ষাকাল- দিনভর বৃষ্টিতে কোন কাজ করা যাচ্ছে না, অন্যদিকে তেমন করোনা ভাইরাসের লকডাউনের কারণে ঘরবন্দি হয়ে আছে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। দিনে আনে দিন খায় তথা হতদরিদ্র পরিবারগুলো বের হতে পারছে না অর্থ বা খাদ্যের খোজে। যেখানে নুন আনতে পানতা ফুরায় সেখানে নেই কোনো কর্ম। লকডাউনে পাচ্ছে না কোন কাজ।

এছাড়া সেলুনের নাপিত, মুচি, কাঠ মিস্ত্রি, দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, হকার, ফেরিওয়ালা, ক্ষুদ্র যানবাহন মেকার, চায়ের দোকন, পান দোকান ইত্যাদি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পড়েছে বিপাকে। ফলে সংসারের খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

ঠিক তেমনি বিপাকে পড়েছে পশ্চিম সুবিদখালী গ্রামের রিকশাচালক মো. বেল্লাল হোসেন ও ভ্যানচালক মো. বাদল। যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করে তাদের সংসার চলে। যাদের একদিন কাজ না করলে পরিবারে সদস্যদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। তবে পেটেমানে না বারণ। তাই লকডাউনের নবম দিনেও তারা বাধ্য হয়ে গাড়ি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। লকডাউনে কেন বের হয়েছেন তা জানতে চাইলে তারা জানায়, গত লকডাউনেও তাদের খুব কষ্ট করতে হয়েছে। তাই এবার লকডাউন উপেক্ষা করেই পেটের দায়ে বের হয়েছেন। কিন্তু লকডাউনে সব কিছু বন্ধ থাকায় অর্থাৎ মানুষের চলাফেরা না থাকায় দিনের ৫ ঘণ্টা শেষে মাত্র ৫০ টাকা রােজগার করেছেন।

তারা আরো বলেন, ‘হয় সরকার আমাদের খাবার দেউক, না হয় লকডাউন তুলে নেউক। আর যে পারছিনা। চোখের সামনে স্ত্রী ও সন্তানদের না খেয়ে মরতে দেখতে পারবো না।’

আরেক নির্মাণ শ্রমিক মোঃ নজরুল জানান, তার পরিবারে ৪ জন সদস্য রয়েছে, এক সপ্তাহ ধরে কোন কাম-কাজ নাই। ঘরে যে চাউল ও বাজার সদায় ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। এখন শুনি লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বারাইছে, এতে তো আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

কাঠমিস্ত্রি করিম হাং ও নাসির হোসেন জানান, তারা হেলপারের কাজ করে সংসারের খাবার জোগাড় করত, এখন অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছে। কি খাবে? কি করবে তারা কিছু ভেবে পাচ্ছেনা।

এরকম বিভিন্ন নিম্ন আয়ের মানুষদের একই কথা বলতে দেখা গেছে। এ ছাড়া গতবছর করোনা শুরুর সময় মির্জাগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন ও শ্রেণী পেশার লোকজন নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে সহায়তার হাত বাড়ালেও এবারের চিত্র ভিন্ন। দিন এনে দিন খাওয়া এমন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তেমন কেউ নেই। সরকারিভাবে যে সব বরাদ্দ আসছে, সেগুলো যে কজন পাচ্ছেন তাদের কয়েকটা দিন কোনমতে যাচ্ছে। এরপরই আবারও দুর্দশা। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ব্যাপারে তারা বর্তমান সরকারের দলীয় নেতাকর্মীসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে তাদের ব্যাপারে সুদৃষ্টি কামনা করেন।