বিয়ানীবাজারে কোরবানির পশুর হাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সাধারণত এই সময়ে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় পশুর হাটগুলো জমজমাট হয়ে উঠে। উপজেলার অন্তত ১০টি বড় পশুর হাটে ক্রয়-বিক্রয়ের নানা সুবিধাদি দিয়ে ক্রেতা টানার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারী এবার সবকিছু স্তব্ধ করে দিয়েছে। আদৌ কি পশুর বাজার শুরু হবে, নাকি ভিন্ন পন্থায় সরকার পশু ক্রয়-বিক্রয়ের ঘোষণা দিবেÑ তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় খামারিরা।

খামারিদের দাবি, করোনার কারণে উপজেলার বৃহৎ পশুরহাট পিএইচজি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, বারইগ্রাম বাজার, বৈরাগীবাজার, দুবাগবাজার, দাসউরা আলিম মাদ্রাসা মাঠ, আছিরগঞ্জ বাজার, চারখাই বাজার, রামদা বাজারসহ অন্যান্য ছোট পশুর হাটগুলো বসতে দেয়া হয়নি। প্রশাসন থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় তারা পালিত গবাদিপশু হাটে তুলতে পারছেন না। ঈদে পশুগুলো বিক্রি করতে না পারলে ব্যয় বাড়তেই থাকবে। এতে চরম লোকসানের মুখে পড়বেন তারা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার ১৮৩টি হৃষ্টপুষ্টকরণ খামারসহ প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ জন খামারি গবাদিপশু লালন-পালন করেছেন। বিক্রির তালিকায় রয়েছে ষাঁড়, বলদ, গাভী, বকনা, মহিষ, ছাগল, ভেড়াসহ অন্যান্য প্রাণী। এদের সংখ্যা ১০ সহস্রাধিকেরও বেশি। এছাড়া কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তালিকার বাইরেও ছোট ছোট খামার ও বাড়িতে গবাদিপশু পালন করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে পালিত এসব গবাদিপশু থেকে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করে থাকেন খামারিরা। লাভজনক হওয়ায় অনেক বেকার যুবক আত্মনিয়োগ করেছেন এ পেশায়। সফলতাও পেয়েছেন অনেকে। কিন্তু করোনার কারণে হাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশ দুশ্চিন্তায় ফেলেছে তাদের। বিয়ানীবাজারের সবচেয়ে নিয়মিত ও বড় পশুর হাট হচ্ছে বারইগ্রাম বাজার। সপ্তাহে দুইদিন শত শত পশু এ হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন খামারিরা। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী হাট বসে। কিন্তু মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে এর মধ্যে এসব হাট বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। বিয়ানীবাজার পৌর এলাকার কসবা গ্রামের খামারি রাসেল আহমদ জানান, তিনি কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তার খামারে বেশকিছু গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রেখেছেন। কিন্তু হাট বন্ধ থাকায় খামারে রেখেই যতœ করতে হচ্ছে। আসন্ন ঈদে বিক্রি করতে না পারলে ব্যয় বাড়তেই থাকবে। এতে লোকসানের মুখে পড়বেন তিনি।

বারইগ্রাম বাজারের খামারি আফতার আলী জানান, তার খামারে দেশি প্রজাতির শতাধিক গরু রয়েছে। মূল্য হবে ৬০ হতে ৯০ হাজার টাকার ভেতরেই। হাট বন্ধ থাকায় গরুগুলো বাজারে উঠাতে পারছেন না। তবে চেষ্টা চালাচ্ছেন অন্যভাবে বিক্রি করতে পারেন কিনা। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এসব গরু লালন-পালন করতে অনেক খরচ হয়েছে। ন্যায্য দামে বিক্রি করতে না পারলে লোকসানে পড়বেন তিনি।

একই কথা জানান আবুল কালাম নামে আরেক খামারি। তিনি জানান, ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ করছে না জেনে আমরা খামারিরা খুশি হয়েছিলাম। তবে চলমান লকডাউনের কারণে আমাদের খামারে আগে থেকে লালন-পালন করা গরুগুলো হাটে নেয়া যাচ্ছে না। এখন এসব পশু এবার কোরবানির ঈদে বিক্রি করতে পারব কিনা- এ নিয়ে শঙ্কা কাটছে না।

বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. একেএম মোক্তাদির বিল্লা বলেন, বিয়ানীবাজার উপজেলায় গবাদিপশুর সংকট নেই। তবে করোনায় হয়তো কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন খামারিরা। এসব পশু বেচাকেনার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে খামারিদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে সবকিছু। তিনি বলেন, স্থানীয় খামারিদের পশু বিক্রিতে সহায়তা করতে আমরা অনলাইনে প্রচারণা চালাচ্ছি। এতে কিছুটা হলেও খামারিরা উপকৃত হবেন বলে আমরা মনে করছি।

বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) মো. আশিক নূর হাটবাজার বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী থাকায় সরকারের আদেশে হাট-বাজার বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি ভালো হলে খুলে দেয়া হতে পারে।

শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১ , ২৬ আষাঢ় ১৪২৮ ২৮ জিলক্বদ ১৪৪২

বিয়ানীবাজারে কোরবানির পশুর হাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা

প্রতিনিধি, বিয়ানীবাজার (সিলেট)

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সাধারণত এই সময়ে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় পশুর হাটগুলো জমজমাট হয়ে উঠে। উপজেলার অন্তত ১০টি বড় পশুর হাটে ক্রয়-বিক্রয়ের নানা সুবিধাদি দিয়ে ক্রেতা টানার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারী এবার সবকিছু স্তব্ধ করে দিয়েছে। আদৌ কি পশুর বাজার শুরু হবে, নাকি ভিন্ন পন্থায় সরকার পশু ক্রয়-বিক্রয়ের ঘোষণা দিবেÑ তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় খামারিরা।

খামারিদের দাবি, করোনার কারণে উপজেলার বৃহৎ পশুরহাট পিএইচজি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, বারইগ্রাম বাজার, বৈরাগীবাজার, দুবাগবাজার, দাসউরা আলিম মাদ্রাসা মাঠ, আছিরগঞ্জ বাজার, চারখাই বাজার, রামদা বাজারসহ অন্যান্য ছোট পশুর হাটগুলো বসতে দেয়া হয়নি। প্রশাসন থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় তারা পালিত গবাদিপশু হাটে তুলতে পারছেন না। ঈদে পশুগুলো বিক্রি করতে না পারলে ব্যয় বাড়তেই থাকবে। এতে চরম লোকসানের মুখে পড়বেন তারা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার ১৮৩টি হৃষ্টপুষ্টকরণ খামারসহ প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ জন খামারি গবাদিপশু লালন-পালন করেছেন। বিক্রির তালিকায় রয়েছে ষাঁড়, বলদ, গাভী, বকনা, মহিষ, ছাগল, ভেড়াসহ অন্যান্য প্রাণী। এদের সংখ্যা ১০ সহস্রাধিকেরও বেশি। এছাড়া কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তালিকার বাইরেও ছোট ছোট খামার ও বাড়িতে গবাদিপশু পালন করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে পালিত এসব গবাদিপশু থেকে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করে থাকেন খামারিরা। লাভজনক হওয়ায় অনেক বেকার যুবক আত্মনিয়োগ করেছেন এ পেশায়। সফলতাও পেয়েছেন অনেকে। কিন্তু করোনার কারণে হাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশ দুশ্চিন্তায় ফেলেছে তাদের। বিয়ানীবাজারের সবচেয়ে নিয়মিত ও বড় পশুর হাট হচ্ছে বারইগ্রাম বাজার। সপ্তাহে দুইদিন শত শত পশু এ হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন খামারিরা। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী হাট বসে। কিন্তু মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে এর মধ্যে এসব হাট বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। বিয়ানীবাজার পৌর এলাকার কসবা গ্রামের খামারি রাসেল আহমদ জানান, তিনি কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তার খামারে বেশকিছু গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রেখেছেন। কিন্তু হাট বন্ধ থাকায় খামারে রেখেই যতœ করতে হচ্ছে। আসন্ন ঈদে বিক্রি করতে না পারলে ব্যয় বাড়তেই থাকবে। এতে লোকসানের মুখে পড়বেন তিনি।

বারইগ্রাম বাজারের খামারি আফতার আলী জানান, তার খামারে দেশি প্রজাতির শতাধিক গরু রয়েছে। মূল্য হবে ৬০ হতে ৯০ হাজার টাকার ভেতরেই। হাট বন্ধ থাকায় গরুগুলো বাজারে উঠাতে পারছেন না। তবে চেষ্টা চালাচ্ছেন অন্যভাবে বিক্রি করতে পারেন কিনা। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এসব গরু লালন-পালন করতে অনেক খরচ হয়েছে। ন্যায্য দামে বিক্রি করতে না পারলে লোকসানে পড়বেন তিনি।

একই কথা জানান আবুল কালাম নামে আরেক খামারি। তিনি জানান, ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ করছে না জেনে আমরা খামারিরা খুশি হয়েছিলাম। তবে চলমান লকডাউনের কারণে আমাদের খামারে আগে থেকে লালন-পালন করা গরুগুলো হাটে নেয়া যাচ্ছে না। এখন এসব পশু এবার কোরবানির ঈদে বিক্রি করতে পারব কিনা- এ নিয়ে শঙ্কা কাটছে না।

বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. একেএম মোক্তাদির বিল্লা বলেন, বিয়ানীবাজার উপজেলায় গবাদিপশুর সংকট নেই। তবে করোনায় হয়তো কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন খামারিরা। এসব পশু বেচাকেনার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে খামারিদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে সবকিছু। তিনি বলেন, স্থানীয় খামারিদের পশু বিক্রিতে সহায়তা করতে আমরা অনলাইনে প্রচারণা চালাচ্ছি। এতে কিছুটা হলেও খামারিরা উপকৃত হবেন বলে আমরা মনে করছি।

বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) মো. আশিক নূর হাটবাজার বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী থাকায় সরকারের আদেশে হাট-বাজার বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি ভালো হলে খুলে দেয়া হতে পারে।