কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভিজিডির চাল বিতরণে অনিয়ম

সাংবাদিক দেখে সটকে পড়লো গ্রাম পুলিশ

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেণি ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের মাঝে চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে গত দুই মাসের পাওনা ৬০ কেজির জায়গায় ৫০ থেকে ৫২ কেজি করে চাল দিলে প্রতিবাদ করে সুবিধাভোগীরা। এ সময় তাদের তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলে ইউনিয়ন পরিষদেই ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করে কার্ডধারীরা। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা সেখানে এলে বিতরণ বন্ধ রেখে পরিষদে তালা লাগিয়ে সটকে পরে গ্রাম পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধামশ্রেণি ইউনিয়নে ২১০ জন দুস্থ নারীকে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। এর আগে নানা অজুহাতে সুবিধাভোগীদের ৩ থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত চাল কম দেয়া হতো। এবার সেই জায়গায় ৮ থেকে ১০ কেজি করে কম চাল দেয়ায় প্রতিবাদ করে কার্ডধারীরা। এ নিয়ে বসচা হয় বিতরণের দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশের সঙ্গে। পরে প্রতিবাদকারীরা সেখানেই বিক্ষোভ করতে থাকে।

কার্ডধারী সুফিয়া, মরিয়ম, জোহরা ও তরিকুল জানান, গতকাল অসৎ উদ্দেশে চেয়ারম্যান ও ট্যাগ অফিসার যোগসাজশ করে মে ও জুন মাসের চাল তাদের অনুপস্থিতিতে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে বিতরণ করে। আমাদের ৬০ কেজির জায়গায় ৮ থেকে ১০ কেজি করে চাল কম দেয়া হচ্ছিল। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে আগামীতে তাদের চাল দেয়া বন্ধ করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।

এছাড়া কার্ডধারী আফরোজা জানান, আমি এক মাসেরও চাল পাইনি। আজ স্বাক্ষর নিয়ে রেখে দিয়েছে। অন্য কার্ডধারী মোর্শেদা, আমিনা, শিরিনা, রুবিনা, হাছিনা ও মনোয়ারা জানান, দফাদার ছকিয়তসহ অন্য চৌকিদাররা আমাদের স্বাক্ষর নিয়ে কার্ড জমা করেছে। কিন্তু তারা আমাদের চাল না দিয়ে আপনাদের দেখে পালিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার ও বিআরডিবির উপ-প্রকল্প পরিচালক রিয়াজুল হক জানান, গতকাল চাল বিতরণ করা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। ৮ জুলাই আমাকে জানানো হয় চাল বিতরণ করা হবে। কিন্তু কবে বিতরণ করা হবে তা জানানো হয়নি। এর আগেও আমাকে না জানিয়ে বিতরণ করায় সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করেছি।

বিষয়টি নিয়ে ধামশ্রেণি ইউপি চেয়ারম্যান রাখিবুল হাসান সরদারের কাছে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

উলিপুর উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শাহানা আক্তার জানান, ভিজিডি চাল বিতরণে আমাদের চিঠি দিয়ে জানাতে হবে। বিতরণকালে অবশ্যই ট্যাগ অফিসারকে উপস্থিত থাকতে হবে। কিন্তু তারা কিছুই মানেননি। গতকাল চাল বিতরণ ও ওজনে কম দেয়ার অভিযোগে বিতরণ বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি জানান, ভিজিডির চাল ওজনে কম দেয়ার খবর পেয়ে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছি। চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরবর্তীতে ইউপি চেয়ারম্যান ও ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে বিতরণ করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১ , ২৬ আষাঢ় ১৪২৮ ২৮ জিলক্বদ ১৪৪২

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভিজিডির চাল বিতরণে অনিয়ম

সাংবাদিক দেখে সটকে পড়লো গ্রাম পুলিশ

image

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেণি ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের মাঝে চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে গত দুই মাসের পাওনা ৬০ কেজির জায়গায় ৫০ থেকে ৫২ কেজি করে চাল দিলে প্রতিবাদ করে সুবিধাভোগীরা। এ সময় তাদের তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলে ইউনিয়ন পরিষদেই ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করে কার্ডধারীরা। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা সেখানে এলে বিতরণ বন্ধ রেখে পরিষদে তালা লাগিয়ে সটকে পরে গ্রাম পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধামশ্রেণি ইউনিয়নে ২১০ জন দুস্থ নারীকে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। এর আগে নানা অজুহাতে সুবিধাভোগীদের ৩ থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত চাল কম দেয়া হতো। এবার সেই জায়গায় ৮ থেকে ১০ কেজি করে কম চাল দেয়ায় প্রতিবাদ করে কার্ডধারীরা। এ নিয়ে বসচা হয় বিতরণের দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশের সঙ্গে। পরে প্রতিবাদকারীরা সেখানেই বিক্ষোভ করতে থাকে।

কার্ডধারী সুফিয়া, মরিয়ম, জোহরা ও তরিকুল জানান, গতকাল অসৎ উদ্দেশে চেয়ারম্যান ও ট্যাগ অফিসার যোগসাজশ করে মে ও জুন মাসের চাল তাদের অনুপস্থিতিতে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে বিতরণ করে। আমাদের ৬০ কেজির জায়গায় ৮ থেকে ১০ কেজি করে চাল কম দেয়া হচ্ছিল। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে আগামীতে তাদের চাল দেয়া বন্ধ করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।

এছাড়া কার্ডধারী আফরোজা জানান, আমি এক মাসেরও চাল পাইনি। আজ স্বাক্ষর নিয়ে রেখে দিয়েছে। অন্য কার্ডধারী মোর্শেদা, আমিনা, শিরিনা, রুবিনা, হাছিনা ও মনোয়ারা জানান, দফাদার ছকিয়তসহ অন্য চৌকিদাররা আমাদের স্বাক্ষর নিয়ে কার্ড জমা করেছে। কিন্তু তারা আমাদের চাল না দিয়ে আপনাদের দেখে পালিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার ও বিআরডিবির উপ-প্রকল্প পরিচালক রিয়াজুল হক জানান, গতকাল চাল বিতরণ করা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। ৮ জুলাই আমাকে জানানো হয় চাল বিতরণ করা হবে। কিন্তু কবে বিতরণ করা হবে তা জানানো হয়নি। এর আগেও আমাকে না জানিয়ে বিতরণ করায় সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করেছি।

বিষয়টি নিয়ে ধামশ্রেণি ইউপি চেয়ারম্যান রাখিবুল হাসান সরদারের কাছে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

উলিপুর উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শাহানা আক্তার জানান, ভিজিডি চাল বিতরণে আমাদের চিঠি দিয়ে জানাতে হবে। বিতরণকালে অবশ্যই ট্যাগ অফিসারকে উপস্থিত থাকতে হবে। কিন্তু তারা কিছুই মানেননি। গতকাল চাল বিতরণ ও ওজনে কম দেয়ার অভিযোগে বিতরণ বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি জানান, ভিজিডির চাল ওজনে কম দেয়ার খবর পেয়ে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছি। চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরবর্তীতে ইউপি চেয়ারম্যান ও ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে বিতরণ করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।