চেয়ারম্যান হাসেম তার ছেলেসহ ৮ জন গ্রেপ্তার, রিমাণ্ডে

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফুড কারখানায় আগুনে ৫২ জনের নিহতের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা হত্যা মামলায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ হাশেম, তার চার ছেলেসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশদিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গতকাল নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের ভার্চুয়াল আদালতে পুলিশ রিমান্ড আবেদন করলে শুনানি শেষে চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে জানা যায়, শুক্রবার রাত ও শনিবার দুপুরে বিভিন্ন স্থান থেকে সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকায় সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাশেম ফুডস লিমিটেডের কারখানার ছয় তলার একটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারান কারখানার ৫২ জন শ্রমিক-কর্মচারী।

শুক্রবার রাতে এই ঘটনায় রূপগঞ্জের ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। রূপগঞ্জ থানায় দায়ের করা ওই মামলায় আসামি করা হয় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ হাশেম (৭০), তার চার ছেলে হাসিব বিন হাশেম (৩৯), তারেক ইব্রাহিম (৩৫), তাওসিব ইব্রাহিম (৩৩) ও তানজিম ইব্রাহিম (২১), সজীব গ্রুপের সিইও শাহান শাহ্ আজাদ (৪৩), হাশেম ফুডস লিমিটেডের ডিজিএম মামুনুর রশিদ (৫৪) এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কাম এডমিন মো. সালাহউদ্দিনকে (৩০)।

ফায়ার সার্ভিস ও বেঁচে ফেরা শ্রমিকদের দেয়া তথ্যমতে, ভবনের নিচতলায় প্রথমে আগুন লাগে। নিচতলায় ছিল ফয়েল প্যাকেটসহ বিভিন্ন কার্টন। এসব দাহ্য পদার্থ হওয়ার কারণে মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভবনের অন্য তলায়। ওই কারখানায় সিজান জুস, নসিলা, ট্যাং, কুলসন ম্যাকারনি, বোর্নভিটা, লাচ্ছা সেমাই ইত্যাদি জনপ্রিয় সব খাদ্যপণ্য তৈরি হতো। অগ্নিকাণ্ডের পর ঐ কারখানায় ত্রুটিপূর্ণ অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা, জরুরি নির্গমন পথে তালা লাগানো ও শিশুশ্রমের মতো বিষয়গুলো দৃশ্যমান হয়।

শ্রমিকদের অভিযোগ, আগুন লাগার কিছুক্ষণ পরই ভবনের দুটি দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। এর আগেই কিছু শ্রমিক কারখানা থেকে বেরিয়ে যান। আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়লে ভীত-সন্ত্রস্ত শ্রমিকরা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন ।

এই ঘটনায় আহত দুই নারীকে রাতেই পার্শ্ববর্তী ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মারা যান তারা। পরে গুরুতর আহত আরও এক পুরুষ শ্রমিক মারা যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ভবনের চতুর্থ তলা থেকে শুক্রবার দুপুরে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

তবে রূপগঞ্জের ঐ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের দায় নিতে রাজি নয় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাশেম। এখন পর্যন্ত ৫২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাশেমের ভাষ্য ‘জীবনে বড় ভুল করেছি ইন্ডাস্ট্রি করে। ইন্ডাস্ট্রি করলে শ্রমিক থাকবে। শ্রমিক থাকলে কাজ হবে। কাজ হলে আগুন লাগতেই পারে। এর দায় কি আমার?’ শুক্রবার অগ্নিকাণ্ডের পর গণমাধ্যকে তিনি বলেন, ‘আমি তো আর যেয়ে আগুন লাগিয়ে দেইনি। অথবা আমার কোন ম্যানেজার আগুন লাগায়নি। শ্রমিকদের অবহেলার কারণেও আগুন লাগতে পারে।’

তবে আবুল হাশেম এও বলেছেন, ‘যারা মারা গেছেন, তারা তো আমারই ছেলেমেয়ে। আমি খুব ভেঙে পড়েছি।’

‘আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমার ছেলেমেয়েদের পাশে থাকতে। এটা একটা দুর্ঘটনা। ফ্যাক্টরির সব ইউনিট চালু ছিল না। লোকজন কম ছিল। তারপরও যারা ছিল, তারা সবাই চেষ্টা করেছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কিন্তু পারেনি।’ ভবনটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ছিল বলেও দাবি করেছেন তিনি।

রবিবার, ১১ জুলাই ২০২১ , ২৭ আষাঢ় ১৪২৮ ২৯ জিলক্বদ ১৪৪২

হত্যা মামলা

চেয়ারম্যান হাসেম তার ছেলেসহ ৮ জন গ্রেপ্তার, রিমাণ্ডে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফুড কারখানায় আগুনে ৫২ জনের নিহতের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা হত্যা মামলায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ হাশেম, তার চার ছেলেসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশদিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গতকাল নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের ভার্চুয়াল আদালতে পুলিশ রিমান্ড আবেদন করলে শুনানি শেষে চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে জানা যায়, শুক্রবার রাত ও শনিবার দুপুরে বিভিন্ন স্থান থেকে সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকায় সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাশেম ফুডস লিমিটেডের কারখানার ছয় তলার একটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারান কারখানার ৫২ জন শ্রমিক-কর্মচারী।

শুক্রবার রাতে এই ঘটনায় রূপগঞ্জের ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। রূপগঞ্জ থানায় দায়ের করা ওই মামলায় আসামি করা হয় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ হাশেম (৭০), তার চার ছেলে হাসিব বিন হাশেম (৩৯), তারেক ইব্রাহিম (৩৫), তাওসিব ইব্রাহিম (৩৩) ও তানজিম ইব্রাহিম (২১), সজীব গ্রুপের সিইও শাহান শাহ্ আজাদ (৪৩), হাশেম ফুডস লিমিটেডের ডিজিএম মামুনুর রশিদ (৫৪) এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কাম এডমিন মো. সালাহউদ্দিনকে (৩০)।

ফায়ার সার্ভিস ও বেঁচে ফেরা শ্রমিকদের দেয়া তথ্যমতে, ভবনের নিচতলায় প্রথমে আগুন লাগে। নিচতলায় ছিল ফয়েল প্যাকেটসহ বিভিন্ন কার্টন। এসব দাহ্য পদার্থ হওয়ার কারণে মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভবনের অন্য তলায়। ওই কারখানায় সিজান জুস, নসিলা, ট্যাং, কুলসন ম্যাকারনি, বোর্নভিটা, লাচ্ছা সেমাই ইত্যাদি জনপ্রিয় সব খাদ্যপণ্য তৈরি হতো। অগ্নিকাণ্ডের পর ঐ কারখানায় ত্রুটিপূর্ণ অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা, জরুরি নির্গমন পথে তালা লাগানো ও শিশুশ্রমের মতো বিষয়গুলো দৃশ্যমান হয়।

শ্রমিকদের অভিযোগ, আগুন লাগার কিছুক্ষণ পরই ভবনের দুটি দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। এর আগেই কিছু শ্রমিক কারখানা থেকে বেরিয়ে যান। আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়লে ভীত-সন্ত্রস্ত শ্রমিকরা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন ।

এই ঘটনায় আহত দুই নারীকে রাতেই পার্শ্ববর্তী ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মারা যান তারা। পরে গুরুতর আহত আরও এক পুরুষ শ্রমিক মারা যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ভবনের চতুর্থ তলা থেকে শুক্রবার দুপুরে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

তবে রূপগঞ্জের ঐ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের দায় নিতে রাজি নয় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাশেম। এখন পর্যন্ত ৫২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাশেমের ভাষ্য ‘জীবনে বড় ভুল করেছি ইন্ডাস্ট্রি করে। ইন্ডাস্ট্রি করলে শ্রমিক থাকবে। শ্রমিক থাকলে কাজ হবে। কাজ হলে আগুন লাগতেই পারে। এর দায় কি আমার?’ শুক্রবার অগ্নিকাণ্ডের পর গণমাধ্যকে তিনি বলেন, ‘আমি তো আর যেয়ে আগুন লাগিয়ে দেইনি। অথবা আমার কোন ম্যানেজার আগুন লাগায়নি। শ্রমিকদের অবহেলার কারণেও আগুন লাগতে পারে।’

তবে আবুল হাশেম এও বলেছেন, ‘যারা মারা গেছেন, তারা তো আমারই ছেলেমেয়ে। আমি খুব ভেঙে পড়েছি।’

‘আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমার ছেলেমেয়েদের পাশে থাকতে। এটা একটা দুর্ঘটনা। ফ্যাক্টরির সব ইউনিট চালু ছিল না। লোকজন কম ছিল। তারপরও যারা ছিল, তারা সবাই চেষ্টা করেছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কিন্তু পারেনি।’ ভবনটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ছিল বলেও দাবি করেছেন তিনি।