শ্রমিকরা বলছেন, কারখানাটি ছিল আদতে জেলখানা

রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকায় গড়ে তোলা সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেমের নামে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানা। শ্রমিকরা বলছেন, ওই কারখানার পরিবেশ ছিল আদতে জেলখানার মতো। জরুরি নির্গমনের কোন সিঁড়ি ছিল না। এ কারখানাতে কর্মরত অধিকাংশই ছিল শিশু শ্রমিক। যাদের বেতন ছিল ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। বাইরে থেকে দেখতে খুব সান-সৈকতের হলেও কারখানাটিতে শ্রমিকদের কাজ করতে হতো জেলখানার কয়েদিদের মতো। ওই কারখানার বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেই মিলেছে এমন তথ্য। একই তথ্য জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারাও।

এ কারখানায় ১৩ বছরের নাজমুল ১ বছর ধরে কাজ করে। কথা হয় নাজমুলের সঙ্গে। শিশু শ্রমিক নাজমুল জানায়, সে কারখানার দোতলায় কাজ করত সফট ডিংকস তৈরি শাখায়। তার কাজ ছিল মেশিনে টেস্টিং সল্ট নিয়ে ঢেলে দেয়া। তার মাসিক বেতন ৬ হাজার টাকা।

১ বছরের কাজের অভিজ্ঞতায় নাজমুল জানিয়েছে, দোতলার ফ্লোরটি দুটি ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে সফট ডিংকস তৈরি হতো। ডিংকস তৈরির জায়গাটি জেলখানার মতো নেট নিয়ে ঘেরা ছিল। সেখানে তার বয়সী ছেলে-মেয়েরা কাজ করত। ছেলেদের বেতন ৬ হাজার টাকা দেয়া হলেও মেয়েদের বেতন দেয়া হতো ৫ হাজার ৭০০ টাকা। শিশু শ্রমিকদের দিয়ে ওভার টাইমও করানো হতো। কেউ ৪ ঘণ্টা ওভার টাইম করলে ১০০ টাকা পেত। বেতন প্রতিমাসের ১০ তারিখের মধ্যে দেয়ার কথা থাকলেও সেটি ২০ তারিখের পর দেয়া হতো। ওভার টাইমের টাকা দেয়া হতো ৩ থেকে ৪ মাস পর।

নাজমুল নিজেও ওভার টাইমে কাজ করত। নাজমুলের ভাষ্য, কারখানাটিতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। আর ছেলেদের চেয়ে মেয়ে শ্রমিক ছিল বেশি। তারা যখন কাজে ঢুকতেন বাইরে থেকে সিকিউরিটি গার্ড তালা মেরে দিতেন।

নাজমুলের মতো এ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা দেয় অনেক শ্রমিক। শ্রমিকদের ভাষ্য, কারখানাটিতে জরুরি নির্গমনের কোন সিঁড়ি ছিল না। ভেতরে দুটি সিঁড়ি ছিল। তবে এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা ছিল। শ্রমিকদের কারখানার ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়ার পর বাইরে থেকে তালা মেরে রাখা হতো। বৃহস্পতিবার যখন আগুন লাগে তখন ৪ তলায় ঢুকে পড়ে শ্রমিকরা। নিচের অনেকেই বেরিয়ে যেতে পারলেও ৪ তলায় আটকে পড়া শ্রমিকরা বের হতে পারেননি। কারণ ফ্লোরটিতে তালা মেরে দেয়া হয়।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, ভবনের প্রত্যেক ফ্লোরে নেট দিয়ে ব্যারিকেড ছিল। আবার কিছু কিছু জায়গায় তালাবদ্ধ ছিল। এর মধ্যেও আমরা কাজ করেছি।’ ‘কারখানাটিতে একাধিক খাদ্য তৈরি হতো। অনেক ছোট ছোট রুম ছিল। কারখানায় শ্রকিকের কাজ করার জন্য যে ধরনের পরিবেশ ও নিরাপত্তা থাকার কথা সেটি ছিল না। তাদের কাছে মনে হয়েছে এটি একটি জেলখানার মতো।

কারখানায় ফায়ার সেফটি ছিল না

গতকাল সর্বশেষ ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) দেবাশীষ বর্মণ সাংবাদিকদের বলেন, সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানার ভবনটিতে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ছিল না।

ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রতিটি কারখানার ভবনের জন্য ফায়ার সেফটি প্ল্যানের একটি অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু ভবনটির নকশা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের অনুমোদন ছিল না। রাজউকের ছাড়পত্র, কারখানা অনুমোদনের ছাড়পত্র, পরিবেশের ছাড়পত্র নিয়েছিল কি-না, তা আমাদের জানা নেই।

ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি শিফটে ৩০০-৪০০ ফায়ার ফাইটার কাজ করেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত তাপ সহ্য করেও ফায়ার ফাইটাররা প্রথম রাত থেকেই ভেতরে ঢুকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে। কারখানায় অনেক দাহ্য বস্তু ছিল।

শুক্রবার চারতলা থেকে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর হাসপাতালে তিনজনের মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল। মোট ৫২ জনের মরদেহ ছাড়া আর কোন মরদেহ আমরা পায়নি। ভেতরেও আর কোন মরদেহ নেই। এ ছাড়াও ঘটনার দিন ৫২ জনকে টিটিএল দিয়ে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ৪৫ ঘণ্টা সময় লাগার কারণ কী -এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কারখানার আগুনটি ছিল হার্ড ফায়ার। এ ভবনে একাধিক সমস্যা রয়েছে। এগুলো প্যাকিং করার জন্য ফয়েল পেপার, প্লাস্টিকের বোতল, নিচতলায় ছিল টন টন প্যাকিং কাগজের রোল। এসব দাহ্য বস্তু থেকে আগুন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আমরা একদিকে পানি দিলে অন্যদিকে আগুন ছড়িয়ে যায়। বিভিন্ন দাহ্য বস্তু ও ক্যামিকেল থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশি সময় লাগে- যোগ করেন তিনি।

আগুনের সূত্রপাতের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের এ উপ-পরিচালক বলেন, একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগুনের সূত্রপাত, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, ভবনের দুর্বলতা ও কারখানায় আগুন নির্বাপণের যথেষ্ট সরঞ্জাম ছিল কিনা, সবকিছু তদন্তের পর বলা যাবে। তিনি বলেন, ‘পাঁচতলার ফ্লোর ধসে পড়েছে। ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বুয়েট থেকে বিশেষজ্ঞ এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর পরিত্যক্ত ঘোষণা করবে।’

গত মাসেই নোটিশ দিয়েছিল শ্রম অধিদপ্তর

হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় গত ৭ জুন পরিদর্শনে যায় কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরের একটি টিম। তাদের ১০ মিনিট পর কারখানায় ঢুকতে অনুমতি দেয়া কর্তৃপক্ষ। পরিদর্শন টিম কারখানাটিতে শিশু শ্রম, পরিবেশ না থাকা এবং করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি না মানাসহ বেশকিছু ত্রুটি দেখতে পায়। বিষয়গুলো নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে পরদিন একটি নোটিশও দেয়া হয়। নোটিশকে তোয়াক্কা না করায় কারখানার মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতিও নেয়া হয়। কিন্তু করোনার কারণে মামলাটি আর করা হয়নি।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ শাখার কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরের পরিদর্শক নেছার উদ্দিন আহমেদ টেলিফোনে সংবাদকে জানান, ৭ জুন আমাদের পরিদর্শনের মূল উদ্যোগ ছিল, সেখানে করোনাকালীন শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা। সেটি দেখতে পরিদর্শনে গেলে প্রথমে ঢুকতে বাধা দেয়। ১০ মিনিট পর আমাদের ঢুকতে দেয় কারখানার মালিক পক্ষ। আমি ঢুকে দেখি কর্মরত শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং হাত ধোয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। এরপর কারখানার পরিবেশ, শিশু শ্রম আছে কিনা সেগুলো দেখতে পরির্দশন করি। সেখানে কয়েকজন শিশুকে কাজ করতে দেখি। এছাড়া মালামালের স্তূপের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শ্রমিকরা কাজ করছিল তাও দেখতে পাই। ছোট কক্ষে শ্রমিকরা কাজ করতো। বিষয়গুলো উল্লেখ করে তাদের নোটিশ দেই। কিন্তু তারা সেটি তোয়াক্কা করেনি। পরে মামলার প্রস্তুতি নিলে করোনার কারণে লকডাউন পড়ে যাওয়ায় মামলাটি আর করা হয়নি।

তিনি বলেন, আগুনের পর আমরা পরিদর্শন করেছি। হেড অফিস থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগের বিষয়টি মাথায় রেখে নতুন করে তদন্তে যে ত্রুটি পাওয়া যাবে তার ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

রবিবার, ১১ জুলাই ২০২১ , ২৭ আষাঢ় ১৪২৮ ২৯ জিলক্বদ ১৪৪২

শ্রমিকরা বলছেন, কারখানাটি ছিল আদতে জেলখানা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকায় গড়ে তোলা সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেমের নামে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানা। শ্রমিকরা বলছেন, ওই কারখানার পরিবেশ ছিল আদতে জেলখানার মতো। জরুরি নির্গমনের কোন সিঁড়ি ছিল না। এ কারখানাতে কর্মরত অধিকাংশই ছিল শিশু শ্রমিক। যাদের বেতন ছিল ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। বাইরে থেকে দেখতে খুব সান-সৈকতের হলেও কারখানাটিতে শ্রমিকদের কাজ করতে হতো জেলখানার কয়েদিদের মতো। ওই কারখানার বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেই মিলেছে এমন তথ্য। একই তথ্য জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারাও।

এ কারখানায় ১৩ বছরের নাজমুল ১ বছর ধরে কাজ করে। কথা হয় নাজমুলের সঙ্গে। শিশু শ্রমিক নাজমুল জানায়, সে কারখানার দোতলায় কাজ করত সফট ডিংকস তৈরি শাখায়। তার কাজ ছিল মেশিনে টেস্টিং সল্ট নিয়ে ঢেলে দেয়া। তার মাসিক বেতন ৬ হাজার টাকা।

১ বছরের কাজের অভিজ্ঞতায় নাজমুল জানিয়েছে, দোতলার ফ্লোরটি দুটি ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে সফট ডিংকস তৈরি হতো। ডিংকস তৈরির জায়গাটি জেলখানার মতো নেট নিয়ে ঘেরা ছিল। সেখানে তার বয়সী ছেলে-মেয়েরা কাজ করত। ছেলেদের বেতন ৬ হাজার টাকা দেয়া হলেও মেয়েদের বেতন দেয়া হতো ৫ হাজার ৭০০ টাকা। শিশু শ্রমিকদের দিয়ে ওভার টাইমও করানো হতো। কেউ ৪ ঘণ্টা ওভার টাইম করলে ১০০ টাকা পেত। বেতন প্রতিমাসের ১০ তারিখের মধ্যে দেয়ার কথা থাকলেও সেটি ২০ তারিখের পর দেয়া হতো। ওভার টাইমের টাকা দেয়া হতো ৩ থেকে ৪ মাস পর।

নাজমুল নিজেও ওভার টাইমে কাজ করত। নাজমুলের ভাষ্য, কারখানাটিতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। আর ছেলেদের চেয়ে মেয়ে শ্রমিক ছিল বেশি। তারা যখন কাজে ঢুকতেন বাইরে থেকে সিকিউরিটি গার্ড তালা মেরে দিতেন।

নাজমুলের মতো এ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা দেয় অনেক শ্রমিক। শ্রমিকদের ভাষ্য, কারখানাটিতে জরুরি নির্গমনের কোন সিঁড়ি ছিল না। ভেতরে দুটি সিঁড়ি ছিল। তবে এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা ছিল। শ্রমিকদের কারখানার ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়ার পর বাইরে থেকে তালা মেরে রাখা হতো। বৃহস্পতিবার যখন আগুন লাগে তখন ৪ তলায় ঢুকে পড়ে শ্রমিকরা। নিচের অনেকেই বেরিয়ে যেতে পারলেও ৪ তলায় আটকে পড়া শ্রমিকরা বের হতে পারেননি। কারণ ফ্লোরটিতে তালা মেরে দেয়া হয়।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, ভবনের প্রত্যেক ফ্লোরে নেট দিয়ে ব্যারিকেড ছিল। আবার কিছু কিছু জায়গায় তালাবদ্ধ ছিল। এর মধ্যেও আমরা কাজ করেছি।’ ‘কারখানাটিতে একাধিক খাদ্য তৈরি হতো। অনেক ছোট ছোট রুম ছিল। কারখানায় শ্রকিকের কাজ করার জন্য যে ধরনের পরিবেশ ও নিরাপত্তা থাকার কথা সেটি ছিল না। তাদের কাছে মনে হয়েছে এটি একটি জেলখানার মতো।

কারখানায় ফায়ার সেফটি ছিল না

গতকাল সর্বশেষ ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) দেবাশীষ বর্মণ সাংবাদিকদের বলেন, সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানার ভবনটিতে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ছিল না।

ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রতিটি কারখানার ভবনের জন্য ফায়ার সেফটি প্ল্যানের একটি অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু ভবনটির নকশা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের অনুমোদন ছিল না। রাজউকের ছাড়পত্র, কারখানা অনুমোদনের ছাড়পত্র, পরিবেশের ছাড়পত্র নিয়েছিল কি-না, তা আমাদের জানা নেই।

ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি শিফটে ৩০০-৪০০ ফায়ার ফাইটার কাজ করেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত তাপ সহ্য করেও ফায়ার ফাইটাররা প্রথম রাত থেকেই ভেতরে ঢুকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে। কারখানায় অনেক দাহ্য বস্তু ছিল।

শুক্রবার চারতলা থেকে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর হাসপাতালে তিনজনের মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল। মোট ৫২ জনের মরদেহ ছাড়া আর কোন মরদেহ আমরা পায়নি। ভেতরেও আর কোন মরদেহ নেই। এ ছাড়াও ঘটনার দিন ৫২ জনকে টিটিএল দিয়ে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ৪৫ ঘণ্টা সময় লাগার কারণ কী -এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কারখানার আগুনটি ছিল হার্ড ফায়ার। এ ভবনে একাধিক সমস্যা রয়েছে। এগুলো প্যাকিং করার জন্য ফয়েল পেপার, প্লাস্টিকের বোতল, নিচতলায় ছিল টন টন প্যাকিং কাগজের রোল। এসব দাহ্য বস্তু থেকে আগুন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আমরা একদিকে পানি দিলে অন্যদিকে আগুন ছড়িয়ে যায়। বিভিন্ন দাহ্য বস্তু ও ক্যামিকেল থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশি সময় লাগে- যোগ করেন তিনি।

আগুনের সূত্রপাতের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের এ উপ-পরিচালক বলেন, একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগুনের সূত্রপাত, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, ভবনের দুর্বলতা ও কারখানায় আগুন নির্বাপণের যথেষ্ট সরঞ্জাম ছিল কিনা, সবকিছু তদন্তের পর বলা যাবে। তিনি বলেন, ‘পাঁচতলার ফ্লোর ধসে পড়েছে। ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বুয়েট থেকে বিশেষজ্ঞ এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর পরিত্যক্ত ঘোষণা করবে।’

গত মাসেই নোটিশ দিয়েছিল শ্রম অধিদপ্তর

হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় গত ৭ জুন পরিদর্শনে যায় কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরের একটি টিম। তাদের ১০ মিনিট পর কারখানায় ঢুকতে অনুমতি দেয়া কর্তৃপক্ষ। পরিদর্শন টিম কারখানাটিতে শিশু শ্রম, পরিবেশ না থাকা এবং করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি না মানাসহ বেশকিছু ত্রুটি দেখতে পায়। বিষয়গুলো নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে পরদিন একটি নোটিশও দেয়া হয়। নোটিশকে তোয়াক্কা না করায় কারখানার মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতিও নেয়া হয়। কিন্তু করোনার কারণে মামলাটি আর করা হয়নি।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ শাখার কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরের পরিদর্শক নেছার উদ্দিন আহমেদ টেলিফোনে সংবাদকে জানান, ৭ জুন আমাদের পরিদর্শনের মূল উদ্যোগ ছিল, সেখানে করোনাকালীন শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা। সেটি দেখতে পরিদর্শনে গেলে প্রথমে ঢুকতে বাধা দেয়। ১০ মিনিট পর আমাদের ঢুকতে দেয় কারখানার মালিক পক্ষ। আমি ঢুকে দেখি কর্মরত শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং হাত ধোয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। এরপর কারখানার পরিবেশ, শিশু শ্রম আছে কিনা সেগুলো দেখতে পরির্দশন করি। সেখানে কয়েকজন শিশুকে কাজ করতে দেখি। এছাড়া মালামালের স্তূপের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শ্রমিকরা কাজ করছিল তাও দেখতে পাই। ছোট কক্ষে শ্রমিকরা কাজ করতো। বিষয়গুলো উল্লেখ করে তাদের নোটিশ দেই। কিন্তু তারা সেটি তোয়াক্কা করেনি। পরে মামলার প্রস্তুতি নিলে করোনার কারণে লকডাউন পড়ে যাওয়ায় মামলাটি আর করা হয়নি।

তিনি বলেন, আগুনের পর আমরা পরিদর্শন করেছি। হেড অফিস থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগের বিষয়টি মাথায় রেখে নতুন করে তদন্তে যে ত্রুটি পাওয়া যাবে তার ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।