রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি

সব বাধা পেরিয়ে সন্তানের লাশ নিতে চরফ্যাশন থেকে ঢাকায় বাবা

হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানার ১৮ বছর বয়সী শ্রমিক নোমান মাতুব্বরের খোঁজ নেই বৃহস্পতিবার আগুন লাগার দিন থেকেই। যে ৪৯ জনের পোড়া দেহ উদ্ধার হয়েছে সেখানেই হয়তো মিলবে নোমানের লাশ। তালিকায় নাম উঠানো এবং ডিএনএ নমুনা দিতে ভোলার চরফ্যাশন থেকে মেয়ে জামাইকে সঙ্গে নিয়ে কয়েক দফা যানবাহান পাল্টে মাছ পরিবহনের ট্রাকে ৬ হাজার টাকা খরচ করে ঢাকায় পৌঁছান শনিবার রাত ২টায়।

গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন বাবা মন্নান মাতুব্বর। বুকফাটা আর্তনাদে ষাটোর্ধ মান্নানের বিলাপ করে বলেন, সব শেষ হয়ে গেল। নোমানের রোজগারের টাকায় এতদিনের সচল সংসার ফের অচল হলো। একই অবস্থা ১৩ বছরের শিশু হাসনাইনের বাবা-মায়ের। তারাও ভোলা থেকে এসেছেন সন্তানের লাশ পাওয়ার আশায়।

গত বৃহস্পতিবার হাসেম ফুডসের কারখানায় আগুন লাগার খবর জানার পর থেকে ছেলের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে আসছিলেন মান্নান মাতুব্বর। কিন্তু কোনভাবেই নোমানের সঙ্গে কথা বলতে পারছিলেন না। বৃহস্পতিবার শুক্রবার এবং শনিবার পর্যন্ত নানাভাব চেষ্টা করেও যখন ছেলের খোঁজ পাচ্ছিলেন না তখন বুঝে নিয়েছেন ছেলে বুঝি আর এ দুনিয়ায় নেই। আর কালক্ষেপণ না করেই ভোলা থেকে ঢাকায় আসার সিদ্ধান্ত নেন। লকডাউনে লঞ্চ, গাড়ি ফেরি সবই বন্ধ। বিকল্পভাবে ট্রলার, মাইক্রোবাস, পণ্যবাহী ট্রাকে করে বার বার রুট এবং ট্র্যানজিট বদল করে গতকাল ঢাকায় পৌঁছান বৃদ্ধ মান্নান মাতুব্বর। সোজা ছুটে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। ছেলের নাম তালিকায় লিখিয়ে দেন নমুনাও। এখন অপেক্ষা লাশ নিয়ে কবে বাড়ি ফিরবেন।

গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কথা হয় বৃদ্ধ মান্নান মাতুব্বরের সঙ্গে। বলেন, পথের ক্লান্তি দূরে ঠেলে ছেলের খোঁজে এসেছেন। বুঝতে পারছেন ছেলে আর এ পৃথিবীতে নেই। ৩ ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে আল্লাহ আগেই ২ ছেলেকে নিয়ে গেছেন। একমাত্র ছোট্ট নোমানই ছিল তার আশা ভরসার প্রতীক। ১৪ বছর বয়সে সংসারের হাল ধরতে হয় নোমানকে। ওই বয়সেই অসচ্ছল সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে সেমাই কারখানার শ্রমিক হিসেবে চাকরি নেন হাসেম ফুড কারখানায়। গত ৪ বছর ধরে নোমানের রোজগারের টাকায় তাদের সংসার চলত।

‘ভোলার চরফ্যাশনের এওয়াজপুর থেকে রওনা দেন মন্নান। বলেন ‘আমার তিন ছেলে তিন মেয়ে ছিল। একে একে সব ছেলে মারা গেল। এই বৃদ্ধ বয়সে এখন আমার আর কেউ রইল না। তিন ছেলের মধ্যে ১৩ বছর বয়সী হারুণ আর তার এক বছরের ছোট রাকিব এক যুগ আগে ডয়ারিয়ায় মারা যায়। একমাত্র নোমান বেচে ছিল। এখন নোমানের আশাও শেষ হয়ে গেছে।

নোমানের ভগ্নিপতি আলী রতন জানালেন, বসয় হয়ে যাওয়ায় এখন আর কাজ করতে পারেন না তার শ্বশুর মান্নান মাতুব্বর। ভোলা থেকে দু’জনের ভেঙে ভেঙে আসতে ছয় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পথে পুলিশ আটকিয়েছিল কয়েকবার। ঘটনা শুনে আবার ছেড়ে দিয়েছে। মোটারসাইকেল এবং পণ্যবাহী ট্রাকে টানা ১৪ ঘণ্টার লম্বা সফর করে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। গত শনিবার রাত ২টায় ঢাকায় এসে পৌঁছান তারা। এক আত্মীয়ের বাসায় বিশ্রাম নিয়ে সকালে ছুটে আসেন মর্গে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে নিখোঁজ ১৩ বছর বয়সী স্কুলছাত্র হাসনাইন। দুদিন হাসনাইনের ছোট বড় বোন ঢাকা মেডিকেলে ঘোরাফেরা করলেও গতকাল হাসনাইনের লাশ পেতে ঢাকায় আসেন বাবা ফজুল এবং মা নাজমা বেগম। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় এলাকায় ছেলেদের সঙ্গে মিশে ছেলে নষ্ট পথে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় দের মাস আগে তাকে কাজে দিতে রাজি হন তারা। ভোলার চরফ্যাশন থেকে কয়েক দফা গাড়ি পাল্টে পন্যবাহী ট্রাকে করে ঢাকায় পৌঁছান। গতকাল ছেলের লাশ পেতে বাবা মা দু’জনেই ডিএএন নমুনা দিয়েছেন।

চরফ্যাশনের আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন থেকে ঢাকায় এসেছেন বাবা ফজলুর রহমান, সঙ্গে স্ত্রী, মেয়ে ও বোন।

ফজলুর রহমান জানালেন, হাসনাইন এক সময় চরফ্যাশনের আমিরাবাদে কবি মোজাম্মেল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ত। ‘লকডাউনে তো দুই বছর ধরে পড়া বন্ধ। এর মধ্যে আমি অসুস্থ। তাই কন্ট্রাকটর মোতালেবের মাধ্যমে ছেলে আমার নারায়ণগঞ্জের ওই কারখানায় সেমাই তৈরির কাজ নিয়েছিল গত রোজায়।’

ফজলু মিয়া জানান, ছেলেটারে কাজে না দিলে এ সর্বনাশ হতো না। ভেবেছিলাম স্কুল বন্ধ, এলাকায় থাকলে বাজে ছেলেদের সঙ্গে মিশে নষ্ট হয়ে যাবে। ভাবলাম যতদিন স্কুল বন্ধ থাকে যদি কোন কাজে যুক্ত থাকে তাহলে ভালো থাকবে। এলাকার মোতাবেল ওই কারখানায় চাকরি করে। তার সঙ্গে কথা হলে সে এখানে কাজ পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিবে বলে জানায়। মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেতনও পাওয়া যাবে। রাজি হয়ে গেলাম। অভাবের সংসারে যদি কিছু টাকা আসে। স্কুল খুললে আবার ছেলেকে নিয়ে আসারও চিন্তা ছিল। এখন লাশ নিতে আসলাম।

বহু কষ্ট করে কিছু টাকা জোগার করেছি। সেই টাকা নিয়ে ঢাকায় এসেছি ছেলের লাশ নিতে। নমুনাও দিয়েছি। ছেলের নাম লিখে রেখেছে। এখন বলছে লাশ পেতে সময় লাগবে। নাকে টিউমার হওয়ায় তার (ফজলুর রহমানের) নাক-মুখ দিয়ে রক্ত পড়ে। সেজন্য কয়েকবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসাও নিয়েছেন।

বুকফাটা আর্তনাদে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিস্তব্ধ পরিবেশ ভারি করে তোলেন হাসনাইনের মা নাজমা বেগম। বিলাপ করতে করতে বললেন, ‘এখন আমি কাকে নিয়ে বাঁচব?’

তিনদিনে ৪৫ জনের বিপরীতে নমুনা ৬০ জনের

গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তৃতীয় দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ জনের বিপরীতে ৭ জন নমুনা দিয়েছেন। এ নিয়ে ৩ দিনে ৪৫ নিখোঁজের বিপরীতে ৬৩ জন নমুনা দিয়েছেন। প্রথম দিন ১৯ জনের, দ্বিতীয় দিনে ২১ জনের বিপরীতে নমুনা নিয়েছে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ।

সিআইডির ডিএনএন পরীক্ষক দিপঙ্কর দত্ত টেলিফোনে সংবাদকে জানান, প্রথম দিন তারা ১৯ জনের বিপরীতে স্বজনদের কাছ থেকে নমুনা নিয়েছেন। দ্বিতীয় দিন শনিবার সকাল ৮টা থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত ২১ জনের বিপরীতে স্বজনদের নমুনা নিয়েছেন। গতকাল সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৫ জনের বিপরীতে ৭ জনের কাছ থেকে নমুনা নিয়েছেন। সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৫ জনের বিপরীতে নমুনা নিলেও আর কোন স্বজন আসেনি। তাদের হিসাব অনুযায়ী ৩ জনের নমুনার বিপরীতে স্বজনরা আসলেই নমুনা সংগ্রহের কাজ শেষ হবে।

দিপঙ্কর দত্ত বলেন, যে ৪৮ লাশ মর্গে আছে সেগুলো থেকে আলামত হিসেবে দাঁত ও হাড় থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে টিস্যু নিয়েছেন। প্রত্যেকটি দেহের মাংস ভেদ করে হাড় পুড়েছে। কোন কোন লাশের মাংস ছাই হয়ে আঙ্গার হয়ে গেছে। দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। এর মধ্যেও তারা আলামত নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেছেন। তবে যারা তাদের স্বজনদের নিখোঁজ থাকার কথা জানিয়ে এখানে নমুনা দিচ্ছেন তাদের কাছ থেকে শুধু রক্ত নিচ্ছেন। সবগুলো নমুনা নেয়া হলে এরপর তারা নমুনার ডিএনএ প্রোফাইলের কাজ শুরু করবেন।

এ পর্যন্ত যাদের খোঁজ পেতে স্বজনরা নমুনা দিয়েছেন

নিখোঁজ রিয়া আক্তারের খোঁজ পেতে নমুনা দিয়েছেন বাবা মহিউদ্দিন মা জোসনা বেগম। মো. মিতু আক্তারের খোঁজ পেতে নমুনা দিয়েছেন বাবা বেলাল হোসেন, মো. নাইম ইসলামের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা মো. তাহের উদ্দিন, মা আমেনা বেগম। মোহাম্মদ আলীর জন্য নমুনা দিয়েছে বাবা সাহাদত, মা রোকেয়া বেগম। মো. রাকিব দেওয়ানের জন্য নমুনা দিয়েছেন বড় ভাই শামীম দেওয়ান, মো. মাহমুদ হোসেন সজীবের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা ফয়জুল ইসলাম, মো. রাবেয়া আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা মো. চান্দু মিয়া।

নিখোঁজ মো. জিয়াদ রানার জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা শওকত হোসেন খোকন মা জরিনা বেগম। নামজুল হোসেনের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা চান মিয়া। মোসা. সেলিনা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা সেলিম মা মোসা. আমেনা বেগম। মো. আকলিমা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা বাচ্চু মিয়া, মা আকলিমা বেগম। মোসা. ফাহিমা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন ছেলে মো. মোস্তাকিস। মো. আকাশ মিয়ার জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা বাহারউদ্দিন। মো. স্বপন মিয়ার জন্য নমুনা দিয়েছেন ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান। মোসা. নাজমা খাতুনের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা মো. নয়ন মিয়া, মা কল্পনা বেগম। মোসা. সাকরিকা শায়শাল জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা স্বপন মিয়া। অমরিতা (অমৃতা) বেগমের জন্য নমুনা দিয়েছেন মেয়ে সুমা আক্তার, বোন রোজিনা বেগম এবং স্বামী সমীর। নুসরাত জাহান টুকটুকির জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা হাছানুজ্জামান সরকার। রহিমা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা আবদুল কুদ্দুস মোড়ল, মেয়ে মোসা. সাহারা আক্তার। ইসরাত জাহান তুলির জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা মো. আবদুল মান্নান। হিমা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা মো. কবির মিয়া। তাকিয়া আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা আজমত আলী। ফিরোজার জন্য নমুনা দিয়েছেন মেয়ে সোমাই আক্তার, স্বামী জায়েদ। জাহান আরার জন্য নমুনা দিয়েছেন স্বামী খোকন এবং ছেলে জাকির হোসেন। মিনু খাতুনের জন্য নমুনা দিয়েছেন মেয়ে চম্বা আক্তার। কল্পনা রানী বর্মণের জন্য নমুনা দিয়েছে বাবা পরভা চন্দ্র বর্মণ মা সোমা রাণী বর্মণ। মো. রাকিব হোসেনের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা কবির হোসেন। মোসা. ফারজানার জন্য নমুনা দিয়েছেন মা ঝর্ণা আক্তার। শান্তামনি আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছে মা মিমু আক্তার। লাবণ্য আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা মো. লাল্টু মিয়া। মোসা. উম্বিতার জন্য নমুনা দিয়েছেন স্বামী সেলিম মিয়া। মোসা. ফাতেমা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা মো. সুজন মিয়া। মোসা. সাহানা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন স্বামী মাহাতাব উদ্দিন, ভাই মো. সবুজ। মো. মহিউদ্দিনের জন্য নমুনা দিয়েছেন বোন তাসনুর বেগম, ভাই সালাউদ্দিন, মো. আলাউদ্দিন। মো. রিপন মিয়ার জন্য নমুনা দিয়েছেন মা লিলি বেগম। মোসা. রহিমার জন্য নমুনা দিয়েছেন ছেলে মো. আরিফ, মেয়ে লিপা আক্তার। নামজা বেগমের জন্য নমুনা দিয়েছেন ছেলে নামজুল হোসেন। জাহানারার জন্য নমুনা দিয়েছেন ছেলে জাকির হোসেন। মো. মাহবুবুর রহমানের জন্য নমুনা দিয়েছেন ভাই মো. হাসান শিকদার। মো. সাহানা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা নিজাম উদ্দিন। মোসা. মাহমুদা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন ভাই সুমন। মো. নাজমা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন স্বামী মো. জাহিদুল ইসলাম।

গত বৃহস্পতিবার সজীব গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি। গত শুক্রবার একটি কক্ষ থেকেই ফায়ার সার্ভিস ৪৯ জনের পোড়া দেহ উদ্ধার করে। পরে সেগুলো ময়নাতদন্ত ও শনাক্ত করতে ডিএনএ নমুনার জন্য পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। সব মিলিয়ে এ আগুনের ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫২ জন। যাদের মধ্যে কয়েকজন শিশুও রয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেমসহ ৮ জনকে ইতোমধ্যে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় দেশ বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

সোমবার, ১২ জুলাই ২০২১ , ২৮ আষাঢ় ১৪২৮ ১ জিলহজ্জ ১৪৪২

রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি

সব বাধা পেরিয়ে সন্তানের লাশ নিতে চরফ্যাশন থেকে ঢাকায় বাবা

সাইফ বাবলু

image

ভোলার চরফ্যাশন থেকে পথে অনেক বিধিনিষেধ অতিক্রম করে ঢাকায় এলেন সন্তানের লাশ নিতে মান্নান মাতুব্বর -সংবাদ

হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানার ১৮ বছর বয়সী শ্রমিক নোমান মাতুব্বরের খোঁজ নেই বৃহস্পতিবার আগুন লাগার দিন থেকেই। যে ৪৯ জনের পোড়া দেহ উদ্ধার হয়েছে সেখানেই হয়তো মিলবে নোমানের লাশ। তালিকায় নাম উঠানো এবং ডিএনএ নমুনা দিতে ভোলার চরফ্যাশন থেকে মেয়ে জামাইকে সঙ্গে নিয়ে কয়েক দফা যানবাহান পাল্টে মাছ পরিবহনের ট্রাকে ৬ হাজার টাকা খরচ করে ঢাকায় পৌঁছান শনিবার রাত ২টায়।

গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন বাবা মন্নান মাতুব্বর। বুকফাটা আর্তনাদে ষাটোর্ধ মান্নানের বিলাপ করে বলেন, সব শেষ হয়ে গেল। নোমানের রোজগারের টাকায় এতদিনের সচল সংসার ফের অচল হলো। একই অবস্থা ১৩ বছরের শিশু হাসনাইনের বাবা-মায়ের। তারাও ভোলা থেকে এসেছেন সন্তানের লাশ পাওয়ার আশায়।

গত বৃহস্পতিবার হাসেম ফুডসের কারখানায় আগুন লাগার খবর জানার পর থেকে ছেলের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে আসছিলেন মান্নান মাতুব্বর। কিন্তু কোনভাবেই নোমানের সঙ্গে কথা বলতে পারছিলেন না। বৃহস্পতিবার শুক্রবার এবং শনিবার পর্যন্ত নানাভাব চেষ্টা করেও যখন ছেলের খোঁজ পাচ্ছিলেন না তখন বুঝে নিয়েছেন ছেলে বুঝি আর এ দুনিয়ায় নেই। আর কালক্ষেপণ না করেই ভোলা থেকে ঢাকায় আসার সিদ্ধান্ত নেন। লকডাউনে লঞ্চ, গাড়ি ফেরি সবই বন্ধ। বিকল্পভাবে ট্রলার, মাইক্রোবাস, পণ্যবাহী ট্রাকে করে বার বার রুট এবং ট্র্যানজিট বদল করে গতকাল ঢাকায় পৌঁছান বৃদ্ধ মান্নান মাতুব্বর। সোজা ছুটে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। ছেলের নাম তালিকায় লিখিয়ে দেন নমুনাও। এখন অপেক্ষা লাশ নিয়ে কবে বাড়ি ফিরবেন।

গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কথা হয় বৃদ্ধ মান্নান মাতুব্বরের সঙ্গে। বলেন, পথের ক্লান্তি দূরে ঠেলে ছেলের খোঁজে এসেছেন। বুঝতে পারছেন ছেলে আর এ পৃথিবীতে নেই। ৩ ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে আল্লাহ আগেই ২ ছেলেকে নিয়ে গেছেন। একমাত্র ছোট্ট নোমানই ছিল তার আশা ভরসার প্রতীক। ১৪ বছর বয়সে সংসারের হাল ধরতে হয় নোমানকে। ওই বয়সেই অসচ্ছল সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে সেমাই কারখানার শ্রমিক হিসেবে চাকরি নেন হাসেম ফুড কারখানায়। গত ৪ বছর ধরে নোমানের রোজগারের টাকায় তাদের সংসার চলত।

‘ভোলার চরফ্যাশনের এওয়াজপুর থেকে রওনা দেন মন্নান। বলেন ‘আমার তিন ছেলে তিন মেয়ে ছিল। একে একে সব ছেলে মারা গেল। এই বৃদ্ধ বয়সে এখন আমার আর কেউ রইল না। তিন ছেলের মধ্যে ১৩ বছর বয়সী হারুণ আর তার এক বছরের ছোট রাকিব এক যুগ আগে ডয়ারিয়ায় মারা যায়। একমাত্র নোমান বেচে ছিল। এখন নোমানের আশাও শেষ হয়ে গেছে।

নোমানের ভগ্নিপতি আলী রতন জানালেন, বসয় হয়ে যাওয়ায় এখন আর কাজ করতে পারেন না তার শ্বশুর মান্নান মাতুব্বর। ভোলা থেকে দু’জনের ভেঙে ভেঙে আসতে ছয় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পথে পুলিশ আটকিয়েছিল কয়েকবার। ঘটনা শুনে আবার ছেড়ে দিয়েছে। মোটারসাইকেল এবং পণ্যবাহী ট্রাকে টানা ১৪ ঘণ্টার লম্বা সফর করে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। গত শনিবার রাত ২টায় ঢাকায় এসে পৌঁছান তারা। এক আত্মীয়ের বাসায় বিশ্রাম নিয়ে সকালে ছুটে আসেন মর্গে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে নিখোঁজ ১৩ বছর বয়সী স্কুলছাত্র হাসনাইন। দুদিন হাসনাইনের ছোট বড় বোন ঢাকা মেডিকেলে ঘোরাফেরা করলেও গতকাল হাসনাইনের লাশ পেতে ঢাকায় আসেন বাবা ফজুল এবং মা নাজমা বেগম। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় এলাকায় ছেলেদের সঙ্গে মিশে ছেলে নষ্ট পথে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় দের মাস আগে তাকে কাজে দিতে রাজি হন তারা। ভোলার চরফ্যাশন থেকে কয়েক দফা গাড়ি পাল্টে পন্যবাহী ট্রাকে করে ঢাকায় পৌঁছান। গতকাল ছেলের লাশ পেতে বাবা মা দু’জনেই ডিএএন নমুনা দিয়েছেন।

চরফ্যাশনের আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন থেকে ঢাকায় এসেছেন বাবা ফজলুর রহমান, সঙ্গে স্ত্রী, মেয়ে ও বোন।

ফজলুর রহমান জানালেন, হাসনাইন এক সময় চরফ্যাশনের আমিরাবাদে কবি মোজাম্মেল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ত। ‘লকডাউনে তো দুই বছর ধরে পড়া বন্ধ। এর মধ্যে আমি অসুস্থ। তাই কন্ট্রাকটর মোতালেবের মাধ্যমে ছেলে আমার নারায়ণগঞ্জের ওই কারখানায় সেমাই তৈরির কাজ নিয়েছিল গত রোজায়।’

ফজলু মিয়া জানান, ছেলেটারে কাজে না দিলে এ সর্বনাশ হতো না। ভেবেছিলাম স্কুল বন্ধ, এলাকায় থাকলে বাজে ছেলেদের সঙ্গে মিশে নষ্ট হয়ে যাবে। ভাবলাম যতদিন স্কুল বন্ধ থাকে যদি কোন কাজে যুক্ত থাকে তাহলে ভালো থাকবে। এলাকার মোতাবেল ওই কারখানায় চাকরি করে। তার সঙ্গে কথা হলে সে এখানে কাজ পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিবে বলে জানায়। মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেতনও পাওয়া যাবে। রাজি হয়ে গেলাম। অভাবের সংসারে যদি কিছু টাকা আসে। স্কুল খুললে আবার ছেলেকে নিয়ে আসারও চিন্তা ছিল। এখন লাশ নিতে আসলাম।

বহু কষ্ট করে কিছু টাকা জোগার করেছি। সেই টাকা নিয়ে ঢাকায় এসেছি ছেলের লাশ নিতে। নমুনাও দিয়েছি। ছেলের নাম লিখে রেখেছে। এখন বলছে লাশ পেতে সময় লাগবে। নাকে টিউমার হওয়ায় তার (ফজলুর রহমানের) নাক-মুখ দিয়ে রক্ত পড়ে। সেজন্য কয়েকবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসাও নিয়েছেন।

বুকফাটা আর্তনাদে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিস্তব্ধ পরিবেশ ভারি করে তোলেন হাসনাইনের মা নাজমা বেগম। বিলাপ করতে করতে বললেন, ‘এখন আমি কাকে নিয়ে বাঁচব?’

তিনদিনে ৪৫ জনের বিপরীতে নমুনা ৬০ জনের

গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তৃতীয় দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ জনের বিপরীতে ৭ জন নমুনা দিয়েছেন। এ নিয়ে ৩ দিনে ৪৫ নিখোঁজের বিপরীতে ৬৩ জন নমুনা দিয়েছেন। প্রথম দিন ১৯ জনের, দ্বিতীয় দিনে ২১ জনের বিপরীতে নমুনা নিয়েছে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ।

সিআইডির ডিএনএন পরীক্ষক দিপঙ্কর দত্ত টেলিফোনে সংবাদকে জানান, প্রথম দিন তারা ১৯ জনের বিপরীতে স্বজনদের কাছ থেকে নমুনা নিয়েছেন। দ্বিতীয় দিন শনিবার সকাল ৮টা থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত ২১ জনের বিপরীতে স্বজনদের নমুনা নিয়েছেন। গতকাল সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৫ জনের বিপরীতে ৭ জনের কাছ থেকে নমুনা নিয়েছেন। সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৫ জনের বিপরীতে নমুনা নিলেও আর কোন স্বজন আসেনি। তাদের হিসাব অনুযায়ী ৩ জনের নমুনার বিপরীতে স্বজনরা আসলেই নমুনা সংগ্রহের কাজ শেষ হবে।

দিপঙ্কর দত্ত বলেন, যে ৪৮ লাশ মর্গে আছে সেগুলো থেকে আলামত হিসেবে দাঁত ও হাড় থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে টিস্যু নিয়েছেন। প্রত্যেকটি দেহের মাংস ভেদ করে হাড় পুড়েছে। কোন কোন লাশের মাংস ছাই হয়ে আঙ্গার হয়ে গেছে। দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। এর মধ্যেও তারা আলামত নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেছেন। তবে যারা তাদের স্বজনদের নিখোঁজ থাকার কথা জানিয়ে এখানে নমুনা দিচ্ছেন তাদের কাছ থেকে শুধু রক্ত নিচ্ছেন। সবগুলো নমুনা নেয়া হলে এরপর তারা নমুনার ডিএনএ প্রোফাইলের কাজ শুরু করবেন।

এ পর্যন্ত যাদের খোঁজ পেতে স্বজনরা নমুনা দিয়েছেন

নিখোঁজ রিয়া আক্তারের খোঁজ পেতে নমুনা দিয়েছেন বাবা মহিউদ্দিন মা জোসনা বেগম। মো. মিতু আক্তারের খোঁজ পেতে নমুনা দিয়েছেন বাবা বেলাল হোসেন, মো. নাইম ইসলামের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা মো. তাহের উদ্দিন, মা আমেনা বেগম। মোহাম্মদ আলীর জন্য নমুনা দিয়েছে বাবা সাহাদত, মা রোকেয়া বেগম। মো. রাকিব দেওয়ানের জন্য নমুনা দিয়েছেন বড় ভাই শামীম দেওয়ান, মো. মাহমুদ হোসেন সজীবের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা ফয়জুল ইসলাম, মো. রাবেয়া আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা মো. চান্দু মিয়া।

নিখোঁজ মো. জিয়াদ রানার জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা শওকত হোসেন খোকন মা জরিনা বেগম। নামজুল হোসেনের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা চান মিয়া। মোসা. সেলিনা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা সেলিম মা মোসা. আমেনা বেগম। মো. আকলিমা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা বাচ্চু মিয়া, মা আকলিমা বেগম। মোসা. ফাহিমা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন ছেলে মো. মোস্তাকিস। মো. আকাশ মিয়ার জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা বাহারউদ্দিন। মো. স্বপন মিয়ার জন্য নমুনা দিয়েছেন ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান। মোসা. নাজমা খাতুনের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা মো. নয়ন মিয়া, মা কল্পনা বেগম। মোসা. সাকরিকা শায়শাল জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা স্বপন মিয়া। অমরিতা (অমৃতা) বেগমের জন্য নমুনা দিয়েছেন মেয়ে সুমা আক্তার, বোন রোজিনা বেগম এবং স্বামী সমীর। নুসরাত জাহান টুকটুকির জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা হাছানুজ্জামান সরকার। রহিমা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা আবদুল কুদ্দুস মোড়ল, মেয়ে মোসা. সাহারা আক্তার। ইসরাত জাহান তুলির জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা মো. আবদুল মান্নান। হিমা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা মো. কবির মিয়া। তাকিয়া আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা আজমত আলী। ফিরোজার জন্য নমুনা দিয়েছেন মেয়ে সোমাই আক্তার, স্বামী জায়েদ। জাহান আরার জন্য নমুনা দিয়েছেন স্বামী খোকন এবং ছেলে জাকির হোসেন। মিনু খাতুনের জন্য নমুনা দিয়েছেন মেয়ে চম্বা আক্তার। কল্পনা রানী বর্মণের জন্য নমুনা দিয়েছে বাবা পরভা চন্দ্র বর্মণ মা সোমা রাণী বর্মণ। মো. রাকিব হোসেনের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা কবির হোসেন। মোসা. ফারজানার জন্য নমুনা দিয়েছেন মা ঝর্ণা আক্তার। শান্তামনি আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছে মা মিমু আক্তার। লাবণ্য আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা মো. লাল্টু মিয়া। মোসা. উম্বিতার জন্য নমুনা দিয়েছেন স্বামী সেলিম মিয়া। মোসা. ফাতেমা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা মো. সুজন মিয়া। মোসা. সাহানা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন স্বামী মাহাতাব উদ্দিন, ভাই মো. সবুজ। মো. মহিউদ্দিনের জন্য নমুনা দিয়েছেন বোন তাসনুর বেগম, ভাই সালাউদ্দিন, মো. আলাউদ্দিন। মো. রিপন মিয়ার জন্য নমুনা দিয়েছেন মা লিলি বেগম। মোসা. রহিমার জন্য নমুনা দিয়েছেন ছেলে মো. আরিফ, মেয়ে লিপা আক্তার। নামজা বেগমের জন্য নমুনা দিয়েছেন ছেলে নামজুল হোসেন। জাহানারার জন্য নমুনা দিয়েছেন ছেলে জাকির হোসেন। মো. মাহবুবুর রহমানের জন্য নমুনা দিয়েছেন ভাই মো. হাসান শিকদার। মো. সাহানা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন বাবা নিজাম উদ্দিন। মোসা. মাহমুদা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন ভাই সুমন। মো. নাজমা আক্তারের জন্য নমুনা দিয়েছেন স্বামী মো. জাহিদুল ইসলাম।

গত বৃহস্পতিবার সজীব গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি। গত শুক্রবার একটি কক্ষ থেকেই ফায়ার সার্ভিস ৪৯ জনের পোড়া দেহ উদ্ধার করে। পরে সেগুলো ময়নাতদন্ত ও শনাক্ত করতে ডিএনএ নমুনার জন্য পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। সব মিলিয়ে এ আগুনের ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫২ জন। যাদের মধ্যে কয়েকজন শিশুও রয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেমসহ ৮ জনকে ইতোমধ্যে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় দেশ বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।