তদন্ত শুরু

যার গাফিলতি তাকেই গ্রেপ্তার : এসপি

উদ্ধার কাজ সমাপ্তির একদিন পরও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড কারাখানার সামনে নিখোঁজ শ্রমিকদের খোঁজে ভিড় জমাচ্ছেন স্বজনরা। সকাল থেকেই দেখা গেছে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ভবনটির সামনে কান্নারত স্বজনদের আহাজারি। এ ঘটনায় চলে গেছে ৫২টি তাজা প্রাণ। আহত রয়েছেন অর্ধশতাধিক শ্রমিক। অনেকে রয়েছেন হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে স্বজনদের কাউকে কারখানার মূল ফটকের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হচ্ছে ডিএনএ রিপোর্ট করে লাশ শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করার জন্য। অসহায় নিখোঁজদের স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের লাশটাও বুঝে পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে স্বজনরা হাজির হয়েছেন মর্মান্তিক এক দাবি নিয়ে। অন্তত পক্ষে লাশের অংশবিশেষ হলেও ফেরত চান এবং এ ঘটনায় জড়িডদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান স্বজনরা। এদিকে দুপুরে কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল।

এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্য আনোয়ার হোসেন শাহাবুদ্দিন ফরাজী, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।

তারা বলেন, ৫২ জনের মৃত্যু কোনভাবেই কাম্য নয়, যারা দোষী তাদের আইনের আওতায় আনা হবে, সরকারের পক্ষ থেকে ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যারা এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেক পরিবারকে ২ লাখ ৫০ হাজার করে দেয়া হবে। এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে আইনগত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

তদন্তের কাজ শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস

সকাল দশটা থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অগ্নিকান্ড সংঘটিত ফুড কারখানায় কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তদন্ত দল। গতকাল বিকেলে তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক নূর হাসান সংবাদকে বলেন, শুরুতেই তারা বিভিন্নজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। ছয়তলা ভবনের সবকটি কক্ষ ঘুরে সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন আলামত। ভবনে খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতের জন্য গ্যাস ও বিদ্যুৎ উভয় লাইনই ছিল।

ছিল সহজে দাহ্য বিপুল পরিমাণ বস্তু। তবে সে অনুযায়ী সুবিশাল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অপ্রতুল ছিল বলে জানান তিনি। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকার হাসেম ফুডস লিমিটেডের ছয়তলা ভবনে আগুন লাগে। দীর্ঘ ২২ ঘণ্টা পর ওই আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ১৮টি ইউনিট। এই ঘটনায় মারা গেছেন ৫২ জন। অগ্নিকান্ডের কারণ, উৎপত্তিস্থল, ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন ছিল জানতে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ফায়ার সার্ভিস।

সাতদিনের মধ্যে এই কমিটিকে ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর পৃথক আরও দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব নূর হাসান, ‘আমরা সকাল ১০টায় আজকে আসছি। এবং আমরা এসেই কারখানার লোকজনসহ অনেক শ্রমিকের জবানবন্দি নিয়েছি। এমনকি বাইরের লোকজন ও স্থানীয়য়দেরও জবানবন্দি নিয়েছি। আমাদের অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত আছে। শ্রমিক অসন্তোষ আছে কিনা, বাইরে থেকে কেউ এসে গেট লাগিয়েছে কিনা এসব বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি। পরে আমরা সব মিলিয়ে কনক্লুশনে আসব। কমিটির সবাই মিলে আমরা একত্রিত হয়ে কথা বলব। এরপর আমরা একটা ডিসিশনে আসব। আমাদের হাতে ৭ দিন সময় আছে তদন্তের রিপোর্ট দেয়ার।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাকি অন্য বিষয়গুলো তদন্তের স্বার্থে এখনই বলা যাবে না। তদন্ত শেষ হওয়ার পর বাকি বিষয়গুলো জানাতে পারব।’

যার গাফিলতির তাকেই গ্রেপ্তার : এসপি

আগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনায় পুলিশ দায়ের করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ৮ আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলার তদন্তের কাজ পর্যবেক্ষণসহ রিমান্ডে আনা আসামিদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানান জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম। তিনি বলেন, কারখানাটি পরিদর্শন ও তদারকির কাজে দায়িত্বে থাকা কলকারখানা অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালন করেছে তাদের গাফলতি আছে কিনা সে বিষয়ে বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে তাদের দায়ভারে গাফলতি উঠে আসলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তাদের আইনের আওতায় এনে আদালতে উপস্থাপন করা হবে। তিনি আরও জানান, কারখানাটি নির্মাণে ত্রুটি ছিল। প্রাথমিক তদন্তে শিল্প কারখানা ভবন নির্মাণ করতে যে ধরনের ছাড়পত্র নেয়া প্রয়োজন ছিল তা ছিল না এবং অগ্নিনির্বাপণে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব পাওয়া গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশের ডিএনএ টেস্ট করতে নিহতদের পরিবারের রক্তের কালেকশন বাব-মাসহ স্বজনদের রক্ত ও নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ডিএনএ রিপোর্ট আসলে যতদ্রত সম্ভব স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।

সোমবার, ১২ জুলাই ২০২১ , ২৮ আষাঢ় ১৪২৮ ১ জিলহজ্জ ১৪৪২

তদন্ত শুরু

যার গাফিলতি তাকেই গ্রেপ্তার : এসপি

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

উদ্ধার কাজ সমাপ্তির একদিন পরও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড কারাখানার সামনে নিখোঁজ শ্রমিকদের খোঁজে ভিড় জমাচ্ছেন স্বজনরা। সকাল থেকেই দেখা গেছে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ভবনটির সামনে কান্নারত স্বজনদের আহাজারি। এ ঘটনায় চলে গেছে ৫২টি তাজা প্রাণ। আহত রয়েছেন অর্ধশতাধিক শ্রমিক। অনেকে রয়েছেন হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে স্বজনদের কাউকে কারখানার মূল ফটকের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হচ্ছে ডিএনএ রিপোর্ট করে লাশ শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করার জন্য। অসহায় নিখোঁজদের স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের লাশটাও বুঝে পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে স্বজনরা হাজির হয়েছেন মর্মান্তিক এক দাবি নিয়ে। অন্তত পক্ষে লাশের অংশবিশেষ হলেও ফেরত চান এবং এ ঘটনায় জড়িডদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান স্বজনরা। এদিকে দুপুরে কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল।

এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্য আনোয়ার হোসেন শাহাবুদ্দিন ফরাজী, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।

তারা বলেন, ৫২ জনের মৃত্যু কোনভাবেই কাম্য নয়, যারা দোষী তাদের আইনের আওতায় আনা হবে, সরকারের পক্ষ থেকে ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যারা এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেক পরিবারকে ২ লাখ ৫০ হাজার করে দেয়া হবে। এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে আইনগত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

তদন্তের কাজ শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস

সকাল দশটা থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অগ্নিকান্ড সংঘটিত ফুড কারখানায় কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তদন্ত দল। গতকাল বিকেলে তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক নূর হাসান সংবাদকে বলেন, শুরুতেই তারা বিভিন্নজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। ছয়তলা ভবনের সবকটি কক্ষ ঘুরে সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন আলামত। ভবনে খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতের জন্য গ্যাস ও বিদ্যুৎ উভয় লাইনই ছিল।

ছিল সহজে দাহ্য বিপুল পরিমাণ বস্তু। তবে সে অনুযায়ী সুবিশাল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অপ্রতুল ছিল বলে জানান তিনি। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকার হাসেম ফুডস লিমিটেডের ছয়তলা ভবনে আগুন লাগে। দীর্ঘ ২২ ঘণ্টা পর ওই আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ১৮টি ইউনিট। এই ঘটনায় মারা গেছেন ৫২ জন। অগ্নিকান্ডের কারণ, উৎপত্তিস্থল, ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন ছিল জানতে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ফায়ার সার্ভিস।

সাতদিনের মধ্যে এই কমিটিকে ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর পৃথক আরও দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব নূর হাসান, ‘আমরা সকাল ১০টায় আজকে আসছি। এবং আমরা এসেই কারখানার লোকজনসহ অনেক শ্রমিকের জবানবন্দি নিয়েছি। এমনকি বাইরের লোকজন ও স্থানীয়য়দেরও জবানবন্দি নিয়েছি। আমাদের অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত আছে। শ্রমিক অসন্তোষ আছে কিনা, বাইরে থেকে কেউ এসে গেট লাগিয়েছে কিনা এসব বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি। পরে আমরা সব মিলিয়ে কনক্লুশনে আসব। কমিটির সবাই মিলে আমরা একত্রিত হয়ে কথা বলব। এরপর আমরা একটা ডিসিশনে আসব। আমাদের হাতে ৭ দিন সময় আছে তদন্তের রিপোর্ট দেয়ার।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাকি অন্য বিষয়গুলো তদন্তের স্বার্থে এখনই বলা যাবে না। তদন্ত শেষ হওয়ার পর বাকি বিষয়গুলো জানাতে পারব।’

যার গাফিলতির তাকেই গ্রেপ্তার : এসপি

আগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনায় পুলিশ দায়ের করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ৮ আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলার তদন্তের কাজ পর্যবেক্ষণসহ রিমান্ডে আনা আসামিদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানান জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম। তিনি বলেন, কারখানাটি পরিদর্শন ও তদারকির কাজে দায়িত্বে থাকা কলকারখানা অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালন করেছে তাদের গাফলতি আছে কিনা সে বিষয়ে বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে তাদের দায়ভারে গাফলতি উঠে আসলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তাদের আইনের আওতায় এনে আদালতে উপস্থাপন করা হবে। তিনি আরও জানান, কারখানাটি নির্মাণে ত্রুটি ছিল। প্রাথমিক তদন্তে শিল্প কারখানা ভবন নির্মাণ করতে যে ধরনের ছাড়পত্র নেয়া প্রয়োজন ছিল তা ছিল না এবং অগ্নিনির্বাপণে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব পাওয়া গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশের ডিএনএ টেস্ট করতে নিহতদের পরিবারের রক্তের কালেকশন বাব-মাসহ স্বজনদের রক্ত ও নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ডিএনএ রিপোর্ট আসলে যতদ্রত সম্ভব স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।