রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্য ৩৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা

২০২১-২২ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংককে ৩৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় করার লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার পরেও সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

চলতি বছরের ৩১ মার্চ শেষে সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। মহামারী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা।

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হুসেইন বলেন, ‘মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিশোধে ছাড় দেয়ার ফলে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ব্যাংকগুলোকে কোন প্রণোদনা বা শাস্তির ব্যবস্থা করেনি। এগুলো ব্যাংকের বার্ষিক মূল্যায়নের দুর্বল দিক।’

২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে বার্ষিক মূল্যায়নসূচক চালু করা হলেও তা কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়য়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ১০ হাজার কোটি টাকা।

বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫০০ কোটি টাকা।

তবে খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার অপরিবর্তিত রয়েছে সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের। গত অর্থবছরের মতোই ২০২১-২২ অর্থবছরে সোনালী ব্যাংকের ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ৭শ’ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১ সালের ৩১ মার্চ শেষে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা।

ব্যাংকিং খাতের ৫৩ হাজার ২৫৮ কোটি টাকার অবলোপনকৃত ঋণ যোগ করলে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের জন্যও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ২০২১-২২ অর্থবছরে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং বেসিক ব্যাংককে আদায় করতে হবে ১৫০ কোটি টাকার অবলোপনকৃত ঋণ।

মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই ২০২১ , ২৯ আষাঢ় ১৪২৮ ২ জিলহজ্জ ১৪৪২

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্য ৩৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

২০২১-২২ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংককে ৩৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় করার লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার পরেও সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

চলতি বছরের ৩১ মার্চ শেষে সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। মহামারী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা।

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হুসেইন বলেন, ‘মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিশোধে ছাড় দেয়ার ফলে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ব্যাংকগুলোকে কোন প্রণোদনা বা শাস্তির ব্যবস্থা করেনি। এগুলো ব্যাংকের বার্ষিক মূল্যায়নের দুর্বল দিক।’

২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে বার্ষিক মূল্যায়নসূচক চালু করা হলেও তা কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়য়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ১০ হাজার কোটি টাকা।

বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫০০ কোটি টাকা।

তবে খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার অপরিবর্তিত রয়েছে সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের। গত অর্থবছরের মতোই ২০২১-২২ অর্থবছরে সোনালী ব্যাংকের ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ৭শ’ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১ সালের ৩১ মার্চ শেষে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা।

ব্যাংকিং খাতের ৫৩ হাজার ২৫৮ কোটি টাকার অবলোপনকৃত ঋণ যোগ করলে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের জন্যও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ২০২১-২২ অর্থবছরে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং বেসিক ব্যাংককে আদায় করতে হবে ১৫০ কোটি টাকার অবলোপনকৃত ঋণ।