৩২ কমিউনিটি ক্লিনিকে নেই আর নেই! সেবা বঞ্চিত রোগী

সিরাজদিখানের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে জনবল সঙ্কট, অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবসহ নানা সমস্যায় জনগণের স্বাস্থ্যসেবা অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। এসব সেবা কেন্দ্রে নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। এমনকি অভাব রয়েছে ওষুধেরও। প্রতিটি ক্লিনিকে আছেন মাত্র একজন হেলথ প্রোভাইডার।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা নির্দিষ্ট সময়ে ক্লিনিকে না এসে ব্যক্তিগত সেবাকেন্দ্রে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। কয়েকজন রোগী বলেন, ডাক্তারদের চেম্বার আছে, তারা সেখানেই থাকেন। সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইনচার্জ দীনেশ চন্দ্র ম-ল বলেন, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে মোট ৩২ কমিউনিটি ক্লিনিক আছে । সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ক্লিনিক খোলা রাখার নির্দেশনা রয়েছে এবং আমরা সেটা মনিটরিং করি। যেহেতু অভিযোগ পাওয়া গেছে সেহেতু আমরা এটা বিশেষভাবে মনিটরিং করব। উত্তর পাউসার কমিউনিটি ক্লিনিকে আড়াই বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে যান উন্নতি রাজবংশী নামের এক গৃহবধূ। তিনি সাংবাদিকদেরকে বলেন, রোদ- বৃষ্টিতে এসব ছোট ভাংগা ক্লিনিকের বারান্দায় থাকা কষ্টকর। এভাবে স্বাস্থ্যসেবা চলতে পারে না। রোগীদের বসারও জায়গা নেই। চিকিৎসা নিতে আসা রোবিয়া আক্তার বলেন, আগের ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন করে দিলে সেবা দেওয়া সহজ হবে। একই গ্রামের আয়েশা আক্তার, রাশিদা বেগম, আলিয়া বেগম একই অভিযোগ করে বলেন, এমন পরিবেশে চিকিৎসা নেওয়াটা খুব কষ্টের।

গরমে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তাঁরা বলেন, বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার এ পদ্ধতিটা খুব কাজের। কিন্তু সেবাপ্রার্থীদের অধিকতর সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। কোনো ভাল শৌচাগার নেই, পানির ব্যবস্থা নেই। এটা কোনো চিকিৎসার পরিবেশ হতে পারে না। উত্তর পাউসার কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডর (সিএইচসিপি ) লুবনা আক্তার বলেন, পর্যাপ্ত জনবল সঙ্কট, অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত উত্তর পাউসার কমিউনিটি ক্লিনিক। ক্লিনিকের ভবনটি বেশ পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ। ক্লিনিকে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি স্বাস্থ্যশিক্ষা দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে রয়েছে জ্বর, ঠান্ডা, গ্যাস্ট্রিক, ডায়রিয়ার চিকিৎসা, টিকা ও কৃমিনাশক ওষুধ দেওয়া। প্রসূতি রোগীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, যেমন ওজন ও প্রেশার মাপা হয়।

দেওয়া হয় আয়রন ও ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ট্যাবলেট। স্বাস্থ্যশিক্ষার মধ্যে রয়েছে পরিবার পরিকল্পনা সেবা এবং গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য-সচেতনতা বাড়নোর কার্যক্রম। কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডর (সিএইচসিপি ) লুবনা আক্তার আরোও জানান, এখন অ্যান্টিবায়োটিকসহ এই ক্লিনিকে ৩০ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আনজুম আরা বেগম সাংবাদিকদেরকে বলেন,পরিত্যক্ত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর পুনর্নিমাণের জন্য বারবার সংশিষ্ট দপ্তরে আবেদন করে আসছি। ক্লিনিকে সিএইচসিপি অনেক কষ্টে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়টি নিয়ে আবারও আবেদন করব।

মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই ২০২১ , ২৯ আষাঢ় ১৪২৮ ২ জিলহজ্জ ১৪৪২

৩২ কমিউনিটি ক্লিনিকে নেই আর নেই! সেবা বঞ্চিত রোগী

গোপাল দাস হৃদয়, সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ)

image

সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) : ডাক্তারসহ জনবল সংকট। স্বাস্থ্যসেবার জন্য এভাবেই দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সেবাগ্রহীতাদের -সংবাদ

সিরাজদিখানের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে জনবল সঙ্কট, অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবসহ নানা সমস্যায় জনগণের স্বাস্থ্যসেবা অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। এসব সেবা কেন্দ্রে নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। এমনকি অভাব রয়েছে ওষুধেরও। প্রতিটি ক্লিনিকে আছেন মাত্র একজন হেলথ প্রোভাইডার।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা নির্দিষ্ট সময়ে ক্লিনিকে না এসে ব্যক্তিগত সেবাকেন্দ্রে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। কয়েকজন রোগী বলেন, ডাক্তারদের চেম্বার আছে, তারা সেখানেই থাকেন। সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইনচার্জ দীনেশ চন্দ্র ম-ল বলেন, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে মোট ৩২ কমিউনিটি ক্লিনিক আছে । সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ক্লিনিক খোলা রাখার নির্দেশনা রয়েছে এবং আমরা সেটা মনিটরিং করি। যেহেতু অভিযোগ পাওয়া গেছে সেহেতু আমরা এটা বিশেষভাবে মনিটরিং করব। উত্তর পাউসার কমিউনিটি ক্লিনিকে আড়াই বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে যান উন্নতি রাজবংশী নামের এক গৃহবধূ। তিনি সাংবাদিকদেরকে বলেন, রোদ- বৃষ্টিতে এসব ছোট ভাংগা ক্লিনিকের বারান্দায় থাকা কষ্টকর। এভাবে স্বাস্থ্যসেবা চলতে পারে না। রোগীদের বসারও জায়গা নেই। চিকিৎসা নিতে আসা রোবিয়া আক্তার বলেন, আগের ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন করে দিলে সেবা দেওয়া সহজ হবে। একই গ্রামের আয়েশা আক্তার, রাশিদা বেগম, আলিয়া বেগম একই অভিযোগ করে বলেন, এমন পরিবেশে চিকিৎসা নেওয়াটা খুব কষ্টের।

গরমে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তাঁরা বলেন, বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার এ পদ্ধতিটা খুব কাজের। কিন্তু সেবাপ্রার্থীদের অধিকতর সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। কোনো ভাল শৌচাগার নেই, পানির ব্যবস্থা নেই। এটা কোনো চিকিৎসার পরিবেশ হতে পারে না। উত্তর পাউসার কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডর (সিএইচসিপি ) লুবনা আক্তার বলেন, পর্যাপ্ত জনবল সঙ্কট, অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত উত্তর পাউসার কমিউনিটি ক্লিনিক। ক্লিনিকের ভবনটি বেশ পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ। ক্লিনিকে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি স্বাস্থ্যশিক্ষা দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে রয়েছে জ্বর, ঠান্ডা, গ্যাস্ট্রিক, ডায়রিয়ার চিকিৎসা, টিকা ও কৃমিনাশক ওষুধ দেওয়া। প্রসূতি রোগীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, যেমন ওজন ও প্রেশার মাপা হয়।

দেওয়া হয় আয়রন ও ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ট্যাবলেট। স্বাস্থ্যশিক্ষার মধ্যে রয়েছে পরিবার পরিকল্পনা সেবা এবং গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য-সচেতনতা বাড়নোর কার্যক্রম। কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডর (সিএইচসিপি ) লুবনা আক্তার আরোও জানান, এখন অ্যান্টিবায়োটিকসহ এই ক্লিনিকে ৩০ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আনজুম আরা বেগম সাংবাদিকদেরকে বলেন,পরিত্যক্ত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর পুনর্নিমাণের জন্য বারবার সংশিষ্ট দপ্তরে আবেদন করে আসছি। ক্লিনিকে সিএইচসিপি অনেক কষ্টে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়টি নিয়ে আবারও আবেদন করব।