বিধিনিষেধ-কঠোরতা উপেক্ষা করে ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ

‘কঠোর লকডাউন’ উপেক্ষা করে ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ। তাই গতকাল রাজধানী থেকে বের হওয়ার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক ও ফেরিঘাটের ছিল গ্রামমুখী মানুষের ভিড়। পথে পথে পুলিশের চেকপোস্ট থাকার পরও ভেঙে ভেঙে ছোট যানবাহনে গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটছেন তারা। যাত্রাপথে স্বাস্থ্যবিধি তো দূরের কথা অনেকের মুখে মাস্কও দেখা যায়নি বলে স্থানীয়রা জানান।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, যারা গ্রামে যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগেই নি¤œ ও স্বল্প আয়ের মানুষ। লকডাউনে কাজ-কাম নেই। এছাড়া সামনে ঈদ তাই আগে-ভাগে ঢাকা ছাড়ছেন এসব মানুষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলামান বিধিনিষেধের দ্বাদশতম দিনে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে ছিল মানুষের ভিড়। সিএনজি, অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্স, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, রিকশা ও ভ্যানে ভেঙে বিভিন্ন স্থানে যেতে দেখা গেছে তাদের।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মোড়ে বিভিন্ন সড়কে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড ও পুলিশর চেকপোস্ট থাকার পরও ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে অনেক যাত্রী চলাচল করতে দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রীরা যাত্রীবাড়ী থেকে রিকশা ও ভ্যানে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড পর্যন্ত যান। সাইনবোর্ড থেকে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে বলে যাত্রীরা জানান।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় আজিজ নামের কুমিল্লার এক যাত্রী বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ^রোড যাব। ঢাকা থেকে কুমিল্লার কোন বাস নেই। তাই রিকশায় সাইনবোর্ড যাব। সেখান থেকে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারে কুমিল্লা যাব। মাঝে মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়। অ্যাম্বুলেন্সে ঝামেলা কম। পুলিশ চেক করে না। এছাড়া প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে পুলিশের ঝামেলা আছে। তাই ভাড়া একটু বেশি নেয়া হয়। প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে ১০০০ টাকা ভাড়া নেয়। তবে অ্যাম্বুলেন্সে ৫০০ টাকা ভাড়া নেয়।’

ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথ সাভারের আমিনবাজার ব্রিজ এলাকায় গতকাল দেখা গেছে গ্রামমুখী মানুষের ভিড়। ঢাকার বাইরের যানবাহনের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে তাদের। প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করতে দেখা গেছে অনেককেই। আমিনবাজার থেকে আরিচা ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে যাত্রীপ্রতি ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। মোটরসাইকেলে জনপ্রতি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা নেয়া হয় বলে যাত্রীরা জানান। পুলিশের বাধার কারণে গাবতলী থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত হেঁটে পার হতে হয় বলে জানান তারা।

সিরাজুল ইসলাম নামের সিরাজগঞ্জের এক যাত্রী জানান, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে আগেভাগেই বাড়ি চলে যাচ্ছি। কিন্তু সরকারের কড়াকড়িতে ভোগান্তি হচ্ছে। আমিনবাজার থেকে সহজেই ঘাট পর্যন্ত যাওয়া যাচ্ছে। ফেরিঘাটে গিয়ে ছোট লঞ্চ, ট্রলারে নদী পাড়ি দেব। নদী পার হতে পারলেই আর কোন চিন্তা নেই।

আলাউদ্দীন নামের পাবনার এক যাত্রী বলেন, ‘বাড়িতে যাচ্ছি অসুস্থ মায়ের জন্য। মা অসুস্থ না থাকলে এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে যেতাম না। মূলত মাকে দেখতেই বাড়ি যাচ্ছি। গাড়ি চলাচল না করায় বিপদে পড়েছি। ফার্মগেট থেকে মোটরসাইকেলে গাবতলী এসেছি। গাবতলী থেকে আমিনবাজার হেঁটে এসেছি। এখান থেকে লেগুনা করে যাব।’

রাজধানীর বিভিন্ন অলি-গলির বেশিরভাগ দোকানপাট ছিল খোলা। বাস-মিনিবাস ছাড়া প্রায় সব ধরনের যানবাহন চলতে দেখা গেছে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে। রাজধানীর পুরানা পল্টন, কমলাপুর, মালিবাগ, শান্তিনগর ও কাকরাইলের প্রধান সড়কে দেখা গেছে প্রাইভেট কার, রিকশা, পণ্যবাহী যানবাহনের সংখা গত কয়েক দিনের তুলনায় অনেক বেশি।

রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় স্বপন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘যেভাবে মানুষজন রাস্তা-ঘাটে চলছে এটা বিপজ্জনক আমাদের সবার জন্য। মুখের মাস্ক গলায় ঝুলানো, মানুষের উপস্থিতিও রাস্তায় বেশি। সরকার লকডাউন ঘোষণা করে এত প্রচার-প্রচাণা, বিধিনিষেধ দিল, তারপরও মানুষ শুনছে কই। আমরা একটা ভয়ঙ্কর বিপদের দিকে এগোচ্ছি।’

পুরানা পল্টন এলাকায় জসিম উদ্দিন নামের এক হোটেল ম্যানেজার বলেন, ‘মানুষজন পার্সেল নিচ্ছে। মাঝে মাঝে অনেকে বসে খেতে চায়। মানা করলে শোনে না। সকালবেলা কিছু লোকজন বসতে দেই। দুটো টেবিল রেখেছি। ১০টার পর আর কাউরে বসতে দেই না। কিন্তু এভাবে আর কয়দিন? রাস্তায় বাস ছাড়া সব চলে। লকডাউন কি আছে?’

ফরিদুল নামের রাজধানীর কাফরুল থানার এক পুলিশ বলেন, ‘লকডাউনে’ মানুষকে ঘরে রাখা কঠিন। দেশে দুই সপ্তাহের ‘লকডাউন’ চলছে এরই মধ্যে বিভিন্ন অজুহাতে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ছে মানুষ। কারণ ছাড়াই যানবাহন নিয়ে রাস্তায় আসায় গতকাল সকাল থেকে প্রায় ৭টি মামালা করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোন কাজ হচ্ছে না।’

মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই ২০২১ , ২৯ আষাঢ় ১৪২৮ ২ জিলহজ্জ ১৪৪২

বিধিনিষেধ-কঠোরতা উপেক্ষা করে ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

‘কঠোর লকডাউন’ উপেক্ষা করে ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ। তাই গতকাল রাজধানী থেকে বের হওয়ার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক ও ফেরিঘাটের ছিল গ্রামমুখী মানুষের ভিড়। পথে পথে পুলিশের চেকপোস্ট থাকার পরও ভেঙে ভেঙে ছোট যানবাহনে গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটছেন তারা। যাত্রাপথে স্বাস্থ্যবিধি তো দূরের কথা অনেকের মুখে মাস্কও দেখা যায়নি বলে স্থানীয়রা জানান।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, যারা গ্রামে যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগেই নি¤œ ও স্বল্প আয়ের মানুষ। লকডাউনে কাজ-কাম নেই। এছাড়া সামনে ঈদ তাই আগে-ভাগে ঢাকা ছাড়ছেন এসব মানুষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলামান বিধিনিষেধের দ্বাদশতম দিনে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে ছিল মানুষের ভিড়। সিএনজি, অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্স, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, রিকশা ও ভ্যানে ভেঙে বিভিন্ন স্থানে যেতে দেখা গেছে তাদের।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মোড়ে বিভিন্ন সড়কে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড ও পুলিশর চেকপোস্ট থাকার পরও ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে অনেক যাত্রী চলাচল করতে দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রীরা যাত্রীবাড়ী থেকে রিকশা ও ভ্যানে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড পর্যন্ত যান। সাইনবোর্ড থেকে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে বলে যাত্রীরা জানান।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় আজিজ নামের কুমিল্লার এক যাত্রী বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ^রোড যাব। ঢাকা থেকে কুমিল্লার কোন বাস নেই। তাই রিকশায় সাইনবোর্ড যাব। সেখান থেকে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারে কুমিল্লা যাব। মাঝে মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়। অ্যাম্বুলেন্সে ঝামেলা কম। পুলিশ চেক করে না। এছাড়া প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে পুলিশের ঝামেলা আছে। তাই ভাড়া একটু বেশি নেয়া হয়। প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে ১০০০ টাকা ভাড়া নেয়। তবে অ্যাম্বুলেন্সে ৫০০ টাকা ভাড়া নেয়।’

ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথ সাভারের আমিনবাজার ব্রিজ এলাকায় গতকাল দেখা গেছে গ্রামমুখী মানুষের ভিড়। ঢাকার বাইরের যানবাহনের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে তাদের। প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করতে দেখা গেছে অনেককেই। আমিনবাজার থেকে আরিচা ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে যাত্রীপ্রতি ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। মোটরসাইকেলে জনপ্রতি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা নেয়া হয় বলে যাত্রীরা জানান। পুলিশের বাধার কারণে গাবতলী থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত হেঁটে পার হতে হয় বলে জানান তারা।

সিরাজুল ইসলাম নামের সিরাজগঞ্জের এক যাত্রী জানান, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে আগেভাগেই বাড়ি চলে যাচ্ছি। কিন্তু সরকারের কড়াকড়িতে ভোগান্তি হচ্ছে। আমিনবাজার থেকে সহজেই ঘাট পর্যন্ত যাওয়া যাচ্ছে। ফেরিঘাটে গিয়ে ছোট লঞ্চ, ট্রলারে নদী পাড়ি দেব। নদী পার হতে পারলেই আর কোন চিন্তা নেই।

আলাউদ্দীন নামের পাবনার এক যাত্রী বলেন, ‘বাড়িতে যাচ্ছি অসুস্থ মায়ের জন্য। মা অসুস্থ না থাকলে এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে যেতাম না। মূলত মাকে দেখতেই বাড়ি যাচ্ছি। গাড়ি চলাচল না করায় বিপদে পড়েছি। ফার্মগেট থেকে মোটরসাইকেলে গাবতলী এসেছি। গাবতলী থেকে আমিনবাজার হেঁটে এসেছি। এখান থেকে লেগুনা করে যাব।’

রাজধানীর বিভিন্ন অলি-গলির বেশিরভাগ দোকানপাট ছিল খোলা। বাস-মিনিবাস ছাড়া প্রায় সব ধরনের যানবাহন চলতে দেখা গেছে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে। রাজধানীর পুরানা পল্টন, কমলাপুর, মালিবাগ, শান্তিনগর ও কাকরাইলের প্রধান সড়কে দেখা গেছে প্রাইভেট কার, রিকশা, পণ্যবাহী যানবাহনের সংখা গত কয়েক দিনের তুলনায় অনেক বেশি।

রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় স্বপন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘যেভাবে মানুষজন রাস্তা-ঘাটে চলছে এটা বিপজ্জনক আমাদের সবার জন্য। মুখের মাস্ক গলায় ঝুলানো, মানুষের উপস্থিতিও রাস্তায় বেশি। সরকার লকডাউন ঘোষণা করে এত প্রচার-প্রচাণা, বিধিনিষেধ দিল, তারপরও মানুষ শুনছে কই। আমরা একটা ভয়ঙ্কর বিপদের দিকে এগোচ্ছি।’

পুরানা পল্টন এলাকায় জসিম উদ্দিন নামের এক হোটেল ম্যানেজার বলেন, ‘মানুষজন পার্সেল নিচ্ছে। মাঝে মাঝে অনেকে বসে খেতে চায়। মানা করলে শোনে না। সকালবেলা কিছু লোকজন বসতে দেই। দুটো টেবিল রেখেছি। ১০টার পর আর কাউরে বসতে দেই না। কিন্তু এভাবে আর কয়দিন? রাস্তায় বাস ছাড়া সব চলে। লকডাউন কি আছে?’

ফরিদুল নামের রাজধানীর কাফরুল থানার এক পুলিশ বলেন, ‘লকডাউনে’ মানুষকে ঘরে রাখা কঠিন। দেশে দুই সপ্তাহের ‘লকডাউন’ চলছে এরই মধ্যে বিভিন্ন অজুহাতে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ছে মানুষ। কারণ ছাড়াই যানবাহন নিয়ে রাস্তায় আসায় গতকাল সকাল থেকে প্রায় ৭টি মামালা করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোন কাজ হচ্ছে না।’