দগ্ধ লাশ কত?

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজিব গ্রুপের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় আগুনে পোড়া লাশের সংখ্যা নিয়ে দ্বিধা শুরু হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে কারখানার ৪র্থ তলা থেকে ৪৯ লাশ উদ্ধার হলেও সিআইডি বলছে তারা ৪৮ ব্যাগ থেকে ৪৮ লাশের আলামত সংগ্রহ করেছে। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের ভাষ্য ছিল তারা একটি ব্যাগে দু’জনের লাশ রেখেছে। সেই হিসাবে ৪৮ ব্যাগে ৪৯ জনের লাশ ছিল।

ফায়ার সার্ভিস যে হিসাবে দিয়েছে তাতে দেখা যায় গত বৃহস্পতিবার আগুন লাগার পর লাফিয়ে পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়। এরপর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা একজনের মৃত্যু হয়। যার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল থেকে। আর কারখানার ৪র্থ তলায় একযোগে ৩৯ জনের লাশ উদ্ধার করেছে তারা। তাদের হিসাব বলছে সব মিলিয়ে প্রাণহানির সংখ্যা ৫২ জন।

সিআইডির ভাষ্য, তারা ৪৮ ব্যাগ থেকে ৪৮ জনের লাশ হিসাবে করেই আলামত নিয়েছে। আর এর বিপরীতে যারা এসে তাদের নিখোঁজ স্বজনদের নাম বলেছেন তাদের নমুনা নেয়া হয়েছে। নমুনা দেয়ার সংখ্যা ৬৮ জনের। ওই ৬৮ জন স্বজনের দেয়া তালিকায় ৪৮ জনের নাম পাওয়া গেছে।

সিআইডির ভাষ্য, তাদরে হিসাব অনুযায়ী ৪৮ লাশের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ ও ৩১ জন নারী। লাশগুলো থেকে ডিএনএ স্যাম্পল গ্রহণের এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। তবে এদের মধ্যে কারও লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। এজন্য পরিচয় নিশ্চিত হতে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের কাজ অব্যাহত রয়েছে।

গত রোববার পর্যন্ত ৪৫ লাশের বিপরীতে ৬৩ জনের নমুনা সংগ্রহের পর গতকাল সিআইডি কার্যালয়ে আরও ৩টি লাশের জন্য ৫ জন নমুনা দিয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গের সামনে থেকে নমুনা সংগ্রহের বুথ উঠিয়ে নেয়া হয়। তখন পর্যন্ত ৪৫টি লাশের বিপরীতে ৬৩ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। নতুন কেউ নমুনা দিতে চাইলে সিআইডি কার্যালয়ে আসার অনুরোধ করা হয়েছিল। গতকাল আরও ৩টি লাশের জন্য ৫ জন নমুনা দিয়েছেন। তারা হলেন নীলফামারির কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা নিহত মো. স্বপন মিয়ার (২৩) বাবা মনকার হোসেন ও তার ভাই মো. মশিউর রহমান, বগুড়া সারিয়াকান্দি এলাকার বাসিন্দা নিহত মোছা. নাজমা খাতুনের বাবা নয়ন মিয়া, মা কল্পনা বেগম ও স্বামী মো. তহিদুল ইসলাম এবং বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের বাসিন্দা নিহত মো. নোমানের বাবা আবদুল মান্নান মাতব্বুর। এ নিয়ে ৪৮ লাশের বিপরীতে গতকাল পর্যন্ত মোট ৬৮ দাবিদারের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হলো।

সূত্র আরও জানায়, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের ৪৮ লাশের মধ্যে কিশোরগঞ্জের ১৮ জন, ভোলার ৫ জন, নোয়াখালীর ৪ জন, নেত্রকোনার ৩ জন, নারায়ণগঞ্জের ২ জন, হবিগঞ্জের ৩ জন, গাইবান্ধার ২ জন, মৌলভী বাজারের একজন, গাজীপুরের একজন, রাজশাহীর একজন, নরসিংদীর একজন, পাবনার একজন, দিনাজপুরের একজন, জামালপুরের একজন, ঢাকার একজন, নীলফামারীর একজন, বগুড়ার একজন ও বরিশালের একজন।

সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার বলেন, গতকাল পর্যন্ত ৪৮ লাশের বিপরীতে ৬৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নতুন আর কেউ নমুনা দিতে চাইলে সেটিও নেয়া হবে। এজন্য কষ্ট করে সিআইডি কার্যালয়ে এসে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

ফায়ার সার্ভিসের হিসাব অনুযায়ী ৪৮ ব্যাগের মধ্যে ৪৯ জনের লাশ ছিল তাহলে একটি লাশ কমল কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ব্যাগ হিসাবে করে আলামত নিয়েছি। আলামত পরীক্ষার পর বুঝা যাবে এক ব্যাগে দুটি লাশ ছিল কিনা। তবে আমরা ৪৮ জন হিসাবে করেই নমুনা নিয়েছি।

তবে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) দেবাশীষ বর্মণ জানান, তারা একটি কক্ষ থেকে ৪৯টি লাশ উদ্ধার করেছেন। এর মধ্যে একটি ব্যাগে দুটি লাশ নেয়া হয়। কারণ ওই লাশগুলো কুকরিয়ে গিয়েছিল। লাশ হিসাব করে প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন লাশ কমল কিভাবে সেটি আমরাও বুঝতে পারছি না। বিষয়টি প্রশাসনের কাছে হিসাব আছে।

প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই বিকেলে রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকা- ঘটে। ঘটনার প্রথম দিন তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশত শ্রমিক। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর গত ৯ জুলাই সকালে ওই ভবনের চারতলা থেকে ৪৯ জনের অঙ্গার হওয়া লাশ উদ্ধার করে ঢামেক মর্গে পাঠায় ফায়ার সার্ভিস। সে হিসাবে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে। কিন্তু লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পর সিআইডি জানায়, ৪৯ নয় ঢামেক মর্গে ৪৮টি লাশ ছিল। সে হিসাবে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫১ জন। তবে কোন লাশ বহনকারী ব্যাগে দুটি লাশ থাকলে সেটি নমুনা পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যাবে।

মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই ২০২১ , ২৯ আষাঢ় ১৪২৮ ২ জিলহজ্জ ১৪৪২

রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি

দগ্ধ লাশ কত?

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজিব গ্রুপের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় আগুনে পোড়া লাশের সংখ্যা নিয়ে দ্বিধা শুরু হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে কারখানার ৪র্থ তলা থেকে ৪৯ লাশ উদ্ধার হলেও সিআইডি বলছে তারা ৪৮ ব্যাগ থেকে ৪৮ লাশের আলামত সংগ্রহ করেছে। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের ভাষ্য ছিল তারা একটি ব্যাগে দু’জনের লাশ রেখেছে। সেই হিসাবে ৪৮ ব্যাগে ৪৯ জনের লাশ ছিল।

ফায়ার সার্ভিস যে হিসাবে দিয়েছে তাতে দেখা যায় গত বৃহস্পতিবার আগুন লাগার পর লাফিয়ে পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়। এরপর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা একজনের মৃত্যু হয়। যার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল থেকে। আর কারখানার ৪র্থ তলায় একযোগে ৩৯ জনের লাশ উদ্ধার করেছে তারা। তাদের হিসাব বলছে সব মিলিয়ে প্রাণহানির সংখ্যা ৫২ জন।

সিআইডির ভাষ্য, তারা ৪৮ ব্যাগ থেকে ৪৮ জনের লাশ হিসাবে করেই আলামত নিয়েছে। আর এর বিপরীতে যারা এসে তাদের নিখোঁজ স্বজনদের নাম বলেছেন তাদের নমুনা নেয়া হয়েছে। নমুনা দেয়ার সংখ্যা ৬৮ জনের। ওই ৬৮ জন স্বজনের দেয়া তালিকায় ৪৮ জনের নাম পাওয়া গেছে।

সিআইডির ভাষ্য, তাদরে হিসাব অনুযায়ী ৪৮ লাশের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ ও ৩১ জন নারী। লাশগুলো থেকে ডিএনএ স্যাম্পল গ্রহণের এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। তবে এদের মধ্যে কারও লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। এজন্য পরিচয় নিশ্চিত হতে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের কাজ অব্যাহত রয়েছে।

গত রোববার পর্যন্ত ৪৫ লাশের বিপরীতে ৬৩ জনের নমুনা সংগ্রহের পর গতকাল সিআইডি কার্যালয়ে আরও ৩টি লাশের জন্য ৫ জন নমুনা দিয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গের সামনে থেকে নমুনা সংগ্রহের বুথ উঠিয়ে নেয়া হয়। তখন পর্যন্ত ৪৫টি লাশের বিপরীতে ৬৩ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। নতুন কেউ নমুনা দিতে চাইলে সিআইডি কার্যালয়ে আসার অনুরোধ করা হয়েছিল। গতকাল আরও ৩টি লাশের জন্য ৫ জন নমুনা দিয়েছেন। তারা হলেন নীলফামারির কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা নিহত মো. স্বপন মিয়ার (২৩) বাবা মনকার হোসেন ও তার ভাই মো. মশিউর রহমান, বগুড়া সারিয়াকান্দি এলাকার বাসিন্দা নিহত মোছা. নাজমা খাতুনের বাবা নয়ন মিয়া, মা কল্পনা বেগম ও স্বামী মো. তহিদুল ইসলাম এবং বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের বাসিন্দা নিহত মো. নোমানের বাবা আবদুল মান্নান মাতব্বুর। এ নিয়ে ৪৮ লাশের বিপরীতে গতকাল পর্যন্ত মোট ৬৮ দাবিদারের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হলো।

সূত্র আরও জানায়, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের ৪৮ লাশের মধ্যে কিশোরগঞ্জের ১৮ জন, ভোলার ৫ জন, নোয়াখালীর ৪ জন, নেত্রকোনার ৩ জন, নারায়ণগঞ্জের ২ জন, হবিগঞ্জের ৩ জন, গাইবান্ধার ২ জন, মৌলভী বাজারের একজন, গাজীপুরের একজন, রাজশাহীর একজন, নরসিংদীর একজন, পাবনার একজন, দিনাজপুরের একজন, জামালপুরের একজন, ঢাকার একজন, নীলফামারীর একজন, বগুড়ার একজন ও বরিশালের একজন।

সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার বলেন, গতকাল পর্যন্ত ৪৮ লাশের বিপরীতে ৬৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নতুন আর কেউ নমুনা দিতে চাইলে সেটিও নেয়া হবে। এজন্য কষ্ট করে সিআইডি কার্যালয়ে এসে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

ফায়ার সার্ভিসের হিসাব অনুযায়ী ৪৮ ব্যাগের মধ্যে ৪৯ জনের লাশ ছিল তাহলে একটি লাশ কমল কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ব্যাগ হিসাবে করে আলামত নিয়েছি। আলামত পরীক্ষার পর বুঝা যাবে এক ব্যাগে দুটি লাশ ছিল কিনা। তবে আমরা ৪৮ জন হিসাবে করেই নমুনা নিয়েছি।

তবে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) দেবাশীষ বর্মণ জানান, তারা একটি কক্ষ থেকে ৪৯টি লাশ উদ্ধার করেছেন। এর মধ্যে একটি ব্যাগে দুটি লাশ নেয়া হয়। কারণ ওই লাশগুলো কুকরিয়ে গিয়েছিল। লাশ হিসাব করে প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন লাশ কমল কিভাবে সেটি আমরাও বুঝতে পারছি না। বিষয়টি প্রশাসনের কাছে হিসাব আছে।

প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই বিকেলে রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকা- ঘটে। ঘটনার প্রথম দিন তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশত শ্রমিক। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর গত ৯ জুলাই সকালে ওই ভবনের চারতলা থেকে ৪৯ জনের অঙ্গার হওয়া লাশ উদ্ধার করে ঢামেক মর্গে পাঠায় ফায়ার সার্ভিস। সে হিসাবে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে। কিন্তু লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পর সিআইডি জানায়, ৪৯ নয় ঢামেক মর্গে ৪৮টি লাশ ছিল। সে হিসাবে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫১ জন। তবে কোন লাশ বহনকারী ব্যাগে দুটি লাশ থাকলে সেটি নমুনা পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যাবে।