দেশে জঙ্গি কার্যক্রম সক্রিয় হওয়ার নেপথ্যে কাজ করছে নব্য জেএমবির কথিত মাহাদী হাসান ওরফে আবু আল বাঙাল ওরফে জন। আত্মগোপনে থাকা জন নব্য জেএমবির আমির জন ‘স্লিপার সেল’ (ঘুমন্ত) ভিত্তিক ফরমেটে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এসব সেলের সদস্যদের রিক্রুট, প্রশিক্ষণ, হামলার জন্য প্রস্তুত করাসহ করণীয় বিষয়ে অনলাইনে নির্দেশনা দিচ্ছেন। পুলিশের কাছে তার অবস্থান এখনও পরিষ্কার নয়। গত রোববার নারায়ণগঞ্জের দুটি আস্তানায় অভিযান এবং দুই সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
গত রোববার রাতে ডিএমপির সিটিটিসি ইউনিট বোম ডিস্পোজাল টিম এবং স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের পৃথক দুটি ইউনিট নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালায়। সে অভিযানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে আটক করা হয় আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে ডেভিড কিলারকে। আরেকটি টিম কেরানীগঞ্জ থেকে আটক করে মো. কাউসার হোসেন ওরফে ওসামাকে। সিটিটিসির ভাষ্য, কিলার ডেভিড আবদুল্লাহ আল মামুনের সাংগঠনিক নাম এবং ওসামা মো. কাউসার হোসেনের সাংগঠনিক নাম। এদের মধ্যে মামুন সামরিক শাখার সদস্য এবং বোমা তৈরি করত। অন্যদিকে কাউসার সামরিক শাখা এবং বোমা তৈরির প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করত। তাদের দেয়া তথ্যে আড়াই হাজার এবং বন্দর থানা এলাকায় দুটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে জঙ্গিরা আস্তানা বানিয়ে বোমা তৈরি করত। অভিযানে দুই আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা উদ্ধার হয়।
সিটিটিসি বলছে, নব্য জেএমবি এখন স্লিপার সেলে বিভক্ত হয়ে কাজ করছে। এক সেলের সঙ্গে অন্য সেলের কোন যোগাযোগ নেই। সব সেলগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন কথিত আমির জন। যিনি আবু আল বাঙাল, মাহাদী হাসান নামেও পরিচিত। তার অবস্থান কখনও সিরিয়ায় কখনও ইরাকের কোন স্থানে জানা যায়। তবে সে বাংলাদেশে আছে কিনা এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি গোয়েন্দারা।
একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জন ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে সিরিয়ায় যায় জেহাদের উদ্দেশে। সেখানে সে প্রশিক্ষণও নেয়। সেখান থেকে সে নব্য জেএমবিকে সংগঠিত করার কাজটি করছে বলে তথ্য রয়েছে। তার মূল পরিচয় এখনও পুলিশের কাছে পরিষ্কার নয়। আবু বাঙাল, মাহাদী হাসান, জন সবই সাংগঠনিক নাম।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে আগের রাতের দুই অভিযান নিয়ে কথা বলেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত ১৭ মে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতর থেকে একটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে গত রোববার বিকেল ৪টায় যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে ডেভিড কিলারকে একটি মোটরসাইকেলসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এই মোটরসাইকেলটি নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে যে বোমা রাখা হয়েছিল তা পরিবহনে ব্যবহৃত হয়েছিল।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মামুনের তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার নোয়াগাঁও এলাকার জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে ৩টি শক্তিশালী আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ঘটনাস্থল হতে ৩০০ গ্রাম লাল রংয়ের বিষ্ফোরক জাতীয় পাউডার, ৭টি বিউটেন গ্যাসের ক্যান, ১ সেট রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস, ২ প্যাকেট ছোট সাইজের বিয়ারিং বল, ৫০০টি ক্রিসমাস বাল্ব, ১ রোল ২ ইঞ্চি সাদা কার্টন টেপ ও ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেলটি নব্য জেএমবির সাংগঠনিক কাজে ব্যবহার করা হতো। পরবর্তী সময়ে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট বোমা ৩টি নিষ্ক্রিয় করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুন জানিয়েছে, ওই বাসায় সে তার দুই সহযোগী আল বাঙাল ওরফে ক্যাপ্টেন খাব্বাব এবং আবু আদনানকে সঙ্গে নিয়ে বোমা তৈরি করত। আগের বোমাটিও তারা তৈরি করেছিল। তাদের দেয়া তথ্যে মামুনের বাসায় অভিযান চালিয়ে চালু অবস্থায় ৩টি আইইডি পাওয়া যায়। সেগুলো বোম নিষ্ক্রিয়করণ টিম নিষ্ক্রিয় করার সময় বিকট শব্দও হয়েছিল।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, গত ৩ দিন আগে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ মেজর বামছি ওরফে বামছি বারেকসহ ৩ জঙ্গিকে আটক করে। সে ছিল বোমা তৈরির কারিগর। বামছি বারেককে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের প্রশিক্ষক হিসেবে মো. কাউসার হোসেন ওরফে ওসামার নাম বেরিয়ে আসে। স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ রোববার রাত ৮টায় কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে ওসামাকে গ্রেপ্তার করে। ওসামা তখন জানিয়েছে, সে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার কাজীপাড়া এলাকায় একটি মসজিদে চাকরি করে। মসজিদের পাশে তার একটি বাসা আছে। সেই বাসায় বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি নিজেও বোমা তৈরি করে। সেখান থেকেই সে অনলাইনে অফলাইনে বিভিন্ন গ্রুপকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
‘তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বন্দর থানার কাজীপাড়া এলাকায় অন্য জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে ১১ ইঞ্চি লম্বা বোমা তৈরির জিআই পাইপ, ২টি গ্রেনেড তৈরির জিআই বক্স, ৪টি রিমোট কন্ট্রোল ও ২টি জিহাদি বইসহ কিছু বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়’।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃত মো. কাউসার হোসেন ওরফে মেজর ওসামা নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সে ওই সংগঠনের সামরিক শাখার অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে অনলাইনে ও অফলাইনে যোগাযোগ রক্ষা করে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিত। বাংলাদেশের নব্য জেএমবির আমির মাহাদী হাসান ওরফে আবু আব্বাস আল বাঙালের সঙ্গে সে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত।
সিসিটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, মামুনের জন্ম সিরাজগঞ্জে। কিন্তু পড়াশুনা ও বড় হয়ে উঠা নানাবাড়ি লালমনিরহাটে। সেখানে একটি মাদ্রাসা থেকে সে পড়াশুনা করে দেড়বছর আগে আড়াইহাজার এলাকায় একটি মসজিদে মোয়াজ্জিন হিসেবে চাকরি নেয়। সেখান থেকে সে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে বলে ধারণা তাদের। মামুন নিজে বোমা তৈরি করতে জানত এবং মসজিদের পাশে যে বাসাটি সে ভাড়া নিয়েছিল সেখানে সে বোমা তৈরি করত। ১৭ মে উদ্ধার হওয়া বোমাটিও ওই বাসার মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। তার দেয়া তথ্যে ওই বাসা থেকে তৈরি করা ৩টি ইমপ্রোভাইজড এক্সপোসিভ ডিভাইসসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। আস্তানায় তাদের বোমা তৈরির কৌশল একেবারেই নতুন। তারা ম্যাচ এবং মরিচিকা বাতির বারুদ ব্যবহার করে শাক্তিশালী বোমা তৈরিও কৌশল রপ্ত করেছে যা একেবারেই নতুন পদ্ধতি।
‘ওসামার বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে’। ওসামার সঙ্গে নব্য জেএমবির আমির নিয়মিত যোগাযোগ থাকারও তথ্য মিলেছে।
সিটিটিসির সূত্র জানায়, আড়াই হাজারের আস্তানায় মামুনের দুই সহযোগী আবু আদনান এবং আল বাঙাল ওরফে ক্যাপ্টেন খাব্বাবকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাদের আস্তানা থেকে যেসব আইইডি উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলো পুলিশের কোন স্থাপনায় গত ১৭ মে যেভাবে রাখা হয়েছিল সেভাবেই রেখে বিস্ফোরণ ঘটনানোর টার্গেট ছিল।
এ ঘটনায় বন্দর থানায় ও আড়াই হাজার থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় মামুন ও কাউসারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড হেফাজতে নেয়ার আবেদন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই ২০২১ , ২৯ আষাঢ় ১৪২৮ ২ জিলহজ্জ ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
দেশে জঙ্গি কার্যক্রম সক্রিয় হওয়ার নেপথ্যে কাজ করছে নব্য জেএমবির কথিত মাহাদী হাসান ওরফে আবু আল বাঙাল ওরফে জন। আত্মগোপনে থাকা জন নব্য জেএমবির আমির জন ‘স্লিপার সেল’ (ঘুমন্ত) ভিত্তিক ফরমেটে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এসব সেলের সদস্যদের রিক্রুট, প্রশিক্ষণ, হামলার জন্য প্রস্তুত করাসহ করণীয় বিষয়ে অনলাইনে নির্দেশনা দিচ্ছেন। পুলিশের কাছে তার অবস্থান এখনও পরিষ্কার নয়। গত রোববার নারায়ণগঞ্জের দুটি আস্তানায় অভিযান এবং দুই সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
গত রোববার রাতে ডিএমপির সিটিটিসি ইউনিট বোম ডিস্পোজাল টিম এবং স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের পৃথক দুটি ইউনিট নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালায়। সে অভিযানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে আটক করা হয় আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে ডেভিড কিলারকে। আরেকটি টিম কেরানীগঞ্জ থেকে আটক করে মো. কাউসার হোসেন ওরফে ওসামাকে। সিটিটিসির ভাষ্য, কিলার ডেভিড আবদুল্লাহ আল মামুনের সাংগঠনিক নাম এবং ওসামা মো. কাউসার হোসেনের সাংগঠনিক নাম। এদের মধ্যে মামুন সামরিক শাখার সদস্য এবং বোমা তৈরি করত। অন্যদিকে কাউসার সামরিক শাখা এবং বোমা তৈরির প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করত। তাদের দেয়া তথ্যে আড়াই হাজার এবং বন্দর থানা এলাকায় দুটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে জঙ্গিরা আস্তানা বানিয়ে বোমা তৈরি করত। অভিযানে দুই আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা উদ্ধার হয়।
সিটিটিসি বলছে, নব্য জেএমবি এখন স্লিপার সেলে বিভক্ত হয়ে কাজ করছে। এক সেলের সঙ্গে অন্য সেলের কোন যোগাযোগ নেই। সব সেলগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন কথিত আমির জন। যিনি আবু আল বাঙাল, মাহাদী হাসান নামেও পরিচিত। তার অবস্থান কখনও সিরিয়ায় কখনও ইরাকের কোন স্থানে জানা যায়। তবে সে বাংলাদেশে আছে কিনা এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি গোয়েন্দারা।
একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জন ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে সিরিয়ায় যায় জেহাদের উদ্দেশে। সেখানে সে প্রশিক্ষণও নেয়। সেখান থেকে সে নব্য জেএমবিকে সংগঠিত করার কাজটি করছে বলে তথ্য রয়েছে। তার মূল পরিচয় এখনও পুলিশের কাছে পরিষ্কার নয়। আবু বাঙাল, মাহাদী হাসান, জন সবই সাংগঠনিক নাম।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে আগের রাতের দুই অভিযান নিয়ে কথা বলেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত ১৭ মে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতর থেকে একটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে গত রোববার বিকেল ৪টায় যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে ডেভিড কিলারকে একটি মোটরসাইকেলসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এই মোটরসাইকেলটি নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে যে বোমা রাখা হয়েছিল তা পরিবহনে ব্যবহৃত হয়েছিল।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মামুনের তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার নোয়াগাঁও এলাকার জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে ৩টি শক্তিশালী আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ঘটনাস্থল হতে ৩০০ গ্রাম লাল রংয়ের বিষ্ফোরক জাতীয় পাউডার, ৭টি বিউটেন গ্যাসের ক্যান, ১ সেট রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস, ২ প্যাকেট ছোট সাইজের বিয়ারিং বল, ৫০০টি ক্রিসমাস বাল্ব, ১ রোল ২ ইঞ্চি সাদা কার্টন টেপ ও ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেলটি নব্য জেএমবির সাংগঠনিক কাজে ব্যবহার করা হতো। পরবর্তী সময়ে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট বোমা ৩টি নিষ্ক্রিয় করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুন জানিয়েছে, ওই বাসায় সে তার দুই সহযোগী আল বাঙাল ওরফে ক্যাপ্টেন খাব্বাব এবং আবু আদনানকে সঙ্গে নিয়ে বোমা তৈরি করত। আগের বোমাটিও তারা তৈরি করেছিল। তাদের দেয়া তথ্যে মামুনের বাসায় অভিযান চালিয়ে চালু অবস্থায় ৩টি আইইডি পাওয়া যায়। সেগুলো বোম নিষ্ক্রিয়করণ টিম নিষ্ক্রিয় করার সময় বিকট শব্দও হয়েছিল।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, গত ৩ দিন আগে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ মেজর বামছি ওরফে বামছি বারেকসহ ৩ জঙ্গিকে আটক করে। সে ছিল বোমা তৈরির কারিগর। বামছি বারেককে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের প্রশিক্ষক হিসেবে মো. কাউসার হোসেন ওরফে ওসামার নাম বেরিয়ে আসে। স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ রোববার রাত ৮টায় কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে ওসামাকে গ্রেপ্তার করে। ওসামা তখন জানিয়েছে, সে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার কাজীপাড়া এলাকায় একটি মসজিদে চাকরি করে। মসজিদের পাশে তার একটি বাসা আছে। সেই বাসায় বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি নিজেও বোমা তৈরি করে। সেখান থেকেই সে অনলাইনে অফলাইনে বিভিন্ন গ্রুপকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
‘তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বন্দর থানার কাজীপাড়া এলাকায় অন্য জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে ১১ ইঞ্চি লম্বা বোমা তৈরির জিআই পাইপ, ২টি গ্রেনেড তৈরির জিআই বক্স, ৪টি রিমোট কন্ট্রোল ও ২টি জিহাদি বইসহ কিছু বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়’।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃত মো. কাউসার হোসেন ওরফে মেজর ওসামা নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সে ওই সংগঠনের সামরিক শাখার অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে অনলাইনে ও অফলাইনে যোগাযোগ রক্ষা করে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিত। বাংলাদেশের নব্য জেএমবির আমির মাহাদী হাসান ওরফে আবু আব্বাস আল বাঙালের সঙ্গে সে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত।
সিসিটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, মামুনের জন্ম সিরাজগঞ্জে। কিন্তু পড়াশুনা ও বড় হয়ে উঠা নানাবাড়ি লালমনিরহাটে। সেখানে একটি মাদ্রাসা থেকে সে পড়াশুনা করে দেড়বছর আগে আড়াইহাজার এলাকায় একটি মসজিদে মোয়াজ্জিন হিসেবে চাকরি নেয়। সেখান থেকে সে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে বলে ধারণা তাদের। মামুন নিজে বোমা তৈরি করতে জানত এবং মসজিদের পাশে যে বাসাটি সে ভাড়া নিয়েছিল সেখানে সে বোমা তৈরি করত। ১৭ মে উদ্ধার হওয়া বোমাটিও ওই বাসার মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। তার দেয়া তথ্যে ওই বাসা থেকে তৈরি করা ৩টি ইমপ্রোভাইজড এক্সপোসিভ ডিভাইসসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। আস্তানায় তাদের বোমা তৈরির কৌশল একেবারেই নতুন। তারা ম্যাচ এবং মরিচিকা বাতির বারুদ ব্যবহার করে শাক্তিশালী বোমা তৈরিও কৌশল রপ্ত করেছে যা একেবারেই নতুন পদ্ধতি।
‘ওসামার বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে’। ওসামার সঙ্গে নব্য জেএমবির আমির নিয়মিত যোগাযোগ থাকারও তথ্য মিলেছে।
সিটিটিসির সূত্র জানায়, আড়াই হাজারের আস্তানায় মামুনের দুই সহযোগী আবু আদনান এবং আল বাঙাল ওরফে ক্যাপ্টেন খাব্বাবকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাদের আস্তানা থেকে যেসব আইইডি উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলো পুলিশের কোন স্থাপনায় গত ১৭ মে যেভাবে রাখা হয়েছিল সেভাবেই রেখে বিস্ফোরণ ঘটনানোর টার্গেট ছিল।
এ ঘটনায় বন্দর থানায় ও আড়াই হাজার থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় মামুন ও কাউসারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড হেফাজতে নেয়ার আবেদন করা হয়েছে।