ইরাকে করোনা হাসপাতালে আগুন, নিহত ৬৪

ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলীয় নাসিরিয়া শহরের আল-হোসেন হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ৬৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ১০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

দেশটিতে এ নিয়ে গত তিন মাসে দ্বিতীয়বারের মতো এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। গত এপ্রিলে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের একটি কোভিড হাসপাতালে আগুন লেগে অন্তত ৮২ রোগীর মৃত্যু হয়। ইবনে খাতিব হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) অক্সিজেন ট্যাংক বিস্ফোরিত হয়ে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আহত হয় আরও অনেকে। ঘটনার জেরে পদত্যাগ করেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসান আল-তামিমি।

কর্মকর্তারা অগ্নিকাণ্ডের জন্য সর্ট সার্কিটকে দায়ী করলেও বিস্তারিত কিছু জানাচ্ছেন না। আরেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দাবি, অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে পোড়া দেহ বের করে আনতে দেখা গেছে উদ্ধারকর্মীদের।

অগ্নিকাণ্ডের পর স্থানীয়রা হাসপাতালের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করে। সোশাল মিডিয়ায় অনেকে কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবি তোলেন। ক্ষুব্ধ স্বজনেরা হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। আগুন দেয়া হয়েছে পুলিশের দুটি গাড়িতে। নিহতদের সারিতে স্বজনের মরদেহ খুঁজতে এক তরুণ বলেন, আগুন এবং নিরীহ রোগীদের হত্যায় দায়ী দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। আমার বাবার মরদেহ কই?

স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র হায়দার আল জামিলি বলেন, কোভিড আইসোলেশন ওয়ার্ডে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। হতাহতরা পুড়ে মারা গেছে ভেতরে এখনও তল্লাশি চলছে। তিনি জানান, এখনও ভবনে অনেকে আটকা থাকতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনেক রোগী এখনও নিখোঁজ থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। নিহতদের মধ্যে দুই স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

নাসিরিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আল-হুসেন করোনাভাইরাস হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণের পর তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তবে ধোঁয়ার কারণে পুড়ে যাওয়া ওয়ার্ডে প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে আল-হুসেন হাসপাতালের উপর দিয়ে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তফা আল-খাদিমি এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, আগুনের ঘটনায় জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে তার কার্যালয়।

হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর দায়ীদের তীব্র সমালোচনা করেছেন ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ আল-হাবলৌসি। টুইটারে দেয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, হাসপাতালে আগুন লাগার ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে, ইরাকিদের জীবন রক্ষায় দায়িত্বশীলরা ব্যর্থ। এ ধরনের বিপর্যয়কর ব্যর্থতার অবসান করার এটাই উপযুক্ত সময় বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১৭ হাজারের বেশি মানুষের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চার কোটি নাগরিকের এই দেশে করোনাভাইরাসের টিকার অন্তত এক ডোজ পাওয়া মানুষের সংখ্যা ১০ লাখের মতো।

বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১ , ৩০ আষাঢ় ১৪২৮ ৩ জিলহজ্জ ১৪৪২

ইরাকে করোনা হাসপাতালে আগুন, নিহত ৬৪

image

দেশটির নাসিরিয়া শহরের আল-হোসেন হাসপাতালে অগ্নিকা-ের ঘটনায় নিহত একটি ব্যক্তি মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে -রয়টার্স

ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলীয় নাসিরিয়া শহরের আল-হোসেন হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ৬৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ১০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

দেশটিতে এ নিয়ে গত তিন মাসে দ্বিতীয়বারের মতো এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। গত এপ্রিলে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের একটি কোভিড হাসপাতালে আগুন লেগে অন্তত ৮২ রোগীর মৃত্যু হয়। ইবনে খাতিব হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) অক্সিজেন ট্যাংক বিস্ফোরিত হয়ে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আহত হয় আরও অনেকে। ঘটনার জেরে পদত্যাগ করেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসান আল-তামিমি।

কর্মকর্তারা অগ্নিকাণ্ডের জন্য সর্ট সার্কিটকে দায়ী করলেও বিস্তারিত কিছু জানাচ্ছেন না। আরেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দাবি, অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে পোড়া দেহ বের করে আনতে দেখা গেছে উদ্ধারকর্মীদের।

অগ্নিকাণ্ডের পর স্থানীয়রা হাসপাতালের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করে। সোশাল মিডিয়ায় অনেকে কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবি তোলেন। ক্ষুব্ধ স্বজনেরা হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। আগুন দেয়া হয়েছে পুলিশের দুটি গাড়িতে। নিহতদের সারিতে স্বজনের মরদেহ খুঁজতে এক তরুণ বলেন, আগুন এবং নিরীহ রোগীদের হত্যায় দায়ী দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। আমার বাবার মরদেহ কই?

স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র হায়দার আল জামিলি বলেন, কোভিড আইসোলেশন ওয়ার্ডে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। হতাহতরা পুড়ে মারা গেছে ভেতরে এখনও তল্লাশি চলছে। তিনি জানান, এখনও ভবনে অনেকে আটকা থাকতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনেক রোগী এখনও নিখোঁজ থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। নিহতদের মধ্যে দুই স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

নাসিরিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আল-হুসেন করোনাভাইরাস হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণের পর তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তবে ধোঁয়ার কারণে পুড়ে যাওয়া ওয়ার্ডে প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে আল-হুসেন হাসপাতালের উপর দিয়ে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তফা আল-খাদিমি এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, আগুনের ঘটনায় জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে তার কার্যালয়।

হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর দায়ীদের তীব্র সমালোচনা করেছেন ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ আল-হাবলৌসি। টুইটারে দেয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, হাসপাতালে আগুন লাগার ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে, ইরাকিদের জীবন রক্ষায় দায়িত্বশীলরা ব্যর্থ। এ ধরনের বিপর্যয়কর ব্যর্থতার অবসান করার এটাই উপযুক্ত সময় বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১৭ হাজারের বেশি মানুষের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চার কোটি নাগরিকের এই দেশে করোনাভাইরাসের টিকার অন্তত এক ডোজ পাওয়া মানুষের সংখ্যা ১০ লাখের মতো।