কাল থেকে চলবে গণপরিবহন, খোলা থাকবে দোকানপাট, শপিংমল

ঈদের পর ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন থাকবে সারাদেশে

বৃহস্পতিবার থেকে ‘স্বাস্থ্যবিধি’ মেনে চলবে গণপরিবহন, খোলা থাকবে দোকানপাট-শপিংমল। কোরবানির ঈদের কারণে ৮ দিনের জন্য বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। আগামী ২১ জুলাই বাংলাদেশে উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহার পর ১৪ দিনের ‘কঠোর-লকডাউন’ থাকবে সারাদেশে।

ঈদের পর আগামী ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৪ দিন ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সময় গণপরিবহনসহ সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। গার্মেন্টসসহ বন্ধ থাকবে সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা ও দোকানপাট-শপিংমল। গতকাল এক প্রজ্ঞাপনে এই নির্দেশনা জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘ঈদ উদযাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ পূর্ববর্তী ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাই ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে।

তবে এই সময়েও জনগণকে সব অবস্থায় সতর্ক থাকতে, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি ‘কঠোরভাবে’ অনুসরণ করতে বলেছে সরকার। ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত আবার কঠোর বিধিনিষেধ মানতে হবে।

যেসব বিধিনিষেধ : সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে।

সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক [বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি], রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

ব্যাংকিং/বীমা/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাপ্তরিক কাজ ভার্চুয়ালি (ই-নথি, ই- মেইল, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যম) সম্পন্ন করবেন।

আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন/বিক্রয়, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি করপোরেশন/পৌরসভা (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।

জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, কভার্ডভ্যান কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। এতদিন এই সময় ছিল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। খাবারের দোকান, হোটেল- রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (অনলাইন/টেকওয়ে) খাবার বিক্রি করতে পারবে। বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল বন্দর এবং সংশ্লিষ্ট অফিস নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।

অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনভাবে বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে যারা করোনাভাইরাসের টিকার তারিখ পেয়েছেন, তারা টিকা কার্ড দেখিয়ে নির্ধারিত দিনে টিকাকেন্দ্রে যাতায়াত করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট দেখিয়ে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন।

বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকতার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনা করে যথোপযুক্ত হলে ঈদের নামাজ মসজিদ, ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় আদায়ের নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় বিশেষ কোন কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবে।

করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে গত ১ জুলাই সাতদিনের ‘লকডাউন’ দেয় সরকার। এরপর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত ‘লকডাউন’ বাড়িয়ে গত ৫ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে ২১টি বিধিনিষেধ জারি করে সরকার।

ঈদের আগে ৩ দিন ব্যাংক চলবে ১০টা-৪টা

লকডাউন শিথিল করায় স্বাভাবিক সময়ে ফিরছে ব্যাংক লেনদেন। ১৫, ১৮ ও ১৯ জুলাই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা থাকবে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, লেনদেন পরবর্তী অন্যান্য কাজের জন্য ৬টা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা রাখা যাবে। সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন ফিরে এলে ২৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত ব্যাংক খোলা থাকবে সকাল ১০টা-দেড়টা। আর লেনদেন পরবর্তী অন্যান্য কাজের জন্য ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে ব্যাংক।

ঈদের আগে তৈরি পোশাক শিল্পের সুবিধায় ঢাকা মহানগরী, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, ভালুকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে অবস্থিত তফসিলি ব্যাংকের তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো ১৭ ও ২০ জুলাই খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ছুটির এই দুই দিনে শাখাগুলোতে লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত।

কাল থেকে চলবে বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও বিমান সার্ভিস

লকডাউন শিথিল হওয়ায় ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ছয়টা পর্যন্ত সারাদেশের বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও বিমান সার্ভিস চলাচল করবে। এ সময় ধারণ ক্ষমতায় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গতকাল নৌ-মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল লঞ্চসহ সারাদেশের নৌযান চলাচল করবে। এ সময় ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে এবং যাত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের মাস্ক পরিধান ও কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে নৌযান চলাচলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঈদের পরে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে ২৩ জুলাই সকাল ছয়টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত যাত্রীবাহী সব নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।

অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী নৌযানের মালিক, মাস্টার, ড্রাইভার, স্টাফ, যাত্রীসাধারণ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা মেনে চলতে বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হয়েছে। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

চলবে ৩৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন

বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ৩৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন ও ১৯ জোড়া লোকাল মেইল ট্রেন চলাচল করবে। সীমিত আকারে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ট্রেন পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়েছে রেলওয়ে। আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট শুধু অনলাইনে ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রয় করা হবে। তবে কমিউটার ও মেইল ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে বিক্রয় করা হবে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

১৫-২২ জুলাই, এই ৮ দিন চলার পর আবারও বন্ধ হয়ে যাবে ট্রেন চলাচল। ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত আবার কঠোর বিধিনিষেধ জারি থাকবে। সে সময়ে অন্য সবকিছুর মতো ট্রেনও বন্ধ থাকবে।

অভ্যন্তরীণ রুটে চলবে বিমান সার্ভিস

১৫-২২ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। যাত্রীদের সুবিধার্থে দৈনিক ঢাকা হতে চট্টগ্রামে ৩টি, সৈয়দপুরে ৩টি, কক্সবাজারে ২টি, যশোরে ২টি, সিলেটে ২টি, রাজশাহীতে ১টি এবং বরিশালে ১টি করে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে বলে বিমান সূত্র জানায়।

বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১ , ৩০ আষাঢ় ১৪২৮ ৩ জিলহজ্জ ১৪৪২

কাল থেকে চলবে গণপরিবহন, খোলা থাকবে দোকানপাট, শপিংমল

ঈদের পর ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন থাকবে সারাদেশে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বৃহস্পতিবার থেকে ‘স্বাস্থ্যবিধি’ মেনে চলবে গণপরিবহন, খোলা থাকবে দোকানপাট-শপিংমল। কোরবানির ঈদের কারণে ৮ দিনের জন্য বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। আগামী ২১ জুলাই বাংলাদেশে উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহার পর ১৪ দিনের ‘কঠোর-লকডাউন’ থাকবে সারাদেশে।

ঈদের পর আগামী ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৪ দিন ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সময় গণপরিবহনসহ সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। গার্মেন্টসসহ বন্ধ থাকবে সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা ও দোকানপাট-শপিংমল। গতকাল এক প্রজ্ঞাপনে এই নির্দেশনা জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘ঈদ উদযাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ পূর্ববর্তী ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাই ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে।

তবে এই সময়েও জনগণকে সব অবস্থায় সতর্ক থাকতে, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি ‘কঠোরভাবে’ অনুসরণ করতে বলেছে সরকার। ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত আবার কঠোর বিধিনিষেধ মানতে হবে।

যেসব বিধিনিষেধ : সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে।

সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক [বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি], রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

ব্যাংকিং/বীমা/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাপ্তরিক কাজ ভার্চুয়ালি (ই-নথি, ই- মেইল, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যম) সম্পন্ন করবেন।

আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন/বিক্রয়, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি করপোরেশন/পৌরসভা (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।

জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, কভার্ডভ্যান কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। এতদিন এই সময় ছিল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। খাবারের দোকান, হোটেল- রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (অনলাইন/টেকওয়ে) খাবার বিক্রি করতে পারবে। বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল বন্দর এবং সংশ্লিষ্ট অফিস নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।

অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনভাবে বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে যারা করোনাভাইরাসের টিকার তারিখ পেয়েছেন, তারা টিকা কার্ড দেখিয়ে নির্ধারিত দিনে টিকাকেন্দ্রে যাতায়াত করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট দেখিয়ে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন।

বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকতার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনা করে যথোপযুক্ত হলে ঈদের নামাজ মসজিদ, ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় আদায়ের নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় বিশেষ কোন কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবে।

করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে গত ১ জুলাই সাতদিনের ‘লকডাউন’ দেয় সরকার। এরপর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত ‘লকডাউন’ বাড়িয়ে গত ৫ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে ২১টি বিধিনিষেধ জারি করে সরকার।

ঈদের আগে ৩ দিন ব্যাংক চলবে ১০টা-৪টা

লকডাউন শিথিল করায় স্বাভাবিক সময়ে ফিরছে ব্যাংক লেনদেন। ১৫, ১৮ ও ১৯ জুলাই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা থাকবে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, লেনদেন পরবর্তী অন্যান্য কাজের জন্য ৬টা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা রাখা যাবে। সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন ফিরে এলে ২৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত ব্যাংক খোলা থাকবে সকাল ১০টা-দেড়টা। আর লেনদেন পরবর্তী অন্যান্য কাজের জন্য ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে ব্যাংক।

ঈদের আগে তৈরি পোশাক শিল্পের সুবিধায় ঢাকা মহানগরী, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, ভালুকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে অবস্থিত তফসিলি ব্যাংকের তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো ১৭ ও ২০ জুলাই খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ছুটির এই দুই দিনে শাখাগুলোতে লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত।

কাল থেকে চলবে বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও বিমান সার্ভিস

লকডাউন শিথিল হওয়ায় ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ছয়টা পর্যন্ত সারাদেশের বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও বিমান সার্ভিস চলাচল করবে। এ সময় ধারণ ক্ষমতায় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গতকাল নৌ-মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল লঞ্চসহ সারাদেশের নৌযান চলাচল করবে। এ সময় ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে এবং যাত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের মাস্ক পরিধান ও কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে নৌযান চলাচলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঈদের পরে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে ২৩ জুলাই সকাল ছয়টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত যাত্রীবাহী সব নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।

অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী নৌযানের মালিক, মাস্টার, ড্রাইভার, স্টাফ, যাত্রীসাধারণ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা মেনে চলতে বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হয়েছে। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

চলবে ৩৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন

বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ৩৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন ও ১৯ জোড়া লোকাল মেইল ট্রেন চলাচল করবে। সীমিত আকারে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ট্রেন পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়েছে রেলওয়ে। আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট শুধু অনলাইনে ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রয় করা হবে। তবে কমিউটার ও মেইল ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে বিক্রয় করা হবে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

১৫-২২ জুলাই, এই ৮ দিন চলার পর আবারও বন্ধ হয়ে যাবে ট্রেন চলাচল। ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত আবার কঠোর বিধিনিষেধ জারি থাকবে। সে সময়ে অন্য সবকিছুর মতো ট্রেনও বন্ধ থাকবে।

অভ্যন্তরীণ রুটে চলবে বিমান সার্ভিস

১৫-২২ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। যাত্রীদের সুবিধার্থে দৈনিক ঢাকা হতে চট্টগ্রামে ৩টি, সৈয়দপুরে ৩টি, কক্সবাজারে ২টি, যশোরে ২টি, সিলেটে ২টি, রাজশাহীতে ১টি এবং বরিশালে ১টি করে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে বলে বিমান সূত্র জানায়।