বাহিনী গঠন, আবার গ্রেপ্তার
একটি হত্যা মামলায় কারাগারে ছিলেন ২২ বছর। সাজা খেটে বেরিয়ে ফের অস্ত্র মামলায় ১ বছর। দুবার জেলে গেলেও তার অপরাধী মনোভাব বদলায়নি একটুও। কারাগার থেকে বের হয়ে ফের সন্ত্রাসী ও চুক্তিতে মানুষ হত্যায় সক্রিয় হয়ে উঠে। এ জন্য গড়ে তোলে নিজস্ব অস্ত্রধারী বাহিনীও। গোটা হাজারীবাগ এলাকার বাসিন্দারা তার ভয়ে আতঙ্কিত। এ ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম ওরফে রতন। ভাড়ায় মানুষ হত্যা, জমি দখলসহ এমন কোন অপরাধ নেই যেখানে সে সম্পৃক্ত না।
সম্প্রতি হত্যাচেষ্টা মামলায় ফের রফিকুল ইসলাম ও তার সহযোগী আরমানকে গ্রেপ্তারের পর নানা অপরাধের তথ্য খুঁজে পায় ঢাকা মহানগর অপরাধ তথ্য ও গোয়েন্দা বিভাগ ডিবি। বর্তমানে হত্যাচেষ্টা ও অস্ত্র মামলায় রফিকুল এবং আরমানসহ তার ৫ সহযোগী জেলে। তবে তার অন্য সাঙ্গপাঙ্গ এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এলাকাবাসী বলছে, রফিকুলের সহযোগিরা এখন এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
ডিবির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম সাইফ সংবাদকে জানান, হাজারীবাগের শিকারীটোলার ৮৯ গজমহলের বাসিন্দা মৃত সালেহ আহমেদের ছেলে মামুনকে গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা। গত ৪ জুন রাতে এ ঘটনা ঘটে। গুলিতে আহত হয় মামুন মিয়া। এ ঘটনায় ৫ জুন হাজারীবাগ থানায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করে মামুনের বড় ভাই সুমন মিয়া। পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাটি ছায়া তদন্ত শুরু করে ডিবির মিরপুর জোনাল টিম।
ডিবির তদন্তে বেরিয়ে আসে মামুনকে হত্যাচেষ্টায় গুলি করে রফিক। সে এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তদন্ত করতে গিয়ে ডিবি জানতে পারে সন্ত্রাসী রফিককে ভাড়া করা হয়েছিল মামুন ও তার ভাইদের গুলি করার জন্য। ভাড়া করা ব্যক্তির নাম মো. আবুল হাসেম। যিনি মামুনের এক চাচার কাছ থেকে কিছু জমি কিনেছিলেন। ওই জমির রাস্তার জন্য ২ ফুট জায়গা নিয়ে আবুল হাসেমের বিরোধ হয় মামুন ও তার ভাইদের সঙ্গে। রাস্তার জমি দখল করে প্রাচীর নির্মাণ করেন আবুল হাসেম। বাধা দিলে তাদের মধ্যে বিরোধ হয়। তখন মামুন ও সুমনের পরিবারকে শায়েস্তা করার জন্য সন্ত্রাসী রফিককে ভাড়া করেন আবুল হাসেম ১০ হাজার টাকায়।
ডিবি জানিয়েছে, গত ২৩ জুন ডিবি রফিকুল ইসলাম এবং তার সহযোগী আরমানকে গ্রেপ্তার করে। এ অভিযানে রফিকের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করে। মামুনকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত হিসেবে মহসিন, রাশেল, নাছির, জসিম, শরীফসহ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য বেরিয়ে আসে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রফিক ও আরমান ঘটনায় নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
ঘটনার নেপথ্যে বিশ্লেষণ করে ডিবি জানতে পারে, ১৯৯৬ সালে এক রাজনৈতিক মিছিলে সন্ত্রাসী হামলা হয়। ওই হামলার নেতৃত্বে ছিলেন রফিক। ওই হামলায় সনু নামে এক ব্যক্তি মারা যান। এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ তখন রফিককে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে ওই মামলায় অপরাধ প্রমাণিত হলে রফিকের সাজা হয়। টানা ২২ বছর জেলে কাটে রফিকের। ২০১৭ সালে জেল থেকে মুক্তি পান। জেল থেকে বের হয়ে ফের এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু করেন। সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৯ সালে ফের গ্রেপ্তার হন রফিক। ১ বছর জেলে থাকার পর জামিনে বের হন সম্প্রতি। জামিনে বের হওয়ার ৩ মাস পরই সে সুমনকে হত্যার উদ্দ্যেশে গুলি চালান।
ডিবি জানিয়েছে, রফিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অস্ত্র কিনেছিলেন। অস্ত্র কিনে রাশেল নামে এক অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। তার দলে রয়েছে বাবুল, কুট্টু, শরীফ, আরমান, বাছির, জসিম, আবদুস ছালামসহ ১০ থেকে ১৫ জনের অস্ত্রধারী বাহিনী। কোন জায়গায় গুলি চালাতে হবে, কাউকে হত্যা করতে হবে বা কাউকে গুলি করে আহত করতে হবে, জমি দখল করতে হবে, কাউকে শায়েস্তা করতে হবে সব কাজেই ছিল রফিকের ডাক। কাজের ধরন বুঝে টাকা নিতেন রফিক।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২২ বছর জেলে থাকার পর ২০১৭ সালে জেল থেকে বের হয়েই বিয়ে করে রফিক। ২ সন্তানও আছে। দুজনই মেয়ে। এলাকার একটি ভাড়া বাসায় রফিকের পরিবার থাকতো। ২ সন্তান ও স্ত্রী ছাড়া আর কোন স্বজন নেই রফিকের। সন্ত্রাসী কার্যক্রমই তার আয়ের একমাত্র উৎস। এলাকাবাসী তার বিষয়ে জানলেও ভয়ে কথা বলতো না।
হাজারীবাগ থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম জানান, হত্যা চেষ্টা মামলাটি হাজারীবাগ থানা পুলিশ তদন্ত করছে।
রফিকসহ ৪ জন গ্রেপ্তার হওয়ার পর অন্যরা গাঢাকা দিয়েছে। তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১ , ৩০ আষাঢ় ১৪২৮ ৩ জিলহজ্জ ১৪৪২
বাহিনী গঠন, আবার গ্রেপ্তার
সাইফ বাবলু
একটি হত্যা মামলায় কারাগারে ছিলেন ২২ বছর। সাজা খেটে বেরিয়ে ফের অস্ত্র মামলায় ১ বছর। দুবার জেলে গেলেও তার অপরাধী মনোভাব বদলায়নি একটুও। কারাগার থেকে বের হয়ে ফের সন্ত্রাসী ও চুক্তিতে মানুষ হত্যায় সক্রিয় হয়ে উঠে। এ জন্য গড়ে তোলে নিজস্ব অস্ত্রধারী বাহিনীও। গোটা হাজারীবাগ এলাকার বাসিন্দারা তার ভয়ে আতঙ্কিত। এ ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম ওরফে রতন। ভাড়ায় মানুষ হত্যা, জমি দখলসহ এমন কোন অপরাধ নেই যেখানে সে সম্পৃক্ত না।
সম্প্রতি হত্যাচেষ্টা মামলায় ফের রফিকুল ইসলাম ও তার সহযোগী আরমানকে গ্রেপ্তারের পর নানা অপরাধের তথ্য খুঁজে পায় ঢাকা মহানগর অপরাধ তথ্য ও গোয়েন্দা বিভাগ ডিবি। বর্তমানে হত্যাচেষ্টা ও অস্ত্র মামলায় রফিকুল এবং আরমানসহ তার ৫ সহযোগী জেলে। তবে তার অন্য সাঙ্গপাঙ্গ এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এলাকাবাসী বলছে, রফিকুলের সহযোগিরা এখন এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
ডিবির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম সাইফ সংবাদকে জানান, হাজারীবাগের শিকারীটোলার ৮৯ গজমহলের বাসিন্দা মৃত সালেহ আহমেদের ছেলে মামুনকে গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা। গত ৪ জুন রাতে এ ঘটনা ঘটে। গুলিতে আহত হয় মামুন মিয়া। এ ঘটনায় ৫ জুন হাজারীবাগ থানায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করে মামুনের বড় ভাই সুমন মিয়া। পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাটি ছায়া তদন্ত শুরু করে ডিবির মিরপুর জোনাল টিম।
ডিবির তদন্তে বেরিয়ে আসে মামুনকে হত্যাচেষ্টায় গুলি করে রফিক। সে এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তদন্ত করতে গিয়ে ডিবি জানতে পারে সন্ত্রাসী রফিককে ভাড়া করা হয়েছিল মামুন ও তার ভাইদের গুলি করার জন্য। ভাড়া করা ব্যক্তির নাম মো. আবুল হাসেম। যিনি মামুনের এক চাচার কাছ থেকে কিছু জমি কিনেছিলেন। ওই জমির রাস্তার জন্য ২ ফুট জায়গা নিয়ে আবুল হাসেমের বিরোধ হয় মামুন ও তার ভাইদের সঙ্গে। রাস্তার জমি দখল করে প্রাচীর নির্মাণ করেন আবুল হাসেম। বাধা দিলে তাদের মধ্যে বিরোধ হয়। তখন মামুন ও সুমনের পরিবারকে শায়েস্তা করার জন্য সন্ত্রাসী রফিককে ভাড়া করেন আবুল হাসেম ১০ হাজার টাকায়।
ডিবি জানিয়েছে, গত ২৩ জুন ডিবি রফিকুল ইসলাম এবং তার সহযোগী আরমানকে গ্রেপ্তার করে। এ অভিযানে রফিকের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করে। মামুনকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত হিসেবে মহসিন, রাশেল, নাছির, জসিম, শরীফসহ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য বেরিয়ে আসে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রফিক ও আরমান ঘটনায় নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
ঘটনার নেপথ্যে বিশ্লেষণ করে ডিবি জানতে পারে, ১৯৯৬ সালে এক রাজনৈতিক মিছিলে সন্ত্রাসী হামলা হয়। ওই হামলার নেতৃত্বে ছিলেন রফিক। ওই হামলায় সনু নামে এক ব্যক্তি মারা যান। এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ তখন রফিককে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে ওই মামলায় অপরাধ প্রমাণিত হলে রফিকের সাজা হয়। টানা ২২ বছর জেলে কাটে রফিকের। ২০১৭ সালে জেল থেকে মুক্তি পান। জেল থেকে বের হয়ে ফের এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু করেন। সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৯ সালে ফের গ্রেপ্তার হন রফিক। ১ বছর জেলে থাকার পর জামিনে বের হন সম্প্রতি। জামিনে বের হওয়ার ৩ মাস পরই সে সুমনকে হত্যার উদ্দ্যেশে গুলি চালান।
ডিবি জানিয়েছে, রফিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অস্ত্র কিনেছিলেন। অস্ত্র কিনে রাশেল নামে এক অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। তার দলে রয়েছে বাবুল, কুট্টু, শরীফ, আরমান, বাছির, জসিম, আবদুস ছালামসহ ১০ থেকে ১৫ জনের অস্ত্রধারী বাহিনী। কোন জায়গায় গুলি চালাতে হবে, কাউকে হত্যা করতে হবে বা কাউকে গুলি করে আহত করতে হবে, জমি দখল করতে হবে, কাউকে শায়েস্তা করতে হবে সব কাজেই ছিল রফিকের ডাক। কাজের ধরন বুঝে টাকা নিতেন রফিক।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২২ বছর জেলে থাকার পর ২০১৭ সালে জেল থেকে বের হয়েই বিয়ে করে রফিক। ২ সন্তানও আছে। দুজনই মেয়ে। এলাকার একটি ভাড়া বাসায় রফিকের পরিবার থাকতো। ২ সন্তান ও স্ত্রী ছাড়া আর কোন স্বজন নেই রফিকের। সন্ত্রাসী কার্যক্রমই তার আয়ের একমাত্র উৎস। এলাকাবাসী তার বিষয়ে জানলেও ভয়ে কথা বলতো না।
হাজারীবাগ থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম জানান, হত্যা চেষ্টা মামলাটি হাজারীবাগ থানা পুলিশ তদন্ত করছে।
রফিকসহ ৪ জন গ্রেপ্তার হওয়ার পর অন্যরা গাঢাকা দিয়েছে। তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।