৪৮ লাশ পেতে স্বজনদের অপেক্ষার শেষ কবে?

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজিব গ্রুপের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ে পুড়ে যাওয়া ৪৮ জনের মৃতদেহ এখনও ঢামেক হাসপাতাল মর্গে পড়ে আছে। গত ৮ জুলাই বিকেলে ওই অগ্নিকা- ঘটে। এর পর ৬ দিন গত হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলছে লাশগুলো থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি ৪৮ লাশের দাবিদার ৬৮ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। লাশ ও স্বজনদের নমুনা মেলানোর পর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে স্বজনদের কাছেই লাশ বুঝিয়ে দেয়া হবে। তবে স্বজনদের কাছে লাশ কবে বুঝিয়ে দেয়া হবে এবং তাদের কবে দাফন করা হবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

প্রসঙ্গত, পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়া ১৯ জনের ডিএনএ (ডি অক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড) পরীক্ষার পর লাশ হস্তান্তর শুরু হয়েছিল ঘটনার ১৪ দিন পর ৬ মার্চ। ওইদিন ১১ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়। যদিও সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের একটি সূত্র জানায়, ডিএনএ পরীক্ষার পর এ প্রক্রিয়া শেষে লাশ হস্তান্তর করতে সাধারণত ২১ দিন সময় লাগে।

ডিএনএ টেস্টের প্রক্রিয়ার বিষয়ে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির একটি সূত্র জানায়, এটি কিছুটা সময় সাপেক্ষ। ‘ডিএনএ টেস্টের জন্য ভিকটিম বা মরদেহের দাঁত ও হাড় নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। অন্যদিকে ভিকটিমের পরিবার বা স্বজনের রক্ত বা মুখের লালা সংগ্রহ করা হয়। কোন কোন সময় দুটিই সংগ্রহ করা হয়। নিহতদের নমুনাকে বলা হয় ‘মিসিং পার্সনস স্যাম্পল’ ও স্বজনদের নমুনাকে বলা হয় ‘রেফারেন্স স্যাম্পল’। রেফারেন্স স্যাম্পল টেস্ট করতে তেমন সময় লাগে না। এগুলো একদিনের ভেতরে দেওয়া সম্ভব। তবে ভিকটিমদের স্যাম্পল টেস্ট করতে এবং তা প্রোফাইলিং করতে একটু সময় লাগে।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ ৪৮ লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি লাশগুলোর দাবিদারদের নমুনা সংগ্রহ করেছে। আমাদের এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা হচ্ছে, লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের স্বজনদের কাছেই বুঝিয়ে দেয়া হবে। সিআইডি নমুনা মিলিয়ে দেখার পর যদি কোন লাশের সঙ্গে দাবিদার কারও ডিএনএ নমুনা না মেলে, সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এদিকে, অগ্নিকা-ের পরদিন থেকে পরবর্তী দু-তিন দিন স্বজনের আহাজারিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গের চারপাশ ভারি থাকলেও সেখানে বর্তমানে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। গতকাল সরজমিনে দেখা যায়, মর্গের সামনে লম্বা করিডোরের মতো রাস্তা একেবারে ফাঁকা। পুলিশ যে ঘরটিতে বসে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন সেটিও প্রায় শূন্য। ঘরটির বাইরে কয়েকটি প্রিন্ট করা কাগজে লেখা রয়েছে, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় আর কোন স্বজন ডিএনএ নমুনা দিতে চাইলে মালিবাগ সিআইডি অফিসে গিয়ে দিতে হবে।

ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ মাকসুদ বলেন, রূপগঞ্জের ঘটনায় আমাদের কাছে ৪৮টি লাশ আসে। সেগুলো থেকে নমুনা সংগ্রহের পর স্থান সংকুলান না হওয়ায় ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সংলগ্ন মর্গে ৮টি এবং সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে ১৩টি লাশ রাখা হয়। বাকিগুলো ঢামেক মর্গে রয়েছে। এতগুলো লাশ মর্গে ময়নাতদন্ত কার্যক্রমে সমস্যা হওয়ায় প্রথম দিন থেকেই দাফন করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে পুলিশকে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই বিকেলে রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকা- ঘটে। ঘটনার প্রথম দিন তিনজনের মৃত্যুর তথ্য জানা যায়। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট ২১ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর ৯ জুলাই সকালে ওই ভবনের চারতলা থেকে ৪৮ জনের অঙ্গার হওয়া লাশ উদ্ধার করে ঢামেক মর্গে পাঠায় ফায়ার সার্ভিস। লাশগুলোর ডিএনএ নমুনা হিসেবে পাজরের হাড় সংগ্রহ করা হয়েছে। আর তাদের স্বজন দাবিদার বাবা, মা এবং সন্তানের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা হিসেবে রক্ত ও লালা সংগ্রহ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১ , ৩১ আষাঢ় ১৪২৮ ৪ জিলহজ ১৪৪২

৪৮ লাশ পেতে স্বজনদের অপেক্ষার শেষ কবে?

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজিব গ্রুপের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ে পুড়ে যাওয়া ৪৮ জনের মৃতদেহ এখনও ঢামেক হাসপাতাল মর্গে পড়ে আছে। গত ৮ জুলাই বিকেলে ওই অগ্নিকা- ঘটে। এর পর ৬ দিন গত হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলছে লাশগুলো থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি ৪৮ লাশের দাবিদার ৬৮ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। লাশ ও স্বজনদের নমুনা মেলানোর পর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে স্বজনদের কাছেই লাশ বুঝিয়ে দেয়া হবে। তবে স্বজনদের কাছে লাশ কবে বুঝিয়ে দেয়া হবে এবং তাদের কবে দাফন করা হবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

প্রসঙ্গত, পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়া ১৯ জনের ডিএনএ (ডি অক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড) পরীক্ষার পর লাশ হস্তান্তর শুরু হয়েছিল ঘটনার ১৪ দিন পর ৬ মার্চ। ওইদিন ১১ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়। যদিও সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের একটি সূত্র জানায়, ডিএনএ পরীক্ষার পর এ প্রক্রিয়া শেষে লাশ হস্তান্তর করতে সাধারণত ২১ দিন সময় লাগে।

ডিএনএ টেস্টের প্রক্রিয়ার বিষয়ে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির একটি সূত্র জানায়, এটি কিছুটা সময় সাপেক্ষ। ‘ডিএনএ টেস্টের জন্য ভিকটিম বা মরদেহের দাঁত ও হাড় নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। অন্যদিকে ভিকটিমের পরিবার বা স্বজনের রক্ত বা মুখের লালা সংগ্রহ করা হয়। কোন কোন সময় দুটিই সংগ্রহ করা হয়। নিহতদের নমুনাকে বলা হয় ‘মিসিং পার্সনস স্যাম্পল’ ও স্বজনদের নমুনাকে বলা হয় ‘রেফারেন্স স্যাম্পল’। রেফারেন্স স্যাম্পল টেস্ট করতে তেমন সময় লাগে না। এগুলো একদিনের ভেতরে দেওয়া সম্ভব। তবে ভিকটিমদের স্যাম্পল টেস্ট করতে এবং তা প্রোফাইলিং করতে একটু সময় লাগে।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ ৪৮ লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি লাশগুলোর দাবিদারদের নমুনা সংগ্রহ করেছে। আমাদের এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা হচ্ছে, লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের স্বজনদের কাছেই বুঝিয়ে দেয়া হবে। সিআইডি নমুনা মিলিয়ে দেখার পর যদি কোন লাশের সঙ্গে দাবিদার কারও ডিএনএ নমুনা না মেলে, সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এদিকে, অগ্নিকা-ের পরদিন থেকে পরবর্তী দু-তিন দিন স্বজনের আহাজারিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গের চারপাশ ভারি থাকলেও সেখানে বর্তমানে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। গতকাল সরজমিনে দেখা যায়, মর্গের সামনে লম্বা করিডোরের মতো রাস্তা একেবারে ফাঁকা। পুলিশ যে ঘরটিতে বসে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন সেটিও প্রায় শূন্য। ঘরটির বাইরে কয়েকটি প্রিন্ট করা কাগজে লেখা রয়েছে, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় আর কোন স্বজন ডিএনএ নমুনা দিতে চাইলে মালিবাগ সিআইডি অফিসে গিয়ে দিতে হবে।

ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ মাকসুদ বলেন, রূপগঞ্জের ঘটনায় আমাদের কাছে ৪৮টি লাশ আসে। সেগুলো থেকে নমুনা সংগ্রহের পর স্থান সংকুলান না হওয়ায় ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সংলগ্ন মর্গে ৮টি এবং সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে ১৩টি লাশ রাখা হয়। বাকিগুলো ঢামেক মর্গে রয়েছে। এতগুলো লাশ মর্গে ময়নাতদন্ত কার্যক্রমে সমস্যা হওয়ায় প্রথম দিন থেকেই দাফন করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে পুলিশকে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই বিকেলে রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকা- ঘটে। ঘটনার প্রথম দিন তিনজনের মৃত্যুর তথ্য জানা যায়। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট ২১ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর ৯ জুলাই সকালে ওই ভবনের চারতলা থেকে ৪৮ জনের অঙ্গার হওয়া লাশ উদ্ধার করে ঢামেক মর্গে পাঠায় ফায়ার সার্ভিস। লাশগুলোর ডিএনএ নমুনা হিসেবে পাজরের হাড় সংগ্রহ করা হয়েছে। আর তাদের স্বজন দাবিদার বাবা, মা এবং সন্তানের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা হিসেবে রক্ত ও লালা সংগ্রহ করা হয়েছে।