সর্বাত্মক লকডাউনেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চা শিল্প চালু রাখার আহ্বান

সরকারের নির্দেশনায় লকডাউনের মধ্যেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চা শিল্প পরিচালিত হচ্ছে। তাই চা বাগানে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। চা শিল্পে প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এই শিল্প বন্ধ হলে বহু শ্রমিকের আয় রোজগার কমে যাবে। তাই দেশ ও এসব শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে সর্বাত্মক লকডাউনেও চা শিল্প চালু রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা। গতকাল ‘সংবাদ’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহ আলম এই আহ্বান জানান।

সর্বাত্মক লকডাউনেও কৃষিভিত্তিক খাতগুলো চালু থাকবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। আর চা যেহেতু কৃষিভিত্তিক শিল্প, তাই এই শিল্পও চালু রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চা কৃষিভিত্তিক শিল্প। আমরা চাই, ঈদের পর লকডাউনেও যেন চা শিল্প চালু থাকে। গার্মেন্টস বা অন্য শিল্প বন্ধ থাকলে সেগুলোর মালামাল নষ্ট হবে না। কিন্তু চা গাছের পাতা সময় মতো তোলা না হলে নষ্ট হয়ে যাবে।’

চা বাগানের শ্রমিকরা করোনার সংক্রমণের হুমকি নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চা বাগানের শ্রমিকরা চা বাগানেই বসবাস করেন। তারা বাইরে যান না। আবার বাইরের মানুষও চা বাগানে আসে না। তাই চা শ্রমিকদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’

লকডাউনে চা শিল্প বন্ধ থাকলে চায়ের উৎপাদন ব্যাহত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই শিল্প যদি বন্ধ থাকে, তাহলে আমরা সারাদেশে যে চায়ের যোগান দেই, তা ব্যাহত হবে। বাংলাদেশকে তখন চা আমদানি করতে হবে।’

চা বাগান বন্ধ থাকলে খাতের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিকের আয় রোজগার কমে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চা বাগানের শ্রমিকরা দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন। তারা যদি একদিন কাজে যেতে না পারেন, তাহলে তাদের আয় রোজগার কমে যাবে। এর প্রভাব পড়বে তার পরিবারের উপর।’

ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছর ভারতে প্রথম দিকের লকডাউনে চা বাগান বন্ধ করা হয়েছিল। পরে যখন খোলা হয়, তখন উৎপাদন একেবারে কমে গিয়েছিল। এরপর থেকে ভারতে চা শিল্প বন্ধ হয় না। ভারত সরকার স্বীকার করেছে, চা শিল্প বন্ধ করা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এখন বাংলাদেশে চা উৎপাদনের উপযুক্ত সময়। এখন যদি এই খাত বন্ধ হয়, তাহলে আমরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’

চা বাগানের শ্রমিকদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকদের সবার মাস্ক, স্যানিটাইজার নিশ্চিত করা হয়েছে। সব মালিকরা তার শ্রমিকদের বিনামূলে এসব সরবরাহ করেছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা, চা শ্রমিকদের মধ্যে করোনা আক্রান্তের হার খুবই কম। আক্রান্ত নেই বললেই চলে।’ চা বাগানের শ্রমিকের অধিকাংশই হিন্দু ধর্মালম্বি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সামনে ঈদ। তবে চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাম্বলি। তাই তাদের মধ্যে ঈদে বাড়ি যাওয়া বা বাড়তি ঝামেলা নেই। তারা বাগানে নিরাপদে থাকবে এবং কাজ করবে। তাই সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ দেশ ও শ্রমিকদের দিকে তাকিয়ে চা শিল্প যেন চালু রাখা হয়।’

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় ঈদের পরপরই শুরু হচ্ছে সর্বাত্মক লকডাউন। এ সময় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পোশাক কারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে বলে গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। তবে চা শিল্প যেন এর আওতামুক্ত রাখা হয় এজন্য চা শিল্প সংশ্লিষ্টরা সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবার, ১৬ জুলাই ২০২১ , ১ শ্রাবন ১৪২৮ ৫ জিলহজ ১৪৪২

সর্বাত্মক লকডাউনেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চা শিল্প চালু রাখার আহ্বান

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

সিলেটের একটি চা বাগানে কর্মরত নারী শ্রমিকরা -(ফাইল ছবি)

সরকারের নির্দেশনায় লকডাউনের মধ্যেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চা শিল্প পরিচালিত হচ্ছে। তাই চা বাগানে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। চা শিল্পে প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এই শিল্প বন্ধ হলে বহু শ্রমিকের আয় রোজগার কমে যাবে। তাই দেশ ও এসব শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে সর্বাত্মক লকডাউনেও চা শিল্প চালু রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা। গতকাল ‘সংবাদ’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহ আলম এই আহ্বান জানান।

সর্বাত্মক লকডাউনেও কৃষিভিত্তিক খাতগুলো চালু থাকবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। আর চা যেহেতু কৃষিভিত্তিক শিল্প, তাই এই শিল্পও চালু রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চা কৃষিভিত্তিক শিল্প। আমরা চাই, ঈদের পর লকডাউনেও যেন চা শিল্প চালু থাকে। গার্মেন্টস বা অন্য শিল্প বন্ধ থাকলে সেগুলোর মালামাল নষ্ট হবে না। কিন্তু চা গাছের পাতা সময় মতো তোলা না হলে নষ্ট হয়ে যাবে।’

চা বাগানের শ্রমিকরা করোনার সংক্রমণের হুমকি নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চা বাগানের শ্রমিকরা চা বাগানেই বসবাস করেন। তারা বাইরে যান না। আবার বাইরের মানুষও চা বাগানে আসে না। তাই চা শ্রমিকদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’

লকডাউনে চা শিল্প বন্ধ থাকলে চায়ের উৎপাদন ব্যাহত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই শিল্প যদি বন্ধ থাকে, তাহলে আমরা সারাদেশে যে চায়ের যোগান দেই, তা ব্যাহত হবে। বাংলাদেশকে তখন চা আমদানি করতে হবে।’

চা বাগান বন্ধ থাকলে খাতের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিকের আয় রোজগার কমে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চা বাগানের শ্রমিকরা দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন। তারা যদি একদিন কাজে যেতে না পারেন, তাহলে তাদের আয় রোজগার কমে যাবে। এর প্রভাব পড়বে তার পরিবারের উপর।’

ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছর ভারতে প্রথম দিকের লকডাউনে চা বাগান বন্ধ করা হয়েছিল। পরে যখন খোলা হয়, তখন উৎপাদন একেবারে কমে গিয়েছিল। এরপর থেকে ভারতে চা শিল্প বন্ধ হয় না। ভারত সরকার স্বীকার করেছে, চা শিল্প বন্ধ করা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এখন বাংলাদেশে চা উৎপাদনের উপযুক্ত সময়। এখন যদি এই খাত বন্ধ হয়, তাহলে আমরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’

চা বাগানের শ্রমিকদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকদের সবার মাস্ক, স্যানিটাইজার নিশ্চিত করা হয়েছে। সব মালিকরা তার শ্রমিকদের বিনামূলে এসব সরবরাহ করেছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা, চা শ্রমিকদের মধ্যে করোনা আক্রান্তের হার খুবই কম। আক্রান্ত নেই বললেই চলে।’ চা বাগানের শ্রমিকের অধিকাংশই হিন্দু ধর্মালম্বি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সামনে ঈদ। তবে চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাম্বলি। তাই তাদের মধ্যে ঈদে বাড়ি যাওয়া বা বাড়তি ঝামেলা নেই। তারা বাগানে নিরাপদে থাকবে এবং কাজ করবে। তাই সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ দেশ ও শ্রমিকদের দিকে তাকিয়ে চা শিল্প যেন চালু রাখা হয়।’

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় ঈদের পরপরই শুরু হচ্ছে সর্বাত্মক লকডাউন। এ সময় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পোশাক কারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে বলে গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। তবে চা শিল্প যেন এর আওতামুক্ত রাখা হয় এজন্য চা শিল্প সংশ্লিষ্টরা সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।