বাড়ছে শনাক্ত, তবে কমেছে সংক্রমণ হার

বেড়েছে নমুনা পরীক্ষা, হাসপাতালে বেড়েছে চাপ

নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধি পাওয়ায় করোনা সংক্রমণ শনাক্তও বাড়ছে। তবে কমছে পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার। রোগী শনাক্ত বাড়তে থাকায় ‘কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড’ হাসপাতালগুলোর ওপর নিয়মিত চাপও বাড়ছে। করোনার মৃদু লক্ষণ বা উপসর্গ রয়েছে, এমন রোগীদের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। আর যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগ রয়েছে, এমন রোগীদের করোনা শনাক্তের পরপরই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বলা হচ্ছে।

করোনা আক্রান্তদের মধ্যে এখনও সুস্থ হয়ে উঠেননি- এমন রোগীর সংখ্যা (অ্যাক্টিভ কেস) বর্তমানে এক লাখ ৪৯ হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে গুরুতর অসুস্থ রোগী রয়েছেন এক হাজার দুই শতাধিক, যাদের আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) বা অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে।

অ্যাক্টিভ কেস বা সক্রিয় রোগীর মধ্যে ৮ শতাংশেরও কম হাসপাতালে ভর্তি আছেন বা ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। আর ৯২ শতাংশের বেশি রোগীই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএমএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, করোনার মৃদু উপসর্গ রয়েছে। এছাড়া যাদের কো-মর্ভিডিটি (নানা জটিল রোগ) নেই, যাদের বয়স কম- এমন রোগীর হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই। কিন্তু যাদের বয়স বেশি, কো-মর্ভিডিটিও রয়েছে- সেসব রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়।

তবে করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত ‘জাতীয় পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ও বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে যারা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের ব্যবস্থাপনা একেবারে হচ্ছে না বললেই চলে। রোগী ব্যবস্থাপনা বা আইসোলেশন এবং তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের কোয়ারেন্টিন সঠিকভাবে না হলে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি থেকেই যায়।

বেড়েছে পরীক্ষা, কমছে সংক্রমণ হার

গত ১১ জুলাই থেকে দৈনিক ৪০ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। পরীক্ষা বেশি হওয়ায় গতি বেড়েছে শনাক্তে। এতে স্বাভাবিকভাবেই শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। তবে কমছে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্ত বা সংক্রমণ হার।

গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকাল আটটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের ৬২৭টি ল্যাবরেটরিতে ৪৪ হাজার ৯৪১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষায় ১২ হাজার ২৩৬ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ।

আগের দিন ৪২ হাজার ৪৯০টি নমুনা পরীক্ষা সংক্রমণের হার ছিল ২৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। এর আগে ১৩ জুলাই ৪১ হাজার ৭৫৫টি নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের হার ২৯ দশমিক ২১ শতাংশ, ১২ জুলাই ৪৪ হাজার ৬৭টি নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের হার ৩১ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং ১১ জুলাই ৪০ হাজার ১৫টি নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের হার ছিল ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর এ পর্যন্ত মোট পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার ১৫ শতাংশ।

মাত্র ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি

দেশে এ পর্যন্ত মোট দশ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন মোট নয় লাখ পাঁচ হাজার ৮০৭ জন। আর মারা গেছেন ১৭ হাজার ২৭৮ জন। এ হিসাবে এখনও সুস্থ হয়নি- এমন রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ৪৮ হাজার ৬৮৯ জন। এর মধ্যে গুরুতর অসুস্থ রোগী আছেন এক হাজার ২১৬ জন।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশের কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড সরকারি-বেসরকারি ১২৯টি হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ১৬ হাজার ৬৪২টি। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন মোট ১১ হাজার ৬১৬ জন। ‘অ্যাক্টিভ কেস’ থেকে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা বাদ দিলে অবশিষ্ট থাকে এক লাখ ৩৭ হাজার ৭৩ জন রোগী। এ হিসাবে, মাত্র ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন বা ভর্তি হয়েছেন। বাকি ৯২ দশমিক ১৯ শতাংশ রোগীই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু

দেশে করোনা সংক্রমণে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ২২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে টানা পাঁচদিন দেশে দুই শতাধিক করে মানুষের মৃত্যু হলো করোনায়। আগের দিন ২১০ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগে ১৩ জুলাই ২০৩ জন, ১২ জুলাই ২২০ জন এবং ১১ জুলাই ২৩০ জনের মৃত্যু হয়।

সরকারি হিসাবে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২২৬ জনকে নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনায় ১৭ হাজার ২৭৮ জনের মৃত্যু হলো।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১২ হাজার ২৩৬ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো দশ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৪ জনে।

করোনা আক্রান্তদের মধ্যে গত একদিনে সুস্থ হয়েছেন আট হাজার ৩৯৫ জন। এ নিয়ে মোট মোট সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ পাঁচ হাজার ৮০৭ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মোট সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার এক দশমিক ৬১ শতাংশ।

গত একদিনে মারা যাওয়া ২২৬ জনের মধ্যে পুরুষ ১৪০ জন ও নারী ৮৬ জন। আর এ পর্যন্ত মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৫৩ জন ও নারী ছিলেন পাঁচ হাজার ২২৫ জন।

করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মারা যাওয়া লোকজনের বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে এতদিন পর্যন্ত শূন্য থেকে শত বছরের নিচের বয়সীদের তথ্য দিয়ে আসছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল প্রথম স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১০০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সীদের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় লোকজনের মধ্যে দুইজনের বয়স ছিল ১০০ বছরের বেশি। এছাড়া ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে তিনজন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ২২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪৪ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৫০ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছয়জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন এবং শূন্য থেকে দশ বছরের মধ্যে মারা গেছে একজন।

মৃত্যু ও শনাক্তের শীর্ষে ঢাকা বিভাগ

বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত একদিনে মৃত্যু হওয়া ২২৬ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন সর্বোচ্চ ৭৪ জন। অন্য বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রামে ৪২ জন, রাজশাহীতে ২৪ জন, খুলনায় ৫২ জন, বরিশালে ছয়জন, সিলেটে পাঁচজন, রংপুরে ১৩ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে দশজনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১৬৮ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৩৮ জন এবং বাড়িতে মারা গেছেন ২০ জন।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া ১২ হাজার ২৩৬ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগীই ঢাকা বিভাগের। এ বিভাগে গত একদিনে শনাক্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ২৩৪ জন। এর মধ্যে মহানগরসহ ঢাকা জেলায় এদিন শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৭৩২ জন।

অন্য বিভাগের মধ্যে ময়মনসিংহে ৪৯৮ জন, চট্টগ্রামে দুই হাজার ৪৭ জন, রাজশাহীতে এক হাজার ২৬৯ জন, রংপুরে ৫১১ জন, খুলনায় এক হাজার ৬৩৯ জন, বরিশালে ৫০০ জন ও সিলেট বিভাগে ৫৩৮ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পেয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

শুক্রবার, ১৬ জুলাই ২০২১ , ১ শ্রাবন ১৪২৮ ৫ জিলহজ ১৪৪২

বাড়ছে শনাক্ত, তবে কমেছে সংক্রমণ হার

বেড়েছে নমুনা পরীক্ষা, হাসপাতালে বেড়েছে চাপ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধি পাওয়ায় করোনা সংক্রমণ শনাক্তও বাড়ছে। তবে কমছে পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার। রোগী শনাক্ত বাড়তে থাকায় ‘কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড’ হাসপাতালগুলোর ওপর নিয়মিত চাপও বাড়ছে। করোনার মৃদু লক্ষণ বা উপসর্গ রয়েছে, এমন রোগীদের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। আর যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগ রয়েছে, এমন রোগীদের করোনা শনাক্তের পরপরই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বলা হচ্ছে।

করোনা আক্রান্তদের মধ্যে এখনও সুস্থ হয়ে উঠেননি- এমন রোগীর সংখ্যা (অ্যাক্টিভ কেস) বর্তমানে এক লাখ ৪৯ হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে গুরুতর অসুস্থ রোগী রয়েছেন এক হাজার দুই শতাধিক, যাদের আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) বা অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে।

অ্যাক্টিভ কেস বা সক্রিয় রোগীর মধ্যে ৮ শতাংশেরও কম হাসপাতালে ভর্তি আছেন বা ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। আর ৯২ শতাংশের বেশি রোগীই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএমএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, করোনার মৃদু উপসর্গ রয়েছে। এছাড়া যাদের কো-মর্ভিডিটি (নানা জটিল রোগ) নেই, যাদের বয়স কম- এমন রোগীর হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই। কিন্তু যাদের বয়স বেশি, কো-মর্ভিডিটিও রয়েছে- সেসব রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়।

তবে করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত ‘জাতীয় পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ও বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে যারা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের ব্যবস্থাপনা একেবারে হচ্ছে না বললেই চলে। রোগী ব্যবস্থাপনা বা আইসোলেশন এবং তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের কোয়ারেন্টিন সঠিকভাবে না হলে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি থেকেই যায়।

বেড়েছে পরীক্ষা, কমছে সংক্রমণ হার

গত ১১ জুলাই থেকে দৈনিক ৪০ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। পরীক্ষা বেশি হওয়ায় গতি বেড়েছে শনাক্তে। এতে স্বাভাবিকভাবেই শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। তবে কমছে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্ত বা সংক্রমণ হার।

গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকাল আটটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের ৬২৭টি ল্যাবরেটরিতে ৪৪ হাজার ৯৪১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষায় ১২ হাজার ২৩৬ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ।

আগের দিন ৪২ হাজার ৪৯০টি নমুনা পরীক্ষা সংক্রমণের হার ছিল ২৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। এর আগে ১৩ জুলাই ৪১ হাজার ৭৫৫টি নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের হার ২৯ দশমিক ২১ শতাংশ, ১২ জুলাই ৪৪ হাজার ৬৭টি নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের হার ৩১ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং ১১ জুলাই ৪০ হাজার ১৫টি নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের হার ছিল ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর এ পর্যন্ত মোট পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার ১৫ শতাংশ।

মাত্র ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি

দেশে এ পর্যন্ত মোট দশ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন মোট নয় লাখ পাঁচ হাজার ৮০৭ জন। আর মারা গেছেন ১৭ হাজার ২৭৮ জন। এ হিসাবে এখনও সুস্থ হয়নি- এমন রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ৪৮ হাজার ৬৮৯ জন। এর মধ্যে গুরুতর অসুস্থ রোগী আছেন এক হাজার ২১৬ জন।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশের কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড সরকারি-বেসরকারি ১২৯টি হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ১৬ হাজার ৬৪২টি। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন মোট ১১ হাজার ৬১৬ জন। ‘অ্যাক্টিভ কেস’ থেকে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা বাদ দিলে অবশিষ্ট থাকে এক লাখ ৩৭ হাজার ৭৩ জন রোগী। এ হিসাবে, মাত্র ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন বা ভর্তি হয়েছেন। বাকি ৯২ দশমিক ১৯ শতাংশ রোগীই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু

দেশে করোনা সংক্রমণে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ২২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে টানা পাঁচদিন দেশে দুই শতাধিক করে মানুষের মৃত্যু হলো করোনায়। আগের দিন ২১০ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগে ১৩ জুলাই ২০৩ জন, ১২ জুলাই ২২০ জন এবং ১১ জুলাই ২৩০ জনের মৃত্যু হয়।

সরকারি হিসাবে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২২৬ জনকে নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনায় ১৭ হাজার ২৭৮ জনের মৃত্যু হলো।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১২ হাজার ২৩৬ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো দশ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৪ জনে।

করোনা আক্রান্তদের মধ্যে গত একদিনে সুস্থ হয়েছেন আট হাজার ৩৯৫ জন। এ নিয়ে মোট মোট সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ পাঁচ হাজার ৮০৭ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মোট সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার এক দশমিক ৬১ শতাংশ।

গত একদিনে মারা যাওয়া ২২৬ জনের মধ্যে পুরুষ ১৪০ জন ও নারী ৮৬ জন। আর এ পর্যন্ত মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৫৩ জন ও নারী ছিলেন পাঁচ হাজার ২২৫ জন।

করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মারা যাওয়া লোকজনের বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে এতদিন পর্যন্ত শূন্য থেকে শত বছরের নিচের বয়সীদের তথ্য দিয়ে আসছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল প্রথম স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১০০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সীদের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় লোকজনের মধ্যে দুইজনের বয়স ছিল ১০০ বছরের বেশি। এছাড়া ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে তিনজন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ২২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪৪ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৫০ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছয়জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন এবং শূন্য থেকে দশ বছরের মধ্যে মারা গেছে একজন।

মৃত্যু ও শনাক্তের শীর্ষে ঢাকা বিভাগ

বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত একদিনে মৃত্যু হওয়া ২২৬ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন সর্বোচ্চ ৭৪ জন। অন্য বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রামে ৪২ জন, রাজশাহীতে ২৪ জন, খুলনায় ৫২ জন, বরিশালে ছয়জন, সিলেটে পাঁচজন, রংপুরে ১৩ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে দশজনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১৬৮ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৩৮ জন এবং বাড়িতে মারা গেছেন ২০ জন।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া ১২ হাজার ২৩৬ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগীই ঢাকা বিভাগের। এ বিভাগে গত একদিনে শনাক্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ২৩৪ জন। এর মধ্যে মহানগরসহ ঢাকা জেলায় এদিন শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৭৩২ জন।

অন্য বিভাগের মধ্যে ময়মনসিংহে ৪৯৮ জন, চট্টগ্রামে দুই হাজার ৪৭ জন, রাজশাহীতে এক হাজার ২৬৯ জন, রংপুরে ৫১১ জন, খুলনায় এক হাজার ৬৩৯ জন, বরিশালে ৫০০ জন ও সিলেট বিভাগে ৫৩৮ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পেয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।