হটস্পট পাকশী-রূপপুর বাড়ি বাড়ি ঠাণ্ডা-জ্বরের রোগী

দুই সপ্তাহে করোনায় মৃত্যু ২০

করোনার হটস্পট এখন ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী, রূপপুর ও বাঘইল এলাকা। এসব এলাকার প্রায় বাড়িতেই এখন ঠাণ্ডা-জ্বরের রোগী। করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে এখানে মারা গেছেন প্রায় ২০ জন। শুধু পাকশী, রূপপুর, বাঘইল নয় পাশ্ববতী রূপপুর জিগাতলা, নলগাড়ি, দিয়াড় সাহাপুর এলাকাতেও করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।

গত ৪ জুলাই গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা যায়, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে কর্মরত ২৩১ জন রাশিয়ান নাগরিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ৯ জুলাই রাতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইভান কারপোভ নামে এক রাশিয়ান নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ১০ জুলাই একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের এ পর্যন্ত তিন হাজার শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। করোনার হটস্পট এখন এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মারাও গেছেন। করোনায় আক্রান্ত এসব শ্রমিকদের বেশির ভাগই সুস্থ হয়ে পুনরায় কাজে যোগ দিয়েছেন। এলাকাবাসীরা জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প ও ইপিজেডে হাজার হাজার মানুষ চাকুরি করেন। রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন লোকজন এসব প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করেন। চাকরির পাশাপাশি দেশের নানা প্রান্তের মানুষ এখানে ব্যবসা বাণিজ্য করতেও আসেন। এসব মানুষের মাধ্যমেই পাকশী ও রূপপুর এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প ও ইপিজেডে চাকুরিজীবীদের অনেকেই রূপপুর, পাকশী, বাঘইলসহ পাশ্ববর্তী এলাকাতে ভাড়া থাকেন। এসব ভাড়াটিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা সংক্রমণ। করোনা প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় করোনার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এসব এলাকার বাসিন্দা। ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত কঠোর লকডাউনেও চালু ছিল রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প ও ইপিজেড। ফলে কঠোর লকডাউনের কোন প্রভাব এখানে পড়েনি। বরং কঠোর লকডাউনে পাকশী ও রূপপুরে বেড়েছে করোনার প্রাদুর্ভাব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাকশী এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, আমাদের পরিবারের ৭ সদস্যের মধ্যে ৬ জনই ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত। করোনার সব উপসর্গ তাদের মাঝে রয়েছে। কিন্তু করোনা টেস্ট করা হয়নি। শুধু আমাদের বাড়িতেই নয় আশাপাশের প্রতিটি বাড়িতেই একই অবস্থা। এভাবে চলতে থাকলে পাকশী ও রূপপুরের অধিকাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে। ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, পাকশী-রূপপুরে করোনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রায় বাড়ির মানুষ ঠাণ্ডা-জ্বর, সর্দিকাশিতে আক্রান্ত। গত দুই সপ্তাহে বেশ কয়েকজন মানুষ করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এমনও হয়েছে একদিনে ৫/৭ জন মারা গেছেন। এদের অধিকাংশেরই ছিল করোনা উপসর্গ। কিন্তু কেউ তা প্রকাশ করছে না।

রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প ও ইপিজেডের কারণে প্রতিদিনই পাকশী ও রূপপুরে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করছে। এদের কারণেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে পুরো পাকশী এলাকা। ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ রশিদুল্লাহ বলেন, রূপপুর প্রকল্প ও ইপিজেভে যারা চাকুরি করেন এদের অধিকাংশই পাকশী ও রূপপুর এলাকায় মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়ায়। এদের মাধ্যমেই পুরো এলাকাতেই ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। রূপপুর গ্রামে ঘরে ঘরে মানুষ ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত। করোনা উপসর্গ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে পাকশী ও রূপপুরে বেশ কয়েজন মানুষ মারা গেছেন। করোনা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে পাকশী পুলিশ ফাঁড়ি ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাইকিং করেছে। কিন্তু এসব এলাকায় ভাড়াটিয়াদের বেপরোয়া চলাফেরার কারণে পাকশী ও রূপপুর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঈশ্বরদী নাগরিক মঞ্চের আহবায়ক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা পাকশীতে যারা বসবাস করছি তারা এখন বিপদগ্রস্ত। এখানকার প্রতিটি বাড়িতে করোনা উপসর্গ নিয়ে মানুষ চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমার প্রতিবেশীসহ বেশ কয়েকজন পাকশীরূপপুরে মারা গেছেন। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি যাদের ঠান্ডা-জ্বর হচ্ছে তাদেরই বেশি মৃত্যু হচ্ছে। এখানকার মানুষজন করোনা টেস্ট করাচ্ছেন না। এছাড়াও কঠোর লকডাউনেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অবাধ চলাফেরার কারণে মানুষ আরো বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এবারে করোনা শুরুর পর থেকে ছিন্নমূল মানুষদের পাশে কাউকে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোও তেমনভাবে এগিয়ে আসছে না। বিশেষ করে মাস্ক বিতরণ ও ছিন্নমূল মানুষদের অন্তত একবেলা খাবার ব্যবস্থা করার বিশেষ দরকার ছিল। রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প ও ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকরা সামাজিক দুরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি কেউ মানছে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে হবে। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও শফিকুল ইসলাম শামীম বলেন, পাকশী ও রূপপুরের নয়, ঈশ্বরদী শহর ও প্রতিটি গ্রামে গ্রামে অসংখ্য মানুষ ঠাণ্ডা-কাশি, জ্বরে আক্রান্ত। এদের মধ্যে স্বল্প সংখ্যক মানুষ করোনা টেস্ট করাচ্ছেন। অধিকাংশ মানুষ যারা টেস্ট করাচ্ছেন না তাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা। করোনা প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং সন্দেহ হলেই করোনা টেস্ট করাতে হবে।

শনিবার, ১৭ জুলাই ২০২১ , ২ শ্রাবন ১৪২৮ ৬ জিলহজ ১৪৪২

হটস্পট পাকশী-রূপপুর বাড়ি বাড়ি ঠাণ্ডা-জ্বরের রোগী

দুই সপ্তাহে করোনায় মৃত্যু ২০

প্রতিনিধি, ঈশ্বরদী (পাবনা)

করোনার হটস্পট এখন ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী, রূপপুর ও বাঘইল এলাকা। এসব এলাকার প্রায় বাড়িতেই এখন ঠাণ্ডা-জ্বরের রোগী। করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে এখানে মারা গেছেন প্রায় ২০ জন। শুধু পাকশী, রূপপুর, বাঘইল নয় পাশ্ববতী রূপপুর জিগাতলা, নলগাড়ি, দিয়াড় সাহাপুর এলাকাতেও করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।

গত ৪ জুলাই গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা যায়, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে কর্মরত ২৩১ জন রাশিয়ান নাগরিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ৯ জুলাই রাতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইভান কারপোভ নামে এক রাশিয়ান নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ১০ জুলাই একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের এ পর্যন্ত তিন হাজার শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। করোনার হটস্পট এখন এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মারাও গেছেন। করোনায় আক্রান্ত এসব শ্রমিকদের বেশির ভাগই সুস্থ হয়ে পুনরায় কাজে যোগ দিয়েছেন। এলাকাবাসীরা জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প ও ইপিজেডে হাজার হাজার মানুষ চাকুরি করেন। রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন লোকজন এসব প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করেন। চাকরির পাশাপাশি দেশের নানা প্রান্তের মানুষ এখানে ব্যবসা বাণিজ্য করতেও আসেন। এসব মানুষের মাধ্যমেই পাকশী ও রূপপুর এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প ও ইপিজেডে চাকুরিজীবীদের অনেকেই রূপপুর, পাকশী, বাঘইলসহ পাশ্ববর্তী এলাকাতে ভাড়া থাকেন। এসব ভাড়াটিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা সংক্রমণ। করোনা প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় করোনার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এসব এলাকার বাসিন্দা। ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত কঠোর লকডাউনেও চালু ছিল রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প ও ইপিজেড। ফলে কঠোর লকডাউনের কোন প্রভাব এখানে পড়েনি। বরং কঠোর লকডাউনে পাকশী ও রূপপুরে বেড়েছে করোনার প্রাদুর্ভাব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাকশী এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, আমাদের পরিবারের ৭ সদস্যের মধ্যে ৬ জনই ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত। করোনার সব উপসর্গ তাদের মাঝে রয়েছে। কিন্তু করোনা টেস্ট করা হয়নি। শুধু আমাদের বাড়িতেই নয় আশাপাশের প্রতিটি বাড়িতেই একই অবস্থা। এভাবে চলতে থাকলে পাকশী ও রূপপুরের অধিকাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে। ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, পাকশী-রূপপুরে করোনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রায় বাড়ির মানুষ ঠাণ্ডা-জ্বর, সর্দিকাশিতে আক্রান্ত। গত দুই সপ্তাহে বেশ কয়েকজন মানুষ করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এমনও হয়েছে একদিনে ৫/৭ জন মারা গেছেন। এদের অধিকাংশেরই ছিল করোনা উপসর্গ। কিন্তু কেউ তা প্রকাশ করছে না।

রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প ও ইপিজেডের কারণে প্রতিদিনই পাকশী ও রূপপুরে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করছে। এদের কারণেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে পুরো পাকশী এলাকা। ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ রশিদুল্লাহ বলেন, রূপপুর প্রকল্প ও ইপিজেভে যারা চাকুরি করেন এদের অধিকাংশই পাকশী ও রূপপুর এলাকায় মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়ায়। এদের মাধ্যমেই পুরো এলাকাতেই ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। রূপপুর গ্রামে ঘরে ঘরে মানুষ ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত। করোনা উপসর্গ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে পাকশী ও রূপপুরে বেশ কয়েজন মানুষ মারা গেছেন। করোনা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে পাকশী পুলিশ ফাঁড়ি ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাইকিং করেছে। কিন্তু এসব এলাকায় ভাড়াটিয়াদের বেপরোয়া চলাফেরার কারণে পাকশী ও রূপপুর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঈশ্বরদী নাগরিক মঞ্চের আহবায়ক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা পাকশীতে যারা বসবাস করছি তারা এখন বিপদগ্রস্ত। এখানকার প্রতিটি বাড়িতে করোনা উপসর্গ নিয়ে মানুষ চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমার প্রতিবেশীসহ বেশ কয়েকজন পাকশীরূপপুরে মারা গেছেন। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি যাদের ঠান্ডা-জ্বর হচ্ছে তাদেরই বেশি মৃত্যু হচ্ছে। এখানকার মানুষজন করোনা টেস্ট করাচ্ছেন না। এছাড়াও কঠোর লকডাউনেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অবাধ চলাফেরার কারণে মানুষ আরো বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এবারে করোনা শুরুর পর থেকে ছিন্নমূল মানুষদের পাশে কাউকে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোও তেমনভাবে এগিয়ে আসছে না। বিশেষ করে মাস্ক বিতরণ ও ছিন্নমূল মানুষদের অন্তত একবেলা খাবার ব্যবস্থা করার বিশেষ দরকার ছিল। রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প ও ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকরা সামাজিক দুরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি কেউ মানছে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে হবে। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও শফিকুল ইসলাম শামীম বলেন, পাকশী ও রূপপুরের নয়, ঈশ্বরদী শহর ও প্রতিটি গ্রামে গ্রামে অসংখ্য মানুষ ঠাণ্ডা-কাশি, জ্বরে আক্রান্ত। এদের মধ্যে স্বল্প সংখ্যক মানুষ করোনা টেস্ট করাচ্ছেন। অধিকাংশ মানুষ যারা টেস্ট করাচ্ছেন না তাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা। করোনা প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং সন্দেহ হলেই করোনা টেস্ট করাতে হবে।