মুচলেকা রেখে নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ

রূপগঞ্জের সজীব গ্রুপের কারখানায় ভয়াবহ আগুনে নিহতদের স্বজনদের কয়েকজনকে কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ডেকে নিয়ে মুচলেকা রেখে দুইলাখ টাকা দিচ্ছে সজীব করপোরেশন। সেখানে কথা হয় নিহতদের কয়েকজন স্বজনদের সঙ্গে। তারা বললেন, একশ টাকার তাদের স্বাক্ষর বা টিপসই নেয়া হচ্ছে। মুচলেকার অনেকগুলো শর্তের মধ্যে অন্যতম প্রধান শর্ত হলো ‘তারা ভবিষ্যতে সজীব গ্রুপের কাছ থেকে আর কোন ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে না।’

কথা হয় কোম্পানির নিহত শ্রমিক কিশোরগঞ্জ করিমগঞ্জ উপজেলার বাদেশ্রীরাম গ্রামের কিশোর শ্রমিক মুন্নার (১৫) স্বজনদের সঙ্গে। মুন্নার বোন পান্না জানান, আমার নামে দুই লাখ টাকার একটি চেক দেয় কোম্পানি। চেক দেয়ার সময় ১০০ টাকার একটি স্ট্যাম্পে আমার সই নেয়। আমরা কোম্পানির এই টাকা পেয়ে সন্তষ্ট না। আমার ভাইয়ের লাশ চাই। কোটি কোটি টাকা দিয়ে কোম্পানির লোকজন আমার ভাইয়ের দাম দিতে পারবে! জীবিত থাকলে আমার ভাই মুন্না আরও বহু টাকা কামাই করতে পারতো। নিহত মুন্নার আরেক স্বজন জানান, স্ট্যাম্পে লেখা অনেকগুলো শর্তের মধ্যে প্রধান শর্ত ছিল আমরা সজীব গ্রুপের কাছ থেকে ভবিষ্যতে আর কোন ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারব না এবং এ বিষয়ে কারও সঙ্গে বিশেষ করে সংবাদ মাধ্যমের কারও কাছে কোন অভিযোগ করতে পারব না।

আগুনে নিহত ভোলার চরফ্যাসনের শিশু শ্রমিক হাসনাইনের (১৩) বাবা ফজলুর রহমান জানান, ‘আমার নাম লিখে সজীব করপোরেশন দুই লাখ টাকার একটি চেক আমাকে দেয়। এবং ১০০ টাকার একটি স্ট্যাম্পে সই নেয় কোম্পানির লোকজন। স্যার স্ট্যাম্পে কি যেন লেখা আছিল। আমি তো পড়তে পারি না। মূর্খ মানুষ। তাই বলতে পারছি না। তবে আমার সঙ্গে লেখাপড়া জানা আমার এক আত্মীয় ছিল। সে বলেছে, কোম্পানির স্ট্যাম্পে লেখা ছিল আমি ভবিষ্যতে কোম্পানির কাছে আমার নিহত ছেলের বিষয়ে আর কোন ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারব না।

তিনি আরও জানান, কোম্পানির ওই টাকা পেয়ে আমি সন্তুষ্ট নই। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, স্যার আমার ছেলে হাসনাইনের জীবনের দাম কি দুই লাখ টাকা? আমার ছেলে জীবিত থাকলে আরও কত লাখ লাখ টাকা উপার্জন করত। আমার একটা মাত্র ছেলে ছিল। কোম্পানির লোকজন আগুন লাগার পর বিল্ডিংয়ের সব সাইডের গেট আটকাইয়া আমার ছেলেরে শেষ কইরা দিছে। আমি এখন কি নিয়ে বাঁচব? আমি কোম্পানির কাছে ছেলের লাশ চাই।

এ ব্যাপারে ফার্মগেটে অবস্থিত সজীব গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে কথা বলার জন্য গেলে কোম্পানির এডমিনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মো. সাইফুল তার এক অফিস সহকারী মারফত এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি আগুনে নিহতদের বিষয়ে কোন কথা বলতে পারবেন না। কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেই।

শনিবার, ১৭ জুলাই ২০২১ , ২ শ্রাবন ১৪২৮ ৬ জিলহজ ১৪৪২

রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি

মুচলেকা রেখে নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রূপগঞ্জের সজীব গ্রুপের কারখানায় ভয়াবহ আগুনে নিহতদের স্বজনদের কয়েকজনকে কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ডেকে নিয়ে মুচলেকা রেখে দুইলাখ টাকা দিচ্ছে সজীব করপোরেশন। সেখানে কথা হয় নিহতদের কয়েকজন স্বজনদের সঙ্গে। তারা বললেন, একশ টাকার তাদের স্বাক্ষর বা টিপসই নেয়া হচ্ছে। মুচলেকার অনেকগুলো শর্তের মধ্যে অন্যতম প্রধান শর্ত হলো ‘তারা ভবিষ্যতে সজীব গ্রুপের কাছ থেকে আর কোন ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে না।’

কথা হয় কোম্পানির নিহত শ্রমিক কিশোরগঞ্জ করিমগঞ্জ উপজেলার বাদেশ্রীরাম গ্রামের কিশোর শ্রমিক মুন্নার (১৫) স্বজনদের সঙ্গে। মুন্নার বোন পান্না জানান, আমার নামে দুই লাখ টাকার একটি চেক দেয় কোম্পানি। চেক দেয়ার সময় ১০০ টাকার একটি স্ট্যাম্পে আমার সই নেয়। আমরা কোম্পানির এই টাকা পেয়ে সন্তষ্ট না। আমার ভাইয়ের লাশ চাই। কোটি কোটি টাকা দিয়ে কোম্পানির লোকজন আমার ভাইয়ের দাম দিতে পারবে! জীবিত থাকলে আমার ভাই মুন্না আরও বহু টাকা কামাই করতে পারতো। নিহত মুন্নার আরেক স্বজন জানান, স্ট্যাম্পে লেখা অনেকগুলো শর্তের মধ্যে প্রধান শর্ত ছিল আমরা সজীব গ্রুপের কাছ থেকে ভবিষ্যতে আর কোন ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারব না এবং এ বিষয়ে কারও সঙ্গে বিশেষ করে সংবাদ মাধ্যমের কারও কাছে কোন অভিযোগ করতে পারব না।

আগুনে নিহত ভোলার চরফ্যাসনের শিশু শ্রমিক হাসনাইনের (১৩) বাবা ফজলুর রহমান জানান, ‘আমার নাম লিখে সজীব করপোরেশন দুই লাখ টাকার একটি চেক আমাকে দেয়। এবং ১০০ টাকার একটি স্ট্যাম্পে সই নেয় কোম্পানির লোকজন। স্যার স্ট্যাম্পে কি যেন লেখা আছিল। আমি তো পড়তে পারি না। মূর্খ মানুষ। তাই বলতে পারছি না। তবে আমার সঙ্গে লেখাপড়া জানা আমার এক আত্মীয় ছিল। সে বলেছে, কোম্পানির স্ট্যাম্পে লেখা ছিল আমি ভবিষ্যতে কোম্পানির কাছে আমার নিহত ছেলের বিষয়ে আর কোন ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারব না।

তিনি আরও জানান, কোম্পানির ওই টাকা পেয়ে আমি সন্তুষ্ট নই। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, স্যার আমার ছেলে হাসনাইনের জীবনের দাম কি দুই লাখ টাকা? আমার ছেলে জীবিত থাকলে আরও কত লাখ লাখ টাকা উপার্জন করত। আমার একটা মাত্র ছেলে ছিল। কোম্পানির লোকজন আগুন লাগার পর বিল্ডিংয়ের সব সাইডের গেট আটকাইয়া আমার ছেলেরে শেষ কইরা দিছে। আমি এখন কি নিয়ে বাঁচব? আমি কোম্পানির কাছে ছেলের লাশ চাই।

এ ব্যাপারে ফার্মগেটে অবস্থিত সজীব গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে কথা বলার জন্য গেলে কোম্পানির এডমিনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মো. সাইফুল তার এক অফিস সহকারী মারফত এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি আগুনে নিহতদের বিষয়ে কোন কথা বলতে পারবেন না। কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেই।