লিটন-সাকিবের যুগলবন্দীতে বড় জয় টাইগারদের

স্কোর বাংলাদেশ ২৭৬/৬ : জিম্বাবুয়ে ১২১। ফল : বাংলাদেশ ১৫৫ রানে জয়ী

জিম্বাবুয়ে সফরে একমাত্র টেস্টে ২২০ রানের জয়ের পর তিন ম্যাচ ওডিআই সিরিজের প্রথম ম্যাচে বিপর্যয়ের মধ্যে লিটন কুমার দাসের ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতরানের ইনিংস আর সাকিব আল হাসানের বোলিং নৈপুণ্যে (মাত্র ৩০ রানে ৫ উইকেট) ১৫৫ রানের বিশাল জয় পেয়েছে টাইগাররা। এই সিরিজটা আইসিসি ওডিআই সুপার লীগের অংশ। আর এই জয়ে আগের ৫০ পয়েন্টের সঙ্গে আরও ১০ পয়েন্ট যোগ হলো বাংলাদেশ দলের।

টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ দল শুরুতে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছিল। মাত্র ৭৪ রানে টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ধুঁকতে থাকা টাইগাররা শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৭৬ রানে পৌঁছায় (বাংলাদেশ দলের ইনিংস খেলার পাতায়)। টাইগারদের এই সংগ্রহে ত্রাতার ভূমিকায় ছিলেন ম্যাচসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জেতা লিটন কুমার দাস। তিনি ক্যারিয়ারের চতুর্থ ওডিআই সেঞ্চুরি হাঁকানোর সঙ্গে সঙ্গে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে গড়েন ৯৩ রানের জুটি। শেষদিকে আফিফ হোসেন ধ্রুব ৩৫ বলে ৪৫ রানের ইনিংস খেললে জিম্বাবুয়েকে জয়ের জন্য ২৭৭ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ।

বিশাল এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের বিশেষ করে সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণি বলের সামনে টিকতেই পারেনি জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইন আপ। বাংলাদেশের ইনিংসটা যেমন গড়েছিলেন লিটন কুমার দাস, ঠিক তেমনি জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টকে ২৮.৫ ওভারের মধ্যে মাত্র ১২১ রানে থামিয়ে দেবার একক কৃতিত্ব বলতে গেলে সাকিব আল হাসানের। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও সাকিব আবারো প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশ দলে তার অপরিহার্যতা।

সাকিবের ঘূর্ণি যাদুর আগে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের সামনেই বিপদে পড়ে যায় জিম্বাবুয়ে। দলীয় ৪ রানে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে ফিরে যান মারুমানাই (০)। মাত্র ১৩ রানে ওয়েসলি মাধভেরেকে (৯) ফিরিয়ে দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটান তাসকিন আহমেদ। অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর আর অভিষিক্ত ডিওন মেয়ার্স হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন। তবে ১৮ রান করা মেয়ার্সকে ফিরিয়ে ৩৬ রানেই জুটিটি ভেঙে দেন মোস্তাফিজের ইনজুরিতে দলে সুযোগ পাওয়া পেসার শরীফুল। তিন পেসারের একটি করে উইকেট শিকারের পরের অংশটা সাকিব আল হাসানের।

ব্যাট হাতে ব্যর্থ সাকিব জিম্বাবুয়ের হয়ে ২০০তম ওডিআই খেলতে নামা সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান তথা অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলরকে (২৪) তাসকিনের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন। টেইলরকে ফেরানোর মধ্য দিয়ে সাকিব উইকেট শিকারের দিক দিয়ে হয়ে যান মাশরাফি বিন মুর্তজার সমান। ২৭০টি উইকেট নিয়ে মাশরাফি মোর্তুজা এতদিন ওডিআইতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন। মাশরাফির নামের পাশে নামটা লেখানোর পর তাকে ছাড়িয়ে যান সাকিব। রায়ান বার্লকেও (৬) আফিফের তালুবন্দী করিয়ে সাকিব হয়ে যান ওডিআইতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক। ততক্ষণে ১০৫ রান তুলতেই জিম্বাবুয়ের ৫ ব্যাটসম্যান ফিরেছেন সাজঘরে। বল হাতে ৩ উইকেট নেয়া লুক জঙ্গুইয়ে (০) রান-আউট হয়ে যান। এরপর মুজরাবানিকে (২) লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে তৃতীয় শিকার ধরেন সাকিব। দ্রুত উইকেট পতনের মাঝেই ৪৭ বলে ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন রেগিস চাকাভা। সেই চাকাভাকে ৫৪ রানে ফিরিয়ে চার নম্বর শিকার ধরেন সাকিব। তার পঞ্চম শিকার হন রিচার্ড এনগারাভা (০)। ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়েছিলেন টিমিসেন মারুমা। তার পক্ষে ব্যাট করা সম্ভব হয়নি। তাই ২৮.৫ ওভারে মাত্র ১২১ রানে শেষ হয় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। বাংলাদেশ পায় ১৫৫ রানের বিশাল জয়। ৯.৫ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন সাকিব। এটা তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় ৫ উইকেট। এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল তামিম ইকবালের দল।

বলে রাখা প্রয়োজন যে, শুক্রবারের ম্যাচে জিম্বাবুয়ে দলকে তাদের মাটিতেই সবচেয়ে কম রানে অলআউট করার লজ্জা দিয়েছে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের আগের সর্বনি¤œ স্কোর ছিল ২০১৩ সালে বুলাওয়েতে ১৪৮ রানের। সেই ম্যাচে জিম্বাবুয়ে পরাজিত হয়েছিল ১২১ রানে, আর শুক্রবার তাদের ইনিংস থামল ১২১ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : বাংলাদেশ ২৭৬/৯ (তামিম ০, লিটন ১০২, সাকিব ১৯, মিঠুন ১৯, মোসাদ্দেক ৫, মাহমুদুল্লাহ ৩৩, আফিফ ৪৫, মিরাজ ২৬, সাইফ ৮*, তাসকিন ১, শরিফুল ০*, মুজরাবানি ২/৪৭, চাতারা ১/৪৯, এনগারাভা ২/৬১, জাঙ্গুয়ে ৩/৫১)।

জিম্বাবুয়ে ২৮.৫ ওভারে ১২১ (মাধেবেরে ৯, মারুমানি ০, টেইলর ২৪, মায়ার্স ১৮, চাকাভা ৫৪, বার্ল ৬, জগুুইয়ে ০, মুজরাবানি ২, চাতারা ২*, এনগারাভা ০, মারুমা আহত অনুপস্থিত, তাসকিন ১/২২, সাইফ ১/২৩, সাকিব ৯.৫-০-৩০-৫, শরিফুল ১/২৮)। ম্যাচসেরা : লিটন দাস।

শনিবার, ১৭ জুলাই ২০২১ , ২ শ্রাবন ১৪২৮ ৬ জিলহজ ১৪৪২

লিটন-সাকিবের যুগলবন্দীতে বড় জয় টাইগারদের

স্কোর বাংলাদেশ ২৭৬/৬ : জিম্বাবুয়ে ১২১। ফল : বাংলাদেশ ১৫৫ রানে জয়ী

বিশেষ প্রতিনিধি

image

হারারেতে বড় জয়ের দিনে টাইগারদের উইকেট উদযাপন -বিসিবি

জিম্বাবুয়ে সফরে একমাত্র টেস্টে ২২০ রানের জয়ের পর তিন ম্যাচ ওডিআই সিরিজের প্রথম ম্যাচে বিপর্যয়ের মধ্যে লিটন কুমার দাসের ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতরানের ইনিংস আর সাকিব আল হাসানের বোলিং নৈপুণ্যে (মাত্র ৩০ রানে ৫ উইকেট) ১৫৫ রানের বিশাল জয় পেয়েছে টাইগাররা। এই সিরিজটা আইসিসি ওডিআই সুপার লীগের অংশ। আর এই জয়ে আগের ৫০ পয়েন্টের সঙ্গে আরও ১০ পয়েন্ট যোগ হলো বাংলাদেশ দলের।

টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ দল শুরুতে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছিল। মাত্র ৭৪ রানে টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ধুঁকতে থাকা টাইগাররা শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৭৬ রানে পৌঁছায় (বাংলাদেশ দলের ইনিংস খেলার পাতায়)। টাইগারদের এই সংগ্রহে ত্রাতার ভূমিকায় ছিলেন ম্যাচসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জেতা লিটন কুমার দাস। তিনি ক্যারিয়ারের চতুর্থ ওডিআই সেঞ্চুরি হাঁকানোর সঙ্গে সঙ্গে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে গড়েন ৯৩ রানের জুটি। শেষদিকে আফিফ হোসেন ধ্রুব ৩৫ বলে ৪৫ রানের ইনিংস খেললে জিম্বাবুয়েকে জয়ের জন্য ২৭৭ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ।

বিশাল এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের বিশেষ করে সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণি বলের সামনে টিকতেই পারেনি জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইন আপ। বাংলাদেশের ইনিংসটা যেমন গড়েছিলেন লিটন কুমার দাস, ঠিক তেমনি জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টকে ২৮.৫ ওভারের মধ্যে মাত্র ১২১ রানে থামিয়ে দেবার একক কৃতিত্ব বলতে গেলে সাকিব আল হাসানের। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও সাকিব আবারো প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশ দলে তার অপরিহার্যতা।

সাকিবের ঘূর্ণি যাদুর আগে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের সামনেই বিপদে পড়ে যায় জিম্বাবুয়ে। দলীয় ৪ রানে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে ফিরে যান মারুমানাই (০)। মাত্র ১৩ রানে ওয়েসলি মাধভেরেকে (৯) ফিরিয়ে দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটান তাসকিন আহমেদ। অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর আর অভিষিক্ত ডিওন মেয়ার্স হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন। তবে ১৮ রান করা মেয়ার্সকে ফিরিয়ে ৩৬ রানেই জুটিটি ভেঙে দেন মোস্তাফিজের ইনজুরিতে দলে সুযোগ পাওয়া পেসার শরীফুল। তিন পেসারের একটি করে উইকেট শিকারের পরের অংশটা সাকিব আল হাসানের।

ব্যাট হাতে ব্যর্থ সাকিব জিম্বাবুয়ের হয়ে ২০০তম ওডিআই খেলতে নামা সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান তথা অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলরকে (২৪) তাসকিনের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন। টেইলরকে ফেরানোর মধ্য দিয়ে সাকিব উইকেট শিকারের দিক দিয়ে হয়ে যান মাশরাফি বিন মুর্তজার সমান। ২৭০টি উইকেট নিয়ে মাশরাফি মোর্তুজা এতদিন ওডিআইতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন। মাশরাফির নামের পাশে নামটা লেখানোর পর তাকে ছাড়িয়ে যান সাকিব। রায়ান বার্লকেও (৬) আফিফের তালুবন্দী করিয়ে সাকিব হয়ে যান ওডিআইতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক। ততক্ষণে ১০৫ রান তুলতেই জিম্বাবুয়ের ৫ ব্যাটসম্যান ফিরেছেন সাজঘরে। বল হাতে ৩ উইকেট নেয়া লুক জঙ্গুইয়ে (০) রান-আউট হয়ে যান। এরপর মুজরাবানিকে (২) লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে তৃতীয় শিকার ধরেন সাকিব। দ্রুত উইকেট পতনের মাঝেই ৪৭ বলে ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন রেগিস চাকাভা। সেই চাকাভাকে ৫৪ রানে ফিরিয়ে চার নম্বর শিকার ধরেন সাকিব। তার পঞ্চম শিকার হন রিচার্ড এনগারাভা (০)। ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়েছিলেন টিমিসেন মারুমা। তার পক্ষে ব্যাট করা সম্ভব হয়নি। তাই ২৮.৫ ওভারে মাত্র ১২১ রানে শেষ হয় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। বাংলাদেশ পায় ১৫৫ রানের বিশাল জয়। ৯.৫ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন সাকিব। এটা তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় ৫ উইকেট। এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল তামিম ইকবালের দল।

বলে রাখা প্রয়োজন যে, শুক্রবারের ম্যাচে জিম্বাবুয়ে দলকে তাদের মাটিতেই সবচেয়ে কম রানে অলআউট করার লজ্জা দিয়েছে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের আগের সর্বনি¤œ স্কোর ছিল ২০১৩ সালে বুলাওয়েতে ১৪৮ রানের। সেই ম্যাচে জিম্বাবুয়ে পরাজিত হয়েছিল ১২১ রানে, আর শুক্রবার তাদের ইনিংস থামল ১২১ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : বাংলাদেশ ২৭৬/৯ (তামিম ০, লিটন ১০২, সাকিব ১৯, মিঠুন ১৯, মোসাদ্দেক ৫, মাহমুদুল্লাহ ৩৩, আফিফ ৪৫, মিরাজ ২৬, সাইফ ৮*, তাসকিন ১, শরিফুল ০*, মুজরাবানি ২/৪৭, চাতারা ১/৪৯, এনগারাভা ২/৬১, জাঙ্গুয়ে ৩/৫১)।

জিম্বাবুয়ে ২৮.৫ ওভারে ১২১ (মাধেবেরে ৯, মারুমানি ০, টেইলর ২৪, মায়ার্স ১৮, চাকাভা ৫৪, বার্ল ৬, জগুুইয়ে ০, মুজরাবানি ২, চাতারা ২*, এনগারাভা ০, মারুমা আহত অনুপস্থিত, তাসকিন ১/২২, সাইফ ১/২৩, সাকিব ৯.৫-০-৩০-৫, শরিফুল ১/২৮)। ম্যাচসেরা : লিটন দাস।